somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজকে বন্ধু দিবস না হলে কি খুব ক্ষতি হত?

০৭ ই আগস্ট, ২০১১ ভোর ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে আগষ্ট মাসের প্রথম রবিবার। অনেক দেশের সাথে সাথে আমাদের দেশেও পালিত হচ্ছে বন্ধু দিবস। ফেসবুক, গুগল+, টুইটার, ব্লগ, কোথাও বাকি নেই। কিন্তু আজকের বন্ধুদিবসটি আমাদের ৫জন খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুর জন্য খুবই একটা কষ্টের দিন হতে যাচ্ছে।

প্রথম থেকে বলি। ২০০৮ সালের মার্চ মাসের ১ তারিখ। দুপুর ১২:৩০ এ ক্লাস ছিল। ভার্সিটি জীবনের প্রথম ক্লাস। নোটিস বোর্ডের থেকে জানতে পারলাম ক্লাস হবে ৫০৩ এ। ক্লাসে এসে দেখি কেউ পরিচিত নাই। থাকবার কথাও না। খুলনা থেকে ঢাকা এসেছি। পরিচিত না হওয়াই স্বাভাবিক। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি আমর মতই মোটা (আমার থেকে কম না বেশি তা মনে নাই, তবে কাছাকাছি মোটা) একটা ছেলে একা বসে। তাছাড়া সবাই প্রায় ২/৩জন করে বসে পড়েছে পাশাপাশি। তার পাশে যেয়ে বসলাম। পরিচয় দিলাম। খুবই অনাগ্রহের সাথে সে তার পরিচয় দিল। প্রথম দিনটি এই ছেলের সাথে কথা বলেই কাটিয়ে দিলাম।

আস্তে আস্তে আরও কয়েকজনের সাথে বন্ধুত্ব হল, কথা হল, এমনকি প্রতিযোগিতাও শুরু হল। প্রথম প্রতিযোগিতা শুরু হল বেসিক ইংরেজী ক্লাসে। এখানে স্যার তার ইচ্ছামত কয়েকটি গ্রুপ করে দিলেন এবং এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের সাথে পাল্লা দিবে। এভাবে পরিচয় হয় একটি মেয়ের সাথে। অবশ্য কিছুদিন পরে আমার বোকামি, পাগলামী এবং তার ন্যাকামী মিলে অনেক বড় একটা ঝামেলা হল তার সাথে। কথা বলা বন্ধ। ততদিনে ভাল সম্পর্ক হয়েছে আরও ৫-৬জনের সাথে। কিন্তু এই ঝামেলার সুযোগ লাগাল আমার প্রথমদিনের পরিচয় হওয়া সেই ছেলেটি। তার জন্যই এই ৫-৬জনের কাছ থেকে দূরে সরতে থাকলাম। সেই মুহুর্তে পরিচয় হল একটি মেয়ের সাথে, যাকে ক্লাস শুরুর আগে একদিন দেখেছিলাম ক্যাম্পাসেই, এবং প্রথম দেখাতেই অনেক ভাল লেগেছিল (এটা শেষ পর্যন্ত ভাবাসায় পরিনত হয়েছে, যাতে তারও সম্মতি আছে)। তার মাধ্যমে পরিচয় হল আরও ৩জনের সাথে। আগের ঐ ৫-৬জনের মধ্যে ১জন মাত্র বুঝতে পারল যে আমার সাথে কতটুকু প্রতারণা করা হয়েছে, সে আমার সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখলেও বাকিরা রাখল না। শুরু হল আমাদের ৫জনের নতুন পথ চলা। এর মধ্যে থেকে আবার দুজন কি ভাবে যেন সরে গেল, যোগ হল আরও ৩জন। এখন আমরা ৬জন।

ঐ ঝামেলাটা হবার প্রায় ১ বছর পর ঐ মেয়ের সাথে আবার কথা হল। কিন্তু স্বাভাবিক হতে পারলাম না। এবং প্রথম দিনের পরিচয় হওয়া ছেলেটি স্বাভাবিক হতেও দিল না। আমার নামে অনেক উল্টা পাল্টা কথা বলে চলল। যার কারনে আমরা ৬জন থাকলাম ৬জনের মতই।

এই ৬জন থেকে একজন আবার ১ সেমিষ্টার আগেই বের হয়ে গেল (আমাদের ভার্সিটিতে ওপেন ক্রেডিট সিষ্টেম হবার কারণে এটা সম্ভব)। থাকলাম ৫জন। এই ৫জন এই সেমিষ্টারে একসাথে ক্লাস নিলাম। অনেক অনেক অনেক ভাল সময় কাটালাম। কিন্তু আজকে আমাদের এক সাথে ক্লাস করার শেষ দিন। কারণ আজকে আমাদের শেষ সেমিষ্টারের শেষ ক্লাস।

আজকে ২টায় ছুটি হবে আমাদের। এর পর হয়ত আমরা আর একসাথে একই ক্লাসরুমে বসে গল্পে মাতবনা, স্যারকে বার বার প্রশ্ন করে বিবৃত করতে পারবনা, ক্লাসের মাঝে চুপি চুপি চুইঙ্গাম বিলিয়ে স্যারের কাছে বকা শুনব না, ক্লাসে একে ওকে খোচা দিয়ে জ্বালাতন করব না, দুই ক্লাসের মাঝে ক্যান্টিনে গিয়ে খাবার খাবনা, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভেলপুরি খাওয়া হবে না, ক্লাস শেষে সবাই মিলে বাস ষ্টান্ডে গিয়ে যারা দূরে থাকে তাদের বিদায় জানাব না। কিন্তু আশাকরি বন্ধুত্বটা থাকবে। কবে কোথায় দেখা হবে জানি না। কিন্তু বন্ধুত্বটা যেন থাকে সেই প্রার্থনা।

আজকে বন্ধু দিবস, আর আজকেই আমরা বন্ধুরা দূরে সরে যাচ্ছি। জানি এই দূরে সরে যাওয়া শুধু মাত্র স্কেলের মাপে দূরে সরে যাওয়া। কিন্তু খুব খারাপ লাগছে।

মাকসুদ, রানু, নিপু, সজিব এবং হিমেলকে (হিমেল গত সেমিষ্টারে বের হয়ে গেছে) উৎসর্গ করলাম আমার এই লেখাটা। তোরা বিশ্বাস করবি কিনা জানি না। এই লেখাটা লিখতে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, দুই চোখ থেকে পানি পড়ছে অবিরত। পানি মুছে মুছে আবার লিখছি। তোদের অনেক মিস করছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১২ ভোর ৪:০৯
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×