সাড়ে তিনহাত শরীরে ইসলাম কায়েমের অর্থ আছে কি?
জ্বী আছে, কিন্তু তাহা কিভাবে সম্ভবপর হইবে? আসলে হুজুররা যেইভাবে সহজভাবে বলেন, সেইভাবে কি সাড়ে তিনহাত শরীরে ইসলাম কায়েম করা সম্ভব, অন্তত বর্তমানের এই চরম ইসলামবিরোধী পরিবেশে? নাহ, সম্ভব নহে যদি না চার খলিফার মতোন ইসলামী সমাজব্যবস্থা কায়েম থাকে!!
যেই সমাজে বিদেশ হইতে চড়া সুদে আমদানিকৃত সকল কিছুই যেমনঃ আপনার পরিহিত জুব্বা-কোর্তার কাপড়, খাদ্য-বস্থু, ব্যবহৃত ও ভোগ্য জিনিসপত্র আমরা ভোগ করিয়া থাকি এমনকি মসজিদ-মাদ্রাসায় প্রাপ্ত টাকা বা বেতনের সহিতও সুদ-ঘুষের টাকার সম্পর্ক রহিয়াছে এবং কুরআন নির্দেশিতমতে আপনার পর্দা রক্ষা করা আদৌ সম্ভবপর নহে, যেইখানে অসহায় ধর্ষিতাদের আপনি ইসলামী বিধানে সুরক্ষা দিতে ১০০% ব্যর্থ এবং ধর্ষক, চোর-ডাকাত, সরকারী-বেসরকারী লুটেরাদের, জুয়াড়ু-মদারুদের আপনি সংশোধনী কিংবা শাস্তি দিতেও অক্ষম; সেইখানে কী করিয়া আপনি আপনার সাড়ে তিনহাত বডিতে ইসলাম ধারণ করিবেন, তাহাতো আমার মতোন কম শিক্ষিত বান্দার বুঝেই আসিতেছে না।
নোংরা-পচা সমুদ্রসদৃশ এই সমাজে বা বিষাক্ত-দুষিত বাতাসে নিজের শরীর ডুবাইয়া রাখিয়া বা নাপাক পানিতে অজু করিয়া আপনি কিভাবে বলিতে পারেন যে, আপনি পাক-পবিত্র আছেন এবং আপনার শরীরে হারাম খাদ্য ঢুকিয়া যায় নাই, আপনার পর্দা আপনি রক্ষা করিতে পারিতেছেন? আপনার ইবাদত-বন্দেগী সঠিক হইতেছে কিনা, আপনার আমার মতোন দায়িত্ব-জ্ঞানহীনের প্রার্থনা মহান বিবেচক আল্লাহর কাছে কবুলই হইতেছে কিনা--সেইটাই আগে ভাবিবার বিষয়। তাহার পরেই না আপনি অন্যের খুঁত ধরা কিংবা অন্য ইসলাম্পন্থীদের সমালোচনার জাবর কাটিতে পারেন মাত্র!!
আপনার শরীরে হারাম বস্তু আছে কিনা, আপনার পোশাক পবিত্র কিনা, আপনার ক্রয়করা জায়নামাজ নির্ভেজাল কিনা, আপনার খাদ্য হালাল কিনা, আপনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করিতেছেন কিনা, চার খলিফার মতোন আপনিও আল্লাহর আইনমতে ''আকিমুদ্দিন'' মানে সমাজ-রাষ্ট্র হইতে সকল খারাবী দূর করিয়া ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলাম কায়েমের চেষ্টা করিতেছেন কিনা--পরকালে মুক্তির জন্য ইহাই হইলো আসল বিবেচ্য বিষয়। কেননা হাদীসে এমন কথাও লিখা আছে যে, ইসলাম বা দ্বীন কায়েমের চিন্তা ব্যতীত যে মৃত্যুবরন করিলো তাহার মরণ হইলো জাহিলিয়াতের মৃত্যু। এখন ভাবুন--আমরা কেমন মুসলিম হিসাবে বড়াই করিয়া যাইতেছি!! সুতরাং কাঁদার ভিতরের পিচ্ছিল গছিমাছ হইয়া বাঁচিলেই কিন্তু পবিত্রতার দোহাই দিয়া আমরা পরকালে রক্ষা পাইবোনা।।
মুসলিমের প্রকারভেদ (!)
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলিয়াছেন---হজরত ইব্রাহীমই আঃ তোমাদের পরিচয় মুসলিম নামে নির্ধারণ করিয়াছেন। ইহার অর্থ কী দাঁড়াইল? মুসলিম মানে আল্লাহতে বা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পিত যাদের খণ্ডিত বা আংশিক ইসলামের পালনের চেষ্টার কোনোই সুযোগ নাই। আবার মুসলিম দাবী করিয়া ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবনবিধান পালনেরও একবিন্দু সুযোগ নাই। ইসলামের নামে বা মুসলিম হিসাবে জগাখিচুড়ি জাতীয় কিছু পালনেরও কোনো ফাঁক নাই। তাই মুসলিম কমুনিস্ট, ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিম, আহাম্মদী মুসলিম, বাহাই মুসলিম, সুন্নি মুসলিম, শিয়া মুসলিম বলিয়া ইসলামে কিছুরই অস্তিস্ত্ব আমি অন্তত খুঁজিয়া পাই নাই। কুরআন-হাদিসেও এমন কিছুর চিহ্ন নজরে পড়ে নাই।
আমার মতোন অধমের মতে, যাহারা এমনধারা মুসলিম হিসাবে নিজেকে জাহির বা দাবী করেন, তাহারা যেমন কুরআনিক এই পরিভাষাটিকে কলঙ্কিত ও অপমানিত করিতেছেন, তেমনই যাহারা মওদুদী ইসলাম, ওয়াহহাবী ইসলাম বলিয়া অন্য ইসলাম্পন্থীদের গালি দিয়া থাকেন--তাহারাও আল্লাহর ঘোষিত ইসলাম পরিভাষাটিকেও কলঙ্কিত ও অপমানিত করিয়া থাকেন।
কুরআন-হাদিস পড়িয়া আমার যাহা ধারণা ও বিশ্বাস জন্মিয়াছে--তাহাতে বিভিন্ন ফেরকা বা উপদল নাম দিয়া যাহারা অমুকপন্থী মুসলিম, তমুকপন্থী মুসলিম হিসাবে পরিচিত করাইতেছেন, আল্লাহর কাছে তাহার কানাকড়িও মুল্য নাই বলিয়া আমার বিশ্বাস। বরং কুরআন বলে--হে মুসলিমগন তোমরা ইসলামে দড়িকে শক্তভাবে আঁকড়াইয়া ধরো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না বা উপদলে বিভক্ত হইও না। তবে আমার মতে, ইসলামী আন্দোলন বা ইসলাম কায়েমের কৌশল হিসাবে বিভিন্ন ইসলামী নাম ধারণ করায় কোন অপরাধ নাই এবং ইহাকে উপদল বলিবারও কারণ নাই।
এই যখন বাস্তবতা, তখন শিয়া-সুন্নি, হানাফি-মালিকী-শাফিঈ-হাম্বলী-লা-মজহাবীর নামে মারামারি, বাহাস বা কুতর্কের সমর্থনে কোনো দলীল আমি কুরআন-হাদিসে খুজিয়া পাই নাই!!
(ধারাবাহিক)
পূর্বের পর্ব-১ পড়িতে ভুলিবেন না- ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




