somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের মুসলমানিত্বের মোজেজা এবং কামড়া-কামড়ির রকমফের-৩

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশী ইসলাম বলিয়া কিছু আছে কি?
বাংলাদেশের বিভক্ত আলিম-উলামাদের কথা বাদ রাখিলে তাহাদের অনুসরণকারী সাধারণ মুসলিমগণ এতোটাই বিভ্রান্ত যে, একদিকে হাজার রকমের পীর আর শত শত মাজারের বাহার, ওরস শরীফ, ফাতিহা শরীফ, চল্লিশা, মিলাদ শরীফসহ কতো যে শরীফ (মানে পবিত্র) কাজ-কারবার চলিতেছে, কোনটা ইসলামসম্মত, কোনটা ইসলামের নামে বাংলাদেশী প্রডাক্ট বা বাংলাদেশী ইসলাম--তাহা বুঝিবার সাধ্য অন্তত তাহাদের নাই?

আমার মতোন সাধারণ মানুষও সরাসরি বিভিন্ন ভাষায় কুরআন-হাদিস ও ইসলামী পুস্তক পড়িয়া এইসবের সমর্থনে কিছুই খুঁজিয়া পাই নাই। তাই আমার কাছে মনে হইয়াছে--ইসলামের নামে এইসবই কেবল ভারত উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশের মনগড়া ইসলাম। ইসলামের হাজার হাজার ফরজ-ওয়াজিব, সুন্নত-মুস্তাহাব বাদ দিয়া এইসব কী চলিতেছে--তাহা ভাবিয়া আমি কুল-কিনারাও পাইনা। নবী-সাহাবীদের সুস্পষ্ট ইতিহাস এবং আদর্শ-কর্ম আমাদের নখদর্পণে থাকিবার পরও এইসব প্রমাণহীন বিষয় লইয়া আমরা কেনো বিভক্ত হইয়া পড়তেছি।

আবার সবপন্থীরাই আলাদা আলদাভাবে কতো যে বই লিখিয়াছেন তাহাদের দাবীর সমর্থনে, তাহার ইয়ত্তাও নাই। কুরআন-হাদিস সম্পর্কে লিখা বাদ দিয়া কেহ পীরের পক্ষে, আবার কেহ সহীপীর বা ভণ্ডপী্‌র, মিলাদ, তরিকা, কেহবা নিজেদের পীরের পক্ষেই সাফাইকলম চালাইয়া আমাদের চরম বিভ্রান্ত করিতেছেন। অথচ উপমহাদেশের বাহিরে অন্য দেশের ইসলামী লিখকদের বই-পুস্তকের মধ্যে বাংলাদেশীদের লিখিত উল্লিখিত তথাকথিত ইসলামী বইয়ে তাহাদের দাবীর পক্ষে আমি কিছুই খুঁজিয়া পাই নাই। তাই এতোসব বানোয়াট বিদয়াত দেখিয়া-শুনিয়া আমার মনে হইয়াছে---আমরা যেনো আসল ইসলাম ছাড়িয়া বাংলাদেশী এক আলাদা ইসলাম এবং মুসলিমত্ব চালু করিয়া দিয়াছি। বিভিন্ন দেশে ইসলামের নামে এতোসব রসম-রেওয়াজও আমার চক্ষে পড়ে নাই!!

নামাজের নিয়তের নামে রচিত যত বানোয়াট ও জটিল নিয়ত!!
যেমন ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই--যখন এদেশের নামাজ শিক্ষা বইগুলো পড়িয়াছি এবং নামাজের নিয়তের নামে চাররাকাত, তিনরাকাত বা দুইরাকাত হইলে কী পড়িতে হইবে অথবা ফরজ বা সুন্নত বা ওয়াজিব নামাজ হইলে কী বলিতে হইবে বা যখন যে ওয়াক্ত তাহার নাম কোথায় পড়িতে হইবে কিংবা একাই পড়িতে নামাজে কী নিয়ত আর ইমামের পিছনে পড়িলে কী নিয়ত করিতে হইবে, এইসব দেখিয়া বিভ্রান্ত হইতাম। আবার মনে প্রশ্ন জাগিতো যে, ইন্নামাল আ'মালু বিন্নিয়াত মানে কর্মের ফল নিয়তের ওপরেই নির্ভরশীল হইলে নিয়ত করা তো জরুরিই হইবে! কিন্তু তাহা মুখে মুখে বলিতে হইবে কেনো--নিয়ততো মুখের বিষয় নহে বরং অন্তরের বিষয়! তখন ভীষণ খটকা লাগিতো এবং বিষয়টা বেশ জটিল ও কঠিন মনে হইতো শুধুই নহে বিশ্বাসযোগ্যও মনে হইতো না।

নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'য়ালা---বলিবার পর কোথায় কী বলিতে হইবে তাহা একজন আরবী পণ্ডিতের ন্যায় ব্যাকরণবিদ না হইলে রপ্ত করাই মহাকঠিন। এইসব বিষয় শিক্ষিত মানুষের পক্ষে চোখ বুঝিয়া মুখস্থ করা সম্ভব হইলেও নিরক্ষর-অর্ধশিক্ষিত মানুষের পক্ষে তাহা কি রপ্ত করা আদৌ সম্ভবপর?? আমার বৃদ্ধ ও নিরক্ষর মাকে নামাজ শিখাইতে গিয়াই নিয়তের গদবাধা বিষয়টা আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হইতে লাগিলো। তাই হাদিস ঘাঁটিয়া দেখিলাম-এমন কোন মৌখিক নিয়তের কথা কোথাও নাই বরং অন্তরের নিয়তের কথাই জরুরি বলা হইয়াছে। বুঝিলাম-- এইসব আমাদের আলেমসমাজের মস্তিষ্কপ্রসূত বানোয়াট নিয়ত, যাহা নতুন নামাজীদের জন্য নামাজ শিক্ষাকেই কঠিন করিয়া তুলিয়াছে মাত্র।


এমন হাজার রকম উদাহরণ দেওয়া যাইবে--যাহা আমাদের আলিমসমাজের বানানো বিষয়, তাহার মধ্যে জুম্মার নামাজের খুতবাহও একটি ব্যাপার! অথচ খুতবাহ অর্থই হইলো ভাষণ বা বক্তৃতা, যাহা হইবে কুরআন-হাদিসের সংমিশ্রণে সময়োপযোগী আলোচনা, যাহার মাধ্যমে মুসল্লিগণ ইসলামী স্প্রিটে চার্জ হইয়া বাসায় ফিরিয়া যাইবে এবং ঈমানের দায়িত্বপালনে আরো তৎপর হইবে যেমন নবী সাঃ এবং সাহাবীদের বেলায় ঘটিয়াছে।

আমি কুরআন-হাদিসের পক্ষে কিন্তু বানোয়াটের বিপক্ষে
আমার এই লিখায় অনেকেই খুশী হইলেও কেহ কেহ বেজার হইতেছেন বলিয়া আমি অনুভব করিতেছি। আমি আবারো বলি---আমি সওয়াব অর্জনের নিয়তেই আমার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করিতেছি মাত্র। কিন্তু কাহারো বা কোনো দলের বিরুদ্ধে আমার লেখার কোনো গরজ নাই।

তবুও কেহ আঘাত পাইলে তাহা আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল বলিয়াই আমি মনে করি। লিখিতে গিয়া যাহা আমি কুরআন-হাদিসের বিরোধী মনে করিয়াছি-তাহার উদাহরণ দিতেও আমি কার্পণ্য করিব না; কিন্তু কাহারো নামে বা বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে আমি কিছুই লিখিবো না বা নিন্দাবাদ, গালিগালাজ করিবো না। সুতরাং অযথাই কাহারো এই লিখা অসহ্য মনে হইলে তাহার পড়িবার দরকার নাই। কিংবা কেহ আমার কিছু বিষয়ের সাথে দ্বিমত পোষণ করিলে বা কিছু ভুল বা অন্যায় মনে হইলে আমার ভুল ধরিয়া দিয়া আমাকে শোধরাইবার সুযোগও আপনারা লইতে পারেন মন্তব্য কলামে। আমি শোধরাইয়া লইবো যদি যৌক্তিক পরামর্শ হইয়া থাকে।
(ধা্রাবাহিক)

পূর্বের পর্ব-২
পর্ব-১
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×