বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে সিএমএম কোর্টের অতিরিক্ত হাকিম মোহাম্মদ আলী হোসাইনের আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে এডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আমরা আসলে ঠিক জানি না তাদের বিরুদ্ধে কোন্ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা আগে অভিযোগগুলো দেখতে চাই।
এ সময় পিপি আবদুল্লাহ আবু বলেন, আসামীদের আমরা সবাই চিনি। তারা ৭১ সালে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের মাধ্যমে গণহত্যা হয়েছে। তারা প্রত্যক্ষভাবে এ অপরাধের সাথে জড়িত। তিনি বলেন, তারা জামায়াতে ইসলামীর নামে, রাজনীতির নামে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান করেছে। তারা ধর্মান্ধ। ধর্মের নামে ব্যবসা করে। শ্যোন এরেস্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন। তার যাওয়ার পথে বাধা দেয়া হয়েছে। এতে প্রত্যক্ষ ইন্ধন জোগিয়েছে আসামীরা। রাষ্ট্রপতির চলাচলে শুধু বাধাই নয়, তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনি ১০ দিন রিমান্ড দেয়ার কথা বলেন।
ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগ তুলে সরকার পক্ষের আইনজীবী বলেন, এ মামলায়ই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা ইসলাম ধর্মের প্রবক্তা রাসূল (সা এর সাথে নিজেদের তুলনা করেছেন।
পুলিশের এসি (প্রসিকিউশন) মকবুল হোসেন বলেন, তারা নীতি নির্ধারক। তারা পরিকল্পিতভাবে ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রত্যেকটা মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
জামায়াত নেতৃবৃন্দের পক্ষে এডভোকেট আবদুর রাজ্জাক বলেন, যে মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, সে মামলায় তারা এজাহারভুক্ত আসামী নন। যারা আসামী তারা সবাই এখন জামিনে রয়েছেন। এখন সেই মামলায় এদের রিমান্ডে নেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, এ মামলায় ৯৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের অনেকেই জামিনে রয়েছেন। আর বাকীদের জামিনের আবেদন রয়েছে মহানগর দায়রা আদালতে। তা আগামী ৬ জুলাই শুনানি হওয়ার কথা। আশা করি তাদের জামিন হয়ে যাবে। এখন রিমান্ডে নেয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। তিনি আরো বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবেই তাদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। তারা জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছেন।
এডভোকেট মশিউল আলম বলেন, পিপি সাহেব সাজানো রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। এটা আদালত, রাজনৈতিক সভার জায়গা নয়। তিনি বলেন, আমাদের দেশে গ্রাম্য প্রবাদ রয়েছে, কিসের মধ্যে কী, পান্তা ভাতে ঘি। তিনি বলেন, একটি মামলা হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাজে বাধা দান করা নিয়ে। রাষ্ট্রপতি সম্মানিত ব্যক্তি। রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন হয় না। তিনি বলেন, সেদিন ছিল জুমার দিন। সেখানে কিছু লোক গ্রেফতার হয়েছে। তারা জামিনে আছে। এখন আবার তদন্তের কী আছে? তিনি বলেন, সেদিন বায়তুল মোকাররম সড়কে জামায়াতে ইসলামীর কোন সভা ছিল না। সেখানে অন্য কেউ সভা সমাবেশ করলে তার দায় দায়িত্ব জামায়াতের নয়। তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি নিবন্ধিত ও আইনানুগ রাজনৈতিক সংগঠন। এ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ঠিক নয়। তিনি কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, কুরআনে বলা হয়েছে, তোমরা যখন বিচার করো তখন ন্যায় বিচার করো। তিনি আদালতের কাছে ন্যায় বিচার আশা করে বলেন, পুলিশের রিমান্ড আবেদনের কোন যৌক্তিকতা নেই।
এডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, রিমান্ডের যথার্থতা নিয়ে কথা আছে। এ নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। তিনি বলেন, যাদের গ্রেফতার করে আনা হয়েছে তারা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী নন। তাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোন অভিযোগও নেই। তিনি বলেন, ৩ জনই গুরুতর অসুস্থ। নানা জটিল রোগে তারা ভুগছেন। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। তার আরো জটিল রোগ আছে। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন। তার হার্টে দুটি রিং পরানো হয়েছে। দাঁড়িয়ে নামায পড়তে পারেন না। কিছু দিন আগে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের গলব্লাডারে অপারেশন হয়েছে। তার হাঁটুতে ব্যথা রয়েছে। তিনি বলেন, ৩ জনের মধ্যে ২ জনেরই বয়স ৭০ এর ঊর্ধ্বে। একজনের বয়স ৬০ এর ঊর্ধ্বে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের কিছু নেই। শুধুমাত্র হয়রানি করার জন্যই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, তারা ৩ জনই সম্মানিত আলেম। ৩ জনের জন্যই জামিন আবেদন করছি। রাষ্ট্রপতির কাছে বাধা দানের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তাদের নাম আছে। কিন্তু এই ৩ জনের নাম এজাহারে নেই। ৩/৫/৩ ধারা মতে এতে জামিন দেয়া যায়। তিনি বলেন, তাদের আগেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেসব থেকে তারা জামিনে মুক্ত রয়েছেন। তারা আদালতকে শ্রদ্ধা করেন। তিনি আরো বলেন, এ মামলায় ইতিপূর্বে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের ব্যাপারে রিমান্ড চাওয়া হয়নি। এখন তাদের ব্যাপারে রিমান্ড চাওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা প্রমাণিত হয়ে ৩ বছরের জেল। এ মামলায় রিমান্ড নেয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না। তিনি রিমান্ড না মঞ্জুর ও জামিন মঞ্জুর করার আবেদন করেন।
এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ মন্ত্রী ছিলেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জামায়াতের নায়েবে আমীর। তিনি বলেন, যারা রাপষ্ট্রপতির কাজে বাধা দিয়েছে, তারা জামিনে রয়েছে। এখন জামায়াতের এই ৩ নেতাকে রিমান্ড নেয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না। তিনি বলেন, তারা রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী ছিলেন। তাদের রিমান্ড নিতে হবে কেন? আর তারাতো ঘটনা স্থলে উপস্থিত ছিলেন না। ৪৯৭ ধারা মতে তারা জামিন পেতে পারেন। যদি জামিন না দেয়া যায় তাহলে তিনি জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন জানান।