somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘পাহাড়ের ডাকে- ঝর্ণার দেশে’ পরব-৬

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভুশ করে পানি থেকে মাথা তুলল শাহাদাত ভাই। যাক, বেচারা সাঁতার জানে।:D কিন্তু হায়! একটু আগেই যে কামাল ভাই তার ক্যামেরাটা রাখতে দিয়েছে শাহাদাত ভাইকে! একটু পরে কামাল ভাইয়ের ক্যামেরাটাও ভুশ করে ভেশে উঠলো। আরে একি! ক্যামেরাটাও দেখি সাঁতার জানে। B-);)এতো সুন্দর পানি দেখে ক্যামেরাটা মনে হয় লোভ সামলাতে পারেনি। তাই শাহাদাত ভাইকে সাথে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরেছে প্রাকৃতিক সুইমিং পুলে! অবশেষে চার দফায় আমরা পার হলাম নাইক্ষং মুখ।

ওই দূরে আমিয়াখুমের পানি পরার শব্দ শোনা যাচ্ছে। একটু হাঁটতেই চোখের সামনে উদয় হল একটি জলপ্রপাত। আমিয়াখুম জলপ্রপাত। | বিশাল জায়গা জুড়ে বিচিত্র সেই পানি পরার আওয়াজ। কোথাও ঝরঝর, কোথাও গমগম, কোথাও কলকল। সামনে, পাশে, একটু দূরে, আরও দূরে শুধু উন্মক্ত স্রোতধারা। অজস্র স্রোতধারাগুলোর মধ্যে যেন প্রতিযোগিতা- কে কত জোরে, সবেগে আছড়ে পরতে পারে।

দুই দিকের বিশাল পাহাড়গুলো যেন অতি যত্ন করে আগলে রেখেছে আমিয়াখুমকে। অদ্ভুত সুন্দর। মনে মনে গেয়ে উঠলাম, ‘ তুমি সুন্দরও তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, একি মোর অপরাধ’। এর একটু দূরেই ভালভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে একটি পাহাড়ের উপরের অংশের প্রায় পুরোটাই সাদা। ঐ সাদা অংশটুকু পুরোটাই মৌচাক ছিল এক সময়। বসন্তে আবার এখানে মৌমাছি বাসা বাঁধবে। এই পাহাড়টি মূলত মধু পাহাড় নামে পরিচিত। সংগ্রহ করতে পারলে এখান থেকে কয়েক টন মধু সংগ্রহ করা অসম্ভব কিছু নয়।

আমিয়াখুম থেকে একটু দূরে গিয়ে এর দিকে আবার ফিরে তাকালাম। অসম্ভব সুন্দর মনে হল। মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে অসংখ্যবার ধন্যবাদ জানালাম শুধু এটিকে সৃষ্টির জন্যই নয়, আমাদেরকে এখানে আসার সুযোগ করে দেয়ার জন্যও। ফিরে যেতে মন না চাইলেও আমাদের যে এখন ফিরতেই হবে। হাতে সময় নেই মোটেই। ফিরে চললাম পাড়ার দিকে। তবে এবার অন্য রাস্তায় ফিরছি। এ রাস্তাটা আমার পরিচিত। আগে একবার আমিয়াখুম আসার সময় এ পথেই এসেছিলাম। সবাইকে একটু দ্রুত পা চালাতে বললাম। আমরা শিডিউল টাইমের চেয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পিছিয়ে আছি। সাথে শুকনো খাবার ও বেশি নেই। সামান্য কিছু চকলেট আর অল্প কিছু খেজুর। এ পথে ঢুকেই মনে হল আমরা চলে এসেছি প্রাগৈতিহাসিক কোন সময়ে। এই বুঝি সামনে হাজির হবে টি-রেক্স এর মতো কোন ডাইনোসোর আথবা পেঁচিয়ে ধরবে এনাকোনডার মতো বিশাল কোন সাপ। বিশাল বিশাল এককেকটা গাছ অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাহারা ছিচ্ছে পুরো জঙ্গলটাকে।
বেশ খাড়া একটা পাহাড় পার হয়ে আমরা সমতলে হাঁটলাম বেশ কিছুক্ষণ। এদিকে ক্ষুধায় সবার অবস্থা খারাপ। বাকি খেজুর আর চকলেট সবাই ভাগাভাগি করে খেলাম। ঘণ্টাখানেক হাটার পর পিছন থেকে আওয়াজ এলো, তাহসিন বিস্কুট আছে? না। খেজুর? না। চকলেট? না। যেই রুবিনা আপু পাহাড়ে গেলে চকলেট প্রায় খায়ই না, সে কিনা আমার কাছে চকলেট চাইছে! এতদিনে বুঝি পারাতে পারাতে শুকনা খাবার বিলিয়ে দেবার মর্মটা বুঝতে পারল সবাই। কিন্তু এখন তো কিছুই করার নেই। আমাদের ফিরতে হবে পারাতে। ক্লান্ত আমরা ধীরে ধীরে ফিরে চলেছি সাজাই পারাতে। এক জায়গাতে কলা গাছে কাঁচা কলা দেখে কামাল ভাই আমার কাছে চাকু চাইলেন। জিজ্ঞাসা করলাম কি করবেন? কলা খাব। কলা তো কাঁচা ! কাঁচাই খাব। শেষ পর্যন্ত হাতের নাগালে কলাগুলোকে পাওয়া গেলনা দেখে মাসুম, কচি, বাচ্চা কলাগুলো কামাল ভাইয়ের মতো কাঁচা কলা খাদকের হাত থেকে এ যাত্রায় প্রানে বেঁচে গেল। আরেকটা বেপার আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। রুপম ও জীবন এর পায়ের অবস্থা ভাল না থাকায় তাদের আমরা পারায় রেখে এসেছি। তারা আমাদের চিন্তায় উল্টাপাল্টা কিছু না করলেই হয়। ক্ষুধায় কাতর, কষ্টে পাথর আমরা গুটি গুটি পায়ে হাঁটছি। জি পি এস বলছে সাজাই পারা আর বেশি দূরে নয়। একটু পরেই চোখে পড়ল একটি পারা। আরে ওটাই তো সাজাই পারা! আমরা যখন পারাতে পোঁছালাম তখন ঘড়িতে সময় পাঁচটা। রুপম ও জীবন আমাদের দেখেই চুলায় পানি চড়িয়ে দিয়েছে নুডুলস এর জন্য। আমরা চলে গেলাম ঝিরিতে গোসল করতে। এরই মাঝে সবাইকে ব্যাগ গুছিয়ে নিতে বলেছি। আমরা ঠিক ছয়টায় আবার রওনা হব রেমাক্রির উদ্দেশে। সবাই ভীষণ ক্লান্ত কিন্তু আজ এখানে থেকে যাওয়ার মতো অবস্থা আমাদের নেই। আজ কিছুটা এগিয়ে না থাকলে কাল রাতের ঢাকার বাস আমরা কোন ভাবেই ধরতে পারব না।
খাওয়া শেষ করে কারবারি, অংফউ খিয়াং এর কাছ থেকে বিদায় নিলাম। তাঁদের সহজ, সরল, আন্তরিক, অমায়িক ব্যবহারে আমরা মুগ্ধ। সাজাই পারার সবাই ব্যবহার দিয়ে আমাদের মন কেড়ে নিয়েছে। পলাশ দা কে সাথে নিয়ে শুরু হল আমাদের রাতের অভিযান। পালের গদার মতো আমরা এক লাইন করে হেঁটে চলেছি। শরীরে ক্লান্তি থাকলেও রাতে ট্র্যাক করতে খারাপ লাগছে না। আমি, হেলাল, সিফাত, নকিব মিলে গান গাইতে শুরু করলাম। সুর নাই, তাল নাই, আমরা সবাই তানসেন! ব্যাকগ্রাউড মিউজিক হল ঝিরির কুকুল ধ্বনি আর ঝিঁঝিঁ পোকার সেই বিখ্যাত বাঁশী। আর স্রোতা? সে তো জঙ্গলের হাজারো পাখি, কীটপতঙ্গ আর আকাশের লক্ষ কোটি তারা। রাস্তা প্রায় সমতল। তাই পথ চলতে তেমন কোন কষ্টই হচ্ছে না। এরই মাঝে দুটো পারা পার হয়ে এসেছি। কিছুদূর এগুনোর পর আমরা খুব সরু একটা ঝিরিতে এসে পড়লাম। কিছুদূর এগিয়ে মনে হল এটা মানুষ হাঁটার ট্রেইল না। পলাশকে বললাম ব্যাপারটা। কিন্তু পলাশ দা বলল এটাই রাস্তা। কি আর করা? হাঁটা দিলাম সামনে। মিনিট দশেক চলার পর ট্রেইলটা শেষ হয়ে গেল। হাতের বামে উপরে একটা জুম ঘর দেখা গেলেও এটা কোন ভাবেই মানুষ চলাচলের নিয়মিত রাস্তা নয়। বুঝলাম এই রাত দশটায় আমরা আবার হারিয়ে ফেলেছি কোন এক পাহাড়ের কোলে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৪৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×