somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌন্দর্যের সীমানায়

০৭ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই শরতে মন জানি কেমন পালাই পালাই করছে। ই”েছ করছে এক ছুটে চলে যাই বান্দরবানের পাহাড়ে। তারপর সেখান থেকে গাড়িপথে এ পাহাড়, সে পাহাড় ডিং্িগয়ে, নদী-লেকের আশ্চর্য ল্যান্ডস্কেপ ছুঁয়ে আরও গহীনে। না-না পথচলা এখানেই শেষ হবে না। এরপরও ছোট নৌকা নিয়ে বান্দরবানের লুকিয়ে থাকা অঢেল সৌন্দর্যসুধা পান করতে হাজির হতে ই”ছা করছে সৌন্দর্যের সীমানায় ’রেমাক্রিতে’।
তো আর দেরি কিসের? ’ভ্রমণ বাংলাদেশ’ এর কয়েকজন বন্ধু মিলে রওনা হয়ে গেলাম বান্দরবান হতে থানচির উদ্দেশ্যে। পার্বত্য জেলাগুলোর প্রাণকেন্দ্র বান্দরবান শহর থেকে থানচি যাওয়ার রা¯তাটি যেন কোন মহান চিত্রকরের তুলিতে আঁকা কতগুলো দৃশ্যাবলির এক অবাক সমন্বয়। যেতে যেতে এর প্রেমে মানুষ পড়বেই। অšতত কয়েক’শ মোড়, পাহাড়ী রা¯তার চড়াই উতরাই অভিবাদন জানায় থানচি পর্যšত। থানচিতে দুপুরের খাবার সেরে বি.জি.বি. ক্যাম্পে রির্পোট করেই মানিক মাঝির নৌকাতে চড়ে রওনা করলাম রেমাক্রির উদ্দেশ্যে। সাঙ্গু নদীর দু’ধারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমরা যখন ’রেমাক্রি ফলস’ এর মুখে এসে পৌঁছালাম, তখন পড়šত বিকাল। আধো আলোয় ’রেমাক্রি ফলস’ যেন এক মাযাবী রূপ ধারন করেছে। হা করে এর অপরূপ রূপ দেখতে থাকলাম। একটু পর সন্ধ্যা নামলে আমরা চলে এলাম রেমাক্রি বাজারে। রেমাক্রিতে একমাএ গেষ্ট হাউজে আমাদের থাকার ব্যব¯’া হল। একটু বিশ্রাম নিয়েই আমরা বেরিয়ে পড়লাম রেমাক্রি বাজার ঘুরে দেখতে।

ছোট-খাট একটি বাজার। দোকান প্রায় ৩০ টির মত। বাজারের চারপাশ্বে দোকান আর মাঝখানটা ফাঁকা। আসলে এগুলো প্রত্যেকটি এক একটি বাড়ি। সামনের অংশটুকু দোকান আর পিছনের অংশে তারা বসবাস করে। রাত ৯ টা পর্যšত বাজারে আড্ডা দিয়ে, রাতের খাবার সেরে আমরা সেদিনের মত ঘুমিয়ে পড়লাম।
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হল এটি যেন এক কল্পলোক। প্রকৃতি যেন এখানে উজার করে রেখেছে এর রূপের ঝাঁপি। চারদিকে মেঘ আর পাহাড়ের এক অপূর্ব সমন্বয়। ছোট ছোট মেঘের ভেলায় চড়ে কোন এক অপরূপা রাজকন্যা যেন নেমে এসেছে পাহাড় রাজার দেশে। নীল আকাশ হতে সেই রাজকন্যাকে সোনার মুকুট পরিয়ে সূর্যের আলো নেমে আসে পৃথিবীর বুকে। প্রথম আলোর উঞ্চ পরশে ঘুম ভাঙ্গে সকলের।
সকাল ৮টার মধ্যে না¯তা সেরে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা রওনা হলাম রেমাক্রির মূল আকর্ষণ ”নাফাখুম জলপ্রপাতের” উদ্দেশ্যে। রেমাক্রি হতে গাড়ি তো দূরের কথা নৌকা ও চলাচল করতে পারে না বলে নাফাখুম পর্যšত পুরো রা¯তাটাই পায়ে হেটেই যেতে হয়। নাফাখুম যাওয়ার রা¯তাটা বড় সুন্দর, ঘন সবুজ পাহাড়ি জঙ্গল, তার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে অসম্ভব সুন্দর একটি ঝিরি। এই ঝিরি ধরে প্রায় আড়াই ঘন্টা হাটার পর হঠাৎ করেই উদয় হল একটি জলপ্রপাত, ’নাফাখুম’।

চোখে না দেখলে ভাবা যায় না কী ভয়ঙ্কর এর সৌন্দর্য! মেন এর রূপ তেমনই তার গর্জন। ভয়ঙ্কর স্রোতে পানি আছরে পড়ছে। বিশাল জায়গা জুড়ে বিচিএ সেই পানি পড়ার আওয়াজ। কোথাও ঝরঝর, কোথাও গমগম, কোথাও কলকল। সামনে, পাশে, একটু দূরে, আরও দূরে শুধু উন্মও স্রোতধারা। অজস্র স্রোতধারাগুলো মধ্যে যেন প্রতিযোগিতা কে কত জোরে, সবেগে আছড়ে পড়তে পারে। এখানে কিছুক্ষন থাকলে এক অভূত প্রত্যšত ও প্রাচীন অনুভূতির গন্ধ পাওয়া যায়। বর্ণময় বান্দরবানের প্রাকৃতিক রূপ উপভোগ করতে হলে অবশ্যই নাফাখূমে একবার আসা উচিৎ।

আধুনিকতার কোন ছোঁয়াই এখানে এখনো পৌঁছায়নি বলে নাফাখূমের ভার্জিনিটি পুরোপুরি অনুভব করা যায়। স্রষ্টার তুলির স্পর্শে যেন সবকিছুই এখানে বর্ণময়। ফুল, পাখি, প্রজাপতি প্রকৃতির সম¯ত রং যেন এরা উজার করে পেয়েছে। নাম না জানা মিষ্টি পাখির ডাক পাহাড় থেকে পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়। আর এই সুন্দর প্রকৃতির তালে তাল মিলিয়ে এখানকার মানুষজনও হয়ে উঠেছে সহজ-সরল, সাদামাটা।


ঘন্টা দু’য়েক সেখানে কাটিয়ে, মন ভরে এর সৌন্দর্য উপভোগ করে আমরা ফিরতি পথ ধরলাম। যে পথে এসেছি সে পথেই ফিরছি। তারপরও সবটুকু পথই যেন নতুন নতুন লাগছে। হাটতে হাটতে এক সময় চলে এলাম ’রেমাক্রি ফলস’ এর মুখে। ভর দুপুরের তপ্ত রোদে ফলস এর পানি চিক চিক করছে। ৮-৯ টি ধাপে সাজানো স্রস্টার এই সৃষ্টি সকলেরই মন কারতে বাধ্য। ঘন্টা খানেক ফলস এর পানিতে দাপাদাপি করে আমরা ফিরে এলাম রেমাক্রি বাজারে।


বিকেলে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল। রেমাক্রির চারপাশের সৌন্দর্য যেন অন্য এক মাএা পেয়েছে এই বৃষ্টির ফলে। পাহাড়ী সবুজ যেন আরও সবুজ হয়ে গেল। প্রকৃতি যেন আপন ছন্দে নাচতে শুরু করেছে নাম না জানা পাখির সুরে, পাহাড়ের গা বেয়ে বয়ে আসা ক্ষনিকের ঝণ্র্ার তালে। সে এক অ™ভূত মায়া, যে মায়া রেমাক্রিকে করে তোলে পার্বত্য পারিজাতে। সেই মায়ার বাধন ছিঁড়ে ইট কংক্রিটের কর্মব্য¯ত শহরে ফিরে আসা বড়ই কষ্টের।

তথ্য কনিকা: রেমাক্রি ইউনিয়নের লোক সংখ্যা প্রায় ৪০০০। অধিকাংশ লোকই কৃষি নির্ভর। পাহাড়ে জুম চাষই এদের জীবিকা অর্জনের অবলম্বন। পুরো ইউনিয়নে মোট ৫০ টির মত পাড়া রয়েছে। তবে শুধু রেমাক্রি বাজারকে কেন্দ্র করে পাড়া রয়েছে ৭-৮ টি। এদের মধ্যে রেমাক্রি বাজার পাড়া, পেনেদং পাড়া, কলা পাড়া, ব্রুপিং পাড়া উললেখযোগ্য।
জাতি: মারমা, এিপুরা, ম্রো, খমী, বম এই পাঁচ জাতি গোষ্ঠির দেখা মিলবে এখানে।
উৎসব: এখানকার প্রধান প্রধান উৎসবগুলো হল সাংগ্রাই, ওয়াছো, ওয়ায় গ্যই, বড় দিন এবং কথিং চিবর দান।
কি কি দেখবেন: রেমাক্রি ফলস, নাফাখুম জলপ্রপাত, লাংলুক খং বা বাদুর গুহা।
কিভাবে যাবেন: ঢাকা হতে বাসে করে বান্দরবান। বান্দরবান হতে বাস অথবা চান্দের গাড়িতে করে থানচি। থানচি বাজার হতে নৌকা ভাড়া চলে যাওয়া যায় রেমাক্রিতে। ৬-৭ জন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিটি নৌকার ভাড়া পড়বে ৪০০০-৫০০০ টাকার মত।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×