somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘স্বপ্নের সৈকতে এঁকে যাই পদচিহ্ন’ পর্ব -১

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সমুদ্রের শরীরটা একটু বড়ই। আসলে বেশ বড়। যতদূর চোখ যায়, তার চেয়ে বড়। পরনে তার নীল পানির জামা । নীল পানিতে আকাশটা যেন হঠাৎই ঝুঁকে পড়েছে ওল্টানো বাটির মতো। সাগর কন্যা ঢেউয়ের মাথায় চেপে প্রতিনিয়ত আছড়ে পরছে পাহাড়ের গায়ে। যেন এক ব্যর্থ প্রেমিকা। মিলেছে গিয়ে আকাশের সাথে, কিন্তু মন দিয়ে রেখেছে পাহাড়কে। তাই আছড়ে পড়ছে পাহাড়ের গায়ে, মিনতি করছে। পাহাড়ের মন গলছে না কিছুতেই।


ভ্রমণ বাংলাদেশের নিয়মিত আয়োজন ‘স্বপ্নের সৈকতে এঁকে যাই পদচিহ্ন’ টেকনাফ হতে কক্সবাজার বিচ হাইকিং -২০১৪ তে এবারের সদস্য সংখ্যা ৩৮। গত তিন দিন ধরে হাঁটছি সমুদ্র সৈকত ধরে। সমুদ্র ঢেউ তুলে ছুটে আসছে আমাদের দিকে। সাথে আনছে শামুক, ঝিনুক, নুড়িপাথর আরও কত কি? অদ্ভুত সুন্দর প্রতিটি মুহূর্ত। পথ যেন ফুরায় না, চোখ যেন জুড়ায় না।


সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে সবাইকে নটরডেম কলেজের গেটে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। বেশ কয়েকজন তো আরও এক ঘণ্টা আগেই এসে বসে আছে। আস্তে আস্তে নির্ধারিত সময়ের ১০-১৫ মিনিট পরে সাবই চলে আসলো। কিন্তু ফেরদৌস ভাই আর শশী ভাবীর খবর নাই। ফোন করে জানা গেল তারা এখন প্রায় আধ ঘণ্টা দূরত্বে রয়েছে। তাই তাদের রেখেই আমরা বাস ছেড়ে দিলাম। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। একটু পরে ফেরদৌস ভাইয়ের ফোন। আপনারা কোথায়। জানালাম যাত্রাবাড়ীর জ্যামে পরে আছি। খিছুক্ষন পরে আবার ফোন, আপনারা কোথায়? কাঁচ পুর ব্রিজ পার হলাম মাত্র। আপনারা থামেন আমি ১০ মিনিটের মধ্যে আপনাদের ধরতেছি। আমরা তো অবাক! জানা গেল ফেরদৌস ভাই সিএনজি নিয়ে আমাদের তাড়া করছেন। ১২ মিনিটের মাথায় তিনি ঠিক আমাদের ধরে ফেললেন। আমাদের যাত্রা আবার শুরু হল। পথ থেকে কামাল ভাই, তুহিন ভাই ও মেজবাহ ভাইকে তুলে নেয়া হল। সকাল ৮.৩০ মিনিটে আমরা পৌঁছে গেলাম টেকনাফে। ভ্রমণ বাংলাদেশের সভাপতি আরশাদ হোসেন টুটু ভাই আর আবিদ সেখানে আমাদের নাস্তা রেডি করে বসে আছেন সেই ভোর থেকে। নাস্তা সেরে বের হতে হতে ১০ টা বেজে গেল। টুটু ভাই হাটার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে দিলেন। শুরু হল আমাদের হাঁটা। সমুদ্র পার ধরে আমরা এগুতে থাকি। সূর্য এরই মধ্যে তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। পতাকাবাহি দলে আছেন ইয়াসমিন আপা, জায়েদ ভাই, শাহাদাত ভাই, মুনিরুল ভাই সহ বেশ কয়েকজন।



তার পিছনে আছে সুমন ভাই, তুহিন ভাই, কামাল ভাই, সিরাজ ভাই, সুমন ভাইরা। তাদের ফলো করছি আমরা। আমি আর আবু বক্কর ভাই সবার পিছনে। আমাদের দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর আর উত্তরে পাহাড়। আমাদের অভিযাত্রা পূর্ব থেকে পশ্চিমে। সূর্যের তেজ তাই একটু কম লাগছে। আমরা হেঁটে চলেছি সম্পূর্ণ ভার্জিন বীচে। কোন কোলাহল নেই, নেই হকারদের চিপস, ঝিনুক, মালা ইত্যাদি বিক্রি করার ব্যস্ততা। সমুদ্দ্রের সাথে চলছে আমাদের ছোঁয়াছুয়ে খেলা। ঢেউ এসে আমাদের ছুঁয়ে দিতে চায়। আমরা সরে যাই। মাঝে মাঝে আমরা ঢেউ ছুতে যাই, ঢেউ সরে যায়। আর একটা বিষয় না বললেই না।


সেটা হল কাঁকড়াদের আর্ট প্রদর্শনী। শিল্পী হল ছোট ছোট কাঁকড়া। উপকরণ হল বালি। আর বালুকাবেলা হল এদের ক্যানভাস। তুলির বদলে ব্যবহার করেছে তাদের সুদক্ষ পা-গুলোকে। আলপনার মত এদের শিল্পকর্ম। ঠিক যেন যেমন খুশি তেমন আঁক। কোনটা পানপাতা, কোনটা চারকোণা, কোনটা আবার ত্রিভুজাকার।


পাহাড়ের কোল ঘেঁষে কিছু ঘর বাড়ি গড়ে উঠেছে। ঠিক ঘর বাড়ি না বলে কুঁড়ে ঘর বলাই ঠিক হবে। বাঁশ আর কেয়া পাতা দিয়ে তৈরি ঘর। কিউব সাইজ। প্রস্থে ১০-১২ ফুট, লম্বায় ২০-২৫ ফুট। বাতাস কম লাগার জন্য এভাবে বানানো হয় ঘরগুলো।


এখানে মহিলাদের কাজ মূলত দু’টি। সন্তান লালন পালন আর প্রতীক্ষা। কর্তা মানুষটি তার না যতটুকু তারচেয়ে বেশি সাগরের। মাসের বেশিরভাগ সময়ই থাকে সাগরে, মাছ ধরে। মাঝে মাঝে সাগর মানুষ টানে। এক বার টানলে আর ফেরত দেয় না।
এদিকে সূর্যি মামা দুপুর পেরিয়ে বিকালের দিকে গড়াতে শুরু করেছে। আমারা আমাদের সাথে আনা শুকনো খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম। কিছুদূর এগুনোর পর আমরা চলে এলাম লাল কাঁকড়ার সম্রাজ্জে। চারদিকে শুধু কাঁকড়া বাড়ি। সবাই নিজেদের শিল্পকর্ম দেখাতে ব্যস্ত। তাদের শিল্পকর্মের মত সমুদ্র কাঁকড়ারাও কম রূপসী নয়। চোখে সুরমা টানা, কপালে লাল ফোঁটা। পাড়ে এসে জমেছে সারি সারি নৌকা।


নৌকাগুলো ধনুকের মত বাঁকানো। এর অবশ্য কারন আছে। তলা যতটা কম, পানিতে ঢেউ লাগবে ততো কম। পাত্তা পাবে। মাস্তুলে নানান রং এর অনেক গুলো নিশান। ঠিক যেন যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।


প্রকৃতির শত শত মাস্টার পিস পিছনে ফেলে আমাদের দল এগিয়ে চলেছে। পরন্ত বিকেলে সমুদ্রতট মায়াবী রুপ ধারণ করেছে। ক্যামেরা বন্দী হচ্ছি আমরা। হাঁটছি। গাইছি। আমরা আমাদের প্রথম দিনের গন্তব্বের আর বেশি দূরে নেই। শিলখালি ইউনিয়ন পরিষদ বাংলোতে আমার থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। জায়েদ ভাই প্রস্তাব করলেন, চলেন সূর্যাস্ত দেখেই যাই। সাথে সাথে রাজী হয়ে গেলাম। আমি, ঊর্মি, সেবা আপু, জায়েদ ভাই, রুপা ভাবী, আকাশ, সিরাজ ভাই, মেজবাহ ভাই, কামাল ভাই, তুহিন ভাই, শাহেদ ভাই, তাহিন ভাই মিলে সূর্যি মামাকে আজকের মত বিদায় জানিয়ে চলে এলাম ইউনিয়ন পরিষদ বাংলোতে। ফ্রেশ হয়ে যে যার মত বসে পড়লাম আড্ডায়। কেউ কেউ আবার এক কিস্তি ঘুমিয়েও নিলেন। রাত ৮ টা নাগাদ টুটু ভাই খাবারের জন্য ডাকাডাকি শুরু করলেন। খাবার সেরে শুরু হল ক্যাম্প ফায়ার। গোল করে সবাই আড্ডা দিলাম। আকাশে আজ তারার মেলা বসেছে। আমরা ছাদে চলে গেলাম। নতুনদের অনেকেই তাঁবুতে থাকতে চায়। তাই ছাদে তাবু সেট করে তাঁবুতে শরীর ঢুকিয়ে মাথা বের করে গল্প করতে লাগলাম। সাথে চলল গান আর ফান। রাত বাড়তে থাকলো। হাজার বছরের সেই রাত। আস্তে আস্তে আমরাও ঢলে পড়লাম ঘুমের কোলে।


[img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/shahed5555/01-2015/shahed5555_104159152854a69e8fe0b2f8.47660177_tiny.jpg



সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২৫
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×