somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“মায়াবী ভ্যালীর টানে”

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






যানবাহনের অভাবে ডুকরে কাঁদছে ব্যস্ত ঢাকার রাস্তাগুলো। কংক্রিটের জঞ্জালে ভরা ঢাকা প্রতিবারের মতো এবারো ঈদের ছুটিতে প্রায় মৃত নগরী। ঢাকা যেন ঘুমিয়ে পরেছে কোন এক যাদুকরের যাদুর ছড়ির ছোঁয়ায়। নিরব নগরীর নিরবতা ভেঙ্গে আমাদের রিক্সা ছুটে চলেছে আরামবাগের বাস কাউন্টারের দিকে। ঈদের ছুটিতে রাজধানীটাকে আরও একটু ফাঁকা করে আমরা যাচ্ছি ‘মায়াবী ভ্যালীর’ টানে।



বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখি লোকজন গিজ গিজ করছে। কিন্তু একী! সবই তো পরিচিত মুখ। অবশ্য পরিচিত না হওয়ার কোন কারণ নেই। সবাই তো আমরা একই পরিবারের সদস্য। ‘ভ্রমণ বাংলাদেশ’ পরিবার। ৩৪ জনের দল নিয়ে এবারের ঈদ পরবর্তী ছুটি উপভোগ করতে আমার যাচ্ছি পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির পাহাড়ি সবুজ ভ্যালী সাজেকে।

ভোর ৬ টার দিকে শ্যামলী পরিবহনের বাসটি আমাদের নামিয়ে দিল খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বরে। একটু আগেই বললাম আমরা যাচ্ছি রাঙ্গামাটির সাজেকে, কিন্তু বাস আমাদের খাগড়াছড়ি নামালো কেন? ভুল করে তবে কি খাগড়াছড়ি নামিয়ে দিল? ব্যাপারটা আসলে তা নয়। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি দিয়েই কাছে হয়।


সকালের নাস্তা সেরে বাবুর মতো বসে, ক্যাঙ্গারুর মতো দাঁড়িয়ে, বাঁদরের মতো ঝুলে আমাদের চানদের গাড়ী দুটো ছুটে চলল সাজেকের দিকে। সাথে অবশ্য দুই কাদি কলা। বাঁদররা ঝুলে ঝুলে কলা খেতে কি মজা পায় তা বোঝার বড় শখ আমাদের। সাপের মতো প্যাঁচালো আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ। নেই লোকজনের ভিড়, রাস্তায় যানজট, নেই লাল বাতিতে থেমে থাকার বিড়ম্বনা। একে একে আমরা পেরিয়ে যেতে থাকলাম ছোট ছোট পাহাড়ি গ্রামগুলো। দীঘিনালা পর্যন্ত চরাই উতরাই কিছুটা কম হলেও এর পর শুরু হল আসল জার্নি টু সাজেক। সাজেক রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত । সূত্র মতে সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন । যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল । সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা , দক্ষিনে রাঙামাটির লংগদু , পূর্বে ভারতের মিজোরাম , পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা । সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে । খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ৬৭ কিলোমিটার । খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প হয়ে যেতে হয় সাজেক । একে একে পরবে ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প । যেখান থেকে সাজেক যাবার মূল অনুমতি নিতে হবে । সামনে কাসালং ব্রিজ, ২টি নদী মিলে কাসালং নদীর নতুন রুপ। পরে টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার ।মাসালং বাজারে লোকজনের বেশ ভিড়। আজ সেখানে হাট বসেছে । বিক্রি হচ্ছে মিষ্টি কুমড়া, মারফা, কাঁকরোল, লাউ, টমেটো, শূকরের মাংস, বেশ কয়েক রকমের মাছ সহ বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। বাজার পার হয়ে সামনে এগুতেই চোখে পরবে পুতুলের গ্রাম রুইলুইয়ের। ছোট ছোট ঘর গুলো এতো রঙিন করে সাজানো যে এগুলোকে পুতুলের ঘর-বাড়ি না বলে উপায় নেই। এ পাড়া যার উচ্চতা ১৮০০ ফুট।



রুই মানে সম্পদ আর লুই মানে খাড়ি বা খাল। এজন্য রুইলুই পাড়াকে বলা হয় সম্পদের ভাণ্ডার। এই পাড়াটি মূলত সাজেকের প্রান কেন্দ্র। ধারণা করা হয় যে ১৮৮৫ সালে ভারতের মিজরাম থেকে সামান্য কিছু মানুষ এসে গোড়াপত্তন করে এই পাড়ার। জানা যায় যে ১৯১০ সালে বর্তমান হেডম্যান এর দাদা রাঙ্গামাটির তৎকালীন জেলা কমিশনার এর কাছ থেকে হেডম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। স্বাধীনতার পর পানি ও খাবারের সমস্যার জন্য অনেকেই মিজোরামে ফিরে যায়। পরবর্তীতে ত্রিপুরারা এই এলাকায় বসতি স্থাপন করে। বর্তমানে ত্রিপুরা ও লুসাই জাতিগোষ্ঠীর প্রায় ৯৫ টি পরিবার এখানে সুখে শান্তিতে বসবাস করে।
আর কিছুদূর এগোতেই চোখে পড়লো সাজেক আর্মি ক্যাম্প। বেশ গুছানো পরিপাটি ক্যাম্প।


কথায় কথায় জানা গেল রুমা আপার ছাত্রের বন্ধু এখন এই ক্যাম্পের ইন-চার্জ। এই সুবাদে বেশ খাতির পাওয়া গেল। তবে বেশি খাতির নেয়ার সময় আমাদের নেই। সাজেক ক্যাম্পের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করার মত জায়গা তেমন একটা নেই। এখানে একটা হেলিপ্যাড আছে ।


সেখানে বেশ কিছু ছবি তুলে আমরা রওনা হলাম সাজেকের শেষ গ্রাম কংলক পাড়াতে । এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া । এর হেড ম্যান চৌমিংথাই লুসাই ।

কংলক পাড়া থেকে দেখা যায় ভারতের লুসাই পাহাড় । যে পাহাড় থেকেই উৎপন্ন হয়েছে কর্ণফুলী নদী । সাজেক বিজিবি ক্যাম্প এর পর আর কোন ক্যাম্প না থাকায় নিরাপত্তা জনিত কারনে কংলক পাড়ায় মাঝে মাঝে যাওয়ার অনুমতি দেয় না । তবে ওই যে, ছাত্রের বন্ধু ক্যাম্পের ইন-চার্জ!! কিছুক্ষণ হাটার পর সবাই টের পেল যে মাথার উপরে সূর্য নামক একটি বস্তু আছে এবং যার তেজ নেহায়েত কম নয়। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা যতক্ষণে কংলক পাড়াতে এলাম ততক্ষণে ১২ টা বেজে গেছে।



আমাদের না, ঘড়িতে ! রাসেল ভাই আর কে কে জানি কোত্থেকে এক কাদি কলা কিনে এনেছে। প্রতি পিস ১ টাকা।


মুহূর্তেই দেখলাম পুরো কাদি শেষ। কাউকেই বুঝানো গেলনা যে তাদের জন্য নিচে গাড়িতে এতোগুলো ড্রাই ফুড রাখা আছে। এত কিছু ছাপিয়ে মাঝে মাঝে চোখ চলে যাচ্ছিল দূরের পাহাড়গুলোতে। মাঝে মাঝে পাহাড়ের চুড়ায় ছোট ছোট ঘর গুলো দেখে মনে হচ্ছিলো যেন একেকটা মেঘ বাড়ি। সেখান থেকে বুঝি মেঘের দেশে যাওয়া যায়। প্রায় ১২.৪৫ এ আমার সাজেক ভ্যালীর পথ ধরলাম। হাযাছড়া ঝর্ণা দেখে আজই আমরা চলে যাব মারিশাতে।


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১৩
১০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×