somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা ল্যান্ড অফ দ্যা ক্লাউডস (মেঘের দেশে) সূচনা পর্ব

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





চিরচেনা বা অচেনা দৃশ্য- মেঘ জড়ানো সবুজ পাহাড়, তার ঢাল বেয়ে নেমে আসা মুক্তো দানার মতো ধবধবে সাদা বেগবান পানির ধারা। প্যাঁচালো পাহাড়ি পথের বুকে রৌদ্রছায়ার খেলা। দৃষ্টি কাড়ে পাহাড়ের পায়ের কাছের রুপোলী নদী। দক্ষ ড্রাইভার দু’হাতে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে পেরিয়ে যায় সঙ্কীর্ণ সর্পিল পথ, পাহাড়ি বাঁকগুলো। গায়ে এসে লাগে ফুরফুরে সতেজ হাওয়া। পাহাড়ি জনপদগুলো একে একে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলে গাড়ি। হঠাৎ - গাড়ির ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি সবে আমরা যশোর এসে পৌঁছেছি। বুঝলাম স্বপ্ন দেখছিলাম। তবে স্বপ্নে দেখা দৃশ্যপটগুলোতে আগামী কালই হাজির হব ভেবে মনটা খুশিতে নেচে উঠলো।:):D;)


** স্বপ্নে মনে হয় এটাই দেখেছি :)B-)
১১ মিলে আমরা যাচ্ছি কোলকাতা। সেখান থেকে দিল্লী হয়ে কাশ্মীর যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও কাশ্মীরে বন্যা শুরু হয়ে গিয়েছে। সেখানকার অবস্থা খুব খারাপ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে এই অবস্থা আরও কয়েকদিন থাকবে। বন্যা আর বৃষ্টি দেখতে কাশ্মীর যাওয়ার তো কোন মানে হয় না। তাই প্ল্যান পরিবর্তন করে আমাদের নতুন গন্তব্য সান্দাকফু। বোনাস হিসেবে দার্জিলিং আর কালিম্পং তো রয়েছেই।
ট্রিপ শুরুর আগেই শুরু হয়ে গেল বিপত্তি। প্রথমটা শুরু মিজান রানাকে দিয়ে। কাস্টমস এ নাকি কোম্পানির NOC দেখাতে হবে। তবে ১০০০ -১০০ টাকার বিনিময়য়ে কোম্পানির NOC কাস্টমস অফিসাররাই দিয়ে দেন। ২০০ টাকার বিনিময়য়ে NOC নিয়ে মিজান রানার মন একটু খারাপ। এর পর এলো ফাতেমা বিনতে মস্তাফিয এর পালা। এমনিতে চেহারা ফর্সা হলেও আমরা তাকে উগান্ডা বলে ডাকি। বেশ কিছু দিন উগান্ডা নামক আফ্রিকার এই দেশটিতে থাকায় তার এই উপাধি। কিন্তু বিষয় সেটা নয়। বিষয়টা হল, উগান্ডার ওয়ার্ক পারমিট থাকার পরও তিনি বাংলাদেশে কি করছেন? আমাদের সচেতন কাস্টমস ওয়ালা এর মাঝে গভীর একটা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়ে গেছেন। ১০০০ টাকার বিনিময়য়ে এই ষড়যন্ত্রের জট খুললেন তারা। কিন্তু এর পরের বিষয়টি আরও এক কাঠি সরেশ। মারুফ আব্দুল্লাহ এই প্রথম আমাদের সাথে ট্রিপ করছেন। বেচারার পাসপোর্টে মালেশিয়ার ভিসা থাকায় মহামান্য কাস্টমস অফিসারগন তাকে বেশ বড়সড় একজন VIP ভেবে বসলেন। স্যার আপনার তো মালেশিয়ার ভিসা আছে। আপনি বাসে ট্রাভেল করছেন কেন? আপনি তো বাসে ইন্ডিয়া জেতে পারবেন না। আপনাকে বিমানে করে যেতে হবে। এই মুহূর্তে আমরা বিমান পাবো কোথায়? তাই ১৫০০ টাকার বিনিময়য়ে বিমানের রাস্তাটাকে আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে আমরা বাংলাদেশের মাটি ছাড়লাম...
সবার মুখেই শুনি বিদেশে গেলে নাকি দেশের জন্য মায়া বেড়ে যায়। আমাদের কারো মধ্যে অবশ্য সেই ফিলিং লক্ষ করলাম না। সবাইকে বেশ হাসি-খুশিই তো লাগছে। অবশ্য এখনো ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন পার হইনি। ইমিগ্রেশন ফর্ম পুরন করে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। ইমিগ্রেশন অফিসার একবার পাসপোর্টের দিকে দেখে একবার আমার দিকে। মনে মনে বললাম, ‘ওই ব্যাটা, আগে বান্দর দেখিস নাই? চিনতে এতক্ষণ লাগে কেন’??
ইমিগ্রেশন অফিস থেকে বের হয়ে চলে এলাম শ্যামলী কাউন্টার। সবাই যার যার মত করে ডলার ভাঙ্গিয়ে নিল। একটা করে ডলার দেয় আর এত্তগুলো রুপি পায় সবাই। বাহ্‌ ! সবাই কতো খুশি। কিছুক্ষণ পর সবার ডাক পড়লো বাসে উঠার জন্য। আমরা বাসে উঠে পড়লুম। চললুম দাদাদের দেশে।


** হরিদাশ পুর হতে বাস রওনা হয়েছে কোলকাতার দিকে

বাসের বেশির ভাগ মানুষ বাংলাদেশী। তাই বিদেশ বিদেশ ভাব আসছে না। বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েও বিদেশ ভাব এলো না। গাছ, নদী, রাস্তা সবই তো দেশের মতই লাগছে। বাইরের দৃশ্যপটের তেমন কোন পরিবর্তন চোখে পড়লো না। চলে এলাম দম দম বিমান বন্দর। কোলকাতা শহরে ঢুকে পড়েছি। মারকুইস স্ট্রীটে এসে আমাদের বাস ঘেচাং করে ব্রেক কষে দিল। নেমে পড়লাম বাস থেকে। আমরা এখন দাদাদের দেশে। রেজা ভাই ও রুক্সানা ভাবি কোলকাতাতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁরা বাংলাদেশ বিমানের একটি রিক্সায় চড়ে ঢাকা থেকে কোলকাতা উড়ে এসেছেন। আমাদের টিম মেম্বার এখন ১ ডজন ১ জন।
প্লান পরিবর্তন হওয়াতে আগে থেকে ট্রেনের টিকেট করা হয়নি। ফলে যা হবার তাই হল। অনেক চেষ্টা করেও ট্রেনের টিকেট জোগাড় করা গেল না। অবশেষে শিলিগুড়ি যেতে আমাদের বাসের উপরই ভরসা করতে হল। প্রায় ১৯ ঘণ্টার বিচিত্র এক জার্নি শেষ করে আমরা পৌঁছে গেলাম শিলিগুড়িতে।


** বাসে..

এখানে প্রথম কাজ হল ট্রেনের ফিরতি টিকেট নিশ্চিত করা। টিকেট কনফার্ম করে কোন মতে একটু ভাত মুখে দিয়ে আমার চললাম মিরিকের দিকে। ঘড়িতে সময় তখন ৫.৩০ এর কাঁটা ছুই ছুই করছে। মিরিক লেকের পাশেই হোটেল রত্নাগিরিতে আমাদের রুম বুক করা আছে। তাই একটু রাত হলেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। পাহাড়ি রাস্তার সুন্দর বাঁকগুলো মিস করবো ভেবে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। তবে সন্ধ্যার পর আমরা যা দেখলাম তাতে আমাদের শুধু যে চোখ জুড়াল তাই নয়, মনটাও ভরে গেল। পাহাড়ের বুক চিঁরে গড়ে ওঠা ঘরবাড়িগুলোতে যখন লাইট জ্বলছিল তখন দূর থেকে সেগুলো আকাশের তাঁরা মনে হচ্ছিল। ঠিক যেন লক্ষ লক্ষ তাঁরা গুজে দেয়া হয়েছে পাহাড়ের গায়ে। অদ্ভুত তার রুপ।


রত্নাগিরির মালিক মিলান পি বমযন দা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ছোটখাটো মানুষ। তবে আন্তরিকতায় মোটেই ছোটখাটো নন। আমরা পৌঁছানোর সাথে সাথেই আমাদের রুমগুলো বুঝিয়ে দিলেন তিনি। কাঠ পালিশ করা ঝকঝকে তকতকে রুম গুলো দেখে সবার মন ভাল হয়ে গেল। জানালা খুললেই রাতের মিরিক দেখা যায়। ওই যে মিরিক লেক। পাইন গাছ গুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঠিক যেন অতন্ত্র প্রহরী। পূর্ণিমার আলোয় তাদের ছায়া পড়েছে লেকের পানিতে। একটু ভূতুড়ে লাগছে।


মিরিকে যাওয়ার পথেই আকাশে বিদ্যুৎ এর ঝলকানি দেখেছি বেশ কয়েকবার। পাহাড়ের বজ্রপাত এক অসামান্য অভিজ্ঞতা। একটি বজ্রপাতের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয় পুরো পাহাড় জুড়ে। হোটেলে পৌঁছানোর পর পরই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল। মাঝে মাঝে মনে হয় বৃষ্টি বড়ই অভিমানী। আকাশের সাথে ঝগড়া করে আছড়ে পড়ছে পৃথিবীর বুকে। আবার কখনো কখনো বৃষ্টিকে বড় মমতাময়ী মনে হয়। প্রকৃতিকে ধুয়ে মুছে নতুন করে সাজায় এই বৃষ্টি। প্রকৃতির প্রতি তার যত্নের কোন কমতি নেই। বাইরে বেশ ভালই বাতাস বইছে। কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস। এরই মাঝে ইমন ভাই, মারুফ ভাই, রানা, বেলাল ভাই রাতের মিরিক দেখতে বেরিয়েছে। এর মাঝে ইমন ভাই ফোন করে জিজ্ঞাস করলেন খাবারের কি করবেন? কোলকাতা হোটেলে খাবার প্ল্যান করে রেখেছি আগেই। ইমন ভাইয়া যেহেতু ওই দিকেই আছেন সেহেতু তাদের খাবারের দায়িত্ব দিয়ে মিলান পি বমযন দা এর সাথে ফর্ম পূরণ করায় মনোযোগ দিলাম। সবাই ফ্রেস হতে হতে খাবার চলে এলো। মেন্যু হল সর্ষে বাটা দিয়ে রুই মাছ, মুরগীর মাংস, ঘন ডাল আর সাদা ভাত। অসাধারন রান্না। সবাই খাচ্ছে আর আহ, উহ শব্দ করছে। খাবার পর্ব শেষ করে অনেকে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। আমি, ইয়াসমিন আপা, উগান্ডা (ফাতেমা), মারুফ ভাই আর রানা বেড় হলাম রাস্তায়। পূর্ণিমায় আলোয় কিছুক্ষণ হাটার ইচ্ছে। মিরিক লেক যে দিকে তার উল্টো দিকে আমরা হাঁটতে শুরু করলাম। পাইন বনের মাঝ দিয়ে সাপের মত আঁকাবাঁকা রাস্তাটি ধরে হাঁটছি। কিছুদূর এগোতেই সামনে থেকে গাছ কাটার শব্দ শুনতে পেলাম। সবাই চুপ করে সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। ব্যাপারটা একটু বোঝার চেষ্টা করছি। সামনের বাঁক পেরোতেই বুঝে ফেললাম ঘটনা কি?




*** লেখা আর ছবির কিছু অমিল রয়েছে এই পর্বে। পরের পর্ব গুলোতে বর্ণনার সাথে ছবির মিল পাওয়া যাবে আশা করছি। ***
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:৩২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×