somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাঠের তলোয়ার (পূর্বাহ্ন থেকে মধ্যাহ্ন)

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১৩ জানুয়ারি'র পিকনিক। যাকে যা করতে দেখেছি আর যাকে যা বলতে শুনেছি - সবটা লিখে ফেলছি। কেউ মাইন্ড করলে আমি দায় নেব না!!!!)

কাঠের তলোয়ার (আরম্ভ পর্ব)

এবার আসি, কাঠের তলোয়ার নাম'টা কিভাবে মাথায় আসলো সেকথায়। গল্প-গানে কখন যে স্পটে পৌঁছে গেলাম টের পেলাম না। বাস থামার পরই আস্তে আস্তে সবাই নামতে শুরু করল। একটা তিন রাস্তা'র মাঝে এসে দাঁড়িয়ে সবাই কেমন বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল। বুঝতে পারছিলাম এটা স্পট না, আরও ভেতরে যেতে হবে, তবে মাঝের এ সময়টুকুও কেউ নষ্ট করতে রাজি না ! রাস্তা'র মাঝেই ক্রিকেট, ফটোসেশন। মওকা দেখে এক ফেরিওলা ভ্যান করে কাঠের সামগ্রী নিয়ে এল - বেত, লাঠি, তলোয়ার...

এ হল কাঠের তলোয়ার আমি কখন দেখলাম সে কথা, তবে পোস্টের নাম কেন দিলাম, সেটা আরেকটু পরে বলব। সময় আসুক।

তো ওখানে সবাই নিজেদের মত ঘুরছিল। পাশে একটা মাঠে কোনও আনুষ্ঠানিক ক্রিকেট ম্যাচ হচ্ছে, ধারাভাষ্যকারও আছেন! এবং তিনি বাংলা ধারাভাষ্যকারদের মান রক্ষা করেছেন এ কথা হলপ করে বলতে পারি। হঠাৎ হঠাৎ শুনি, "পরের বল, চমৎকার শট খেলেছেন.... আরে না ! উনি তো বোল্ড !", "সম্ভবত বোল্ড!" - বোল্ড আউট নিয়েও তার ব্যাপক কনফিউশান, ছিল বেশ খানিকক্ষণ ধরেই ! :P

(আমি জানি না আমি ছাড়া আর কেউ ওসব খেয়াল করেছেন কিনা, আমি একা অনেক হেসেছি)

আমরা এমন বিনোদন ছেড়ে আবার বাসে উঠলাম। স্পটে পৌঁছে, অবাক ভাল লাগা ! জিসান ভাই বললেন, "দারূণ না শাহেদ? দেখো তিনদিকেই কিন্তু লেক !" সত্যিই তাই, আমরা যে পথে এসেছি সেদিক ছাড়া তিনদিকেই টলটলে জল ! :)

ছবিতোলক আছে বেশ ক'জন, মডেলের তো অভাব নেই - শুরু হয়ে গেল ! আমি বেশ খানিকক্ষণ একা ঘুরলাম। একটা ছোট বাঁধানো ঘাট আছে, বেশ ফটোজেনিক একটা জায়গা। এদিক ওদিক ঘুরছি। হঠাৎ দেখি ক্লাইন্ট ইস্টউড একটা গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ! ওয়েস্টার্ন গেটাপে স্বর্ণমৃগ বেশ আলোড়ন তোলেন ! আমি ছবিতোলক না, তবু উনার পারমিশন নিয়ে এই ছবি তুললাম। (পরে আরও অনেকের ছবি তোলার ইচ্ছা ছিল, তবে একবার গীটার নিয়ে বসার পর আর উঠতে পারিনি)

এরপর সম্মিলিত জনতাকে মঞ্চের কাছে জমায়েত করলেন ছোট মির্জা, শিপু ভাই, মাহি আর সবাই। জিসান ভাই তার অন-ঐতিহাসিক ভাষণে সবাইকে একদম সহজ-সচ্ছন্দ করে দিলেন (আমার মত অমিশুক ছাড়া বাকিরা বেশিরভাগই আগে থেকেই বেশ সচ্ছন্দ ছিল যদিও)। একজন একজন করে সবাই পরিচিত করালেন নিজেদের। আমার ইচ্ছা ছিল পালিয়ে বাঁচি ! ফারজুল ভাই ধরে রাখলেন ! আমি উঠে নিজের নাম বলেই নেমে গেলাম। স্পষ্ট মনে আছে, আমি স্পষ্ট বলেছি, তবু কেউ নাকি শোনে নাই, আবার উঠতে হল। আমার এসব মোটেও ভাল্লাগে না। :(

এসবের পর, সবাই নিজেদের মত ছড়িয়ে পড়ল, কাছাকাছিই। একদল নামল ক্রিকেট খেলতে, আপু'রা-ভাবি'রা বসে গেল নিজেদের আড্ডায়। ছবিতোলকেরা স্বর্গে গেলেও বোধহয় ছবিই তুলতে যাবেন, এখানেও ব্যাতিক্রম না ! নষ্ট কবি আমার পাশে বসে অর্গানে সুর তুললেন। সি-মেজর স্কেল। আমিও তাল মেলাতে বসলাম রিদমে।

খানিক বাদে আশেপাশে অনেকেই আসলেন। ছোটমির্জা, মাহি, রুমকী আপু, নিশাত রহমান, আশকারি, ফারজুল ভাই, অন্তরা মিতু, পুশকিন ভাই, গুরুজী, সবুজ ভীমরুল আরও অনেক অনেক অনেকে...যাদের সবার নাম হয়তো জানি না, বা এখন মিস করে যাচ্ছি। আমি চরম হতাশ হয়ে আবিষ্কার করলাম, সবার মাঝে আমিই সবচেয়ে কম গান জানি ! অনেকের অনুরোধেই বলতে হল, "গান'টা জানি না, শুনিও নি"। নষ্ট কবি'র কথা কী বলব ! দুনিয়ার সমস্ত গানের লিরিক রাজিব ভাই জানেন !!! আর সে কী দম তার অর্গানে ! আমি কত অসংখ্যবার গীটার থামিয়ে তার পিঠ চাপড়েছি !

ব্লগার অন্তরা মিতু বললেন, "ইঞ্জিনিয়ারদের এত গুণ তো জানতাম না !"

আমি যে 'মেকা ইঞ্জিঃ' সেটা তেমন কারও জানার কথা না। বুঝলাম রাজিব ভাইকেই বলা হচ্ছে। স্বগোত্রকে খানিকটা ডিফেন্ড করলাম, "এখন সময় এমন, শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং জানলে হয় না, সাথে দু'চারটা বাড়তি দখল থাকতে হয়"

সাথে সাথেই মিতু জবাব দেন, "চাকরি'র জন্য তো ইঞ্জিনিয়ারিং-ই যথেষ্ট। তাহলে বাড়তি দখল কেন? মেয়ে পটাতে?" :|

আমি এমনিতে কথায় পারি না। কেউ আচানক কিছু বললে, এর পার্ফেক্ট জবাব'টা আমার দু'তিনদিন পর মনে আসে। আর কোনও চেষ্টা না নিয়ে চুপ হলাম আপাতত।

এর মাঝে আবার ক্রিকেট দলে ডাক আসল ! আমার পক্ষে খেলা সম্ভব না। আমার চশমা'র পাওয়ার মাইনাস টু পয়েন্ট ফাইভ। অবহেলায় পড়ি না। এমনি সবকিছু হালকা'র উপর ঝাপসা দেখলেও চলন্ত বল বুঝতে না পেরে প্রতি বলেই টাইমিং মিস করব। চশমা'র পাওয়ারের ব্যাপারটা একজনকে বললাম, সে বিশ্বাস করল না। :( অগত্যা খেলতে নামলাম, আর দু'বল খেলেই কট আউট হলাম। আর ওমুখো হইনি !

উঠে এসে জাহিদ ভাইয়ের সাথে কথা বললাম। খুব হাসিখুশি মানুষ, কথা বললে মন ভাল হয়ে যায় ! তিনি সেই কবে মাস-ছয়েক আগে আমার একটা পোস্টে কমেন্ট করেছিলেন, এরপর আমার ব্লগে তার আসা হয়নি আর। অথচ ওই পোস্টের কথা তাকে বলতেই তিনি আমাকে অবাক করে দিয়ে কী কমেন্ট করেছিলেন আর তার জবাবে আমি কী বলেছিলাম - সেটা পর্যন্ত বলে ফেললেন !!! আর এই মানুষটাই কিনা তার পিকনিক পোস্টে নিজের স্মরণশক্তি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন ! কেমনটা লাগে??

ওদিকে নষ্ট কবি তখনও অর্গান হাতে বসে। গান ছুটে গিয়ে সবাই তখন একটু ঘুরে ফিরে দেখছে আশপাশ। হঠাৎ কি মনে হল, রবি'ঠাকুরের কৃষ্ণকলি গাইলাম, এ গানটা প্রতিবার গাওয়ার সময় আমি অসীম আনন্দ পাই ! আবার গানওয়ালা'র দল এসে জুটল। যার কথা না বললেই নয়, ব্লগার পানকৌড়ি অনেক আনন্দ দিলেন দারূণ সব বিনোদনের গান করে ! :)

তারপর নিমচাঁদ ভাই-ও এসে গানের দলে বসলেন। আমাদের সাথে তপু থেকে শুরু করে বিটলস-ঈগলসের গানেও সুর মেলালেন ভাইয়া, বাকি সবাই তো অবশ্যই !

এর মাঝে জিসান ভাই আর শিপু ভাই গেলেন দুপুরের খাবার আনতে, কিন্তু ততক্ষণে অনেকেরই ক্ষুধা লেগে গেছে। আশপাশ থেকে কেউ কামরাঙা, কেউ বাদাম আরও কত কি কিনে খাওয়া শুরু করল। আমি গিটার নিয়ে বসার পর আর উঠিনি, একটু পর পর রুমকী আপু এসে আমাকে বাদাম দিয়ে যাচ্ছিলেন, ফারজুল ভাই (নাকি আরেকজন কে যেন) আমার পাশে পানি'র বোতল রেখে গেলেন। আমাকে আর উঠতেই হল না ! :)

মধ্যান্হভোজনের আগ পর্যন্ত চলল গান, ক্রিকেট আর সব সমান্তরালে।

(আরও অনেকেই নিজেদের মত উপভোগ করছিলেন, আমি শুধু সেসবই লিখতে পেরেছি, যাতে আমি নিজে ছিলাম)

পরের পর্বও আসছে খানিক বাদেই !

পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:৪১
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×