somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাঠের তলোয়ার (মধ্যাহ্ন থেকে অপরাহ্ন)

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১৩ জানুয়ারি'র পিকনিক। যাকে যা করতে দেখেছি আর যাকে যা বলতে শুনেছি - সবটা লিখে ফেলছি। কেউ মাইন্ড করলে আমি দায় নেব না!!!!)

কাঠের তলোয়ার (আরম্ভ পর্ব)

কাঠের তলোয়ার (পূর্বান্হ থেকে মধ্যান্হ)

তারপর বহুল প্রতীক্ষিত লাঞ্চ ! শিল্পী'রা তখন থেকে পারফর্ম করছে, খেলোয়াড়'রা খেলছে, ছবিতোলকরা সেইরকম নিষ্ঠার সাথে কাজ করছে, আর ক্ষিধা লাগবে না???

কেউ একজন খাবার আসার আগেই প্লেট সরবরাহ করে বিরাট আন্দোলন গড়ে ওঠাটা নিশ্চিত করলেন ! অভুক্ত মানুষদের ছবি তোলার সে কী হাহাকার। খাবার পাই না পাই, ছবিটা দরকার ! উপবাসী জনতার সে কী হাসিমুখ ! ;)

খাবার আসল, আর খেয়ে আমি সত্যি চমকে গেলাম ! এত ভাল কাচ্চি আমি ঢাকা-তেও খুব একটা খাইনি ! দেরি হওয়ার সমস্ত ওজর মাফ ! :) কাচ্চি'র সাথে ডিম-সালাদ, চাটনি, সাদা-কালো নরম পানীয়। বুভুক্ষের মত খেল সবাই। শৃঙখলা'র ব্যাপারটা না বললে অন্যায় হবে। জিসান ভাই, শিপু ভাই-এর সাথে মির্জা, মাহি, মনসুর ভাই এমন অনেকে ডিস্ট্রিবউশনে নামলেন। কেউ যেন কিছু মিস না করে, কারও যেন কিছু কম না পড়ে ! কিছু মানুষ সত্যি পারে এতসব খেয়াল রাখতে !

উফ, আমার এখন আবার কাচ্চি খেতে ইচ্ছা হচ্ছে ! সমস্যা।

আচ্ছা, ভোজনপর্ব শেষে সবাই বেশ গুছিয়েই প্যাকেটগুলো জড়ো করে রাখল। ভাল লাগল ব্যাপারটা খুব। এরপর একটু বিরতি দিয়ে ক্রিকেটের ফাইনাল ! সে এক ধুন্দুমার কান্ড ! উভয়দল নিজেদের জয়ী ঘোষণা করল ! আর কে পায় ! শেষতক টাই-ব্রেকার হল। এক ওভারের খেলা। জাবেদ সেই ওভারে প্রায় প্রতি বলেই বাউন্ডারি মেরে তার দলের জয় নিশ্চিত করলেন। পরাজিত দল হাসিমুখেই আন্দোলন অব্যাহত রাখল, আর ফলাফল প্রত্যাখ্যান করল ! :P

এর মাঝে একপাশে শুকনো কাগজ-পাতা জড়ো করে ইটের উপর চুলা বানানো হল, পানি গরম করা হবে; বিকালের কফি ! সেখানে বেশ একটা জটলা দেখা গেল। আগুন যে নিভে যায় ! দু'জন আগুন ধরাতে চায়, আর বিশজন উপদেশ দেয়। ;)

আমি সরে আবার মাঝের গোল চত্বরে আসলাম। দেখি জাহিদ ভাইয়ের রাজকন্যা একা রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে। অস্থির চোখ। এসে বললাম, "কিছু খুঁজছো?"

রাজকন্যা মৃদু গলায় বলল, "আমার আম্মু?"

ভয় পেলাম, মাকে না দেখে কেঁদে দিবে না তো। একপাশে বেশ ক'জন আপু'রা দাঁড়িয়ে। তাকে বললাম, তোমার আম্মু ঐ ওখানে। চল যাই। ছোট্ট হাতের তালুতে আমার আঙুল ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলল সেখানে। গিয়ে দেখি ভাবি ওখানে নেই। রাজকন্যা কাঁদো-কাঁদো। জাহিদ ভাই আম্পায়ার ছিলেন, এখন দুই স্বঘোষিত বিজয়ী দলের ক্যাচালের মধ্যে। তো রাজকন্যা'কে বললাম, "চল তোমার আব্বু'র কাছে যাই"। আগাতে গিয়েই দেখি, ভাবী চুলা'র কাছে আগুন ধরাতে ব্যস্ত। রাজকন্যাকে মায়ের হাতে দিয়ে আমি আবার আসলাম গোলচত্বরে।

খানিক বাদেই শুরু হল পিলো-পাসিং। মিউজিকে নিমচাঁদ ভাই, তার গাড়িতে। জমজমাট খেলা। নিমচাঁদ ভাই চিৎকার করে মন্তব্য করলেন, "মেয়েদের খেলায় ছেলেদের আগ্রহ দেখি বেশি ! লুল লুল, সব লুল !" :P

তা সব খেলাতেই বিতর্কের শেষ নেই ! সবাই স্বজনপ্রীতি খুঁজে পায় ! কেউ কেউ বলে, "আপনার সিন্ডিকেট করে ম্যাচ পাতাইসেন ! খেলুম না !!!" ;)

বাচ্চাদের খেলা'টা আমি দেখি নি। কখন যে শুরু হয়ে শেষও হয়ে গেল ! দু-এক মিনিটের খেলা, বিস্কিট দৌড়। মিস করলাম, তাই ওটা নিয়ে লিখতে পারলাম না !

ওই সময় সুমন আমাকে টেনে নিয়ে গেল ছবি তুলতে ! আলো পড়ে আসছে ! সুমন আমাকে আগে থেকেই বলে রেখেছিল, গান গাই আর না গাই, ছবি তোলার জন্য গীটার'টা আনতেই হবে ! তবে গানের আড্ডায় আমি আর খেলার মাঠে সুমন ব্যস্ত থাকায় ছবি আর তোলা হয়নি ! তাই এখন সুযোগ পেয়ে আমাকে নিয়ে গেল রাস্তার দিকে। ওদিক'টায় কেউ নেই। ছবি কী তুলব - আমি তো ছবি'র পোজ দিতেও জানিনা ! সুমন জানালো, আমাকে কিছু করতে হবে না। "ভাইয়া, আপনি শুধু রাস্তা দিয়ে একবার সোজা হেঁটে যাবেন, তারপর আবার সোজা হেঁটে আসবেন"। ব্যস, এই?

এর মাঝেই সে দারূণ ২টা ছবি তুলে নিল আমার ! :) স্বাভাবিক ভাবেই, ছবিতে আমার মুখের আড়ষ্টতা ছাড়া আর সব ছিল পার্ফেক্ট ! সুমনের ছবি তোলার হাত দিন দিন আমাকে মুগ্ধ করছে। ছবির ব্যাপারে তার প্যাশন'টাও ভাল লাগে। আমি মনে করি, আর প্রার্থনা করি, সে অনেকদূর যাবে !

আবার ফিরে আসলাম মূল চত্বরে।

তারপর র‌্যাফেল ড্র !

সবাই কেন যে টিকেট কিনলাম !!!! এক পরিবার ছ'টা টিকেট কিনে চারটা প্রাইজ নিয়ে গেল (আবার সিন্ডিকেট কথা উঠল! এই শব্দ'টা এখন রীতিমত হাস্যকর একটা শব্দ হয়ে উঠেছে !)। আমরা টিকেট কিনলাম বসে বসে তালি দিতে ! /:)

কখন যে সময় চলে গেল, কেউ টের পাই নি ! পার্কের গেট-কিপার এসে তাগাদা দিতে লাগলে সবার খেয়াল হল ! আনন্দ কি শেষ হয়???

নীল পরী পাতিল পুরষ্কার পেলেন কফি'র পানি গরম করার স্বীকৃতি হিসেবে !

ঝাঁকে ঝাঁকে বাসে উঠলাম সবাই। পেছনে পড়ে রইল অনেক ঝরা-পাতা আর ধরা-স্মৃতি নিয়ে পৌষের শেষ বিকাল !

(কেউ কি ভাবতে পেরেছি, পিকনিকের আরও অনেক আনন্দ তখনও বাকি ছিল? বলছি, পড়তে থাকুন?)

পরের এবং শেষ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:৪১
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×