somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাব্য-নাটক: ডাকাত

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-------------------------------- প্রথম অঙ্ক -----------------------------------
--------------------------------- দৃশ্য - ১ ------------------------------------


স্থান: কলেজ করিডোর
কাহিনীসূত্র: কাজল বারান্দার রেলিঙের ওপর বসে। শাহীন তার সামনে দাঁড়ানো। শাহীনের বাম পা হাঁটু থেকে নিচ পর্যন্ত প্লাস্টার, বাম হাতে তাই ক্রাচ।

শাহীন।।
আচ্ছা আমি তো বুঝতেই পারছি না -
কী নিয়ে তোর এতটা বেশি জড়তা!
অন্ততঃ এই একটা দৃশ্য করে দেখ?
খুব বেশি হলে গোটা ছয়-সাত সংলাপ
এর মাঝে তোর না-পারার কী আছে?

কাজল।।
তুই হলে গিয়ে খাঁটি জাত-অভিনেতা
তোর কাছে ধর সবটাই খুব নস্যি
ঠান্ডা-মাথার শান্ত-শিষ্ট এই তুই
চোখের পলকে বনে যাস পাকা দস্যি
ফের তোকে দেখে টের পায় কার সাধ্য
তুই ডাকাতের বংশেতে জন্মাসনি!
(একটু থেমে)
আর আমি যদি সাজি ডাকাতের সর্দার...
ওই, হাসবি না - চুপ যা শালা - খবর্দার !
(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
এখনই তো তুই হাসাহাসি শুরু করলি...

শাহীন।।
(কাজলের কাঁধে হাত রেখে)
আরে বন্ধু, এত টেনশন কেন তোর?
আন্তঃকলেজ অ্যামেচার নাটক-ই তো...

কাজল।।
কলেজের মান-সম্মান সব ডোবাবো।
এটা তোর কাজ, তুই-ই খুব ভাল পারতি !

শাহীন।।
(খানিক বিষন্ন কন্ঠে)
সেটা তো বন্ধু আমার নিজেরও আক্ষেপ
শুধু যদি এই পা-টা ভেঙ্গে না বসতাম
(কাজলের দিকে তাকিয়ে কন্ঠ পালটে)
বাদ দে ওসব, তুই প্র্যাকটিস শুরু কর !

কাজল।।
কিন্তু আমার নামটাই কেন তুললি?
মাহি'ও তো ছিল বেশ অভিনয় পারতো !

শাহীন।।
মাহি'র নিজের একটা রোল তো থাকছেই
এর বাইরে, তোকে মনে হল মানাবে
কন্ঠ জোরালো, হাইট'টাও তোর পার্ফেক্ট
কথাও বলেছি - সব্বাই তাতে একমত

কাজল।।
আর...

শাহীন।।
-- আর কোনও কথা শুনতেও আমি চাই না !
তোকে সব আমি দেখিয়ে-পড়িয়ে শেখাবো
এইবার চল ক্লাসে যাই, স্যার আসছে।

(কাজল মাথা নাড়তে নাড়তে, আর শাহীন তার কাঁধ চাপড়ে অভয় দিতে দিতে বেরিয়ে যাবে)







-------------------------------- প্রথম অঙ্ক -----------------------------------
--------------------------------- দৃশ্য - ২ ------------------------------------


স্থান: কলেজ অডিটোরিয়াম
কাহিনীসূত্র: নাটকের প্রাথমিক রিহার্সেলের আগে। ডিরেক্টর রাসেল স্যার কাজল আর শাহীনের সাথে কথা বলছেন। একটু দূরে দাঁড়িয়ে মাহি আর তারেক গল্প করছে।

রাসেল স্যার।।
ক্যারেক্টার'টা কিন্তু ভীষণ ভাইটাল
ভিলেন হলেও নায়কের চেয়ে কম না
কিছু দৃশ্যে তো তোমার রোল-ই সেন্ট্রাল
কাজল, তোমার স্ক্রিপ্ট মুখস্থ আছে তো?

কাজল।।
গত দুইদিনে ডায়লগ শিখে নিয়েছি
জীবনে প্রথম অভিনয় করছি তো স্যার,
তাই স্যার একটু নার্ভাস ফিল করছি

রাসেল স্যার।।
সারাটা জীবন অভিনয়-ই করি আমরা
নিজ নামে করি, তাই কেউ টের পাই না...
আচ্ছা কাজল, আশা করি তুমি পারবে

শাহীন।।
দেখবেন স্যার, কাজল ভালই পারবে

রাসেল স্যার।।
শাহীন তুমিই ছিলে আমার ভরসা
(শাহীনের পায়ের দিকে তাকিয়ে)
দূর্ঘটনার ওপর তো কারও হাত নেই

(রাসেল স্যার আশেপাশে তাকিয়ে মাহি আর তারেক'কে দেখতে পান এবং হাতের ইশারায় ডাকেন)

রাসেল স্যার।।
(কাজলের দিকে তাকিয়ে)
মাহীন্দ্রকে তো চেনই, তোমার ক্লাসমেট
এই নাটকে সে-ই নায়কের ভূমিকায়
মাহি'র সাথেই তোমার প্রথম সংলাপ

তারেক।।
(চট করে হাস্যরসের ভঙ্গিতে)
প্রথম দৃশ্যে নায়ক-ভিলেন সাক্ষাৎ !
শুরুতেই কোনও অ্যাকশান সিন নাকি, স্যার?

রাসেল স্যার।।
এই ছেলেটা একটু বেশিই কথা কয় !
(তারেকের হাসি বন্ধ। স্যার বলতে থাকেন...)
কাজল, রেডী? মাহি, সবকিছু 'ওকে' তো?
তাহলে চল, মঞ্চের দিকে যাওয়া যাক।

(পাঁচজনই বেরিয়ে যাবে।
প্রথমে রাসেল স্যার, তার পাশে মাহি।
একটু পেছনে শাহীন (খুঁড়িয়ে হাটার কারণে) আর তার পাশে কাজল।
সবার থেকে তফাতে তারেক।)








-------------------------------- প্রথম অঙ্ক -----------------------------------
--------------------------------- দৃশ্য - ৩ ------------------------------------


স্থান: কলেজ ক্যান্টিন
কাহিনীসূত্র: কাজল, শাহীন, মাহি রিহার্সেল শেষে ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছে। তারেক উচ্চঃস্বরে কথা বলতে বলতে প্রবেশ করবে।


তারেক।।
এই যে এদিকে চা দিও আরও এক কাপ !
(কাজলের পাশে চেয়ার টেনে বসতে বসতে)
ফাটিয়ে দিয়েছো, কাঁপিয়ে দিয়েছো বন্ধু!
এত কই লুকিয়ে থাকতে ওস্তাদ?
এক সপ্তায় যা তুমি করে দেখালে
আটদিন পর নাটক যখন নামবে
দেখবা সবাই কেমন টাশকি খেয়ে যায় !

মাহি।।
সত্যি কাজল, তুখোড় তোমার অ্যাক্টিং
ক্যারেক্টার'টা খুব মানিয়ে নিয়েছো।

তারেক।।
মানিয়েছে মানে? দাসু-ডাকাতের রোল'টা
মনে হচ্ছিল ওর জন্যেই তৈরি !

(শাহীন শব্দ করে চায়ের কাপ রাখে। তার চেহারায় মনঃক্ষুন্ন ভাব স্পষ্ট এবং কাজল সেটা খেয়াল করে)

কাজল।।
বাজে বকিস না, ওটা শাহীনের জাত রোল
আমি তো কেবল প্রক্সি দিচ্ছি এইবার
(শাহীনের দিকে তাকিয়ে)
শাহীন, তোর ঐ পায়ের এখন কী হাল?
প্লাস্টার কবে খুলতে পারবে, বলেছে?

শাহীন।।
(চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে)
প্লাস্টার?
(তারপর হঠাৎ অ্যাবসেন্ট মাইন্ড থেকে ফেরার মত করে)
ও হ্যাঁ, আরও দশদিন পর খুলবে
সপ্তাহ দুয়েক পরই পুরোই ফিটফাট

কাজল।।
ইশ যদি আর সাতদিন আগে সারতো?

শাহীন।।
এক সপ্তাহ আগে সারলেও কী হত?
যেদিন সারতো, তার পরদিনই শো'র ডেট
রিহার্সেলের সময়ও তো আর হতো না
এবারের শো আমার কপালে ছিল না।
আচ্ছা, এখন ওসব চিন্তা বাদ দে -
আর, কেন ভাই, তুই তো ভালই করছিস!

(ক্যান্টিনের পাশ দিয়ে রাসেল স্যার হেঁটে যাওয়ার সময় ওদের দেখে থামলেন এবং ডাকলেন। চারজনই উঠে গেল)

রাসেল স্যার।।
এই যে ছেলেরা, খবর কি কিছু শুনেছো?
নাটকের ডেট ঠিক একমাস পেছালো
একটু আগেই বিজ্ঞপ্তিটা পড়লাম
নোটিসবোর্ডে দেখবে নতুন শিডিউল
(হেঁটে যেতে যেতে)
তোমরা আবার প্র্যাকটিসে ঢিল দিও না,
রিহার্সেলে সব নিয়মিত থাকা চাই !

(স্যার বেরিয়ে যাবেন। তার পেছেনে বাকিরাও।
একটু তফাতে শাহীন; তার চেহারা খানিক উজ্জ্বল, হালকা হাসিমুখ)








-------------------------------- প্রথম অঙ্ক -----------------------------------
--------------------------------- দৃশ্য - ৪ ------------------------------------


স্থান: কলেজের টিচার্স কমনরুম
কাহিনীসূত্র: রাসেল স্যারের টেবিলের সামনে শাহীন দাঁড়িয়ে। স্যার চেয়ারে বসা।


শাহীন।।
স্যার, এখন তো আমি পুরোপুরি সুস্থ
নাটক নামতে বাকি আছে আরও বিশদিন
আমি কি তাহলে প্র্যাকটিস শুরু করব?
দাসু-ডাকাতটা জমিয়ে ফেলব এইবার -
হল-ভর্তি দর্শক কেঁপে উঠবে !

রাসেল স্যার।।
কিন্তু শাহীন, ব্যাপার তো তুমি দেখছোই
কাজল খুবই ভাল অভিনয় করছে

শাহীন।।
ওকে তবে স্যার অন্য একটা রোল দেন?

রাসেল স্যার।।
এই নাটকের গল্পে তো তুমি দেখলেই
প্রধান বলতে রোল আছে শুধু দুইটাই
একটা মাহি'র অন্যটা দাসু-ডাকাতের;
কাজল এসেই এমন মাতিয়ে দিয়েছে
ওকে বাদ দিলে সেটা হয়ে যাবে অন্যায়

শাহীন।।
অথচ এ রোলে আমিই ছিলাম ভরসা
আমার কথা না, আপনার কথা এটা স্যার।
ও যা করছে, আমিই তো ওকে শেখালাম
ওর মাঝে তাই আমার ছায়াই দেখছেন
ছায়ার চাইতে মূল বস্তু কি বড় নয়?

রাসেল স্যার।।
ছায়া ব্যাপার'টা আলোর সঙ্গে জড়িত
আলোটাকে যদি অন্য উপায়ে ধরা যায়
ছায়ার ব্যাপ্তি বস্তুর চেয়ে বড় হয়...
(শাহীনের মুখের দিকে তাকিয়ে)
কাজলের সাথে এ নিয়ে কি কথা বলেছো?
(খানিকক্ষণ বিরতির পর)
চুপ করে আছো, তার মানে কথা বলোনি
স্বার্থ এবং বন্ধু - দুইটা দুই পথ
একের প্রশ্ন অন্যকে করা যায় না
আচ্ছা ঠিকাছে, তুমি যাও, আমি দেখছি

(শাহীন বেরিয়ে যাবে।
রাসেল স্যার দ্বিধান্বিতভাবে চেয়ারে বসে মাথা নাড়বেন)






----------------------------- প্রথম অঙ্ক সমাপ্ত -------------------------------

(এবং শেষ হয়নি। চলবে...)

লেখার তারিখ: জানুয়ারি ১০, ২০১৩
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২৪
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×