somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবার কলকাতা ৩

১৫ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবার কলকাতা ১আবার কলকাতা ১

আবার কলকাতা ২আবার কলকাতা ২

টেলিফোন কেটে গিয়েছিলো। আবার ফোন বাজলো, রিসেপসন থেকে কেউ একজন বলল, স্যার রুমে বসে থাকবেন না। ভূমি কম্প হচ্ছে নিচে নেমে আসুন। ততক্ষণে ভূমিকম্প শেষ। আমাদের রুমে লাগেজ বয়ে নিয়ে গিয়েছিলো আবিদ নামের তরুন একজন ওয়েটার, আমি নিচে নামার পর ম্যানেজার তাকে বললেন, ‘আবিদ! স্যারকে ২০৮টা দেখিয়ে দাও। ওটা বড় আছে। শুনলাম ভুমিকম্পের পরপরই ২০৮এর গেস্ট চেক আউট করেছেন। ২০৮টা আমার পছন্দ হলেও বউ বাচ্চার উশখুশ দূর হলনা, এটির বাথরুম ছোট। শেষ পর্যন্ত সেখানেই ঠাঁই হল। আবিদ বলল, আমি খেয়াল রাখবো ম্যাম, ২০৩ খালি হলেই শিফট করে দোবো। আজকের দিনটা থাকুন।
আমাদের কলকাতা সফরের আসল উদ্দেশ্য ডাক্তার দেখানো। যেহেতু নয়টার মধ্যেই প্লেন নেমেছিলো ভেবেছিলাম প্রথমে বৈদ্যদর্শণ শেষ করে ঝাপিয়ে পড়বো কলকাতা দর্শণে। রঘুদাস আমাদের সে পরিকল্পনায় পানি ঢেলে দিয়েছিলো ঘুরপথে এনে। সে সব বাদ দিয়ে নেমে পড়লাম মির্জা গালিব স্ট্রিট চষে বেড়াতে।

আমার মত যেসব মানুষ কলকাতার লেখকদের গল্প পড়তে পড়তে বড় হয়েছে তাদের জন্যে মির্জা গালিবের চেয়ে আর ভালো ঠাঁই কলকাতায় নেই। পার্ক স্ট্রিট থেকে বেরিয়ে একটু কোনাকুনি হয়ে উত্তর দিকে রাস্তাটি লেনিন সরণীতে গিয়ে ঠেকেছে। এই রাস্তার দুপাশে ছড়িয়ে ছটিয়ে মুহাম্মাদ ইসহাক স্ট্রিট, রয়েড স্ট্রিট, লিন্ডসে স্ট্রিট চৌরঙ্গী লেন, সাদার স্ট্রিট, মারকুইজ স্ট্রিট, নিউমার্কেট, একটু দূরে এসপ্লানেড ধর্মতলা, রফি আহমেদ কিদোয়াই সড়ক। আমাদের বিমান অফিস, সোহাগ পরিবহনের অফিস, গ্রীন লাইন, শ্যামলী সব এখানেই। আর আমাদের হোটেলের ঠিক উল্টো দিকে ৫৬ নম্বর বাড়িতে আর্মেনিয়ান কলেজ। এই বাড়িতে জন্ম হয়েছিলো ভ্যানিটি ফেয়ারের লেখক উইলিয়াম থ্যাকারের।

আমার কাছে কলকাতার প্রধান তিনটি আকর্ষণ ইসলামিয়া কলেজ, ৮ থিয়েটার রোড আর জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি। আমার বাবা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন। আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মিঃ এ এন এম আব্দুল করিম এই কলেজে আমার বাবার দুই বছরের সিনিয়ার ছিলেন। ৪৭ এর দাঙ্গায় এক হিন্দু শিক্ষক তাঁদের আগলে রেখেছিলেন। থিয়েটার রোডও এখান থেকে দূরে নয়। ৮ থিয়েটার রোডে ছিলো প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সদর দপ্তর। আগের দূবার বাড়িটি আমি খুঁজে পাইনি। আর জোড়াসাঁকোর গল্প পরে হবে।

যারা কমখরচে কলকাতা দর্শনে যেতে চান, কম পয়সায় কেনা কাটা করতে চান তাদের জন্যেও আদর্শ জায়গা এটিই। চামড়ার জুতো, ব্যাগ, স্যুটকেস, কিনতে হলে শ্রীলেদার্সে চলে যান। ফায়ার ব্রিগেডের উল্টো দিকে তাদের বিশাল শো রুম। আর একটু সামনে গেলে লিন্ডসে স্ট্রীট, সেখান থেকে বায়ে গেলেই হাতের ডানে মোটামুটি দামী হোটেল স্যাফায়ার স্যুট, তারপরেই নিউমার্কেট।
লিন্ডসে স্ট্রিটে আছে দামী জুতোর দোকান উডল্যান্ড, পরিচিত দোকান খাদিমস, আর বাজার কলকাতা নামে একটি কাপড়চোপড়ের দোকান। বাজার কলকাতার আরও কয়েকটি শাখা দেখেছি পার্ক স্ট্রিট আর অন্য কোথাও।
নিউমার্কেটের দক্ষিণে মান্যবরের একটি শো রুম দেখেও যেতে ইচ্ছে হলোনা। গেলাম প্যান্টালুনসের ফ্যক্টরি আউট লেটে। শোরুম গুলির চেয়ে অনেক সস্তায় জিন্স, টি সার্ট, ফরমাল জামাকাপড় পাওয়া যায় এখানে।
সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তাঘাট দোকান পাট ঘুরে একটি বিষয় উপলব্ধি হলো কলকাতা থেকে বাংলা দ্রূত গুটিয়ে পড়ছে। দোকানে, অফিসে, ঘরে বাইরে হিন্দির সাথে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছে না বাংলা। কে কত ভালো হিন্দি বা উর্দু বলতে পারে সব খানে মনে হচ্ছে তারই প্রতিযোগিতা চলছে।






সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৫ ভোর ৫:৩০
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×