somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবার কলকাতা ৪

২১ শে জুন, ২০১৫ রাত ৩:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আবার কলকাতা ৩

নিউ মার্কেটের দিকেই ভাসমান মানুষ বেশি

কলকাতা শহরের প্রধান সমস্যা ভাসমান মানুষ। প্রায় আশি হাজার লোক প্রতিরাতে রাস্তায় ঘুমায় এ শহরে। তাদের মধ্যে অন্ততঃ সত্তর ভাগের ঠিকানাই ফুটপাত। বাকীদের কেউ রেলস্টেশনে, কেউ বাসস্টপে এক দু’দিনের অতিথি। হয়তো গ্রাম থেকে এসে আর সেদিন ফিরে যাওয়া হলোনা। রাত কাটলো রেলস্টেশনে কিম্বা বাসস্টপে অথবা দোকানের বারান্দায়। সকাল বেলায় ব্যাপারটা বেশি চোখে পড়ে।
মির্জা গালিব স্ট্রিটের সকালটা ভালো হয়না। হোটেল থেকে বেরিয়ে ফুটপাথে কিম্বা দোকানের বারান্দায় গাদাগাদি করে মানুষ শুয়ে থাকতে দেখলে দম বন্ধ হয়ে আসে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে জানি নিউমার্কেটের দিকেই ভাসমান মানুষ বেশি ভাসে। এবার তাই সেদিকে পা না বাড়িয়ে মার্কুইজ স্ট্রিটের দিকে রওনা দিলাম। এই রাস্তা কস্তুরি রেস্তোরা (বাংলাদেশিদের ভিড়ে সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত সরগরম থাকে রেস্তোরাটি), গ্রীন লাইনের অফিস, কটন গ্যালারির মাঝ দিয়ে সোজা রাফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে মিলেছে। এখান থেকে দক্ষিণে পার্কস্ট্রিট দিয়ে বায়ে এগোলে ক্যামাক স্ট্রিট। সেখান থেকে সেক্সপিয়ার সরণীতে ঢোকা সোজা। এদিকে রওনা দেবার আরেকটি কারণ আমদের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার প্রবাসী সরকারের অফিস খুঁজে বেরকরা। আগের দু’বার পারিনি। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে যে বাড়িটিকে প্রবাসী সরকারের অফিস হিসেবে দেখানো হয়েছে সেটিকে আমার সঠিক মনে হয়নি। বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতে আমাদের দূতাবাসের বড় কর্তাদের সাথে কথাও বলেছি। তাঁরা বিস্মিত হয়েছেন। আমার মনের সন্দেহ দূর হয়নি।

কস্তুরি ছাড়িয়ে সামনে এগোতেই একটি ওষুধের দোকানের বারান্দা থেকে মশারি উঠিয়ে সালাম দিল আফজাল খান। হোটেলের পাশের ফুটপাথে মাটির ভাড়ে চা খেতে গিয়ে তাঁর সাথে পরিচয়। ষোলবছর আগে বিহার থেকে এসে তিনি চায়ের দোকান করে থিতু হয়েছেন মির্জা গালিব স্ট্রিটে। সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম – আপনার বাসা? মশারি গোছাতে গোছাতে বলল, ‘না বাবু। আমার গাও তো যমনাপুর মে, মাকান ভি ওখানেই আছে। কলকাত্তায় এই খাটিয়া আমার পাতা আছে। ‘খাটিয়া আমার পাতা আছে’ কথাটা এলোমেলো মনে হল, বললাম, ‘সামঝা নেহি’
– হিন্দি আতা হায়?
– না, না হিন্দি বুঝিনা
– ঠিক হায়, বুঝিয়ে বলছি খাটিয়া পাতা হায় মতলব, এই খাটিয়া আমার ঠিকানা আছে। চবিশ বরস উমর থেকে আমি এ খানেই ঘুমাই। এখন তো আমার উমর চাল্লিশ হোয়ে গেল।
বললাম, পয়সা দিতে হয়?
– হা, দিতে হোয়। বলতে বলতে মনে হল অনেক বছর পেছনে ফিরে গেল আফজাল খান। প্যাহলে যখন এসেছি তখন মাহিনা মে ১০ টাকা দিতে হত এখন ৩০০ টাকা। মতলব, ষোল বোছরে কিরায়া তিস গুণ বেড়ে গেল।
সূর্যের আলো ততক্ষণে মার্কুইজ স্ট্রিটের দোকানের বারান্দা, সদ্য ঝাপ খোলা দোকান, আর জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে উকি দেওয়া শুরু করছে। আফজাল খানকে রেখে, সেসব পিছু ফেলে রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের দিকে পা বাড়ালাম। এখানে তখনও দোকানপাট খোলেনি। আস্তেধীরে ফুটপাথের মানুষের ঘুম ভাঙছে। আরেকটু দূরে কলিন স্ট্রীটের সরকারি পানির কলের লাইন কিদোয়াই রোডের মোড় পর্যন্ত পৌছে গেছে। কলকাতায় কত লোক যে ফুটপাথের কলে গোসল করে তাঁর ইয়ত্তা নেই। শুধু এই পুরনো কলকাতায় নয়, সাউথ কলকাতার অভিজাত এলাকায় যাওয়ার পথে গতবার প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডেও একই দৃশ্য চোখে পড়েছে।

কলকাতায় এ দৃশ্য বিরল নয়

পার্কস্ট্রিটের যে মোড় থেকে ক্যমাক স্ট্রিট শুরু হয়েছে সেখানে মাদার তেরেসার একটি আবক্ষ মূর্তি রঘুদাসের কথা মনে করিয়ে দিলো, ‘কলকাত্তার রাস্তার লাফড়া হলো বাবু একই রাস্তার ওনেক নাম বুঝলেন এই যেমন পার্ক স্ট্রিটের একদিকের বোর্ডে দেখবেন মাদার তেরেসা রোড লেখা আছে’। ক্যামাক স্ট্রীটের নতুন নাম হয়েছে অবনীন্দ্র নাথ ঠাকুর রোড। একটু সামনে এগিয়ে হাতের বাদিকে প্যান্টালুনের বিশাল শো রুম। গতবার পয়সা বাঁচাতে দীপাকে নিয়ে এই দোকানে হেটে আসতে গিয়ে পথ হারিয়ে পা ব্যাথা করে ফেলে ট্যাক্সি নিতে হয়েছিলো।

মাদার তেরেসা

চড়চড়িয়ে রোদ উঠে যাচ্ছে দেখে আর সামনে এগোতে ইচ্ছে করলো না। উল্টো ঘুরে হোটেলের দিকে হাটতে শুরু করলাম।
রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড এতক্ষণে পুরোপুরি জেগে উঠেছে। সবগুলি বড় দোকান না খুললেও, কাঁচা বাজার, মনিহারি দোকান, মুদি দোকান আর নাস্তার দোকানে ভীড় জমে গেছে। কলিন স্ট্রীট দিয়ে মির্জা গালিবে আসার একটি শর্টকাট রাস্তা আছে। সরু গলির মত এই রাস্তার দু’পাশে অনেক গুলি দোকানে বড় বড় খাজাঞ্চিতে সব্জি সাজানো হয়ে গেছে, কাগজের মোড়কে হালুয়া জড়াচ্ছে কিছুলোক, বড় বড় কড়াইয়ে খালি গায়ে পুরি ভাজছে কেউ কেউ, ফুটপাথে ঠেলা গাড়িতে নাস্তা সাজাচ্ছে কয়েকজন, এসব দেখতে দেখতে এক সময় মনে হলো জায়গাটা আর চিনতে পারছি না

ফুটপাথেই ক্ষৌর কর্ম

তিনটে পুরি /পরটা সাথে একপ্লেট আলুরদম আর ডাল অথবা সবজি ১৫ টাকা

ঘড়িতে প্রায় আটটা বাজছে, ১০ টার সময় ডাক্তারের এপয়ন্টমেন্ট। পিয়ারলেস যেতে অন্তত সোয়া ঘন্টা লাগার কথা আর আমি সাইনবোর্ড অথবা বাড়ির নম্বর দেখে পথ খোঁজার চেষ্টা করছি। ঢাকায় নবাবপুর থেকে লালচান মুকিম লেন হয়ে ধোলাইখাল আসতে গিয়ে এরকম হয়েছিলো একবার। সে কথা মনে করে ঘামতে ঘামতে একজনকে রাস্তা জিজ্ঞেস করে বুঝলাম, কলিন স্ট্রিট দিয়ে চক্কর খেতে খেতে আমি কলিন লেনে এসে পড়েছি ।
(অসমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:৪৫
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×