somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময় এবং বাবুইয়ের বাসা

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লাইব্রেরীর সিড়িতে বসে আছে রুদ্র। আজ প্রায় আড়াই বছর পর মনা'র সাথে দেখা হবে। একটা সময় ছিল, প্রতিদিন দুজনের ঘন্টা দুই-তিনেক গল্প না করলে ভাত হজম হতনা। আর দেখা না হওয়াতো অসম্ভব চিন্তা। বসে গল্প করার জন্যে দুজনের পছন্দের জায়গা লাইব্রেরীর সিড়ি। লাইব্রেরীতে যাদের নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল তাদের সকলেরই মুখচেনা ছিল ওরা।

রুদ্র আর মনা একই ইউনিভার্রিটিতে ভিন্ন ভিন্ন ডিপার্টমেন্টে পড়ত। খুব ভাল বন্ধু ছিল তারা। যাকে বলে বেস্ট ফ্রেন্ড। তবে প্রেম ছিল কিনা সেটা পরিস্কার না। প্রেম থাকুক আর না থাকুক, দুজনের প্রতি টানটা খুব বেশিই ছিল। একজনের ভাললাগা-মন্দলাগা, হাসি-কান্নায় শেয়ারিং কেয়ারিংয়ের মাত্রা ছিল অসম্ভব গাঢ়।

গাঢ় বন্ধুত্বের মাঝে একদিন দূরত্ব চলে আসল। অনার্স শেষ করে মাস্টার্স করতে কানাডায় চলে যায় মনা। মনার বাবার খুব ইচ্ছা সে বাইরে মাস্টার্স করুক। তাই বাবার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতেই হচ্ছে, যদিও তার নিজের কোন ইচ্ছাই ছিলনা। দেশ নয়, অাত্মীয় নয়, মনার সবচে বেশি কষ্ট হচ্ছিল রুদ্রকে ছেড়ে যেতে। রুদ্রও মনেপ্রানে চাচ্ছিল মনা না যাক। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারেনি। বলা কী যায়??

যাওয়ার আগে শেষ যেদিন মনার সাথে লাইব্রেরিতে দেখা হয় রুদ্রর, সেদিন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে মনা বলেছিল, 'যেদিন দেশে ফিরবো সেদিন এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানে চলে আসব। তখন যেন তোমাকে এখানে বসা পাই।'

তারপর চলে যায় মনা। যাওয়ার পর দুজনেরই দিন কাটতে থাকে বিস্বাদে। ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন, ফেসবুকে চ্যাট, স্কাইপি, যোগাযোগ আছেই। সামনা সামনি প্রকাশ না করলেও আড়ালে দূরত্বের কষ্টটা পেতো দুজনই।

একটা কথা আছে, চোখের আড়াল তো মনের আড়াল। ভার্চুয়াল যোগাযোগ কতদিন?! যোগাযোগ কমতে থাকে। কমতে কমতে একটা সময় আসে, দিনে একবার, তারপর সপ্তাহে একবার, এরপর মাসে একবার। রুদ্র এখানে পড়ালেখা এরপর চাকরি-বাকরিতে ব্যাস্ত হয়ে যায়। মনাও খুজে নেয় নতুন সার্কেল।

গত পড়শু মনা দেশে ফিরেছে। রুদ্র জেনেছে কাল। ফোন দিয়ে বলেছে, আজ দেখা করবে। বিকেলে যেন লাইব্রেরিতে থাকে। খুশিতে আত্মহারা হলেও রুদ্র কষ্ট পাচ্ছিল এই ভেবে, দেশে ফেরার তিনদিন পর দেখা হচ্ছে মনার সাথে। তবে যাই হোক, আড়াই বছর পর মনাকে দেখবে সে। রুদ্রের মনে হচ্ছে, আজ যেন ঈদের দিন।

বিকেলে দেখা হবার কথা থাকলেও সকাল থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। আজ অফিস থেকেও ছুটি নিয়েছে। উত্তেজনায় বিকেলের আগেই চলে এসেছে লাইব্রেরির সিড়িতে। একা একা বসে বসে বারবার ঘড়ি দেখছে। কখন বিকেল হবে...

মনার জন্যে একটা উপহার এনেছে সে। বাবুই পাখির বাসা। গতবছর তাদের বাড়ির তালগাছ থেকে পড়েছিল। হাতে পেয়ে তখনই রুদ্র ঠিক করেছিল, মনা যখন ফিরবে তখন তাকে এটা দিবে সে। এরপর খুব যত্নে রেখেছে সে এটাকে। এক কনা ময়লাও পড়তে দেয়নি। আজ যত্নের উপহার যতনে দেবে সে প্রিয় বন্ধুটিকে। এ যেন চির কাঙ্খিত ক্ষন।

ছয়টা বাজে। মনা বলেছিল চারটার কথা। কিন্তু আসেনি এখনো। সময় যেন যাচ্ছেইনা রুদ্রর। নির্ধারিত সময়ের পরের অপেক্ষাটা অপেক্ষার চাইতেও কঠিন হয়। তবুও দেখা হবে এই খুশিতেই বসে আছে রুদ্র।

সাতটার সময় ফোন আসে। ওপাশ থেকে মনা নম্র সূরে বলল, সরি রুদ্র, আমার আসলে মনে ছিলনা যে তোমার সাথে আজ দেখা করার কথা। মাত্র মনে পড়লো কিন্তু এখনতো আসা সম্ভব না। কানাডার ইউনিভার্সিটির এক বাংলাদেশি ফ্রেন্ডের বাসায় যেতে হবে। না গেলে ও মাইন্ড করবে। তুই বাসায় চলে যা। তোর সাথে সামনের সপ্তাহে দেখা করবো। কাল গ্রামের বাড়িতে যাব। সপ্তাহখানেক থাকবো। মাইন্ড করিসনা,কেমন। বাই।

কোন উত্তর করেনি রুদ্র শুধু শুনেছে। এরপর কিছুক্ষন বসে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে চলে গেছে। যাবার সময় শুধু বাবুইয়ের বাসাটা পায়ে দলে গেছে
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×