somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশী ‘ডিয়াসপোরা’ ও জাতিসংঘে আমাদের পরিচয় উপস্থাপনা

২৬ শে অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চৌদ্দ হাজার মাইল দূরে কেন, পৃথিবী ছেড়ে দূরে বহুদূরে অন্যগ্রহে গ্রহান্তরিত হলেও মানুষ নিজ দেশের নরম মাটির কোমল পরশ ও অব্যক্ত মমতায় সিক্ত গভীর ভালবাসা ভুলতে পারে না। আবেগের আতিশয্যে অথবা কারো প্রতি অন্ধভক্তির ফলে তাই আমরা অনেক বেফাঁস কথা বলে ফেলি, কখনোবা স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রয়োজনীয় আবেগ দমন করতে অতিশয়োক্তির বদলে পরিমিতবোধের স্বাক্ষরও রাখতে পারি না। নিজ ঘরের প্রতি আকর্ষন পরিমাপের কোন মানদন্ড থাকলে তা জ্ঞানী-গুনীজন ইয়াজুদ্দিন, ফখরুদ্দিন ও মইনুদ্দিন থেকে শুরু করে র.নবীর টোকাই পর্যন্ত নিশ্চিত জানি একই সুচক নির্দেশ করবে। কিন্ত এর পরেও কথা থেকে যায়। ক্ষমতা ও বিত্তের মোহে পড়ে অথবা ক্রোধের বশে আমাদের অনেক অপরিমিত ও অনভিজ্ঞ কর্মকান্ডের খেসারত জাতিকে অনেক কাল পর্যন্ত বহন করতে হয়। তাছাড়া নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা শুরু ও সম্পন্ন করার লোকের অভাব তো কোন সময়ই ছিল না।
আমেরিকার ম্যাসাচুসেট্‌সের বোস্টন ভিত্তিক একটি কাগুজে সংগঠন জেএফকে স্কুল অফ গভর্ণমেন্টে ২২শে অক্টোবরের জেনারেল মইন উ আহ্‌মেদের উপস্থিতি ঠেকানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটির ডীন ডঃ ডেভিড এলউড বরাবর ইমেইলে অনুরোধ জানিয়ে ইন্টারনেটে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে নেমে পড়ে। বর্তমান সেনাপ্রধাণকে ‘জেনারেল পিনোশেট অফ বাংলাদেশ’,র‌্যাবকে কুখ্যাত গেস্টাপো সদৃশ নিরাপত্তা বাহিনী আখ্যায়িত করে হত্যা, গুম, নির্যাতন, বাকস্বাধীনতা হরণ, গণতন্ত্র হত্যাসহ দু’পাতা ধরে এন্তার অভিযোগ করে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের পদাংক অনুসরন করতে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। অং সুচীর মত গণতন্ত্রের প্রতীক শেখ হাসিনাকে সামরিক জান্তারা ডিটেনশনে রেখেছে, ইন্টারনেট মনিটরিংসহ মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে, ডিজিএফ ও এনএসআইয়ের সহায়তায় প্রতিপক্ষের বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিবিদ, ছাত্রদের বিরুদ্ধে রাস্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাস চালিয়ে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা, অপহরণ করছে অথবা গাদা করে ধরে ধরে জেল ভরছে ইত্যাদি। বাংলাদেশী ডিয়াসপোরা (Diaspora) ও ফ্রি ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশের জয়েন্ট সেক্রেটারী পরিচয় দিয়ে বিপুল কমল তার নিজের কথিত মাতৃভূমিকে বুশের নানা অপকর্মের ঘনিষ্ঠ মিত্র জাঁদরেল জেনারেল মোশাররফের বর্তমান পাকিস্তানের সাথে বরাবরের মত তুলনা না করে কেন আমেরিকা বিরোধী মিয়ানমারের সাথে করলেন তা সচেতন পাঠকদের বুঝতে হয়তো এখন আর কষ্ট করতে হবে না।
অভিনব পরিভাষা ‘বাংলাদেশী ডিয়াসপোরা’ বলে পরিচয় দিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসমূহের সহানুভূতি ও মহাশক্তিধর সম্প্রদায়ের নজর কাড়ার কৌশলটির মধ্যেও একটি ঐতিহাসিক তাত্পর্য রয়েছে। অত্যাচারী ও সাম্রাজ্য বিস্তৃতকারী লোভী রাজা বাদশাহদের দ্বারা দখলীকৃত দেশের বৈধ নাগরিকদের বিশেষ কোন গোষ্ঠী নিধনে ভিটে মাটি থেকে বিতাড়িত হওয়া জাতিকে প্রাচীন গ্রীকরা এই ডিয়াসপোরা শব্দটি দ্বারা বুঝাত। ওল্ড টেস্টামেন্ট গ্রীক ভাষায় অনূদিত হওয়ার সময় ৫৮৬ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে বেবিলয়ীনদের দ্বারা জুডিয়া থেকে এবং রোমানদের দ্বারা ১৩৬ খ্রীষ্টাব্দে জেরুযালেম থেকে বিতাড়িত ও জাতি নিধনযজ্ঞের শিকার হওয়া ইহুদী সম্প্রদায়কে বুঝানোর জন্য এই শব্দটি ব্যবহ্নত হয়েছে। বর্তমানে ইহুদী ছাড়া তেমন আর কেউই এমনকি খোদ গ্রীকরাও এ শব্দটি আর ব্যবহার করে না। বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে রাস্ট্রীয়ভাবে কোন জাতিকে নিঃশেষ করার প্রক্রিয়ার কথা কখনো শোনা যায়নি। বিচারের ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো দুস্কৃতিকারীদেরকে অথবা মিথ্যা তথ্য প্রদর্শন করে স্বপ্নের দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদেরকে তো আমরা সংজ্ঞাগত কারনেই ডিয়াসপোরা বলে অভিহিত করতেও পারিনা।
নিজের অজান্তে হয়তোবা আমরা অনেকেই নিজের পায়ে প্রতিযোগিতা করে কুড়াল মারছি। শাস্ত্রে আছে, গুরুজনে কর নতি, সেবা কর কায়মনে। বাবা-মা অবিবেচনাসুলভ আচরন করলেও পারতপক্ষে তাদের আদেশ নিষেধ অমান্য করতে নেই, তবে সদ্ভাব জাগ্রত করতে নিস্পাপ প্রার্থণা করায় তো কোন দোষও দেখিনা।
গত ২৭শে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬২তম অধিবেশনে পরিবেশ বিষয়ক সাধারণ বিতর্কে অংশ নিতে গিয়ে প্রদত্ত ভাষণে নিজের প্রিয় মাতৃভূমিকে বিশ্বের সর্বোচচ ফোরামে ড. ফখরুদ্দীন আহ্‌মদ তুলে ধরলেন এভাবে, ‘বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে দুর্নীতির দুষ্টচক্রে গণতন্ত্রের উপাদানগুলো আবদ্ধ ছিল। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সৃষ্ট প্রবল হতাশার পরিণতিতে রাজনৈতিক সন্ত্রাস ব্যাপক আকার ধারণ করে। এর ফলে জনজীবন বিঘ্নিত হয় এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে। পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন সন্ত্রাস চক্রের অবসান করবে তেমন আশা ছিল ক্ষীণ। ফলে সেই গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে নতুন করে সূচনার উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ বছর ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।’
জনাব ফখরুদ্দীন আরও বলেন, ‘গত দু’দশকে বাংলাদেশে তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে নির্মমভাবে প্রতিহত করা হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক, প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার অভাব দুর্নীতিকে আরও লাগামহীন করে তোলে। নির্বাচনে জয়লাভের সুবিধা বৃদ্ধির ফলে বেশি মূল্য দিতে হওয়ার পরিণতিতে একটি দুষ্টচক্র তৈরি হয়েছিল, যার কেন্দ্রে ছিল দুর্নীতি। দুর্নীতি যে কোনো মূল্যে নির্বাচনে বিজয়ের কলকাঠিতে পরিণত হয়। এই নেতিবাচক প্রবণতার কবল থেকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে রক্ষা করার লক্ষ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও অর্থবহ নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই প্রথমে রাজনীতিকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির কবল থেকে মুক্ত করতে হবে।’
গ্লোবাল ওয়ার্মিং বিষয়ক একটি মাত্র অনুচ্ছেদ ব্যতীত সজ্জন খ্যাত মেধাবী এই আশাবাদী মানুষটির নয় পৃষ্টাব্যাপী দীর্ঘ বক্তব্য পড়ে মনে হচ্ছিল বিরোধীদল থেকে কেবল নির্বাচিত হয়ে এসে সদ্য প্রধাণমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের পার্লামেন্টে সাবেক সরকারকে তুলোধুনো করছেন। সংগতকারনেই পাঠকদের সামনে পুরো ভাষনটি উদ্ধৃত করলাম না। যাহোক, স্বদেশবিনাশী এমন সর্বনাশা বক্তব্য আমাদের প্রেস সেক্রেটারী বা অভিজ্ঞ আমলারা কিভাবে তৈরি করে দিলেন তার প্রবাহ তালাশ করার জন্য জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে অন্যান্য দেশের সরকার প্রধাণদের বক্তব্য পড়া ও তার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করলাম।
দূর্ণীতিতে সবসময়ই যে দেশটি আমাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে সমগোত্রীয় পর্যায়ে এসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে সেই হাইতির প্রেসিডেন্ট রিনে প্রিভেলও তার বক্তৃতায় নিজ দেশের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কিছু বলেননি। যুগ যুগ ধরে গৃহযুদ্ধে বিপর্যদস্থ শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট আলোচনা শুরুই করেছেন তার দেশের প্রাচীন সভ্যতাকে গ্রীক সভ্যতার সাথে তুলনা করে এবং সিংহলী ও তামিল ভাষার গুণকীর্তনের মধ্য দিয়ে। সিংহলীকে ‘জীবন্ত ভাষা’ আখ্যায়িত করে তিনি নিজের দায়বদ্ধতা মনে করে এই ভাষাকেই অধিবেশনে বক্তৃতা দেয়ার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। মাহিন্দা রাজাপাক্সার পুরো গোছালো ও সাবলীল বক্তৃতাটি পড়ে মনে হয়েছে এমন উচচমার্গের মানুষ রাষ্ট্র ক্ষমতায় খুব বেশী আসীন হওয়ার সুযোগ পান না। তিনি নিঊটনের বিখ্যাত উক্তি ‘We build too many walls and not enough bridges (আমরা শুধু দেয়ালই বানাই, যথেষ্ঠ পরিমান সেতু বানাইনা)’ সহ অনেক উদাহরন এমনকি ফিলিস্তিন প্রসংগ টেনে এনে তাঁর নিজ দেশের হাজারো সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে বলেছেন, কিভাবে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে ফিরে এসে শান্তির সাথে পৃথিবীতে একত্রে বসবাস করা যায়। শেষ করেছেন ‘ট্রিপল গেম (তিন দেবতা বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘ) আপনাদের আশীর্বাদ করুন’ বলে।
ভেবেছিলাম, গণতান্ত্রিক সরকারকে হঠিয়ে ক্ষমতায় আসা থাইল্যান্ডের সামরিক শাসক বোধ হয় পূর্বসুরী থাকসিনকে দু’কথা শুনিয়ে দিবেন। তাও তেমনটি তিনি করেননি, প্রথানুযায়ী রাজাকে ভুয়শী প্রশংসা করে শুধু সামনের দিকের কথাই বলেছেন, পেছনের কথা দুয়েকটি বাক্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখে অল্প কথায় তিনি বক্তব্য শেষ করেছেন।
মালয়েশিয়া ও ইরানের প্রসংগ না আনলে বোধ হয় আজকের আলোচনা অসম্পূর্ন থেকে যাবে। বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও দেশপ্রেম মানুষকে যে কত দৃঢ ও উচচকিত করে তার প্রকৃষ্ট উদাহরন এই দুই দেশের সরকার প্রধানের বক্তৃতায় প্রমাণ মিলেছে।
ডঃ ফখরুদ্দিনের চেয়ে পরিমানে মাত্র অর্ধেক বক্তৃতায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ বাদাউয়ী মোট একুশটি পয়েন্টের প্রথম আটটিই আলোচনা করেছেন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা পরিবেশ পরিবর্তন নিয়ে, যেটিই ছিল মুলত আলোচনার প্রতিপাদ্য বিষয়। বাকীটুকুতে তিনি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন ইসলামের সাথে পাশ্চাত্যের বর্তমানের বৈরীতা নিয়ে। সভ্যতা ও মানবতার বিপর্যয় থেকে শুরু করে আফগানিস্তান, ইরাক, লেবানন, গোলান হাইট্‌স, ফিলিস্তিন এমন কোন ইস্যুই বাদ রাখেননি তাঁর পরিমিত বক্তৃতায়। বুদ্ধিমত্তার সাথে মূল সমস্যা চিহ্নিত করে ও ইগোইজম পরিত্যাগ করে দায়িত্বশীলতার সাথে কিভাবে পৃথিবীতে বাস করা যায় তার কারন অনুসন্ধানের আহ্‌বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, একে অপরকে দোষারোপের প্রবনতা ইতিহাসে বিদ্যমান, কিন্ত ইতিহাসে এমন প্রমান মেলে না যে সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যকার দ্বন্দ্বে কোন নির্দিষ্ট ধর্মকে মূল কারণ হিসেবে অভিহিত করে তার বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা সহকারে ঝাপিয়ে পড়ার। তিনি এলায়েন্স অফ সিভিলাইজেশনের ২০০৬ সালের ১৩ই নভেম্বরের উচচ পর্যায়ের প্রকাশিত রিপোর্ট উল্লখ করে বলেছেন, ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যায় সন্দেহের দাবানলে কখনো সহিষ্ণুতা উবে গেলেও বিশ্বব্যাপী পরিচালিত বর্তমানের ‘ওয়্যার অফ রিলিজিয়েন্স’ এর মূল কারণ শুধুই রাজনৈতিক, ধর্মীয় নয়।
যাঁর শানিত যুক্তি ও যে কোন বিষয়ে খোলামেলা বিতর্কের ওপেন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় বুশ ও তার মানুষখেকো সহযোগীরা শুধুমাত্র ‘বিপজ্জনক ব্যক্তি’ বলে অন্য প্রসংগে চলে যান, সেই মাহমুদ আহ্‌মেদিনেজাদের বক্তব্যে বিশ্বনেতৃবৃন্দ নিশ্চয় নতুন কিছু পেয়েছেন। বয়সে ডঃ ফখরুদ্দিনের চেয়ে ষোল বছরের জুনিয়র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই সাবেক প্রফেসর ডঃ আহ্‌মেদিনেজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় চার লক্ষ ছাত্রদের মধ্যে ১৩২তম স্থান অধিকার করেই শুধু মেধার স্বাক্ষর রাখেননি, বিশ্বমোড়লদের চোখ রাঙানোর উত্তর কিভাবে দিতে হয় তাও শিখেছেন। দশ পৃষ্ঠাব্যাপী দীর্ঘ আলোচনায় তিনি দুনিয়াজোড়া মানবতা বিপর্যয়ের নিখুঁত বিবরণের পাশাপাশি তা উত্তরণের সুনির্দিষ্ট উপায় পয়েন্টাকারে অধিবেশনে প্রস্তাবনা হিসাবে পেশ করেছেন। সম্মিলিতভাবে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ধ্বংস ও নারীর অবমূল্যায়ন; মানবাধিকার লংঘন, সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব; প্রচীন সভ্যতা ও জাতীয় মূল্যবোধের বিরুদ্ধে আগ্রাসন; দারিদ্র্য, অশিক্ষা, চিকিতসা ও ধনী দরিদ্রের বৈষম্য; শিষ্টের দমন এবং মিথ্যা ও প্রতারণার লালন; আন্তর্জাতিক আইন অমান্য ও প্রতিশ্রুতি ভংগ; অযথা গগনবিদারী হুমকি ও অস্ত্রের যাচ্ছেতাই প্রতিযোগিতা ইত্যাদি প্রসংগ উদাহরণসহ টেনে এনে এসবের মূল কারন বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে অনুসন্ধানের আহবান জানিয়েছেন। পবিত্র কুর’আনের অন্তত তিনটি বানী উদ্ধৃত করে বলেছেন নৈতিকতার সুকুমার বৃত্তিসমূহের পরিস্ফূটনের জন্য টেকসই ইনস্টিটিউশন গঠনের পাশাপাশি সবক্ষেত্রে সুবিচার প্রতিষ্ঠা ছাড়া শান্তির প্রত্যাশা আকাশ কুসুম বৈ কিছু নয়। আর এটিই হল আদম থেকে নূহ, ইব্রাহীম, মুসা, ইসা ও মুহাম্মদ (সাঃ) সহ সব নবী রাসুলদের মাধ্যমে খোদার স্বর্গীয় আহবান। আপাদমস্তক ধার্মিক ব্লাকস্মিথের ছেলে ডঃ আহ্‌মেদিনেজাদ প্রেসিডেন্ট হয়েও অত্যন্ত সাদাসিধে মানুষ, সাধারণ এপার্টমেন্টে বাস করেন এবং বাসা থেকে সরবরাহকৃত খাবারই অফিসে বসে খান।
দুনিয়াতে আরো বহু দেশের গণতন্ত্র দুষ্ট চক্রের অজস্র বাঁকে আবদ্ধ থাকলেও আমাদের দেশের পাশাপাশি একমাত্র ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নূরী আল মালিকী ছাড়া সবাই নিজ দেশের নেগেটিভ ইমেজ দেশের বাইরে সোচচার কন্ঠে প্রচার করতে বোধকরি লজ্জা পেয়েছিলেন। তবুও মালিকী তার দেশের বিখ্যাত দুই নদীর তীরে গড়ে উঠা পৃথিবীর সবচে’ প্রাচীন সভ্যতার কথা প্রথমেই নিয়ে আসতে ভুল করেননি। তারপর থেকেই সাদ্দাম আমলের বর্বরতার কাহিনী ও আমেরিকার আশীর্বাদে ইরাকে গণতন্ত্র জন্ম দেয়ার স্তুতিতে ভরা তার পুরো ভাষনটি। মালিকীকে তো এসব কথা বলতে হবেই। কেন বলতে হবে সেটি যে তার শুধু শত্রু নয় সুহৃদ বন্ধুটিও ভাল করেই জানে।
তাই বলছিলাম, আমাদের কি এমন কোন গৌরবের কাহিনীই নেই যা এই সুযোগে দুনিয়ার মানুষকে অল্প সময়ের জন্য হলেও শোনানো যেত? প্রাচীন আর্য সভ্যতা, ইশা খাঁর সোনারগাঁ, লালবাগের কেল্লা, শায়েস্তা খানদের কথা, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে তীতুমীরদের কাহিনী, ভাষার জন্য পৃথিবীর ইতিহাসে অদ্বিতীয় আন্দোলন, সর্বোপরি আস্ত একটি দেশ পাবার বীরগাঁথা কাহিনীও কি ঝানু ও সফল অর্থনীতিবিদ শোনাতে পারতেন না? ভুলে গেলে তো চলবে না যে, প্রাত্যাহিক জীবনের জনপ্রিয় পরিভাষাসমূহ (যেমনঃ সালাম, বিসমিল্লাহ, আল্লাহ সর্বশক্তিমান, খোদা বা আল্লাহ হাফেয) কোন দলের নিজস্ব সম্পত্তি নয়, এসব মাটির ডাক ও নাড়ির স্পন্দন বলেই রাজনীতিবিদরা সম্মান প্রদর্শন করতে বাধ্য হন।
আমরা কিন্তু জোড় করে হলেও বিশ্বাস করতে চাই পেছনের প্রবল শক্তির চাপে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন নয় আমাদের প্রেসিডেন্ট ডঃ ইয়াজুদ্দিন আহমদই আমাদের ডঃ ফখরুদ্দিন আহমদকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। তাই ইরাক ও বাংলাদেশ অথবা মালিকী ও ফখরুদ্দিনকে আমরা কখনো এক করে দেশপ্রেমের পরীক্ষা নিতে চাইনা। বিশ্ববিখ্যাত নোবেল প্রাপ্তির পরদিনই আমরা যেমন আনন্দ ও আবেগের আতিশয্যে চট্টগ্রাম বন্দরকে না বুঝেই উন্মুক্ত করার কথা বলে ফেলি, আবার অনেক ক্ষেত্রে নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বিশ্বাস দেদীপ্যমান করতে কৃপণতাবোধ করি। ইরান ও মালয়েশিয়ার মত ‘ভগবান বুকে এঁকে দিব পদচিহ্ন’-র ন্যায় দুঃসাহসিকতা দেখাতে না পারলেও শ্রীলংকার মত ‘শির নিহারী আমারি নত শির ওই শিখর হিমাদ্রীর’ প্রমাণ দিলেও অন্তত যারা বিদেশ বিভূইয়ে ডিয়াসপোরাদের মোকাবেলায় হতভাগা প্রিয় মাতৃভূমিকে সুঊচচ আসনে বসানোর জন্য যতকিঞ্চিত চেষ্টা করেন তাদের জন্য নিশ্চিত তা হত সোনায় সোহাগা।
যায়যায়দিনে পড়ুন
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৩:৪৩
২৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×