(দৈনিক যায়যায়দিনে ২১ নভেম্বর ২০০৭ এ প্রকাশিত আমার লেখা ‘মুহিনের গান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও প্রতারিত জনগন’ এর বিপরীতে জনাব আব্দুন নূর তুষারের ২৬ নভেম্বরের লেখা ‘মুহিনের গান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও প্রতারিত পাঠক’ আর্টিকেলে আমাকে জড়িয়ে যা লেখা হয়েছে তার প্রেক্ষিতেই এই লেখাটি)
এ বিষয় নিয়ে আরো একটা লেখা লিখতে চাইনি। কারন মনে হয় না এ ধরনের ইসু নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনো মাথা ব্যথা আছে। এতে করে দেশে বিতর্ক আরো বাড়াবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার। বিতর্ক হয় এমন ইসু এভোয়েড করাই ভালো। বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়েই মানুষ ভাবতে আগ্রহী। তবুও সম্মানিত পাঠকদের ইমেইলে আদেশ নির্দেশ উপেক্ষা করতে পারলাম না। তাছাড়া ব্লগেও তুষারের পোষ্টটিকে একজন কাট পেষ্ট করেছে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও যাযাদি’র এই পাঠকও ব্যক্তিগত কৈফিয়তের দুই কলম উত্তর লিখত বসল। প্রতিটি বাক্যের দিকে গিয়ে পাঠকদের বিরুক্তি না বাড়িয়ে যেখানে জবাব না দিলেই নয় সেখানেই আমরা আলোচনাকে বৃত্তাবদ্ধ করে রাখব।
তুষার সাহেবের প্রাক্তন কলেজ ও আমার প্রাক্তন ইউনিভার্সিটির ব্যবধান ছিল একটি মাত্র অনুচচ দেয়াল। রাতে ইলেক্ট্রেসিটির অফ আওয়ারে বুয়েটের নজরুল ইসলাম হল ও উনাদের ডিএমসি’র ফজলে রাব্বী হলের মধ্যকার তুমুল মিষ্টি বাকযুদ্ধ এখনো মনে করে বন্ধুবান্ধব মিলে আনন্দ করি। তখন থেকে আজ পর্যন্ত (তাও তো প্রায় দশ বছর পার হতে চলল) তার বিতর্ক ও উপস্থাপনা উপভোগ করে আসছি। একজন নামকরা বিতার্কিকের কাছে যুক্তিভিত্তিক ও সুন্দর ভাষায় আলোচনা বা প্রতিক্রিয়া অথবা উভয়টিই আশা করা অবশ্যই দোষের নয়। এ ধরনের আলোচনায় দু’পক্ষ তো থাকবেই। কোন এক পক্ষকে আগেভাগেই অযোগ্য, চতুর, বর্বর, মূর্খশিরোমনি মূর্খাচার্য অপশব্দ প্রয়োগে পটুর মত বলে দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুললে তো আলোচনা সেখানেই থমকে যায়।
তিনি বলেছেন, পুরো লেখাতে আমি মুহিনের বিষয়টিকে আবেগের মসলা হিসেবে নিয়ে এসেছি। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অজস্র মানুষের মত জনাব তুষার সাহেবও হয়তো কোনো আপনজনকে হারিয়েও থাকতে পারেন। তার ভাষায় কোন বুড়ো খোকাকে জিজ্ঞেস না করে মন্তব্যও করতে চাই না যে, কথাগুলো তার ফুসফুস ও ধমনীর গভীরতা থেকে উতসরিত নয়। আমি শুধু বলতে চাই, আমি আমার নানাকে হারিয়েছে, যার স্নেহ থেকে আজন্ম বঞ্চিত হয়েছি। দেখেছি নানী, মা-মামা-খালাদের কষ্ট, দুঃখ, যাতনা! আর আমাদের গ্রামে এমন কোন পরিবারও নেই যারা কোন না কোনভাবে মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও কাছে থেকে শুনেছি, বুঝেছি। নিজের নানা যার বাড়িতেই আমার জন্ম এবং যিনি কিনা আমার নামটি রেখেই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছেন তার জান কুরবানীকে আমি আবেগের মসলা হিসেবে ব্যবহার করব, এমন হতভাগার জন্ম বোধ হয় বাংলাদেশে একটিও হয়নি! হাজার হাজার শহীদ পরিবারের আবেগকে পুঁজি করে যারা সস্তা ব্যবসা করে ফায়দা লুটছে তাদের দ্বারা জনগনকে প্রতারিত হওয়াকেই আমি বুঝাতে চেয়েছি। দেশপ্রেম যাদের দুই ঠোটের মাঝখান থেকে নেমে গলা বেয়ে হৃদয়ে প্রবেশ করেনা তাদের কপটতাকেই আমি কটাক্ষ করেছি। আপনাকে এদের বাইরেই দেখতে চেয়েছিলাম!
উইকিপিডিয়াকে আমি বাইবেল হিসেবে ধরিনি, আর তা ধরার প্রয়োজনও আমার পড়েনি। চলুন না বাইবেলকে বাইবেলের অবস্থানেই রেখে দেই! অন্য আরো অনেক রেফারেন্সের মত উইকিপিডিয়াকেও জাস্ট এ রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেছি। এর বাইরে নয়। আমি আপনাকে আপনার ভাষায় জিজ্ঞেসও করতে চাই না বাজারের বই (এটি কিন্তু আপনিই বলেছেন) ‘একাত্তরের ঘাতক দালালেরা কে কোথায়’ অথবা কুখ্যাত রাও ফরমান আলীদের ডায়েরীকে আপনি বাইবেল হিসেবে ধরছেন কিনা। যে বইটির খোদ এডিটর নিজেই কি না রাষ্ট্রবিরোধী মামলায় বর্তমানে জামিনে আছেন! বইটি প্রকাশের বোধ হয় দুই দশক পার হতে চলল। কেঁচো খুড়তে যদি সাপ বের হয়ে যায় সেই ভয়েই কি ওই এডিটর সাহেবের প্রিয় নেত্রী ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তিনিও উচচবাচ্য করেননি? এত ভুল কেন? সব শোধরাতে চান এই স্বল্পকালীন সময়ে, যা ৩৬ বছরেও সম্ভব হয়নি? নির্বাচনের পরে কাউকে তো দেখি না এ নিয়ে কোন কথা বলতে? হানাদার পাকিস্তানীদের ডায়েরীর রেফারেন্স দেন কেন, দেশীয় ইতিহাসবেত্তা বুদ্ধিজীবিদের রেফারেন্স কেন নজরে আসেনা? রাজনৈতিক গন্ডির বাইরে এসে পূর্ব প্রতিষ্ঠিত বদ্ধমূল ধারনার বিপরীতে উদারভাবে একটু রেশনাল চিন্তা করলে সমস্যা কোথায়?
আমি বলেছি সুখী, সমৃদ্ধ, দূর্নীতিমুক্ত ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বিভেদ ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে, বলতে চেয়েছি এই সরকারের উপর আর বোঝা না বাড়াতে। আর আপনি চেয়েছেন পেছনে ফিরে যেতে, এখনই সব ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে। চীফ এডভাইজারের মত আমিও বলব, সংক্ষুব্ধ যে কেউ চাইলে আদালতে যেতে পারেন। নিজেরা তালিকা প্রস্তুত না করে নিয়মাতান্ত্রিকভাবে চলুন মহামান্য আদালতকেই এই দায়িত্বটা দিই। টিভির সামনে সূফী সূফী ভাব নিয়ে কিংবা রাস্তা-ঘাঠে বাগাড়াম্বর করে বাজার গরম করার মানে কি? আমার সাত বছর আমেরিকা ও কানাডায় থাকাকালীন সময়ে রাজাকারদের গাড়ীতে পতাকা উড়তে দেখেছেন। তার আগে কি রাজাকার প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, বিচারপতি ও ক্যাবিনেট মন্ত্রী, এমপিদের গাড়িতে পতাকা উড়তে দেখেন নি? দেখেননি তাদের সাথেই আত্বীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নিজেদের সম্পর্ককে অটুট রেখে জনগনকে নিয়ে মাঠে খেলতে? আপনি চাতুরতার আশ্রয় নিয়ে না জানার ভান করেছেন কিনা জানিনা, সাধারন মানুষেরা কিন্তু এর উত্তর নিশ্চয়ই জানে। এই সরকারের সফলতা আমি কিন্তু মনে প্রাণে চাই। কাউকে হাসানোর জন্য কিন্তু আর্টিকেলটি আমি লিখিনি। অবশ্য লেখাটা পড়ে মনে হয়না আপনি হেসেছেন, বরং ক্রুদ্ধ রাগান্বিত হয়ে মনের ঝাল মিটিয়েছেন। কেয়ারটেকার সরকারের সম্মানজনক এক্সিটের মাধ্যমে গনতন্ত্রকে ফিরে পেতে চাই, কোন কিছুকে ‘অল ওভার স্টার্ট এগেইন’ করে সময় ক্ষেপন করতে চাইনি। সাথে কেবলই প্রাণ পাওয়া ডেমোক্রেসির পথটিও যেকোন প্রকারে বাধাগ্রস্থ হোক তাও চাইনি।
আমি গনতন্ত্রে বিশ্বাস করি কি না তা নিয়ে তুষার সাহেবের বিস্তর সন্দেহ। আবার সাথে সাথে এও বলেছেন, ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ করতে সরকারের সিদ্ধান্ত হলে তা হবে রাষ্ট্রের গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ। কথাটা কেমন স্ববিরোধী হয়ে গেল না? এটিকেই আমি বলতে চেয়েছি টেষ্টটিউব গনতন্ত্র অথবা আপনি নাম দিতে পারেন হাতুড়ি কাস্তে মার্কা বলশেভিক গনতন্ত্র। রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে গায়ের জোরে দাবিয়ে দেয়ার নামে নতুন এক গনতন্ত্র। তাও আবার কেয়ারটেকার সরকারের সময়! বাংলাদেশী যে কাউকেই সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে জাতিয়তা, ধর্মীয়, ধর্মনিরপেক্ষ ইত্যাদি নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ দিন, নাগরিক অধিকার চর্চা করতে দিন, জনগনের মতামতকে শ্রদ্ধা করুন, ইট্স এ বিউটি অফ ডেমোক্রেসি। আর এটির নামই হল বহুদলীয় গনতন্ত্র। বলতে দ্বিধা নাই যে, যেটি কিনা আমাদের দেশে উন্মুক্তই করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। গনতন্ত্রকে এভাবে দড়ি দিয়ে বেধে না ফেলে বাড়তে দিন, কচি থেকে পুষ্ট হতে দিন। কাউকে যদি নিষিদ্ধ করতেই হয় পরবর্তী পার্লামেন্ট পর্যন্ত নির্বাচিত সদস্যদের জন্য আর কয়টা মাস অপেক্ষা করতে আপত্তি কোথায়? গনতন্ত্র মানি কিন্তু নির্বাচিত সদস্যদের রায় মানতে চাই না -এটি কেমন যেন প্রবাদবাক্যের মত হয়ে গেল না? বিচার চাইব না কেন? আমি কি বলিনি, ‘যারা খুন, হত্যা, নারী নির্যাতন, বাড়ী-ঘর পোড়ানো থেকে শুরু করে হাজারো অপরাধের সাথে জড়িত তাদের বিচার কে না চায়?’ কিন্তু কথা হলো, বিচার চাওয়ার আগেই কি অভিযুক্ত করে ফাঁসি চাওয়া হচ্ছে না? সবাই মিলে সংবিধানটাকে মানার প্র্যাকটিস করলে তো সমস্যা হওয়ার কথা না।
আমি আর্টিকেলের কোথাও বলেনি যে, বাংলাদেশে ধর্মহীন রাজনীতি প্রচলিত আছে। বাক্যটি ছিল এরকম ‘জাতির কপাল ভালো যে, মাওলানা সাহেবরা পাল্টাপাল্টিভাবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের কথা বলে এদেশে ধর্মহীন রাজনীতি নিষিদ্ধের জোরালো দাবী এখন পর্যন্ত উঠাননি’। আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে, আমাদের দেশে কারা ধর্মীয় রাজনীতি করে আর কারা ধর্মহীন রাজনীতি করে, আর কারাইবা নির্বাচনের আগে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করে? এত খোলাসা করে বলে একে অপরের প্রতিপক্ষ বানিয়ে জনগনকে উত্তেজিত করার দরকার কি? আপনি পান কি না জানিনা, আমি কিন্তু ২১ আগষ্ট, ২৮ অক্টোবরকে ভীষণ ভয় পাই।
কানাডা, আমেরিকা ও ইউরোপে ধর্মভিত্তিক দল এমনকি ক্রিশ্চিয়ান দল, মুসলিম দল, হিন্দু দল নামে কোন দল আছে কিনা, রাজনীতিতে নির্বাচনের আগে ধর্মের ব্যবহার কেমন হয়, ইলেকশনের আগে ক্যান্ডিডেটরা নিজেদেরকে জনগনের মাঝে কে কত বড় প্র্যাকটিসিং ক্রীশ্চিয়ান প্রমান করার জন্য ব্যস্ত হন অথবা চার্চ থেকে মিছিল বের হয় কিনা তা জানার জন্য আরো একটু পড়াশোনা করার জন্য অনুরোধ করছি। দেখবেন কারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের প্রতিভূ ও অনর্গল গড ব্লেশ ইউ, গড ব্লেশ ইউ বলে মিডল ইস্টের ছেড়া মানচিত্রের দিকে রাক্ষসের মত কটমটিয়ে চায়? আর সাউথ এশিয়ার ফাপা মানচিত্রটাকে ফুটো করার প্রক্রিয়া প্রায় চুড়ান্তের দিকে কারাইবা ‘শান্তি’ ‘শান্তি’ বলে নিয়ে যাচ্ছে?
এই তো কিছুদিন আগেই সমকামী আইনের প্রতিবাদে কানাডার ক্রিশ্চিয়ান, জুইশ, মুসলিম, হিন্দু ও শিখদের আমব্রেলা সংগঠন ইউনাইটেড রিলেজন্স ফ্রন্ট চার্চ, সিনেগগ, মসজিদ, মন্দির ও গুরুদুয়ারা থেকে আন্দোলন পরিচালিত করল। তবে হ্যা, ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে এসব দেশে গ্রেনেড মারা হয় না, লগি বৈঠা দিয়ে জনগনকে প্ররোচিত করে সাপের মত পিটিয়ে গর্ব করা হয়না, প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র উঁচিয়ে মানুষ হত্যা করাও হয় না। এসব দেশে ধর্মভিত্তিক দল নেই বলেছেন। আপনি কি জানেন না আমেরিকা, কানাডা, বৃটেনে বর্তমানে কোন দল ক্ষমতায়? কনজারভেটিব, রিপাব্লিকান পার্টি বলতে কাদের বুঝানো হয়? ইন্টারনেটে এই পার্টি সমূহের সংবিধানগুলো একটু পড়ে দেখেন না এরা কারা? ইউরোপের সভ্যতার সূতিকাগার বলে ক্ষ্যাত জার্মানীতে কি ক্রিশ্চিয়ান সোস্যালিষ্ট ইউনিয়ন (CSU) ও ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (CDU)-র জোট ক্ষমতায় নয় যারা কিনা দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলে ছিল? ফ্রান্সে এবার কারা এল? নেদারল্যান্ডের এই কিছুদিন আগের ইলেকশনে কারা জিতল? মুক্ত চিন্তার আরেকটি দেশ টার্কিতে জনগন কাদের বিজয়ী করল? ইজিপ্ট, মালয়েশিয়া ও বিশ্বের সর্ববৃহত গনতান্ত্রিক দেশ কাছের ইন্ডিয়ার প্রধান বিরোধী দলটির নাম কি? তাই বলছি আগে ঠিক করুন কি চান? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না কি ধর্মভিত্তিক দলসমূহের নিষিদ্ধ? সব কিছু এক করে তালগোল পাকিয়ে ফেলা কি জনগনকে প্রতারিত করা নয়?
আপনার নিশ্চয়ই অজানা নয় যে, এসব দেশেও পলিটিশিয়ানরা হত্যাকান্ডের শিকার হন। আজ পর্যন্ত যাকে একমাত্র প্র্যাকটিসিং রোমান ক্যাথলিক প্রেসিডেন্ট বলে গন্য করা হয়, আমেরিকার সেই ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। লি হারভী অযওয়াল্ড (Lee Harvey Oswald) যাকে হত্যাকারী হিসেবে সনাক্ত করা হয় তাকেও ঠিক জিয়ার হত্যাকারীর কায়দায় জ্যাক রুবি (Jack Ruby) খুন করে পুরো বিষয়টিকে আজ পর্যন্ত আমেরিকার ইতিহাসে রহস্যাবৃত ও ডজন ডজন কন্সপিরেসি থিওরীর জন্ম দিয়ে চলেছে।
সুপার ডুপার ইনফরমেশন হাইওয়ের যুগে একজন তাত্ত্বিকের এমন অজ্ঞতাকে বিশ্বাস করতে চাইনা। জেনে না জানার ভান করে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাঠককে প্রতারিত না করলে খুশী হব। বেশী দূর যেতে হবে না, হাতের কাছে ইন্টারনেটে গুগলে আপনার কোয়্যারি টাইপ করে সার্চ দিলেই অনেক কিছু পেয়ে যেতেন। আপনার ভাষার মত করে ‘বিকৃত বর্বর মর্ষকামী ভাবনার ফসল’ বা ‘মূর্খশিরোমনি মূর্খাচার্য’ বলে গালি দিয়ে আপনার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আমি অপমান করতে চাই না। শুধু বলতে চাই একজন স্বাধীনতা পরবর্তী আশাবাদী প্রজন্মের মনে আসা প্রশ্নগুলোর উত্তর সুগভীর চিন্তা ভাবনার ফসল দিয়ে ও শিক্ষিতশিরোমনি শিক্ষাচার্য হয়ে আর্টিকেল লিখলেই পারতেন। এসব অশ্লীল শব্দচয়নের প্রয়োজন ছিল না। লেখার পিঠে লেখা বা কারো পেছনে লাগা কঠিন কিছু নয়, যে কেউই তা পারে। এতে সস্তা বাহ্বাও মেলে। এই আমি যে এই লেখাটা লিখছি তার বিপরীতে আরো একটা লেখা একজন হাইস্কুল পাশ শিক্ষার্থীও কিন্তু লিখে ফেলতে পারে। আমার যোগ্যতা ও সদিচ্ছা না থাকলেও আপনার কিন্তু আছে নতুন নতুন আইডিয়া বের করে নিজের ক্রিয়েটিভিটির স্বাক্ষর রাখতে। তাই করলে পাঠকেরা উপকৃত হত। দুঃখ হলো যুক্তি যেখানে হারিয়ে যায়, অসভ্যতা সেখানে দৌড়ে এসে বাসা বেধে নেয়। দুর্ভাগ্য, আজ অন্য এক তুষারের সাথে পরিচয় হল!
‘ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে কাঊকে ব্যবহৃত করতে না পারলেই বারে বারে বোকা জনগনকে স্যান্ডউইচ বানানো হয়’ আর এরের পরের বাক্যটি ছিল এরূপ, ‘যাদের দিকে চোখ রাঙিয়ে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলা হচ্ছে তারা জোট পরিবর্তন করলেই এসব কপট দাবীর অসারতার প্রমান আবারো মিলত’-কথাগুলোকে কি আমি বাড়িয়ে বলেছি? ভুলে গেছেন যাদেরকে গালি দিয়ে এখন মুখে ফেনা উঠানো হচ্ছে সেই ফতোয়াধারীদের সাথে এই কয়দিন আগেই সেই চুক্তিটির কথা? ‘বোকা’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে এনাটমি করেছেন। যারে দেখতে নারি তার চলন বাকা! কথার মারপ্যাচ না দিয়ে সহজভাবে মনের ভাষায় এটিকে নিলেই পারতেন। যেকোন লেখায় প্রতিটি শব্দের আকাবাকা ব্যবচ্ছেদ করে যেকোন লেখকের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করা যায়। মুল থিম ঠিক করে নিয়ে আর্টিকেলটি লিখলে খুশী হতাম। আলোচনায় সঠিকভাবে ভাব প্রকাশে যুতসই শব্দ ব্যবহার না করাকে আমার দীনতা হিসেবে নিতে পারতেন। পাঠকেরা বোধ হয় সেভাবে নেননি। নিলে এত এপ্রিসিয়েশন মেইল পেতাম না। জনগন বোকা নয়, বলব বোকা বানানো হয়। নিজেকে তো তাদের অংশই মনে করি। কারন তাদের মধ্যে থেকে গ্রামেই বড় হয়েছি। আমাদের সরলতা, অশিক্ষা ও কমশিক্ষার সুযোগ নিয়ে সুবিধাবাদী ও দূর্ণীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত পলিটিশিয়ানরা কি আমাদেরকে বার বার প্রতারিত করছেন না?
আমি কানাডায় বসে জোতিষ চর্চা করিনা। কারন, জোতিষবিদ্যা রপ্ত করে টিয়া পাখির মত করে ভাগ্য গননা করা বিদ্যা অর্জনের সৌভাগ্য আমার হয়নি। আমার নিজের ফিল্ড নিয়েই আমি চর্চা করি। অনেকেরই স্বপ্নের দেশ থেকে হায়্যার স্টাডি করে শত শত বন্ধু-সহপাঠীদের মত আমিও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিকভাবে নিজের যোগ্যতা প্রমানের কিনচিত চেষ্টা করি। এগুলো ভদ্রলোকদের কাছে কোন আহামরি নিউজও নয়, বলে বেড়ানোও ঠিক নয়। এগুলো তাদের জন্যই বলছি যারা না জেনে কারো অযোগ্যতার সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়। সাথে প্রিয় মাতৃভূমিটাকে আপনার মত প্রচন্ড ভালবাসি বলেই দেশ ও গ্লোবাল পলিটিক্স নিয়ে একটু ভাবি। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘঠনাবলীকে এর বাইরে ভাবার অবকাশও আছে বলে মনে করিনা। একমাত্র পরাশক্তির নিয়ন্ত্রনে গ্লোবাল পলিটিক্সের বর্তমান ধারা যে কত ভয়ংকর তা জানতে আগ্রহী হই এবং উপলব্ধি করে শিঊরে উঠি। থিংকট্যাঙ্কগুলোর ওয়েবসাইটগুলোতে একটু ব্রাউজ করলে আপনিও তা পেয়ে যাবেন। আর তাই একটু আধটু হলেও লিখে মানুষকে জানানোর চেষ্টা করি। যায়যায়দিনের আর্কাইভ (Oct 29 ও 27, Sept 20, Aug 19, Jul 15, Jun 18)-এ আমার আগের লেখাগুলো পড়ে নিতে পারেন। এগুলো যদি অপরাধ কিংবা জোতিষচর্চা হয় তাহলে কি আর করা? বলতে পারেন, তাই ই করি!
বিদেশে থাকা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন, পরদেশে পরজীবি, সুবিধাবাদী ইত্যাদি বলেছেন! দেশপ্রেমের ফ্যাক্টরগুলোকে কনস্ট্যান্ট ধরে পারিপার্শ্বিক ভ্যারিয়েবলসমূহ কন্সিডার করে সত্যিকারের প্যারাসাইট নিয়ে রিসার্চ করুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ৯:৩৯