somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে সল্প উপার্জনের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করবেন!!

১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাসে আমাদের যে আয় হয়, তা কি ব্যয়ের চেয়ে খুব কম? প্রতি মাসে ধার করে চলতে হয় অথবা নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাবার অবস্থা? অথচ দেখবেন একই পরিমান অর্থ উপার্জন করে অনেকেই সাচ্ছন্দে জীবন ধারন করতে পারছে!


অস্বাভাবিক উপার্জন না করলে আপনি অনেক বেশি ধনী হতে পারবেন না কিন্তু কিছু নিয়ম মেনে চললে কিছুটা সাবলীল ভাবে জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব। টাকাকে আপনার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে দেবেন না, বরং আপনিই তার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করুন।

প্রথমে বাজেট তৈরি করুন

আপনার কোন কোন খাতে কতটা ব্যায় করবেন নির্ধারণ করুন এবং আপনার উপার্জনের উৎস সমূহ চিন্নিহিত করুন।
প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে আপনার মাসিক আয় কত? আপনার বেতন, নিজের বাড়ি থাকলে তা থেকে আয়, গ্রামের বাড়ি থেকে আয়, ওভারটাইম বা এ জাতীয় পরিশ্রম থেকে আয় সব কিছুই হিসাব করুন।

কোন খাতে কত টাকা ব্যয় হতে পারে তার হিসাব করুন। মাসে কোন কোন খাত থেকে আপনার কত টাকা এলো এবং আপনার কী পরিমান অর্থ ব্যয় হলো তার পুরো হিসাব লিখে রাখবেন, আয় বা ব্যয় যত সামান্যই হোক না কেন, কোনোটাই হিসাব থেকে বাদ দেবেন না। নির্ভুল বাজেট তৈরি ও বাস্তবায়ন নির্ভর করে নিখুঁত হিসাবের ওপর।

আপনার সব ব্যয় তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করুন :

নির্ধারিত ব্যয়, আরোপিত ব্যয় ও বাড়তি ব্যয়। যেসব ব্যয় মাসে মাসে কম-বেশি হয় না সেগুলোকে নির্ধারিত ব্যয়ের খাতে ফেলুন। বাড়ি ভাড়া, স্কুলের বেতন, কোচিং ফি ইত্যাদি। আরোপিত ব্যয়ের মধ্যে খাবার ও বাজার খরচ, বিদ্যুৎ, পানি, ফোন ইত্যাদি বিল, যাতায়াত খরচ, নাস্তার খরচ ইত্যাদি রাখুন। বাড়তি ব্যয়ের মধ্যে রাখুন জামাকাপড় কেনা, বিনোদন, চিকিৎসা ব্যয়, রেস্টুরেন্টে খাবার খরচ ইত্যাদি। একবার যদি আপনি সবকিছু লিখে ফেলতে পারেন, তবে সহজেই বুঝতে পারবেন, আপনার টাকা কিভাবে খরচ হচ্ছে।

আয়ের চেয়ে ব্যয় করবেন কম

আপনি যত আয় করেন, তার চেয়ে কম ব্যয় করবেন। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে আপনাকে অবশ্যই ব্যয় কমাতে হবে। প্রথমে তাকান বাড়তি ব্যয়ের দিকে। সাধারণত এখানেই কাঁচি চালানো সহজ। আপনি হয়তো সপ্তাহে দু’দিনের বদলে একদিন হোটেলে খেতে পারেন। তার পর দেখুন আরোপিত খরচের দিকে। আপনি হয়তো ট্যাক্সিতে না চড়ে বাস বা ট্রেনে যেতে পারেন। মোবাইলে কথা বলা কি একটু কমাতে পারেন না? আপনার নির্ধারিত ব্যয় যদি মাসিক আয়ের চেয়ে বেশি হয়, তবে আপনাকে জীবনযাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। হয়তো আপনাকে আরেকটু ছোট বাড়িতে উঠতে হবে। তা না হলে আপনি সঞ্চয় করতে পারবেন না।

৫০-৩০-২০ পরিকল্পনা
আপনার কত খরচ করা উচিত কিংবা কত সঞ্চয় করা উচিত? এই প্রশ্নের জবাব অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। আপনি একা না কি বিবাহিত, সন্তান কত জন, আপনার পিতা-মাতা বেঁচে থাকলে তাদের কী সহায়তা করতে হয়, তাদের বয়স কত ইত্যাদি প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ। তবে সাধারণভাবে বলা যায়, আপনার উচিত সবকিছু বাদ দিয়ে আপনার মোট আয়ের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ সঞ্চয় করা উচিত। বেশি হলে ভালো, তবে ন্যূনতমটুকু থাকতেই হবে। মধ্যবিত্তদের জন্য সাধারণত বড় খরচ হয় বাড়ি ভাড়া আর পড়াশোনায়। হাভার্ডের অধ্যাপক এলিজাবেথের মতে, আপনার ৫০-৩০-২০ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা উচিত। নির্ধারিত ও আরোপিত ব্যয় খাতে মোট বরাদ্দ রাখুন আপনার আয়ের ৫০-৫৫ শতাংশ। বাড়তি ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ রাখুন আপনার আয়ের ২৫-৩০ শতাংশ। বাকি ১৫-২০ শতাংশ সঞ্চয় করুন।

সঞ্চয় ও বিনিয়োগ
শুধু জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য নয়, কিছু বড় বড় স্বপ্ন পূরণ, একটা গাড়ি কেনা, বাড়ির মালিক হওয়া, সন্তানদের বিদেশে বা ভালো প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা দেয়া, আপনার নিজের অবসর জীবনকে স্বস্তিতে রাখা ইত্যাদির জন্য সঞ্চয় খুবই দরকারি। সঞ্চয় সারা জীবনের অভ্যাসে পরিণত হওয়া উচিত।

জরুরি তহবিলঃ চিকিৎসা ব্যয় বা এ জাতীয় অপ্রত্যাশিত অথচ অনিবার্য ব্যয় মেটানোর জন্য একটা তহবিল গড়ে তুলুন।
দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ঃ জরুরি তহবিল সৃষ্টির পর এবার আপনি অবসরগ্রহণকালীনসহ মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য বাস্তবায়নে নামুন।

শুধুমাত্র সঞ্চয়ই একমাত্র সমাধান নয় বরং সঞ্চয়ের পর তা বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। টাকা যদি সেভিংস অ্যাকাউন্টে চুপচাপ বসে থাকে, তবে কয়েক বছর পর সে বাড়তি টাকা আপনি পাবেন তা সত্যিকার অর্থে মুদ্রাস্ফীতি খেয়ে ফেলবে। বরং আপনার সঞ্চিত অর্থ যদি লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করা যায় তবে সঞ্চয় হয়ে উঠবে উপার্জনের নতুন একটি মাধ্যম। বিনিয়োগ হতে পারে ছোট কোন ব্যাবসা অর্থ লগ্নি করা অথবা ভালো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারও কিনতে পারেন এছাড়াও স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করেও লাভবান হতে পারেন তবে এক্ষেত্রে বড় ধরনের খরচ করতে হবে।

ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডকে না বলুন
যেকোনো মুহূর্তে চেষ্টা করবেন ঋণ না নিতে। এক্ষেত্রে সঞ্চয়ী তহবিল আপনার প্রয়োজনীয় আর্থিক চাহিদা মিটাতে পারে। আজ ক্রেডিট কার্ডের ওপর আমরা অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠেছি। ক্রেডিট কার্ডের লিমিট অনেক ক্ষেত্রে মুল বেতনের ৩-৪ গুন পর্যন্ত হয়ে থাকে যা আপনাকে অপ্রয়োজনীয় ও অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় ব্যায়ে আগ্রহী করে তোলে। সুতরাং ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কম করা অথবা না করাই আপনার জন্য ভালো হবে।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:১১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×