গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়; পাশাপাশি সে তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস বায়তুল মুকাদ্দাস শহরে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়। ট্রাম্পের এ ঘোষণায় সারা বিশ্বে নিন্দা, প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।সমগ্র বিশ্ব ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে ইসরাইলী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করেছে। ইরান, ইয়েমেন, ইন্দোনেশিয়া,ইউরোপ এমনকি হোয়াইট হাউজের সামনেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় ইজরাইল বিরোধী বিক্ষোভ।
ইরানের রাজধানী তেহরানে ইজরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। লেবাননের রাজধানী বৈরুতে মার্কিন দূতাবাসের সামনে ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে লেবাননের জনগন। এমনকি যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনের রাজধানী সানায়ও বড় ধরনের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কিন্তু ইহুদিবাদী ইসরাইলের জন্য সৌদি আরব পর্দার আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাচ্ছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন সালমান ফিলিস্তিনের নেতাদেরকে এক প্রস্তাব দিয়েছে যেখানে আল-কুদসের ওপর তাদের দাবী ছেড়ে অন্যএকটি শহরে ফিলিস্তিনের রাজধানী প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। জানা যায় ট্রাম্পের মেয়ের জামাই কুশনার এই প্রস্তাবটি তৈরি করেছে যা সালমান ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিদের মেনে নিতে বলেছেন।
আরব লীগের এক জরুরি বৈঠকে আমেরিকার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেবরান বাসিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে জেরুজালেম আল-কুদসকে দখলদার ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রতিবাদে তিনি এ আহ্বান জানান। লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এবারের এই বিপর্যয় কি আমাদেরকে (আরব সরকারগুলোকে) আমাদের ঘুম থেকে জাগাতে পারবে? জেনে রাখুন ইতিহাস কোনোদিনও আমাদের ক্ষমা করবে না এবং আমরা যা করছি তা নিয়ে আরব জাতিগুলো কোনোদিন গর্ব করতে পারবে না।”
কিন্তু আরব লীগের জরুরি বৈঠকে সবচেয়ে নিস্ক্রিয় অবস্থান ঘোষণা করেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়ে নিজের দায়িত্ব শেষ করেন। এখন পর্যন্ত সৌদি আরবের রাজা বা ক্রাউন প্রিন্স এ বিষয়ে কোন শক্ত বার্তা দেয় নাই। প্রকারন্তরে আরবলীগের পক্ষ থেকে আমেরিকার বিরুদ্ধে কোন বাবস্থা নিতে বাঁধা দিচ্ছে সৌদি আরব।
কথিত শান্তির বার্তা নিয়ে বাহরাইন থেকে একটি প্রতিনিধিদল ইহুদিবাদী ইসরাইল সফরে গেছে। বাহরাইনের রাজা হামাদ বিন ঈসা আলে খলিফার একটি বিশেষ বার্তা বহন করছে এ প্রতিনিধিদল। সৌদি সরকারের অত্তান্ত কাছের দেশ বলে পরিচিত বাহরাইনের ইসরাইলে প্রতিনিধি দল পাঠানোর ঘটনা প্রকৃত পক্ষে সৌদি প্রক্সি হিসেবে ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে বলেই অনেকের ধারনা।
এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, "ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিন্ন এবং ইয়েমেনে চলমান আগ্রাসন বন্ধ করলে সৌদি আরবের সঙ্গে তার দেশ সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারে। তিনি বলেন, ইসরাইলের প্রতি আনুগত্য বন্ধ করার পাশাপাশি নিজের এবং আঞ্চলিক জাতিগুলোর ওপর আস্থা ও নির্ভরশীলতা বাড়ালে সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। রুহানি বলেন, সৌদি আরবের উচিত দারিদ্রপীড়িত ইয়েমেনি জনগণের ওপর নির্বিচারে বোমা হামলা বন্ধ করা এবং ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য যে দৌড়ঝাপ করছে সেখান থেকে সরে আসা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৩৯