somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার "চোরাবালি" দর্শন

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অবশেষে বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে দেখে ফেললাম রেদোয়ান রনি পরিচালিত ছবি "চোরাবালি"! দেখার পর একটি শব্দ বেরিয়ে আসলো মুখ থেকে "অস্থিররররররর মাম্মা! জাস্ট অস্থিরররররর" লাস্ট কবে বাংলা ছবি দেখে এত মজা পেয়েছি টা আমার জানা নাই আর মনেও নাই! খুবই ভাল্লাগেছে আমার রনির এই মুভি! যাকে বলে পুরাই পয়সা উসুল! :):):)
ছবির ট্রেইলার দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম, কিছু একটা আসতেছে! এবং আমার ধারণা আসলেই সত্যি হল ;)
প্রথমেই ছবির কাহিনী একটু বলে নেই- বিশিষ্ট সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ আলি ওসমান ( শহিদুজ্জামান সেলিম) নাকি মডেল সুজানা ( পিয়া) কে খুনের দায়ে জড়িত - সাংবাদিক নবনী আফরোজের ( জয়া আহসান) এর এমন রিপোর্ট এর ভিত্তিতে পুরো মিডিয়াপাড়া ওসমানের বাসায় হাজির। তাই ওসমান তার ডান হাত সুমন( ইন্দ্রনীল) কে ফোন দেয় নবনীকে শেষ করে দেয়ার জন্য। কিন্তু সুমন তার ফোন ধরছে না! কারণটা কি? এরপর ফ্ল্যাশব্যাক এ বেড়িয়ে আসতে থাকে সব ঘটনা আর এই সমাজে ভদ্রলোকদের মুখোশের আড়ালের চরিত্র! আর সাথে সুমনের চোরাবালি থেকে মুক্তির কাহিনী!

ছবির ভাল দিক---
১- প্রথমেই অভিনয়ের কথা বলি- রনি চরিত্র নির্বাচনে খুবই মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন! প্রত্যেকটা চরিত্র নির্বাচন একেবারে যাকে বলে পারফেক্ট! প্রথমে যখন শুনেছিলাম যে ইন্দ্রনীল কে নেয়া হচ্ছে, তখন কিছুটা বিমর্ষ ছিলাম এই ভেবে যে- বাংলাদেশে কি কাউকেই পাওয়া গেল না? কিন্তু ছবি দেখে বুঝলাম- ছবিতে আসলেই ইন্দ্রনীলের মত কাওকে দরকার ছিল! খোঁচা খোঁচা দাড়ি, সানগ্লাস, অসাধারণ সুঠাম মেদহীন দেহ, আর চেহারায় প্রয়োজনীয় কাঠিন্য দেখলে আসলেই মনে হবে যে তিনি একজন ভাড়াটে খুনি! :) জয়ার কাছ থেকে হতাশ হয়েছি, তার অভিনয় ভাল লাগে নি। খুব বেশি করারও কিছু ছিল না তার চরিত্রের, কিন্তু তারপরও তিনি সম্ভবত আরও ভাল করতে পারতেন, ছোটখাটো চরিত্রে ইরেশ জাকের, এ টি এম শামসুজ্জামান( খুবই ছোট্ট চরিত্র, কিন্তু এই বয়সে আরেকবার নিজের জাত চেনালেন!), সোহেল রানা, পিয়া, বাবর, চাষি, হুমায়ুন সাধু ভালো করেছেন অনেক! ( সারাটা ছবি তিনি এক খরগোশকে হাতে তিনি আস্তে আস্তে আদর করেন, কিন্তু পরে যা দেখালেন, বাপরে বাপ! :):):) ), হিল্লোল, সালেহিন স্বপন আরেকটু ভাল করতে পারতেন! সুমনের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করা ছেলেটিও দুর্দান্ত অভিনয় করেছে( বিশেষ করে তার মাকে দোররা মারার সময় তার হাত পা ছোঁড়াছুড়ি)

এতক্ষন যার কথা বলিনি এবার তার কথা বলি, the one and only শহিদুজ্জামান সেলিম!!! ওসমান চরিত্রে তিনি জাস্ট দুর্দান্ত! ভাষা হারিয়ে ফেলসি তার অভিনয় দেখে! জাস্ট অস্থিররর! পুরোটা ছবি তিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন! তার কারণে এই ছবির সমস্ত ছোটখাটো ত্রুটি মাফ করে দেয়া যায়! তিনি ভাল অভিনেতা এটা জানতাম- কিন্তু এতটা ভাল করবেন টা ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি! এই ছবির জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে গেল এতটুকুও অবাক হব না! এক কথায় অসাধারণ! দর্শকের তালি আর সিটির বন্যা বয়ে যাচ্ছিল তার অভিনয় দেখে!

২- ছবির ক্যামেরার কাজ- অপূর্ব! সিনেমেটোগ্রাফি এর জন্য খায়ের খন্দকার কে আলাদা করে ধন্যবাদ জানাতেই হয়! সূর্যোদয়ের দৃশ্য, bird's eye view তে ঢাকাকে অন্যরকম ভাবে দেখানোর জন্য তাকে আরেকবার স্যালুট!
৩- ছবির গান সবগুলো ভাল হয়নি, তবে গল্পের প্রয়োজনে গান এসেছে এটাই ভাল্লেগেছে! আইয়ুব বাচ্চুর carefully careless গানটাই একমাত্র মনে আছে, খুবই ভাল্লেগেছে, রুমির অপারগতা গানটাও ভাল। তবে ব্যাকগ্রাউনড মিউজিক দুর্দান্ত লেগেছে!
৪- Twist- কি ভাবছেন? বাঙ্গাল সিনেমায় আবার টুইস্ট? জি হ্যাঁ! আবার জিগায়! জাস্ট হা হিয়ে গিয়েছিলাম কিচ্ছুক্ষণের জন্য এই টুইস্ট দেখে! খুবই ভাল্লেগেছে! এই টুইস্ট এর জন্যই এই ছবি একের অধিকবার টিকেট কেটে দেখা যায়!

এবার কিছু মন্দ দিক- :P:P:P
১- জয়ার অভিনয়কে মিস করেছি অনেক! তবে শেষ দৃশ্যতে সুন্দর করে শাড়ি পরে, মাথায় টিপ দিয়ে তিনি সব ভুলিয়ে দিয়েছেন! :P আহ! এই না হলে আমার জয়ার সৌন্দর্য! :P
২- সুমন আর সুজানার চরিত্রের ডাবিং যথাক্রমে শতাব্দি ওয়াদুদ আর দীপা খন্দকারকে দিয়ে করানো! যে অভিনয় করছে তার ভয়েস না শুনলে মেজাজ ঠিক থাকে না!
৩- আইটেম গানটার মনে হয় না কোন দরকার ছিল, আরও ভাল করা যেত গানটার choreography, তবে খুব মজা পেয়েছি গান শুনে আর তরুণীকে দেখে! :P:P:P
৪- মারামারি আরেকটু বেশি থাকলে ভাল্লাগত ;)
৫- নায়ক নায়িকার মধ্যকার প্রেম অনেকটা জোর করে ঢুকানো হয়েছে বলে মনে হয়েছে, তেমন জমে নি!

সব মিলিয়ে কেমন ছবি? অবশ্যই দারুন ছবি! বলতে গেলে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ওয়েলমেড ছবি! কি নেই এই এক ছবিতে? নাচ, গান, মারামারি, কাহিনী, আইটেম গান, অভিনয়, টুইস্ট- এক কথায় সব! অভিনয় আর টুইস্ট এর জন্য ছবির অন্য সব ত্রুটি মাফ করে দেয়া যায়! রনি কোন লম্বা নাটক বা টেলিফিল্ম দেখান নি, তিনি আসলেই সব শ্রেণীর জন্য উপযুক্ত এক ছবি দেখিয়েছেন! :):):)

অনেকে হয়ত ভাবছেন- কি এমন বানাইসে? এত প্রশংসা ক্যান করতেসি? ভাই ও বোনেরা, প্রশংসার দরকার আছে বলেই করতেছি! আমরা কোন কাজে উৎসাহ দেয়ার পরিবর্তে সেটারভুল খুঁজে বের করতেই ব্যস্ত থাকি বেশি! নিজেরা জীবনে হলে যেয়ে ছবি দেখব না, অথচ শাকিব কি পরিমাণ লিপস্টিক দেয় বা জলিলের কয়টা উচ্চারণ ভুল তা নিয়ে আমরা PHD করে ফেলি! ( আমি বলছি না যে এরা দুজন ধোওয়া তুলশি পাতা, কিন্তু আমরা অনেক বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলি!) অথচ আমাদের পাশের দেশ ভারত নকল জানা সত্তেও নিজেদের মুভির প্রতি ভালোবাসার কারণে, দেশপ্রেমের কারণে নিজেদের ইন্ডাস্ট্রিকে আজ কোথায় নিয়ে গেছে! তারা হলে যেয়ে ছবি দেখতে এতটাই পছন্দ করে( গু, মুত, অমৃত- যাই হোক না কেন), যে হিমেশ রেশমিয়ার মত অভিনেতাও( ?!?!?!) ছবি বানানোর সাহশ করে! কারণ জানে- আমি কি বস্তু বানাইসি, তা দেখতে পাবলিক একবার হলেও আসবে! :P:P:P আফসোসের বিষয় হচ্ছে হিন্দি সিরিয়াল দেখে আমরা কূটনামি করতে খুব ভালভাবে শিখি, কিন্তু তাঁদের যে দেশপ্রেম- সেটা এখনও শিখতে পারলাম না! /:)/:)/:)


অনেক উপদেশ দেয়া হইসে, আর না! :P:P:P রনি এক লাফে বাংলা ছবিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন! বলতে গেলে একটা সমুদ্র পাড় করে দিয়েছেন! বলতে কোন অত্যুক্তি হবে না যে রনি ছবি বানানোর ক্ষেত্রে তার গুরু ফারুকিকেও ছাড়িয়ে গেছেন! চোরাবালি সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীর দর্শকের জন্য নির্মিত ছবি- এখানেই রনির সার্থকতা! :) এখন সামনের কিছু ছোটোখাটো পাহার ডিঙাতে পারলেই বাংলা সিনেমার সুদিন ফিরে আসবে! চোরাবালি হিট হবে না ফ্লপ হবে, তা আমি জানি না, ইছছাও নাই জানার, তবে এই ছবির মাধ্যমে রনি যা করেছেন, তা সবাই মনে রাখতে বাধ্য থাকবেন! তাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি!
খবরদার- কবে টিভিতে আসবে বা কার কাছ থেকে pendrive এ করে এই ছবি নিয়ে দেখব- এই কথা ভুলেও ভাববেন না! সোজা হলে চলে যান, কোন কথা হবে না! অবশ্যই একা যাবেন না! পরিবারের সদস্য অথবা বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে দেখতে যাবেন!( যেমনটা আমি করেছি! :P ) এটা একা আনন্দ করে দেখার মত ছবি না, সবাইকে নিয়ে দেখার মত ছবি! " আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে?"
একটি কথা দিয়ে শেষ করতে চাই, চোরাবালি দেখার পর যেই অনুভূতিটা সবার আগে হয়েছে তা হল- " ছিঃ! তুই বাংলা ছবি দেখিস" - এটা বলার দিন শেষ! দিন এসেছে-" নতুন বাংলা ছবিটার ট্রেইলার দেখেছিস? কি বললি? দেখিস নাই? আরে গাধার বাচ্চা! করসিস কি তুই? তুই মর! " সবাইকে শুভকামনা! :):):)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১:২৬
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×