somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশা দ্যা লিডার - ভিন্ন কিছু করার সার্থক চেষ্টা :)

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিনেমার নাম- দেশা দ্যা লিডার

বাংলাদেশের ৯০% সিনেমার পরিচালকদের "আপনার সিনেমার বিষয়বস্তু কি?" জিজ্ঞেস করলে বিজ্ঞের মত তারা মাথা দুলিয়ে উত্তর দেন- "সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী একটি সিনেমা। সামাজিক একশনধর্মী/ মিষ্টি প্রেমের দুষ্টু ছবি, নায়ক নায়িকাকে একদম নতুনভাবে দেখতে পারবেন।"
আফসোসের ব্যাপার হল, তারা সবাই যদি সত্য কথা বলতেন, তাহলে আমরা হয়ত একটার পর একটা মাস্টারপিস না হলেও অন্তত এন্টারটেইনিং সিনেমা পেয়েই যেতাম।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক বক্তব্যধর্মী সিনেমা বলতে গেলে খুব বেশি হয়নি, ঐ পথে রিস্ক আছে, জেনেশুনে কে নিজের জানটা আর ব্যবসাটা খোয়াতে চায়? নব্বই দশকে প্রধানত কাজী হায়াত রাজনৈতিক বক্তব্যধর্মী সিনেমার রাস্তায় হাঁটতেন (যারা দেখেন নাই, তারা ইউটিউব এ দাঙ্গা সিনেমাটা দেখলে বুঝবেন এককালে এই দেশে কোন লেভেলের সিনেমা হইসে!) এরপরে ঐ রাস্তায় আর কেও হাঁটেন নি, কাজী হায়াত নিজেও না। তবে অনেকদিন পর একজন নতুন পরিচালক সেই রাস্তায় খুব দ্রুত হাঁটলেন দারুণভাবে। পরিচালকের নাম সৈকত নাসির আর তার প্রথম সিনেমার নাম - দেশা দ্যা লিডার।
একটি রিয়েলিটি শো কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সিনেমার মূল কাহিনী। দর্শক মোবাইলে sms এর মাধ্যমে তাদের পছন্দের নেতাকে নির্বাচন করবে। এরপরে বিজয়ী নেতাকে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত একজন দর্শকের বাড়িতে থাকতে হবে দুই দিন এক রাত। এই নিয়েই এগিয়ে চলে সিনেমার কাহিনী। আস্তে আস্তে উন্মোচিত হয় রাজনীতি আর মিডিয়ার নোংরা রূপ। কনসেপ্ট এর সাথে তেলেগু সিনেমা কো দ্যা লিডার আর ক্যামেরাম্যান গঙ্গা রামবাবু এর খুবই সূক্ষ্ম মিল আছে। কিন্তু পরিচালক নিজের চিন্তাভাবনা আর বাংলাদেশের পটভূমিতে কাহিনী দারুন করে সাজিয়েছেন বলে এই সিনেমাকে সরাসরি নকল বলার কোন স্কোপ নেই। তাই এটিকে অবশ্যই মৌলিক সিনেমা বলা যায়।
সাংবাদিকের চরিত্রে মাহিয়া মাহি বেশ ভাল ও এখন পর্যন্ত এটাকে তার সেরা কাজ বলা যায়। ন্যাকামি কম ছিল আগের তুলনায়, যদিও অভিনয়ে আরও উন্নতি করতে হবে। নবাগত হিসেবে শিপন উতরে গেছেন, তার একটা ম্যানলি লুক আছে। তবে অভিনয়,ডায়লগ ডেলিভারি আর গলার স্বরে তাকে আরও মনোযোগী হতে হবে বলে মনে করি- এতটুকু করতে পারলে তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলা যায়। ফাটিয়ে দিয়েছেন তারিক আনাম খান- দুর্দান্ত তিনি নেতার চরিত্রে। এই চরিত্রর বিকল্প শুধু তিনিই হতে পারেন। দরবার খান চরিত্রে রবিউল ইসলাম দর্শকদের বেশ বিনোদন দিয়েছেন। সাংবাদিকের চরিত্রে মঞ্জুরুল করিম শোভা বর্ধন করেছেন আর গোয়েন্দা পুলিশের চরিত্রে এ কে আজাদ সেতুর অভিনয় বেশ ভাল। যদিও এ কে আজাদের উপস্থিতি খুবই কম সময়ের জন্য। তাকে সামনে আরও বেশি কাজে দেখব বলে আশা রাখি। ছোট্ট চরিত্রে শিমুল খানের কাজও বেশ ভাল।
গান চারটি এই সিনেমাতে, প্রয়োজনেই চারটি গান এসেছে। টাইটেল ট্র্যাক এ জেমস এর গাওয়া গানটি দারুন। এছাড়া কত রঙের খবর জানি, এ কি মায়া- এই দুইটি গানও শ্রুতিমধুর। গানের লোকেশন, সেট ডিজাইন, কস্টিউম- সব খানেই যত্নের ছাপ আছে। পলিটিকাল থ্রিলারে যেরকম ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দরকার ,সেরকম দারুন একটা মিউজিক দেয়ার জন্য ইমন সাহা বিশেষ ধন্যবাদ পেতেই পারেন।
সংলাপ আর ডিরেকশন বেশ ভাল। ভাল কিছু রাজনৈতিক সংলাপ আছে যেটা পলিটিকাল থ্রিলারে থাকা উচিত। ডিরেকশন বেশ ইউনিক, সৈকত নাসির নিজের স্টাইলে গল্প বলেছেন গল্প বলাতে তিনি বেশি জোর দিয়েছেন। স্ক্রিনপ্লে বেশ গতিশীল। মেকিং বেশ ভাল সিনেমার। পরিচালকের ইউনিক স্টোরিলাইন দর্শকদের সিটে বসিয়ে রাখতে বাধ্য করেছে।

দুর্বলতার কথা বলতে গেলে মাঝে স্ক্রিনপ্লে কিছুটা ঝুলে যাওয়া অথবা কন্টিনিউটির বা ধারাবাহিকতার অভাব বেশ কিছু জায়গায়। হাডুডু খেলার সময় নায়কের কাছে ফোন আসলো আর মাহি বলার আগেই নায়ক "হাসান হায়দার আমার বাড়িতে আসবেন?" কিভাবে বললেন সেটা বোধগম্য নয় কারণ মাহি নেতার নাম তখনো বলেন নাই আর নায়কের নাম জানার কথা না কারণ তিনি হাডুডু খেলায় ব্যস্ত ছিলেন।সিনেমার টুইস্ট অনুমানযোগ্য ছিল, টুইস্ট টা আরও দারুণ করা যেত যদি আরও কিছু ক্যারেক্টারকে ব্যবহার করা যেত। ছোট কিছু জিনিস বেশ ভাল লেগেছে- যেই প্রোগ্রামে নির্বাচিত নেতার নাম ঘোষণা করা হবে, সেই প্রোগ্রামের উপস্থাপিকার হাতের খামটি পতাকার রঙের অর্থাৎ "লাল সবুজ" রঙের, ফার্স্ট হাফ এর বেশিরভাগ দৃশ্য টিভি চ্যানেলের ক্যামেরার এঙ্গেল থেকে দেখানো- সিনেমাতে নতুন একটা মাত্রা দিয়েছে।

সিনেমাটা আরও ভাল হতে পারত কিছু জায়গায়, বিশেষ করে ফিনিশিং, তবে পরিচালকেরর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে জেনেছি- আমাদের মহান(!) সেন্সর বোর্ড সিনেমার শেষের অংশের সাড়ে ছয় মিনিটের মত কর্তন করেছেন। ২০১৪ এর শুরুতেই "দাবাং" (সালমান খানের না, বাংলা সিনেমার নাম দাবাং!) এর মত অশ্লীল সিনেমা মুক্তি পায় আর দেশার মত সিনেমার এক মিনিট সেন্সর বোর্ড কেটে দেন- এই জিনিস মনে হয় শুধু এই দেশেই সম্ভব। যাই হোক, নিজের প্রথম সিনেমা হিসেবে সৈকত নাসির দশে আট পাবার মত কাজ করেছেন- তাকে আর তার দেশা টিমকে শুভকামনা। সাড়ে ছয় মিনিট কর্তন করেছেন, ভাগ্য ভাল পুরো সিনেমা আটকে দেননি! আশা করি সেন্সর বোর্ড একদিন সেই এক মিনিটের মূল্য বুঝে ভাল সিনেমার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন। দেশা দ্যা লিডারকে মেকিং, কনসেপ্ট এর দিক থেকে ২০১৪ এর সেরা সিনেমা বললে খুব একটা বাড়িয়ে বলা হবেনা। তবে যেই রাজনীতি নিয়ে সৈকত নাসির সিনেমা বানিয়েছেন, সেই রাজনীতির কবলেই শেষ পর্যন্ত তার সিনেমা পড়ে গেছে- টানা কয়েকদিনের হরতাল! হরতালের কারণে কিছুটা হলেও ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই সিনেমা- অথচ এমন সিনেমা নিয়মিত হওয়া দরকার- এমন সিনেমার লাভের মুখ দেখা খুবই দরকার আমাদের মৃতপ্রায় ইন্ডাস্ট্রির জন্য! যারা এখনও দেখেন নাই- তারা দেরি না করে নির্দ্বিধায় হলে চলে যেতে পারেন।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×