somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার "জিরো ডিগ্রি" দর্শন :)

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সিনেমার নাম- জিরো ডিগ্রি

কাহিনী সংক্ষেপ- ভালোবাসায় প্রতারিত দুইজন মানুষের( জয়া আহসান ও মাহফুজ আহমেদ) প্রতিশোধ গ্রহণের কাহিনী। ( বেশি সংক্ষেপে বলে ফেললাম? কেন বলব না? লিখেই তো রাখসি- কাহিনী "সংক্ষেপ" :P )

ভাল দিকের কথা বলি শুরুতে। বাংলাদেশে "সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার" জিনিসটা কয়টা হইসে এটা কাওকে জিজ্ঞেস করলে সে হা করে আধা ঘণ্টা সিলিং ফ্যানের দিকে তাকায় থাকবে। নব্বই দশকে শহিদুল ইসলাম খোকন হুমায়ূন ফরিদিকে নিয়ে "বিশ্বপ্রেমিক" নামে একটা বানিয়েছিলেন, যেখানে ফরিদি মেয়েদের মেরে তাদের গলার তিল কেটে সেই তিলের মালা বানাতেন! (ah, good old days!) জিরো ডিগ্রীর গল্প ভাল, এফডিসির বস্তাপচা আর নকল গল্পের ভিড়ে এই গল্প অনেক আরাম দেয়, চোখের আর মনের দুইটাই। ক্যামেরার দারুণ কাজ, ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল প্রথম দিক থেকেই মনোযোগ আকর্ষণ করে। ব্যাকগ্রাইন্ড মিউজিক থেকে শুরু করে টেকনিক্যাল সবকিছুতেই ছবিটিকে বেশ সমৃদ্ধ বলা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ মনে হয় অভিনয়ে- জয়া আর মাহফুজ নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন। নিজের ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় বসে থাকা হতবিহবল মাহফুজের এক্সপ্রেশন যেন হলের দর্শকদেরও চুপ হয়ে যেতে বাধ্য করে। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন মনে হয় জয়া- একই সাথে রূপের ঝলক আর দুর্দান্ত অভিনয়, গুরুজির বাসায় ঢাকের তালে জয়ার নাচ, নানচাকু হাতে নিয়ে তার এক্সপ্রেশন, শেষের দিকে মাহফুজের সাথে সাইকো হাসি হাসার এক্সপ্রেশন- প্রসংসা যত করব কম হয়ে যায়। ছোটখাটো চরিত্রের সবাই ভাল। তবে অবাক করেছেন রুহি- পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন জয়া আর মাহফুজের সাথে। গান ভাল সিনেমার,অনেকদিন পরে গুরু জেমসের গান শুনে কলিজা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। ছবির সবচেয়ে অবাক করা দিক হল দৃশ্যের সাথে সাদৃশ্য রেখে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ব্যবহার- এই জিনিসটায় সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছি। অনিমেষ আইচের পরিচালনা বেশ ভাল।

তারিক আনাম খান আর ইরেশ জাকের কে পুরাই "অযথা" মনে হয়েছে সিনেমাতে, তাদেরকে সেভাবে ব্যবহার করা হয়নি। সিনেমার গান ভাল হলেও সেগুলোর ব্যপ্তি ৪৫ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিটের মত- জেমসের গান এক মিনিট শুনে কি আত্মা ভরে? সিনেমার দুর্বল দিকের কথা বললে মেজর পয়েন্ট হল এর দ্বিতীয়ভাগ, প্রথমভাগ দারুণ আগালেও দ্বিতীয়ভাগে সিনেমা গতি হারায়। গল্প আরও গভীর হওয়া উচিত ছিল দ্বিতীয়ভাগে, তারপরেও উপভোগ্য। রাফ অ্যান্ড টাফ মাহফুজের সাথে তার পেটের ভুঁড়িটা বেশ বেখাপ্পা লাগে। ছোটখাটো কিছু লুপহোল আছে।

সিনেমাতে ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন জীবনের বেশিরভাগ সময় মানুষকে হাসিয়ে আসা অভিনেতা, যাকে অনেকে "ভাঁড়" বলেন, সেই টেলিসামাদ- অবাক করা ব্যাপার হল মাত্র কয়েক মিনিটের অভিনয় করা চরিত্রে তিনি দারুণ সফল। যদিও খারাপ লেগেছে এটা দেখে যে তার ভয়েস ডাবিং করেছেন আরেকজন। এটা করার কারণ আছে, কারণটা বেশ কষ্টের- গুণী এই অভিনেতার বাম পায়ে গ্যাংগ্রিন হয়েছে, ডাক্তার তার পায়ের দুটি আঙ্গুল কেটে ফেলেছেন, বর্তমানে নিজের বাসায় আছেন তিনি। তার ছেলের সাথে কাকতালীয়ভাবে দেখা হয়েছিল আমার, তার কাছ থেকেই সব জানলাম। আফসোস করা ছাড়া কিছুই করার নাই।

সিনেমাতে নারী আর পুরুষ- দুইজনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই অপর লিঙ্গের খারাপ দিকগুলো দেখানো হয়েছে, ভ্যালেন্টাইনস ডের আগে এই ধরনের কিছু দেখানোর পিছনে কি পরিচালকের গোপন কোন উদ্দেশ্য আছে? জাতি জানতে চায় ;) কাপলরা সিনেমাটি দেখে আবার ঝগড়া লাগায় দিয়েন না নিজেদের মাঝে :P

জিরো ডিগ্রি আরও দুর্দান্ত হতে পারত, সেটা না হলেও দারুণ একটা থ্রিলার হয়েছে। শুধু জয়া-মাহফুজের অভিনয়ের জন্য সিনেমাটি মাস্ট সি। এই সিনেমার জন্য মাহফুজ দুই বছর ক্যামেরার সামনে আসেন নি। একটি ঝুঁকিপূর্ণ সিকুয়েন্স করতে গিয়ে জয়া আহসান আহত হয়ে বেশ কিছু সময় হাসপাতালে ছিলেন- তাদের এই কষ্ট সার্থক হবে যদি আমরা হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখি। অবশ্য হলে যাওয়ার কথা আর কি বলব- যেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এত খারাপ- সেই দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে আগাবে? সিনেমা নিয়ে এত চিন্তার সময় কার আছে, যেখানে জীবন "পেট্রোল বোমার" কাছে জিম্মি!
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×