somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সত্যপথিক শাইয়্যান
অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

আমার জীবনের কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত

০৬ ই মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রিয় মামনি সোহানা,
আজ অজানা এক লেখকের একটি উক্তি পড়লাম। তিনি ইংরেজিতে যা লিখেছেন তা বাংলা করলে দাঁড়ায় - সাহস দেখাতে সব সময় চিল্লা - বাল্লা করা লাগে না, বরং, মাঝে মাঝে 'আমি আগামীকাল আবার চেষ্টা করবো' - এটা কানে কানে, চুপি চুপি বলাটাও সাহসের পরিচয়। আমার কাছে কথাটা খুব মনে ধরেছে। তাই, আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তোমাকে আজ আমার জীবনের কিছু সাহসী সিদ্ধান্তের কথা শোনাবো।

বুদ্ধি খাটিয়ে বিদেশে পড়তে যাবার টাকা জোগাড়
আমি যখন যুক্তরাজ্যে পড়তে যাই, তখন খুব কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে গিয়েছিলাম। আমার বাবা (তোমার দাদু) তাঁর বড় ছেলেকে বিদেশে যেতে দিতে রাজি ছিলেন না। এর অনেক কারণের একটি ছিলো তাঁর আর্থিক অবস্থা। তোমার দাদা খুব সৎ সরকারী অফিসার ছিলেন। নিজের ছেলেদের মানুষ করতে কখনোই অন্যায় উপায়ে পয়সা উপার্জন করেন নাই, সরকারী ক্ষমতাও ব্যবহার করেন নাই। এই অবস্থায় তিনি কিভাবে ছেলেকে লক্ষ লক্ষ টাকা দিবেন! তাই, আমি আমার ছোট খালুকে বললাম যে - আমাদের মিরপুরে যে জমি আছে, সেই জমিতে যখন একটি এপার্টমেন্ট হবে, তখন তা থেকে আমার নামে যেটা হবে সেটা তাঁকে দিয়ে দিবো। এর বদলে, তিনি আমাকে টাকা দিতে রাজি হলেন। আমি এরফলে বিদেশে মাস্টার্স করতে যেতে পারলাম। এটা ছিলো আমার অনেক সিদ্ধান্তের মাঝে এক সাহসী সিদ্ধান্ত!

আমি বিদেশে থাকাকালীন সব সময়ে মাথা উঁচু করে থেকেছি
আমি যত দিন বিদেশে ছিলাম, তত দিন মনে রেখেছি যে, আমি বাংলাদেশের এক সন্তান। কখনোই নিজ দেশের সম্মানকে খাটো করে দেখি নাই। এমন কাজ করি নাই যাতে দেশের অসম্মান হয়। এক পর্যায়ে, মাস্টার্স শেষ করে আমাকে একটি বাঙ্গালী রেস্টুরেন্টে চাকরী করতে হয়। কিন্তু, তবু, কারো কাছে মাথা নত হয়ে হাত পাতি নাই, কিংবা অসাধু উপায় অবলম্বন করি নাই।

আমি বিদেশে অসাধু উপায়ে থেকে যেতে পারতাম
আমার সাথের অনেকে অসাধু উপায়ে বিদেশে থেকে গিয়েছিলো। অনেকে দেশের মান-সম্মান ডূবিয়ে এসাইলাম নিয়েছিলো। আমি তাদের মতো হই নাই। জানতাম, দেশে এসে খুব কষ্ট করতে হবে, তবু, ফিরে এসেছি নিজ দেশে।

দেশে ফিরে ১ বছর বেকার ছিলাম
দেশে ফিরে কয়েক জায়গায় ইন্টার্ভিউ দিলাম। সবাই জিজ্ঞাসা করে - 'দেশে ফিরে এলেন কেন?' 'কোন কিছু কি করেছিলেন ঐ দেশে?' 'আপনার কোন উচ্চাশা নাই কেন?' এরকম প্রশ্নের জবাবে কি বলতে হয় আমার জানা ছিলো না। সত্য কথাটা ইন্টার্ভিউয়াররা গ্রহণ করেন নাই। তবু, হাল ছাড়ি নাই। শেষ পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের একটি রিসার্চ প্রজেক্টে কাজ পেলাম। আমার রিসার্চের কাজ খুব একটা জানা ছিলো না। কিন্তু, প্রজেক্টের ন্যাশনাল কনসাল্টেন্ট আমাকে খুব পছন্দ করলেন। ফলে, চাকরী নিয়ে নিলাম।

ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের জব যেভাবে ছাড়লাম
জবটা শর্ট টার্ম ছিলো। রিসার্চের জব তেমন একটা বুঝতে পারছিলাম না। শুধু বেতনের আশায় কাজটা করে যাওয়াটা ভালো বলে মনে হলো না। তাই, ছেড়ে দিলাম। এর এক মাসের মাথায় গোল্ডেন হারভেস্টের সাপ্লাই চেইন ডিপার্টমেন্টে চাকরীর ডাক এলো।

অসাধু ম্যানেজারের অধীনে কাজ না করে জব ছাড়লাম
গোল্ডেন হারভেস্টের আমাদের ডিপার্টমেন্টের হ্যাড যিনি ছিলেন, তিনি সাপ্লাইয়ারদের সময় মতো পে করতেন না। যেখানে ২ সপ্তাহের মধ্যে পে করার কথা, সেখানে ৪ মাসও লাগতো। ভালো ভালো সাপ্লাইয়াররা কোম্পানী থেকে চলে যেতে লাগলো। ম্যানেজার নিজের দোষ আমাদের মতো মিড লেভেলের কর্মকর্তার উপর চাপিয়ে দিতেন। এভাবে আর কত দিন চালানো যায়। চাকরী ছেড়ে দিয়ে নিজে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

টানা ৩ বছর ব্যবসায় কোন লাভ ছিলো না
২০১৭ -২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা ৩ বছর আমার ব্যবসায় কোন লাভ ছিলো না। এই সময়ে আমাকে খুব কষ্ট করতে হয়। এই অবস্থায় আমি তোমার মা-কে বিয়ে করি।

বিয়ে করাটা ছিলো অনেক সাহসী একটি সিদ্ধান্ত
টাকাপয়সা রোজগার নেই, এর মাঝে বিয়ে! আমার ছোট ভাইয়েরা ইতিমধ্যে বিয়ে করে ফেলেছে। তুমি জানো, তোমার চাচারা কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউবা ডাক্তার। তাঁরা এবং এবং তোমার দাদু এমন জোর করলেন যে, আমি বিয়েতে রাজী হলাম। এই প্রথম আমি বিয়ের জন্যে ধার-কর্জ করলাম।

২০২০ সালে এসে ব্যবসায় প্রথম মুনাফা আসা শুরু
বিয়ের তখন ১ বছর। একদিন আমি ব্রিটেনে ২০১৪ সালে যে মিডিয়া কোম্পানিতে চাকরী করতাম, সেই কোম্পানীর বাংলাদেশী চীফ টেকনোলজি অফিসার আমাকে ফোন করে একটা ব্যবসার প্রস্তাব করলেন। তাঁরা আমাদের দেশ থেকে সফটওয়্যার বানাতে চান। আই,টি, লাইনের প্রায় কিছুই বুঝতাম না। তবু রাজি হয়ে গেলাম। ব্যস, এরপর থেকে আমাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয় নাই। আজ, আমার ফার্মের সর্বোচ্চ বেতনভোগী ইঞ্জিনিয়ারের বেতন ৩ লক্ষ টাকার অধিক, আর সর্বনিম্নে বেতন ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকারও বেশি!

এভাবেই চলছে। আশা করি, তুমি এ থেকে নিজে শিক্ষা নিবে, তোমার আশেপাশের বাকি সবাইকেও শিক্ষা দিবে।

ভালো থেকো নিরন্তর।









সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×