ইস্কুলে পড়ার সময় আমার খুব ঘুড্ডি উড়ানের নেশা আছিল। এমনি নেশা যে জৈষ্ঠের রইদের তাপে কুত্তা সহ হাস, মুরগি বিলাই সব গিয়া পানিতে উল্টায়া পরে আর আমি বান্দা ছাদের উপরে মহা আনন্দে ঘুড্ডি উড়াইতাম।ছাদের পাশেই আছিল একটা গাছ। গাছটার নাম না জানলেও কথ বেলের মত ফল হয় বিধায় ঐটারে বেল গাছ হিসাবেই জানতাম। কিন্তু কখনো খায়া দেখিনাই খাইতে কেমন লাগে। কারণ আম্মায় কইতো এই ফল খাইলে বলে পাগল হয়া যায়। আমি দুর্দান্ত সাহসী হওয়া স্বত্বেও সাহস কইরা কোনদিন খাইতে পারিনাই। আফসোস।

কিন্তু যত সমস্যার মূল ছিল এই গাছ। প্রতিদিন হেয় হের প্রশারিত শাখা প্রশাখা দিয়া আমার দুই তিনডা ঘুড্ডি নিজের কাছে রাইক্ষা দিত

। মাঝে মাঝে যহন আর হাতে ঘুড্ডি না থাকত তখন গিয়া উঠতাম গাছে। আর ভেজালডা লাগত ঐ তখনই। গাছ হালায় আমার ঘুড্ডি গিল্লা খাইত মজা কইরাক আর মাথায় কৈরা রাখত কতগুলা ইতর কাউয়া। এই কাউয়া গুলি গাছের মধ্যে বাসা বাইন্ধা গাছটারে তার পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করত। খালি গাছটা দখল কইরাও হেগো মন ভরতো না হেরা আমার আব্বাজানের এত কষ্টের করা বাড়িটার ছাদ ও নিজের দখলে রাখত। কেউ ছাদে গেলেই কৈত্থিকা আইসা পিছন দিয়া একটা খামছি মাইরা ভোঁ

।এইভাবে নিত্য কাউয়ার অত্যাচারে অতিষ্ট হৈয়া হাতে লৈলাম কাউয়া নিধন কর্মসূচি

। কিন্তু কাউয়া তো সহজে ধরা যায়,

শালারা বহুত চালাক। কি করা যায়??? প্রথমে চিন্তা করলাম কাউয়ার বংশ বিস্তার হৈতে দিমু না। শুরু করলাম কাউয়ার বাসা ভাংগা। প্রথম আপারেশনঃ- একটা লম্বা লাঠির আগায় নারিকেলের আইচা বাইন্ধা এক অভিনব পদ্ধতি আবিস্কারের মাধ্যমে কাউয়ার আন্ডা সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় নিয়া আইতে সক্ষম হৈলাম নিজের হাতের মুঠোয়

। চারিদিকে শ খানেক কাউয়া যখন চিৎকার দিয়া তাগো কাকারে ডাকা শুরু করলো নিজেরে তখন মনে হইতাছিল বীর উত্তম।

বীরের মত চোখের সামনেই আছার মাইরা ভাংলাম কাউয়ার কুৎসিত আন্ডা। তার পর লাঠির মধ্যে কোনাইচ্চা আরেকটা ছোট কাঠি লাগায়া টাইন্না খোঁচায়া বাসা ভাইঙ্গা প্রথম অপারেশনে সফল হৈলাম

।(বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত, আমি সেই দিন হব শান্ত, যেদিন পাবলিক দিবে গনধোলাই, ভাঙ্গবে দুপাটি দন্ত) ওমা এইবার দেহি আরেক বিপদ। এতদিন কাউয়া খালি গাছে আর ছাদে উঠতে দিত না এহন আমি যেই খানে যাই আমার পিছি খামচাইতে খামচাইতে উড়ে। দুই তিন দিনের মধ্যে খাইমচায়া আমার মাথা ভোগলা বানায়া দিল

। মেজাজ তখন চরম খারাপ

। এলাকার যত গাছ আছে সবগুলার মধ্যে রেড আলার্ট ফালাইলাম।নিচ থিকা যেই গাছেই বাসা দেখি ঐ গাছেই গিয়া হামলা করি। কয়েকদিনের মধ্যে এলাকার সব কাউয়া আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিল

। বাসার থিকা ৩ কিলোমিটার দূরে একটা মাঠে খেলতে যাইতাম ক্রিকেট। বিজাত কাউয়া ঐখানেও আমার পিছে। আমারে ফিল্ডিং করতে দেয় না। খালি খামছি মাইরা উড়াল দেয়

। ভাইব্বা দেখলাম বড় কাউয়া গুলা না মারা পর্যন্ত আমার শান্তি নাই। বীর বাঙ্গালী হিসেবে হাতে তুইল্লা নিলাম অস্ত্র।খুব যত্ন কইরা একটা গুলাইল(গুলতি) বানাইলাম। শালার বিজাত কাউয়া এইবার যাইবা কৈ?

কিন্তু গুলাইল দিয়া একটাও কাউয়া মারতে পারি না

। তবে উপকার যেইটা হৈল হাতে গুলাইল দেখলে কাউয়া আর কাছে আসে না। খামচির থিকা বাঁচলাম কিন্তু পিছ তো ছাড়ে না? যেইখানে যাই অসভ্য বেয়াদপ কাউয়া সারাক্ষন মাথার উপ্রে ঘুর ঘুর করে। আর চান্স পাইলেই খামছি মারে। কি-যে রাগ লাগত।আম্মায় কৈত আল্লায় বলে অকারনে কোন কিছু সৃষ্টি করেন নাই। মাথায়ই ঢুকত না কাউয়ার উপকারীতাটা কি? যাউক একদিন নতুন একটা বাসা ভাঙ্গলাম। কাউয়া আমার উপর এতই ক্ষ্যাপা যে আমি গুলাইল মারলে দেখি হালায় জায়গারতে নড়ে না উলটা আমার নিক্ষেপ করা বুলেটে ঠোকর দিতে চায়

। মারলাম এক্কেরে একটা জায়গামত। সেই কথিত বেল গাছের থিকা নিচে ছোট একটা পেয়ারা গাছে গিয়া পড়ল।মারাত্মক আহত। আমার রাগ ও তো কমে না। গেলাম ঐ পেয়ারা গাছের নিচে। খুব কাছ থিকা মারলাম আমার ২য় বুলেট। পাখনা পুখনা চেগায়া পড়লো গিয়া পাশের ক্ষেতে

।এইবার বোধহয় নিহত। কিন্তু হঠাৎ নিজের বিবেকের মধ্যে নাড়া পড়ল হায় হায় এইটা আমি কি করলাম?

কাউয়াটার পইরা থাকা দেইক্ষা খুব খারাপ লাগল। দৌড়ায়া যাইতে নিলাম কাউয়ার কাছে ওমা! খাচ্চরটা উইড়া গেল

।কিন্তু চোখের মধ্যে খালি ভাসতে থাকে ক্ষেতের উপর পইরা থাকাটা।সেই থিকা আমি আর কখনও কোন প্রানী মারতে পারি নাই

। তারপর অনেক বছর কাউয়ার অত্যাচার নিরবে সহ্য কইরা গেছি। আমার চান্দি পুরা ছ্যারা-ব্যারা কৈরা দিসিল হালারা

। মাঝে মাঝে ফান্দে ফালায়া দুই একটা ধরছি কিন্তু মারতে পারি নাই। বেয়াদবির শাস্তি স্বরুপ খালের মধ্যে দুই তিনটা চুব দিয়া ছাইড়া দিতাম। কিন্তু আজো কাউয়া দেখতে পারিনা হেগো কর্মকান্ডে। এমন একজন বান্দা পাওয়া দুস্কর যার মাথায় কাউয়া একবার হৈলেও পেস্ট ফালায় নাই

। বি ডি আর এর গুল্লি মিস হয় মাগার কাউয়ার শুট মিস হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১২:১৮