ছোটবেলা থেকেই একটি কথা প্রাইয় শুনতাম যে বাঙ্গালীরা অতিথীপরায়ন।কালের বিবরতনে তা হারিয়ে যেতে বসেছে কিনা তা আপনারা ভালোই বলতে পারবেন। তবে আমি অনুভব করি তা হারিয়ে যাবার পথে। ছোটবেলায় নানার বাড়িতে দেখেছি কোন মুসাফির পানি খেতে চাইলে পানির সাথে অন্য কিছু দেওয়া হতো যেমন মুড়ি বা মোয়া বা পিঠা যদিও আমার নানা অবস্থা সম্পন্ন কৃষক ছিলেন না।কিংবা ঘরে কোন মেজবান আসলে ঘরের সবচেয়ে বড় মরোগ জবাই করা হত।বড় হয়ে বুঝতে পেরেছি সেটা ছিল কৃষ্টি, কালচার বা সংস্কৃতি।আজ ঘরে আর মুরগী পালন হয়না সংস্কৃতিও লালন হয় না। প্রায়ই এক যুগ পড়ে আমাদের পুরানো সেইকৃষ্টি, কালচার বা সংস্কৃতি ভিন্ন দেশে এসে খুজে পেলাম।সেই প্রসঙ্গ শুরু করার আগে একটু ভুমিকা না টানলেই নয়।
আমার স্ত্রীর ল্যাবমেট ওয়াঙ্গ ফা চুন গত বছরেই পিএইচডি পাট সম্পন্ন করে নিজ গ্রামেই ব্যবসা শুরু করেছে এবং সেই বছরেই বিবাহ করেছে।সেই সূত্রমতে বিবাহতে আমার স্ত্রীকে নিম্নত্রন করেছে।যেহেতু গত বছরে আমাদের আগমন এবং গুছিয়ে উঠতে না পারার কারনে আমাদের আর যাওয়া হয়নি বা সম্ভবপর হয়ে উঠেনি।কারন তার শহর বেইজিং থেকে ১২০০ কিঃমিঃ দূরে কিন্তু কোন এক সময়ে আমাদের যেতেই হবে এমন কথা আমাদের কাছ থেকে আদায় করে ছেড়েছে।চীনে প্রতিবছর ১লা অক্টোবর থেকে ৭ই অক্টোবর বিজয় দিবসের ছুটি থাকে।আমাদের চিন্তা ছিল এই সময়টা আমরা কোথাও বেড়াতে যাবো। যেহেতু আগেই ওয়াঙ্গ ফা চুন এর সাথে যোগাযোগ করলাম আমরা আসতে চাই।আমরা আসতে চাই শুনে সে যারপরনাই আনন্দিত হলো।
বিজয় দিবসের ছুটিতে চীনে আমাদের দেশের ঈদের ছুটির মতো অবস্থা থাকে।আগে থেকে টিকেট কেটে না রাখলে যাতায়াত করা খুবই মুশকিল। তাই আমাদের যা্ত্রা ৯ই অক্টোবর রাতের ট্রেনে ।১২০০ কিঃমিঃ পথের ট্রেন জা্রনি।সেই অভিজ্ঞতা আরেক দিন লিখব।আমরা পরের দিন সকালে নানজিং পৌছালাম।তারা আগেই আমাদের জন্য স্টেশনে অপেক্ষা করছিল।খুজে পেতেই যা একটু দেরী হয়েছে।সারাদিন ঘুরে সন্ধায় তাদের বাসায় গেলাম।রাতের আয়োজন দেখি এলাহী কারবার।যেহেতু আমর মুসলিম সেই বিষয়টা মাথায় রেখেই তার সব আয়োজন করেছে।তাই সেখানে ছিল আমাদের দেশী মাছের আধিক্য যেমন শোল মাছ,শিং মাছ,তেলাপিয়া মাছ চিংড়ি মাছ।মেজবান আসবে আর মাংস থাকবেনা তা কি হয় তাই ব্যবস্থা রেখেছে হালাল বেইজিং Duck।আর ছিল হরেক রকম শাক এবং ভাজির ব্যবস্থা।যেটা ছিল না তা হলো পোলাও কিংবা বিরিয়ানী অবশ্য আশা করিনি তবে অল্প পরিমান ভাতের ব্যবস্থা ছিল (চীনের উত্তর অংশের লোকেদের খাবার মেনুতে ভাতের আইটেম থাকেনা বললেই চলে-খাবার ব্যবস্থা নিয়ে আরেকদিন বিষদ আলোচনা করবো)।পরেরদিন আমাদের ভ্রমন ওয়াঙ্গ ফা চুন এর গ্রামের বাড়ি।যেখানে গিয়ে পেয়েছি অভিন্ন সংস্কৃতি।
পরেরদিন আমরা সকাল ৯টায় যাত্রা করলাম।গ্রামের বাড়ি শহর থেকে ৫০/৬০ কিঃ িমঃ এর পথ কিন্তু সময় মাত্র ৩০ কি ৪০ মিনিটের।সেখানে যাওয়া মাত্রই জুস ,দুধ, ফল এবং সূ্রযমুখী ফুল ও মিষ্টিকুমড়া বীজের ভাজা (চীনাদের প্রিয়)সবার শেষে গ্রীন ট্রী দিয়েছে।দুপুরের খাবার খাওয়ার আগে শুনি আমাদের জন্য মুরগী কোরবানী করা হয়েছে। আমাদের জন্য আবার সেই মাছের আধিক্য তবে এবার আমাদের দেশীমাছের পাশাপাশি লোকাল মাছও ছিল।সাথে কয়েক রকমের শাক ও ভাজিও ছিল।আসার সময় চিরায়ৎ বাংলার রপ যেতে নাহি দিব তবুও যেতে দিতে হয়।বার বার ওয়াঙ্গ ফা চুনের পিতা মাতার একটা দিন থেকে যাওয়ার জন্য আমাদের অপরাগতার কথা বললে তবে আবার আসার।ফেরার পথে ওয়াঙ্গ ফা চুনের শুশুর বাড়িতে দেখা করতে গেলাম।সেখানে খাওয়ার জন্য অনেক জুড়াজুড়ি।যখন কোন ভাবেই আমাদের খাওয়াত পারলোনা তখন তের ক্ষেত থেকে আখ কেটে প্যাকেট করে দিয়ে দিল।যেন মেজবান কে খালি মুখে ফেরত দওয়া যাবেনা।এ যে বাঙ্গলারই সংস্কৃতি।