somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার জীবনে আগ্নেয়াস্ত্রের উপাখ্যান ও স্পর্শ

১৮ ই মে, ২০০৯ সকাল ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাসুদরানা আর এ্যাকশন মুভির কল্যানে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রতি সেই কৈশোরে যে আকর্ষন তৈরী হয়েছে তা আজও সমান ভাবে বিদ্যমান আমার মাঝে। পথ চলতে চলতে মোটামুটি প্রায় অনেক রকমের আগ্নেয়াস্ত্রের সাথে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ সাক্ষ্যাৎ আমার হয়েছে।মজার ব্যাপার হচ্ছে ছুয়ে দেখার পর এর প্রতি তেমন কোন শিহরণ আমি টের পাইনি। সবার ধারনা আগ্নেয়াস্ত্রের কল্যানে শরীরে একটা জোশ আসে।ব্যাড লাক আমার কখনো এমনটি হয়নি।তারপরেও আগ্নেয়াস্ত্রের অবর্তমানে আকর্ষনটা আমার মাঝে ঠিকই রয়ে গেছে। বৈধ অবৈধের একটা ভূমিকা হয়ত এখানে কাজ করেছে। আরেকটা ব্যাপারও হতে পারে নিজের বৈধ মালিকানা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কোন কিছুর প্রতিই আমার তেমন একটা আকর্ষন কাজ করেনা তা যাই হউকনা কেন।

যায় হউক এবার সেই সব আগ্নেয়াস্ত্রের কথা বলা যায় যা আমি ছুঁয়ে দেখেছি অথবা খুব কাছ থেকে।



জীবনে প্রথম ছুয়ে দেখি বিখ্যাত ( কুখ্যাতও বটে-আমাদের পুলিশের এটা থেকে নাকি গুলি বের হয়না) থ্রি নট থ্রি (৩০৩) রাইফেল। ১৯৮৮ সালের কথা।নির্বাচনী দায়িত্বের কারনে এবং ব্যালটের নিরাপত্তার জন্য ভোটের আগের দিন (কেন্দ্র কাছে থাকায়) দুই পুলিশ সহ আব্বু বাসায় আসেন। দুই পুলিশের হাতে দুখানা ৩০৩ ।শিশু সুলভ আকর্ষনে সেই প্রথম আগ্নেয়াস্ত্রের ছোয়া পাওয়া নেড়ে চেরে দেখা। আমার শত কোশ্চেন এর উত্তর ও তারা দিয়েছিলেন। ট্রিগার থেকে বুলেট সবই।বিশাল সাইজের বুলেট কিছুটা অবাকই করেছিল। বুঝেছিলাম এটা জায়গা মত বিধলে বাঁচার আশা দুরাশা।



পরবর্তী সাক্ষ্যাৎ হয়েছিল একেবারে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের সাথে। ঘূর্নিউপদ্রুত এলাকায় সাহায্য করতে যাওয়া সেনা সদস্যদের সাথে থাকা চাইনিজ রাইফেল আর এস এম জি। ২৫ টি বুলেটের ম্যাগাজিন সহ চাইনিজ রাইফেল।তখন ওজনটাও ভালই মনে হইছিল। তারা কি সুন্দর এটাকে পার্ট পার্ট করে খুলে পরিষ্কার করত আবার লাগিয়েও ফেলত কি অবলীলায়। হাতে নিয়ে দেখতে বেশ লাগত।এর বুলেটগুলো আরও বড়। বেশ ঝকঝকে করে রাখত তারা।রাইফেল গুলোকে অনেক আপন ভাবত ওরা।
এস এমজির ম্যাগাজিনটা ছিল গোল বড় চাকতির মত, বুলেট গোল করে সাজানো থাকত তাতে। জিনিসটাও বেশ ভারী।
বৈধ অস্ত্রের সাথে সাক্ষ্যাৎ এখানেই শেষ।




ক্লাশ সেভেনে পরা কালীন কোন এক বিকালে খেলার মাঠে আমরা কয়জন বসে আছি বল এখনও আসেনি। মাঠের এক পাশে আগে থেকেই বসে ছিল পাড়ার এক ছেলে।আমাদের থেকে কয়েক বছরের বড়। হঠাৎ কথা বলতে বলতে সে কোমরে গুঁজে রাখা রিভলবারটা দেখাল। ভয়ে ভয়ে আমরা সেটা ধরেও দেখলাম। আঙ্গুলের মাঝে নিয়ে ঘুরানোর ও একটা ট্রাই দিলাম। বল চলে আসাতে ঐ খানেই শেষ অবৈধ অস্ত্রের প্রথম ছোঁয়া।


অষ্টম শ্রেনীতে বৃত্তির কোচিং চলছে।তাড়াহুড়ো করে কোত্থেকে এসে আমার পাশে বসল ক্লাশেরই একটা ছেলে।জানতাম ওর ভাই ছাত্র দলের ক্যাডার।এদিকে তার আগের দিন ক্লাশেরই একজনের সাথে তার মারামারি হইছে। বসে একটু পরে সে আমার হাতটা টেনে নিয়ে তার ব্যাগের মধ্যে ঢুকাল।ভারী কিছু একটা অনভূত হতেই বললাম এটাকি।পিস্তল। শুনেত আমি টাসকি।একটু বের করে দেখাল।আমিও ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে ধরেধরে দেখলাম। নবম শ্রেণীতে উঠে ওকে আর দেখিনি, খোঁজও নেয়া হয়নি কেন সে নেই ,অবশ্য নেবার ইচ্ছাও জেগেছিল এমনটি মনে পড়েনা।


২০-২০ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক অভিষেকের আগেই আমরা ২০-২০ খেলে অভ্যস্ত।প্রতিদিনের পাড়াত ম্যাচগুলোও ছিল ২০-২০ ম্যাচ। এস এস সির পর পাশের পাড়ার এক টিমের হয়ে একটা টুর্ণামেন্ট খেলতে গেলাম আমি আর আরেক বন্ধু।চোখ বন্ধ করে আমি ভালই পিটাতে পারি আর ও ধীরে সুস্হে সেটেল হয়ে খেলে। কিন্তু বিধি বাম। ১ম বলেই আম্প্যায়ার এলবির আবেদনে সারা দিয়ে দিলেন। আর যায় কোথায়।নন স্ট্রাইকিং এ দাঁড়িয়ে যা দেখছি আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলামনা। আমাদের টিমের মালিক মাঠে ঢুকে আম্প্যায়ার এর দিকে বাঁকানো পাইপের মত কি একটা ধরে ধুম গালিগালাজ করে বলছে এই আউট হবেনা আর না হলে এই টুর্ণামেন্ট বন্ধ।শেষ পর্যন্ত টুর্ণামেন্ট ই বন্ধ হয়ে গেল। লোহার পাইপ তাতে স্প্রিং লাগানো ট্রিগার আছে। এটাই নাকি বহুল ব্যবহৃত পাইপগান যার বুলেটের পাড়াত নাম বিচি।

এর কয়েক দিন পড়ে পাড়াত এক ছাত্রলীগ ক্যাডার আমাদের সবাইকে ডেকে তার বাসার ছাদে নিয়ে গেল। বঙ্গবন্ধুর সৈনিক বানানোর কথা বলে একটা কমিটি করা হল।সভা চলাকালীন তার দলের একজন একটা ব্যাগ নিয়ে আসে।কিছুক্ষন পর সে ব্যাগ থেকে বন্দুকেথ মত দেখতে বের করে বলল এটা কাটা রাইফেল। তোদের লাগলে নিয়ে যাবি। ও মুখো আর যাওয়া হয়ে উঠেনি ব্যস্ত কলেজ জীবনে।সে হাত ছানিতে হারিয়ে গেছে কৈশোরের এক খেলার সাথী।ফেরারী জীবন নিয়ে এখন পরবাসী।

কলেজ জীবনে শিবিরের হাতছানিতে মুগ্ধ হয়ে এক বন্ধু তখন ক্ষমতাবান শিবির নেতা হয়ে উঠার পথে। কলেজে প্রায় শুনি হলে আছে একে৪৭ নামক ভয়ংকর সেই আগ্নেয়াস্ত্রের অস্তিত্ব।দেখার সাধ মাথা চাড়া দেয়,আগ্নেয়াস্ত্রের প্রতি অমোঘ আকর্ষন বলে কথা। ধারনা ছিলনা এত সহজেই সে আশা পূরন হবে। বন্ধুটিকে বলেছিলাম। একদিন সে হঠাৎ করে বলল আমার বাসায় চল একটা জিনিস দেখাব।
বাসায় তার রুমের বুকশেলফের পিছন থেকে বের করে নিয়ে আসল :-* ।আমিত হতবাক।আমার চোখের সামনে এটা কি। এ যে একে৪৭ ।নেড়ে চেড়ে যতভাবে সম্ভব দেখলাম। অথচ আমার মাঝে কোন উত্তেজনায় কাজ করলনা। চোখের সামনে আরেকটি বন্ধুর হারিয়ে যাওয়া দেখছিলাম।সে দেখাল কি করে সিঙ্গেল শ্যুট করতে হয় কি করে ব্র্যাশ ফায়ার করতে হয়। ২৫টি বুলেটের একটা ম্যাগাজিনও ছিল।খুব ইচ্ছা করছীল একটা ফায়ের করে দেখতে।আফটারঅল এয়ার গান দিয়ে বেলুন যেহেতু ফাটাতে পারি এটাও পারব। গর্জিয়াস একটা জিনিস :)


তার কাছে আরও দেখলাম জাহাজের ফ্লেয়ার গান। যেগুলি মাঝেমাঝে উদ্ধার করে পুলিশ রকেট লাঞ্চার বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করে।

ঐ বন্ধু অবশ্য স্বার্থের টানাপোড়েন আর দন্দ্বে ফিরে এসেছিল সে পথ থেকে।ইসলাম নিয়ে বিকিকিনির সে পথ ছেড়ে আজ মুক্ত জীবন নিয়ে অনেক ভাল আছে সে ইসলামকে বুকে নিয়েই।

ভার্সিটির ১ম সেম।লাইব্রেরীর সামনে বসে আছি।লীগের দু গ্রুপের উত্তেজনায় এক পক্ষ্যের একজন কোথা থেকে একটা একনালা বন্দুক নিয়ে লাইব্রেরীর সামনে হাজির।কথাবার্তা ছাড়াই এক রাউন্ড আকাশে ফায়ার করে আবার হাওয়া। ভোজবাজির মত ছিল সে আসা যাওয়া।

ভার্সিটিতে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ভিসিকে আমরা সাধারন ছাত্ররা আটকানোর প্ল্যান করলাম।আমাদের বাসায় মিটিং হল।আটকানোর একটা রিহার্সেল ও করে ফেললাম।মিটিং শেষ করে বের হচ্ছি এমন সময় গলির মুখে বাইক নিয়ে তিন শিবির কর্মী হাজির।হুমকি ধামকি দিয়ে গেল।ভয় পেলেও আমরা অনড়।আটকানো হল ভিসিকে।সন্ধ্যায় লীগ সভাপতি আমাঠে ডাকল।আড়ালে নিয়ে বলল তোমরা দল আর শিবিরকে ভয় পাবানা।আমার ছেলেপেলে রেডী আছে মশীন নিয়ে। হাসলাম, ভয় পেলে হবে নাকি এটা আমার শিক্ষ্যা জীবন।
কিছুক্ষন পর ছাত্রদল রড নিয়ে হামলা চালাল। কিভাবে কিভাবে যেন আমরা ঠেকিয়ে দিলাম। এক আপুর সাহসী হ্যাচকা টানে দলের সভাপতি পড়ে যায়।দলের আরেক গ্রুপ আমাদের পক্ষ্য নেয়ায় ওরাও সরে পড়ে।শিবির ও হামলা করেনি দলের সাথে লেগে যেতে পারে এই কারনে।
দল যখন হামলা চালায় লীগের মেশিনধারীরা কোথায় দম নিতে গিয়েছিল আজও জানা হয়নি। ১৮ ঘন্টার অবরোধের পর ভিসি ভার্সিটি খুলে দিতে রাজি হয়।

পরের অস্ত্র হাতে ধরা হয়নি শুধু দর্শন হয়েছিল। ছাত্রী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন।এখানেও মুখোমুখি দলের সাথে। রড আর ইটপাথরের লড়াই।নীরব দর্শক ৩০৩ ধারীরা যেন ব্যাপক মজা পাচ্ছে। আমাদের অনেকেই আহত হল। তখনো আমরা পিছু হঠিনি।হঠাৎ দলের এক ক্যাডার ওয়ান শ্যুটার গান বের করে পুলিশের সামনেই উপরের দিকে গুলি ছুড়ে বসল। হুড়োহুড়িতে আমাদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে গেল। সব পত্রিকায় অস্ত্র হাতে তার ছবি এল শুধু পুলিশই তাকে দেখলনা।

পরিশেষে আবারও মাসুদরানা। রানা পড়ে পড়ে নিজের একটা বৈধ লাইসেন্স করা পিস্তলের শখ মনের গহীনে শুধু নয় প্রকাশ্যেই উঁকি দেয় সবসময়।

নিজের একটা ওয়ালথার পি পি কে নাইন এম এম।







সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০০৯ সকাল ১১:৪২
৭১টি মন্তব্য ৬৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×