somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুন্দরবন থেকে ব্লগিং- প্রথম বারের মত

০২ রা মে, ২০১০ দুপুর ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[ডিসক্লেইমার : সুন্দরবনের গহীন জঙ্গল থেকে এর আগে কেউ ব্লগিং করেছে বলে দাবী করে নাই। সুতরাং এ রেকর্ড আজকে থেকে আমার । চাইলে মনে হয় গিনেজ বুকেও লিপিবদ্ধ করে নেয়া যায় ....... :):) ]

পৃথিবীর সৌন্দর্য মাত্র দুইটি জায়গায়- আলো আঁধারের খেলাতে আর নারী দেহে। উক্তিটি আমার না , বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ক্লদে মনেটের । প্রথমটিকে মানে , আলো আঁধারের এই খেলাকে ধরে রাখার জন্য আমরা এখন সুন্দরবনে।

লুমিক্সক্লিক টু ফেইম এর দশ প্রতিযোগীকে নিয়ে আয়োজক টীম এখন সুন্দর বনে। প্রমোট ট্যুরিজম- এই ঠীম নিয়ে ছবি তুলতে হবে তাদের। আমাদের অবস্হান খুলনার রয়েল ট্যুরিজম এর জাহাজ এম ভি মেগ পাই- যে পরিমান ভাল খাবার তারা খাইয়েছে তাতে জাহাজটির নাম না বললে অকৃতজ্ঞ বলা হবে আমাকে। আরহনের সাথে সাথে বেলের সরবত , টরমুজ , পেঁপে ..........লাঞ্চ -ডিনারের কথা আর নাইবা বললাম।

এই পথে আগেও গিয়েছি ,তাই রুপসা থেকে মঙ্গলা পর্যন্ত দেখার তেমন কিছু নেই বলে হাতে তুলে নিলাম হুমায়ুন আহমেদের "শুভ্র গেছে বনে" । বনেই যেহেতু যাচ্ছি ভাবলাম কিছু পাগলামী শিখে নিলে মন্দ হয়না। আমাকে পুরো হতাশ করে হুমায়ুন আহমেদ শুভ্রকে নিয়ে হাজির করলেন নদী বুকে জেগে উঠা চরে :(:(


কত দিশা হীন জাতি হলেই কেবল একটি বন্দরকে নানা অব্যবস্হাপনায় অকার্যকর করে রাখা যায় আমরা হচ্ছি তার উদাহরন। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থেকে নিশ্চুম ক্রেন গুলো যেন কর্মহীনতায় কেঁদে চলেছে ।


প্রতিযোগীদের অনেকেরই এটাই প্রথমবার সুন্দরবন আসা । প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে রেলিং এর দুধার ঘেষে তারা নিজ নিজ পজিশন নিয়ে বসে আছে। এই বুঝি সেরা ছবিটি সামনে চলে আসবে। শূণ্য মঙ্গলা অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে যায়, টের পাই শূন্যতা বড় নিষ্ঠুর, দৃস্টির জন্য ক্লান্তিকর।

সুন্দরবনের পথে খুলনা হয়ে গেলে প্থম ফরেস্ট স্টেশন হচ্ছে করমজল। খুলনা থেকে অনুমতি নিয়ে আসায় আমাদের আর এখানে থামতে হলনা।
চিরহরিৎ দুপাশে রেখে আমরা সামনে আগাই। মুগ্ধতা সবার চোখে মুখে। প্রকৃতির কি নিদারুন খেয়াল এই সুন্দরবন- সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট পৃথিবীর।



এ্যানাকোন্ডা মুভীর বদৌলতে যারা অ্যামাজন দেখে বিস্ময়ে অবাক হয় সে সব বাংলাদেশীর জীবনে অন্তত একবার এই সুন্দরবনের পথে পা বাড়ানো উচিৎ।

রুপসা -পশুর-শিবসা- দুধমুখী নদী আর সুন্দরী খালের মত ভিন্ন স্বাদের আবহ মারিয়ে কটকা , সেখান থেকে পায়ে মেঠো পথ মারিয়ে কটকা সমুদ্র সৈকত, আর যদি আরও সাহসী হন তবে আপনাকে হাতছানি দিবে টাইগার পয়েন্টের পথে রোমাঞ্চকর ট্রেকিং। মাথা ছাড়িয়ে যাওয়া ছন গাছের মাঝ দিয়ে হেঁটে যাবেন আপনি , মনের কোনে বিস্ময়য় মেশানো ভয়- রয়েল বেঙ্গল বুঝি এল অই। না ভয়ের কিছু নেই আপনার সাথে সার্ক্ষনিক থাকবে বন বিভাগের অস্ত্রধারী দুজন বনরক্ষী। অবশ্য মামার আগমনে তারা যদি আপনাকে ফেলে পালায় এর দায়ভার আমার না B-):D

টাইগার পয়েন্টের পথ হেঁটে মনোরম যে পুকুরটি পাবেন সেটি কচিখালী ফরেস্ট স্টেশন এর, যা শরনখোলা রেঞ্জের আওতাভুক্ত। মোহনার মনোরম পরিবেশে মুগ্ধতা গ্যারান্টিযুক্ত । দূরে দেখবেন ভয় কে জয় করা দু একটি হরিণ নদীতীরে হেঁটে বেরাচ্ছে।

আমাদের জাহাজ এগিয়ে চলে, কখনো তীর ঘেষে, কখনো মাঝ নদী বরাবর। মাঝে মাঝে এমন হয় এই বুঝি হাত বারালে সবুজকে ছুয়ে দেয়া যাবে। দৃস্টি সবার ঘুরে বেড়াই- এই বুঝি দেখে ফেললাম। আপনি দূর্দান্ত সৌভাগ্যবান না হলে সে আশা খুবই ক্ষীণ , বাঘের দেখা পাওয়া অত সোজা না, নামতো আর এমনি এমনি রয়েল বেঙ্গল হয়নি। তার মর্জি খুব একটা প্রসন্ন হয়না দেখা দেবার বেলায়।

চলতে চলতে সূর্য মামা জানিয়ে দেয় তারও বিদায় নেবার সময় হয়ে গেছে। প্রতিযোগীরা ব্যস্ত হয়ে পরে সবুজ বনানীর বুকে মামার হারিয়ে যাওয়ার এই আলো আঁধারির খেলাকে ধারন করার জন্য।



আলো আঁধারি বুকে নিয়ে আরও কিছু সময় আমারা সামনে আগাই, তারপর ছোট একটা খালে নোঙ্গর করা, সেখানেই হবে জঙ্গলে রাত্রি যাপন জাহাজের বুকে।



লুমিক্সের প্রতিযোগীদের অভিজ্ঞতা কেমন হল সেটা ধারন পর্ব চলে। ততক্ষনে হাতে চলে এল ভেজিটেবল স্যুপ আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।

হঠাৎ চারপাশ আলোকিত করে হরিৎ বনের মাথার উপর জেগে উঠল অষ্টাদশী চাঁদ। জোছনালোকে এ্যাপিটাইজার বানিয়ে আমরা হাতে তুকে নিলাম পোলাউ, চিকেন কারী, চিংড়ী ভাজা, ভেজিটেবল আর কাবাব।

ভোর পাঁচটায় উঠতে হবে বার্ড ওয়াচিং এর জন্য। একে একে অনেক ঘুমিয়ে পড়েছে। হেড ফোনে কানে বাজছে- আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে .........এমন রাতে কি করে ঘুমায়। পেয়ে গেলাম আমার মত আরও কয়েকজন জোছনা পাগল কে। জাহাজের ছাদে হল আমাদের রাত্রি বিচরন। নাম না জানা নানা পাখির কিচির মিচির কানে আসে, ভয় জাগানো অনুভূতি নয়, কেমন যেন পাগল করা পরিবেশ।



ডেকে শুয়ে আকাশপানে তাকিয়ে থাকি, জোছনাশুধায় কেমন যেন মাতাল হওয়া অনুভূতি, গুন গুনিয়ে জয় গোস্বামীর কবিতায় সুর জড়িয়ে দিই-

দুজন চোখের চেনা পাকে চক্রে আজ মুখোমুখি ।
কেউ বলতে পারছেনা । ও যদি খারাপ ভাবে নেয় ?
কে বলে ? কে বলবে আগে ? ও-ও কি আমার কথা ভাবে ?

আমি ভাবি শুতে গিয়ে, আমি ভাবি ঘুম থেকে উঠে
আমি ভাবি স্নান ঘরে, আমি ভাবি আমি ভাবি
না কেউ বলছেনা মুখ ফুঠে।

ওদের অবস্হা দেখে, সকাল আরম্ভ করতে এসে
রোদ্দুর গড়িয়ে পড়ছে, রোদ্দুর চড়িয়ে পড়ছে, হেসে । ।

-------------------------------------------------
কে একজন ডাকছে , পাঁচটা বেজে গেছে, সবাই উঠেন .......।
৬২টি মন্তব্য ৬২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×