রুমনের ভুতের গল্প !!!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
রুমন অনেকদিন ধরে ভাবছে একটা ভুতের গল্প লিখবে। সেদিন কথায় কথায় বড় আপা কাকে যেন বলছিল পৃথিবীর বিখ্যাত সব লেখকরাই নাকি একটা হলেও ভুতের গল্প লিখেছেন। লেখালেখির তার একটা সুপ্ত ইচ্ছা আছে। সে চিন্তা করল তাহলে ভুতের গল্প দিয়েই শুরু করা যাক। আর ইদানিং তার মনে হচ্ছে তাদের বাসায় ভুতের অস্তিত্ব থাকলেও থাকতে পারে। এটা নিয়ে একটা লেখা দাঁড় করাতে পারলে মন্দ হবেনা ব্যাপারটা ।
রুমন ঠিক করল প্রথমে একটা খসরা দাঁড় করাতে হবে.....ভাবতে ভাবতে রুল টানা কাগজের খাতা থেকে কয়েকটি পৃষ্ঠা ছিড়ে নিল সে।পরীক্ষার হলে সবাই যেমন খাতাটা ভেঙ্গে নেয় সেও তাই করল। খসরা নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা শুরু করল সে , চেয়ারের উপর একটা পা তুলে গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষন বসে থেকে সে লেখা শুরু করল !!!
ভুতের গল্প - খসড়া
----------------
১। "স্বপ্ন বাড়ি"- আমাদের বাড়ির নাম। একতালা ঘর, ছাদের রেলিং এর উপর ঝুলে আছে একটা সজনে গাছ, লোডশেডিং এর রাতে ঝুলে থাকা সজনেগুলো কেমন যেন লাগে। বাড়ির খুব কাছেই আছে একটা পুরোনো কবরস্হান (কবরস্হান আসলে নেই, গল্পের জন্য নিয়ে আসা) , সেখানে একটা পুরুষ তালগাছ, বাবুই পাখিহীন বাসা ঝুলেছে তাতে, একসকালে এলাকাবাসী সবগুলো পাখিকে মৃত হিসেবে পড়ে থাকতে দেখেছিল।
২। বাড়ির প্রধান নিরাপত্তা রক্ষকের দায়িত্ব পালন করে টমি নামের কুকুরটি। ভুতের উপস্হিতি সর্বপ্রথম টের পাওয়া যায় টমির আচরন থেকে। মাঝ রাত্তিরে সে প্রায়ই বাউন্ডারির ওয়ালের চারপাশে ছোটাছুটি করে, ঘেউ ঘেউ করে। দেখলে বোঝা যায় শূণ্যে অদৃশ্য কিছু একটা সে খুজে চলেছে। মাঝে মাঝে তাকে বেশ ভীত মনে হয়, কান্নার স্বর বের হয়ে আসে। দিনের বেলার সাহসী টমি ইদানিং কেমন যেন ভীত আচরন করে। ভুতটি টমির কোন ক্ষতি না করলেও সে টমিকে বেশ বিরক্ত করে বোঝা যায়।
৩। ভুতটিকে প্রথমে ভাল হিসেবে দেখানো হবে। এর কারন তার বড় বোনের বাবুর সাথে ভুতটির বেশ সুসম্পর্ক। ইদানিং গুটি গুটি পায়ে হাঁটতে শেখা আর কথা বলা বাবুটি কার সাথে যেন প্রায়ই কথা বলে, মাঝে মাঝে ভুত ভুত বলে চিৎকার করে। শিশুরা সম্ভবত ভুতকে দেখকে পায়, আর ভুতও তাদের কোন ক্ষতি করেনা, এটা ওটা এনেও দেয় মনে হয়। শিশুটি মাঝে মাঝে হাতে কিছু একটা ধরে হাঁটছে বলে মনে হয়।
৪। গল্পের মুল কেন্দ্র বিন্দুতে থাকবে তাদের কাজের মহিলা আশার মা। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর থেকে তিনি আছেন স্হায়ী ভাবে। শুরুতে তার আচরনে কোন সমস্যা ধরা না পড়লেও ইদানিং বেশ অস্বাভাবিক আচরন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঘুমের মাঝে বেশ জোরে জোরে কথা বলেন যা অন্যরুম থেকেই শোনা যায়। বিশ্বকাপ চলাকালীন একদিন দেখা গেল তিনি ঘরময় হাঁটছেন, কোন দিকে কোন খেয়াল নেই, কার সাথে যেন কথা বলতে বলতে হাঁটছেন, ড্রইং রুমে বসে রুমন যে খেলা দেখছে সেটা তার চোখেই পড়লনা, ডাইনিং রুম ঘুরে কথা বলতে বলতে সে আবার কিচেনে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
খসড়া লেখার এই পর্যায়ে কারেন্ট চলে গেল। জানালার দিকে তাকাতেই রুমনের মনে হল কি একটা যেন পর্দা গলে বেড়িয়ে গেছে, পর্দা সামান্য উড়ছে। রুমন সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেল। সে বিশ্বাস করা শুরু করেছে আসলেই মনে হয় ভুত আছে টাদের বাড়ীতে, কে যেন বলেছিল আশে পাশে অনেক আগে একটা পুরোনো শ্বশান আছে, সেখানে ভুত আছে। ঐখানের কোন ভুত তাদের সজনে গাছে আস্তানা গাড়েনিত !!!! বাইরে কুকুরটা কেমন আস্তে আস্তে ডাকছে, সেও মনে হয় ভয় পাচ্ছে। আগপাশ আর না ভেবে ঘুমিয়ে যাওয়াই ভাল মনে করল সে। সোজা বিছানায় গিয়ে একটা চাদর দিয়ে নিজেকে ঢেকে ফেলল সে। খসড়া টেবিলেই পড়ে রইল !
সকাল দশটার দিকে ঘুম থেকে উঠেই তার মনে পড়ল রাতে লেখা খসড়ার কথা। কারো যাতে চোখে না পড়ে তাই সে তাড়াতাড়ি ওটা লুকিয়ে রাখার চিন্তা করে বিছানা থেকে নামল। হাতে নিয়ে একবার পড়া শুরু করল কি লিখেছে পড়ার জন্য। ঘুম জড়ানো চোখে সে দেখল যেখানে তার লেখা শেষ ঠিক তার পড়ে গুটু গুটি করে সুন্দর হাতের লেখায় কি যেন লেখা , রুমন চোখ বড় বড় করে পরা শুরু করল...
পর্যালোচনা " এই শিরোনাম দিয়ে নিচে লেখা রয়েছে-
১। বাড়ির নাম এবং কবরস্হান এর উপস্হিতি ভুতের গল্পের আদি উপকরন। এইগুলো পাঠককে আর টানবে বলে মনে হয়না ।
২। টমি শূ্ন্যে কিছু খোজেনা, সে বাড়ির মেইন গেট দিয়ে কোন বড় ইঁদুর প্রবেশ করলে ওটার পিছু নেয়, তাড়ানোর বা ধরার চেস্টা করে। টমির বয়স হয়েছে, তাই খুব জোরে আর চিৎকার করতে পারেনা। তার সময় ফুড়িয়ে এসেছে মনে হয়।
৩। ছোট বাবুরা নিজের সাথে অনেক কথা বলে আর হাত মুঠো করে রাখা নতুন কোন ঘটনা না।
৪। আশার মা অস্ভাবাবিক কোন আচরন করছেননা। ঘুমের মাঝে কথা বলা তার পুরোনো স্বভাব এবং ঘুমের ঘোরে সে ঘরময় পায়চারিও করে, যা সকালে তার মনে থাকেনা।
প্রথম ভুতের গল্পের খসড়া খুব একটা ভাল হয়নি, আরোও চিন্তা ভাবনার দরকার আছে। নতুন ভাবে চিন্তা করতে হবে, লেখায় ভিন্নতা দরকার।
ইতি- বড় ভুত !!!!
রুমনের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। ঘটনা কি সে কিছু বুঝতে পারছেনা, তাহলে কি আসলেই তাদের বাড়িতে ভুত আছে। কাগজটার দিকে আবার তাকিয়েই সে হেসে ফেলল, আরে এত বড় আপার লেখা। এমন সময় বাবুকে কোলে নিয়ে বড় আপা রুমে ঢুকল।
রুমনের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বাবুকে বলতে লাগল- এইটা তোমার ভুত মামা !!!!
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।
সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর
বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছবির গল্প, গল্পের ছবি
সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!
কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?
এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন