somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পানি বিহীন -পাখি বিহীন টাঙ্গুয়ার হাওর

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভাই এই সময় টাঙ্গুয়ার হাওর !!!
হাওরেত পানি পাবেননা !!!
জানিত........
কোন অতিথী পাখিও পাবেনা......
জানিত !!!
তাহলে যাইতেছেন কেন ?
যাইতে হবে ......তাই !!
এইটা কোন কথা হইল......
হ ভাই, এইটাই কথা, যাইতে হবে তাই যাব ।আর কোন যাবার জায়গা পাইতেছিনা, তাই যাব :)
আর আমরা যারা যাইতেছি তারা সবাই মিলে কোন এক জায়গায় গেলেই হইল, কি আছে না আছে কোন ব্যাপারনা, আমরা একসাথে আছি সেইটাই ব্যাপার। এই টাঙ্গুয়ার হাওর ছাড়া তাই যাবার আর কোন জায়গা পাইলামনা B-)

টাঙ্গুয়ার হাওর !!! সিলেটে এত বছর ছিলাম, অন্য অনেক হাওরে গেলেও এখানে কখনো যাওয়া হলোনা, বারবার পরিকল্পনা করেও সেটা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছিলনা, নানা কারনে আঁটকে যেত তা । সর্বশেষ চেস্টা লোকস্বল্পতায় আঁটকে গেলে সফরসঙ্গীদের ধারনা দায় ভার আমার। দশজনের দল কমে হঠাত করে তিন জন হয়ে গেল, সময় ২০১০ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর। তিনজনে যদি টাঙ্গুয়া ঘুরতে যাবার কোন মানে হয়না তারপরও ঠিক হল আমরা যাব, যা হবে হউক । কিন্তু হালকা বিপত্তি বেঁধে গেল, আমার হতে পারে বউ এর সাথে তখন হালকা ঘুরাঘুরি করার একটা সুযোগ তৈরি হওয়ায়। ১৫ই ডিসেম্বর সে তার খালার বাসায় যাবে, চাইলে অফিস থেকে আগে বের হয়ে আমি তার সাথে রাস্তায় সফরসঙ্গী হতে পারি, তারপর দিন ১৬ই ডিসেম্বর, ছুটির দিন, সেদিন সে ফেরার পথেও সফরসঙ্গী হবার একটা চান্স তো রয়েই গেল। ইয়ে মানে মাত্র তিনজন মিলে টাঙ্গুয়া গেলে আসলে কোন মজা হবেনা, খরচ ও হবে অনেক বেশী এই অজুহাতে আমি যখন জীবনে প্রথমবারের মত কোন ট্যুর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম অপর দুই জন সেই থেকে আমার বউ কে যখন তখন এই নিয়ে খোটা দেয়, যে আমার কারনে তাদের টাঙ্গুয়া ভ্রমন হলোনা ।কাহাতক আর এই অজুহাত সহ্য করা যায়, পানি থাক আর না থাক, পাখি উড়ুক আর না উড়ুক টাঙ্গুয়া হাওর এইবার যাবই যাব ।

কপাল খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। টাঙ্গুয়া নিয়া যে বন্ধু নিয়মিত আমার বউরে বলত ভাবী আপনের জন্য আমাদের ট্যুর টা হয় নাই, সব টিকেট টিকেট করে ফেলার পর ট্যুরের দিন সকালে তার চিকেন পক্স দেখা দিল :( কি আর করা, বাকি সাতজন মিলে আমরা চললাম পানি বিহীন -পাখি বিহীন টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে ।
সুনামগঞ্জ পৌঁছে জানা গেল পানি পথে যেতে হলে অনেক ঘুরে যেতে হবে, বেটার হোন্ডায় করে যাওয়া। তাতে লাভের লাভ হবে পথের বারেক টিলা, লাউডের গড়, টেকেরঘাট চুনা পাথরের পরিত্যক্ত খনি সব দেখতে দেখতে যাওয়া যাবে। হোন্ডায় চড়ে যাওয়াটাও আশা করি এক্সসাইটিং হবে। আমরা সুরমা নদী পার হয়ে হোন্ডা ঠিক করে ফেললাম, দেখে শুনে সাতজন কে ঠিক করা হল , যারা কথা দিল যা যা দেখানোর আছে সবই দেখিয়ে আনবে।



আমাদের সাত বাইক চালক ছিল আসলেই জিনিস । তারা যে রাস্তায় বাইক চালালো চরম দক্ষতার সহিত তা এক কথায় বলার বাইরে । শুরুতে আমাদেরকে নিয়ে গেল বারেক টিলায়। তার উপারেই ভারতের বর্ডার, বন্ধুরা কস্ট করে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রেখেছে যাতে আমরা ওপথ মারাতে না পারি :)



হয়ত কোন এক বারেক মিয়া ঐ টিলায় চড়ে ভারতীয় পাহাড় পানে চেয়ে উদাস হয়ে বসে থাকত, আর তাই অমন নাম করন.......সড়ক বিভাগ কে ধন্যবাদ না দিয়ে উপায় নেই এসব পাহাড়ি টিলা ময় পথে সুন্দর রাস্তা করে দেয়ার জন্য । বারেক টিলা যাবার পথে একটা বালু নদী পার হতে হয় যেটা এখন শুকনা খা খা করছে আর মাঝ খানে সামান্য পানি প্রবাহ, যেটা পাড়ি দিতে হয় নৌকার ফেরীতে মোটর বাইক সহ ।



সেখান থেকে চুনাপাথরের খনি, পরিত্যক্ত খনি এখন বিশাল পানির আঁধার । স্বচ্চ টলটলে পানি, নামার লোভ সম্বরন করা কঠিন, কিছু সৌখিন মাছ শিকারি সেখানে বসে গেছে মাছ ধরতে, চারপাশে ছড়ানো ছিটানো নানা রকম ক্রেন টাইপ জিনিস পত্র, আছে পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি, একসময় যা ছিলে লোকে ভরপুর। এর পাশেই তৈরি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিসৌধ ।



সেখান থেকে তাহিরপুর, সদ্য ক্ষেত থেকে তুলে আনা তরমুজ দেখে লোভ সামলানোর কোন মানে নেই , মাথার উপরে যেখানে গমগমে সূর্য । উথাল পাথাল মাটির রাস্তা পাড়ি দিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি, টাঙ্গুয়ার হাওরের যদিও কোন দেখা নেই, ডানপাশে মেঘালয়ের মনোরম পাহাড় সারি, দেখে যাওয়া ছাড়া ছোয়ার কোন উপায় নেই ।



অবশেষে, হুমম অবশেষে অরাধ্য টাঙ্গুয়া...........মনটা খারাপ না হয়ে উপায় কি !!! যে টলমলে ভয় দেখানো বিস্তীর্ণ পানিরাশির টাঙ্গুয়ার ছবি দেখেছি সেখানে আমার সামনে এটা কি ? আই ইউ সি এন এর সাইনবোর্ড দেখে নিশ্চিত হলাম এটাই টাঙ্গুয়া । শীর্ণ জলের ধারা আছে বৈকি, দূরে নৌকায় জেলেরা মাছ ধরছে তাও সত্য, হাজার হাজার পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে তাও সত্য, উপায় কি মেনে নিতেই হল রামসার প্রকল্পের আওতায় থাকা হাওর । নিরাপত্তা রক্ষীরা আছে মাছ আর পাখির এই অভয়ারন্য পাহারা দেয়ার কাজে । আমরা ঠিক হাওরের মাঝ খানে দাঁড়িয়ে আছি চরে, তার চারপাশে স্বল্প পানির জলাধার, পাখি উড়ছে, পথ ভুলে কিংবা ফিরে যাবার ইচ্ছা চলে যাও্য়ায় এখন ও রয়ে গেছে কয়েক হাজার পাখি - উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে অলস সামায় কাটাচ্ছে, এখানে ওখানে ঘুরে হয়ত খেয়ে নিচ্ছে জলজ ছোট প্রানী, মাছ ।





মন না ভরলেও প্রিয় বন্ধুদের আড্ডায় প্রান না ভরার কোন কারন নেই । না হয় জলে টালমাটাল টাঙ্গুয়া দেখা হয় নাই, তাই বলে আমাদের আড্ডা থামেনি এক মুহুর্তের জন্যও, বাইক চালকরাও মজা পেয়ে গিয়েছিল আমাদেরকে পেয়ে, তাই তারা নিজ আগ্রহে জানাল আমাদেরকে শাহ আরেফীন এর মাজার দেখাতে নিয়ে যাবে, খুব বেশী ইচ্ছা না থাকলেও তাদের আগ্রহে সেখানে যাওয়া হল, মাজার ঘেষেই কাঁটাতারের বেড়া-গেইট, কোন এক কালে এপার ওপার সব পারের মানুষেরাই এখানে যখন তখন আসতে পারত, এখন নাকি কেবল ওরছ এর সময় সামান্য সময়ের জন্য খুলে দেয়া হয় সে গেইট।
এবার ফিরতি পথের পালা, সুনামগঞ্জ না থেকে ঠিক করলাম সিলেটেই ফিরে যায়, তাহলে অন্তত খাওয়া দাওয়াটা জম্পেশ করা যাবে । খাওয়া দাওয়া ভাল না হলে দুনিয়াদারি কি আর ভাল লাগে !!! সিলেট এসে নিজের প্রিয় ক্যাম্পাসে একবার না গেলে যে সবকিছু অপূর্ন থেকে যাবে। কাউকে জানালামনা যে সিলেটে আছি, হাতে খুব বেশী সময় নেই, সকালটা প্রিয় ক্যাম্পাসে ঘুরে ফিরে ফিরতি পথের বাসে উঠে পরলাম। কেউ আর এখন বলতে পারবেনা আমার জন্য তারা টাঙ্গুয়ার হাওর যেতে পারেনি :)




































[ টাঙ্গুয়া হাওর, সুনামগঞ্জ : টাঙ্গুয়া হাওর সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝরা (ঝরণা) এসে মিশেছে এই হাওরে। দুই উপজেলার ১৮টি মৌজায় ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে ৯,৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি।২০০০ খ্রিস্টাব্দে ২০ জানুয়ারি এই হাওরকে 'রামসার স্থান' (Ramsar site) হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
টাংগুয়ার হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম গ্রুপ জলমহালগুলোর অন্যতম। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তেসুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা এবং তাহিরপুর উপজেলাস্থিত জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ মিঠা পানির এ হাওর বাংলাদেশের ২য় রামসার এলাকা। ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া, জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে সারি সারি হিজল-করচ শোভিত, পাখিদের কলকাকলি মুখরিত টাংগুয়ার হাওর মাছ, পাখি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর এক বিশাল অভয়াশ্রম। বর্তমানে মোট জলমহাল সংখ্যা ৫১টি এবং মোট আয়তন ৬,৯১২.২০ একর। তবে নলখাগড়া বন, হিজল করচ বনসহ বর্ষাকালে সমগ্র হাওরটির আয়তন দাড়ায় প্রায় ২০.০০০ একর। টাংগুয়ার হাওর প্রকৃতির অকৃপণ দানে সমৃদ্ধ। এ হাওর শুধু একটি জলমহাল বা মাছ প্রতিপালন, সংরক্ষণ ও আহরণেরই স্থান নয়। এটি একটি মাদার ফিশারী।]

১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×