সুনামগঞ্জের সর্বজনীন উৎসব ধল মেলায় এবার প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলঅর কালনী নদীর উজানধল গ্রামে প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দিন থেকে পূজো অর্চনা শেষে পরদিন ভোরে শেষ হয় মেলা। কয়েক শ বছর আগ থেকেই এ মেলাটি অনুষ্টিত হয়ে এলেও শাহ আবদুল করিমের গানের কারণে দেশ-বিদেশে ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ে। ভাটির চিঠি, কালনীর ঢেউ ও ধলের মেলা তার গানে ঘুরে ফিরে এসেছে বিভিন্ন দর্শন উপমায়। তার বিভিন্ন গানের বইয়ে তিনি ধল মেলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে কালজয়ী অনেক অমর গান রচনা করেছেন। মেলাকে সব মহলে পরিচিত করে তোলার পিছনে তার অবদান ব্যাপক।
এলাকাবাসী মনে করেন স্বশিতি এ চারণকবি বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের প্রতিভা বিকাশের পিছনে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ধলমেলার অবদান। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম মাঠের রাখাল থাকাবস্থায়ই শৈশব থেকেই দেখে আসছেন ধলমেলার সর্বজনীন চিত্র। তার বাউল সম্রাট হয়ে ওঠার গল্পের পিছনে রয়েছে কালনী নদীর দুধার ও ধলমাঠের অবদান।
ধল মেলার ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে গিয়ে কোন লিখিত দলিল পাওয়া যায়নি। তবে নানা কিংবদন্তি রয়েছে এলাকায়। প্রবীণরা জানান, তাহিরপুরের প্রাচীন বাংলার রেণুকা নদী তীরে অবস্থিত (বর্তমান যাদুকাটা) পণাতীর্থ মেলার পরেই এ মেলার স্থান। জনশ্রতি রয়েছে প্রাচীন কাল থেকেই ধল এলাকার হিন্দু মহিলারা এখানে পূজা করতে গিয়ে দেখেন নদীতে হঠাৎ একটি বিরাটাকার পাথর ভেসে ওঠে। তাদের ধারণা হয় পার্শবর্তী জুড়ি বিল থেকে তুলে এনে নদী তীরে কেউ রেখে গেছে এই পাথর।
এ পাথরকে কেন্দ্র করেই নানা ‘অলৌকিক’ ঘটনার পর এলাকার হিন্দু স¤প্রদায়ের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা দেখা দেয় এটি কোন সাধারণ পাথর নয়। এই পাথরের দৈবগুণ রয়েছে বলে বলে তাদের মনে বিশ্বাস জন্ম নেয়। তারা মনে করেন পাথররূপ ধারণকারী স্বয়ং দেবী মাতা ‘পরমেশ্বরী’ জগতে আভির্ভূত হয়েছেন। তারপর থেকেই হিন্দু ধর্মাবলম্বিরা তাদের জাগ্রত দেবী পরমেশ্বরী মনে করে পূজা দিতে শুরু করে। এ জনশ্রতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। তারা মেষ বলিদানের মাধ্যমে পূঁজা দেওয়া শুরু করেন। বর্তমানে পূজা ও পাঠা বলি দেওয়ার জন্য ধলমাঠে একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরের পুরোহিতদের দাবি পূজো ও মেলার বয়স প্রায় ৫শ বছর। ১৪১১ বঙ্গাব্দে মাঠে পূজার্থীদের জন্য একটি ছোট্ট মন্দির করে দেওয়া হয়েছে। মন্দিরে রয়েছে পরমেশ্বরী রূপি চারটি পাথর। যাকে কেন্দ্র করে পূজো চলছে।
মেলার আয়োজক কমিটির লেঅকজন জানান এবার মেলায় প্রায় দুই সহস্রাধিক দোকানপাট ছিল। এর মধ্যে ধলমেলার ঐতিহ্যবাহী পণ্য লাটি, ইক্কু, বেল ও মিষ্টিরই সাড়ে তিন শতাধিক দোকান। ধলমেলায় যারা আসেন তাদের সবাই এই চারপণ্য নিয়ে যান বাড়িতে।
দিরাই উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, হিন্দু স¤প্রদায়ের এই লোক বিশ্বাস আস্তে আস্তে দূরের গ্রাম দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দূর দূরান্ত থেকে দেবী পরমেশ্বরীর কথা শোনে পূজা দেওয়ার জন্য উজানধলের কালনী নদীতীরে আসতে থাকেন। কালের বিবর্তনে ধলমেলা বিরাট মেলায় রূপ নেয়। পর্যায়ক্রমে হিন্দু-মুসলমানের সংস্কৃতিতে মিশে গিয়ে এই মেলা মিলনমেলায় রূপ নেয়। তবে মেলার আগের যে সর্বজনীন চিত্র ছিল তা এখন আর নেই। এখন জুয়াসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ মেলার সর্বজনীন ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে আয়োজকরা এবার প্রায় সাড়ে ৭ ল টাকা চাদা তোলেছেন দোকানীদের কাছ থেকে। মন্দিরের উন্নয়নের নামে এই চাদা তোলা হলেীও মন্দিরের পুরোহিত ব্রজেন্দ্র চক্রবর্তী জানালেন তাদেরকে মাত্র ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান মেলাকে কেন্দ্র করে এই চাদা তোলা হলেও আজ পর্যন্ত মন্দিরে নলকুপ ও ল্যািিট্রন বসানো হয়নি। স্থানীয় চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আকিকুর রেজা ও সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা শামছুল হক মেলা আয়োজকের নামে এই চাদা তুলছেন।
ঐতিহ্যাহী ধল মেলা: সাঙ্গ হলো কানাইর হাটবাজার
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ
মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(
আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন
কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন