আমরা বসে আছি সোহরোওয়ার্দী উদ্যানে খোলা আকাশের নীচে। সামনে রয়েছে সাজি আপা। হাতে তার নতুন বই, বিষণ্ণতায় একা। তাহলে শুরু করি আজকের ইন্টারভিড।
# সাজি আপা আপনার এটা কততম কবিতার বই?
* চতুর্থ।
#প্রকাশিত হয়েছে কোথা থেকে?
*ভাষাচিত্র।
বইটি পাওয়া যাবে ৩৭৯, ৩৮০ নং স্টলে।
আপনি কবে থেকে ব্লগার কবে থেকে কবি?
* ছয় বছরের বেশি সময় থেকে।
#কবিতা ছাড়া আর কি লেখেন?
*বেড়ানোর ছোট গল্প, ওটোয়াতে একটা মাসিক পত্রিকায়, "মাসিক আশ্রম"।
#ছোট গল্পের কোন বই কি বেড়িয়েছে?
*এখনো নয়, আগামী বছর বের করার ইচ্ছা আছে।
এবার চলে যাই নতুন প্রকাশিত বইটা নিয়ে।
প্রথমেই জানতে চাইছি বইটির শিরোনাম এমন হল কেন?
* মুখ্যতা এটা ভালোবাসার বই, তবে এতে যখন বিরহ যুক্ত হয় তখন এটা হয়ে ওঠে অনন্য।
#এই বইয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রিয় কবিতা কি?
*এটা একটা সাংসারিক ভালোবাসার কবিতা। এর মধ্যে যে বিরহ তা নিয়ে কবিতা।
"তুমি না থাকলেই এমন হয়,টিভি রিমোটে ঘুরতে থাকে অস্থির সময়"
*দাম্পত্যে প্রেম টিকে থাকে?
# আমি মনে করি থাকে। আসলে ভাগাভাগি হয়। সংসার শুরু করার আগে যে প্রত্যাশা নিয়ে শুরু হয়, ক্রমান্বয়ে তা ভাগাভাগি হয়। সেটা আরো সুন্দর হয়।
অভির প্রশ্ন: বইয়ের কবিতার শিরোনামের একটা কবিতা আছে, সেটার মর্মার্থ আছে কি?
# এটা আসলে, অন্য একটা নাম পছন্দ ছিল। প্রচ্ছদের ক্ষেত্রে এটা বেশি ম্যাচ করেছে এজন্যই এই শিরোনাম।
*আপনার সন্তানেরা আপনার লেখালেখি কিভাবে দেখেন?
#দু:খজনক হলেও সত্য ওরা বাঙলা পড়তে জানেনা , তবে বলতে জানে। ওরা এটা খুব ইন্সপায়ার করে কারণ তারা জানে এটা আমার খুব আনন্দের জায়গা।
দূর্জয়ের প্রশ্ন: বাংলা সাহিত্যের নারী কবিরা প্রধানত "নারীবাদী" কবিতা লেখেন। আপনি কোন ধরণের কবিতা লেখেন?
#আমি খুব আশাবাদী মানুষ। আমার নৈরাশ্য নেই। আমার ব্লগের প্রোফাইলে আছে বেঁচে থাকা দারুণ ব্যাপার। আমি মুখ্যত আশাবাদী/ভালোবাসার/ প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসার, আনন্দের কবিতা লেখি।
------------------------------------------------------------------------
এই সময়ে আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন আবির। তার সাজিদ উল হক আবির।
এটা তার প্রথম বই। প্রকাশনী শব্দ শিল্প। ছোট গল্প সংকলনের এই বইটি পাওয়া যাবে, স্ট ১৭১, ১৭২, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। মূল্য ১১০ টাকা।
* লেখালেখি শুরু করেছেন কবে?
# আমার লেখালেখির শুরুটা, সংগীতের উপর জানার্লিজম করেছি। মুখ্যত মিউজিক নিয়েই লিখতাম। সেখান থেকে দেখলাম, তারকাদের হাঁচিকাচির কথাও আমার লিখতে হচ্ছে। সেখান মনে হল নিজে এমন একটা কিছু করি, নিজের একটা আইডেন্টিটি নিয়ে দাঁড়াতে পারি। এজন্য কলম হাতে নেই। ২০০৯ সাল থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখির সাথে জড়িত।
* পিংকু চরিত্র নিয়ে একটু পরে বলি। গল্পে নারী চরিত্রকে কিভাবে চিত্রায়িত করেন?
# প্রথমত আমি মনে করি নারী চরিত্র পুরোপুরি বিশ্লেষণের ক্ষমতা?
এখনো আমার হয়নি।
যদিও, আমি মনে করি আমারে গল্পে নারী যেভাবে আছে তা গল্পের প্রয়োজনে যথার্থ।
স্টাইলের বিষয়ে আমি সবসময় চেষ্টা করি, যাতে পাঠকের কষ্ট না হয়। সহজ শব্দ চয়ন, বাক্য বিন্যাস ব্যবহার করি। আমি একজন স্টোরিটেলার, আমি সামনা সামনি কথা বলার মত করে লিখতে চাই
-----------------------------------------------------
এর মধ্যে আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন, তানিয়া হাসান খান। তার বইয়ের নাম অশ্রু শ্রুতি। নিউক্লিয়াস পাব্লিকেশন। বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইঘরে, স্টল ২৫৮। বইয়ের দাম, ১৫০ টাকা। মেলায় ১১০ টাকা। এটি একটি কবিতার বই।
* এটা কি আপনার প্রথম গ্রন্থ?
# হ্যা।
* কবিতা লেখেন কবে থেকে?
#২০১১ থেকে।
*ব্লগের সাথে যুক্ত কবে থেকে?
# প্রায় দু বছর।
*বইটির নাম এমন হল কেন?
#কারণ বইয়ের বিরহের কবিতা বেশি। কবিতার মূল থিম বিরহ। তবে এর মধ্যে নানান ধরণের কবিতা আছে। ধর্মীয় কবিতা আছে, ব্যক্তিগত জীবনের কবিতাও আছে। সমসাময়িক পরিবেশ নিয়েও কবিতা আছে।
*সামনে কি কবিতায় থাকতে চান?
#একটা চিঠি সমগ্র বই লিখবো, একটা উপন্যাস চলছে।
*সামনে কি ধরণের কবিতার কথা ভাবছেন?
# কবিতা তো আর পরিকল্পনা করে লেখা হয় না। যেহেতু জীবন বোধ থেকে লিখি সেজন্য ওটার অপেক্ষায় আছি। সামনে চিঠি সমগ্র বের হবে।
*এই সময়ে আপনি কিভাবে চিটি লেখেন?
# আগের মতই, কার কাছে লিখবো সেটা ফ্যাক্ট না, চিঠি একটা আড়াল, সে কথা সরাসরি বলা যায় না, সেটা বলা। সন্তান, প্রিয়তম, বন্ধু, দেশের কাছে, মাঠির কাছে, স্বপ্নের কাছে।
কখনো বই প্রকাশ করবো ভাবিনি। একসাথে কম্পাইল করেছি। সেভাবে চিঠিগুলোকেও সংরক্ষিত করব। চিঠি আমার কাছে ব্লগও।
-------------------------------
ফিরে এলাম সাজি আপার কাছে আবারো।
প্রবাস এবং দেশ; ব্লগ এবং বই কিভাবে মিশে আছে আপনার জীবনে?
* প্রবাসতো আমার বর্তমান, দেশ আমার শেকড়, ব্লগ আমার ভালোবাসার বাড়ী। যেখানে আমি কবিতা লিখি, গল্প লিখি, জীবন লিখি। লেখার মাধ্যমে মানুষের সাথে মিশে আছি। আমি শুধু লিখি না, আমি একজন খুব ভালো একজন পাঠক বলে নিজেকে মনে করি। আমি আপাতত অনিয়মিত তবে পড়ার ক্ষেত্রে একদমই আপডেটেড। খুঁজে খুঁজে সবার লেখা পড়ি।
দুর্জয়ের প্রশ্ন: প্রবাস জীবন কি আপনার কবিতার জন্য সহায়ক?
* আসলে দেশ আলাদা হলেও প্রকৃতি এক, দেশ আলাদা হলেও মানুষ এক। যত দূরেই থাকি না কেন দেশকে যাপণ করি। আমি করি আমরা প্রত্যেকেই এক একটা বাংলাদেশ।
দুর্জয়ের প্রশ্ন: আপনার কি এমন কোন শব্দ আছে তার প্রতি দূর্বলতা আছে?
*এবার আমি নতুন গদ্য লেখার কথা ভাবছি। অবরোধবাসিনি। মুক্তগদ্য নিয়ে যেটা হয়, আলোচনা হয় সেটা থেকে আমি খানিকটা দূরে। লেখকের নিজের স্টাইলটাই আসল। সে যেভাবে লিখছে বা লেখে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
*কবিতা লিখে আপনার সবচেয়ে আনন্দময় এক্সপেরিয়েন্স কি?
#যখন ব্লগে কবিতা বিষয়ক কমেন্টস পাই। যখন আলাপ গড়ে ওঠে। আমরা বলি পৃথিবীটা হাতের মুঠোয় চলে এসেছে, এটা আসলেই সত্য হয়ে উঠেছে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সাজি আপা।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------
আবার আবির
# হুমায়ুক আহমেদের প্রথম উপন্যাস পড়ে ড. আহমদ শরীফ যে প্রশংসাপত্র লিখে দেন তা তিনি সবসময় বহন করতেন। আমার জন্য ভীষণ আনন্দের যে সমসাময়িক সময়ের প্রধান বুদ্ধিজীবীদের একজন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আমার বইয়ের ভূমিকা লিখে দিয়েছেন। আমি খুব কৃতজ্ঞ যে তিনি অনেক ভালো কথা লিখেছেন আমার বই নিয়ে। এটা আমাকে উৎসাহিত করেছে অশেষ।
আমি মনে করি সকল লেখকেরই কবিতা পড়া উচিৎ। কেননা কবিতা বিশুদ্ধতম শিল্প।
আমার একটা সম্ভাবনা আছে শিক্ষক হবার। আমার লক্ষও তাই।
আমার স্বপ্ন অনেক বড়। আমার শেষ বয়সে যেন বলা হল, আমি এই সময়ের সেরা লেখক।
আমার নেক্সট প্রজেক্ট উপন্যাস। পাঠকদের তরফ থেকে সেই প্রত্যাশাটাই আসছে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আবির।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
-------------------------------------------------------------
এটা একটা দারুণ ব্লগ আড্ডাও ছিল। খুব ভালো লেগেছে সবার সাথে পরিচিত হয়ে। ছবি তোলার কাজটি করেছেন, ব্লগার কাল্পনিক ভালোবাসা। ছবির জন্য আরো কৃতজ্ঞতা, অনাহূত। আর সবশেষে আমাদের গান গেয়ে শোনাচ্ছেন আবির।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৫২