somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

" এসিডিক বু"

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সেদিনটা ছিলো বোধোয় বৃহস্পতিবার।
পৌষের একটা শীতমাখা সকাল।
প্রকৃতির আবছা কুয়াশাচ্ছন্ন মাধুর্য, শিশিরের সর্বোচ্চ বিন্দুকণা গুলো ঘাসের উপর থেকে ঝাপসা বেদনার আভাস দিচ্ছিলো আমায়। সৃষ্টির
সবকিছু কত্তো যে নির্মম সুন্দরভাবে এদিকে-ওদিকে ছড়িয়ে লোকেদের চোখেরজুৎ এর সর্বোত্তম ব্যবহারে নিমগ্ন!
তবে আজকের দিনে প্রবাদ মতে যে আবার কারো কারো সর্বনাশ।
ওদের চোখে প্রকৃতির মায়াবী চাহনিও কতকটা নিষ্ঠুর ঠেকছে তা আমি কিঞ্চিৎ আন্দাজ করতে পারছিলাম। একটানা অনেকক্ষণ হাঁটছি, আর ভেবেই চলেছি।
আশেপাশের কুয়াশাগুলো আমার পিছনের দিকে ছুটেই যাচ্ছিলো।

মনের অজন্তেই কখন যে হাজির হয়ে হলাম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে, বুঝতেই পারিনি।
আমার গন্তব্য বার্ন ইউনিট।
তখন অনেকটা তীরের বেগে ছুটছিলাম।
সেখানে তাঁকে খুঁজে পেতে তেমন বেগ পেতে হলো না। তারমতো গ্রিল্ড হওয়া রোগী আশেপাশে আর দেখছিনা,কেবল তিনিই সেখানে।
আমি অপলক কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম মনে পড়ছে না।দুই এক ফোঁটা চোখের জলও বোধোয় ভুল করে গড়িয়ে পড়েছিলো।
১৩ জানুয়ারি ভোর সোয়া ৫টায় দুর্বৃত্তরা রাসায়নিক বিক্রিয়া পরীক্ষণ চালিয়েছেন তার উপর।
এসিড!?
কি সেটা!??
উনার শরীরে কত না পরম আদর ভুলিয়ে দিয়েছিলো, তাঁর আর্তনাদ যারাই শুনেছিলো তারাই বোধ করি কিছুটা বুঝবে।
কিন্তু.. এরা দেখছি কিছু বুঝতে রাজি নয়।
কিছু ওরা নাকি দেখেয়নি।
আসলে কি!? ওরাও তো এসিডিক রোমান্সে হিউম্যান শরমা হতে চায়না।
হু, বেশ বুঝেছি....
মেঝেতে সাদা চাদরের ওপর শেওলা রঙের কাঁথায় আধশোয়া হয়ে আছেন তিনি। গায়ে গোলাপি শাল। ক্লান্তিমাখা মুখে ছোট ছোট পোড়া দাগ কালো হয়ে গেছে। মুখের দিকে তাকিয়েই বোঝা গেল শারীরিক যন্ত্রণার সঙ্গে মিশে আছে ভয় আর দুশ্চিন্তা।

কাছে যেতে আবার সেই ডাকে আমায় সম্বোধিত করলো, যেই ডাকের মায়াতে আমি এতোটা ছুটে আসতে বাধ্য হয়েছি।

আবারো কয়েকবার সেই ডাক!

প্রতিটা ডাকে ডাকে আমার হৃদয় যেন পুড়ছিলো আমার মুখ-বলা বুর মতো....

আমাদের স্কুলের পাশে শীতের দিনে ভাপা-পিঠা বিক্রি করতো সে।
তার মুখের হাসি আর কথায়, মুগ্ধ করে দিতো সব বালক-বালিকাকে!

আমিও মুগ্ধ হতাম। ইচ্ছেহতো প্রাণভরে কথা বলি।
"এই আমার বুবুই তো"

কিন্তু সাহসটা হয়নি আমার, হয়নি কখনোই।

একদিন টিফিনের টাকা না থাকায়, মাঠের একপাশে নাক ফুলিয়ে বসে ছিলাম।

সেই মেয়েটা আমার মাথায় হাত রেখে পরম আদরে শুধালো,
"বাবু! ও ভাইডি!
কিছুডি মুখোত লইছিস!??"

আমি কিছু বলিনি, চুপ করেই ছিলাম।

কেন জানিনা মনে হচ্ছিলো, আমার মায়ের মতোই মেয়েটি আমার মনের ভাষা বুঝে নিবে।

সেইদিন থেকে আমার উদরে টিফিন আওয়ারে আর কখনো ইঁদুর দৌড়ায়নি।

একটা আদুরে হাতের অবিরত কাতুকুতু খেতে খেতে লুটুপুটু হয়ে গড়িয়েছি কতবার, সেই নোংরা ধূলায়!

সে আমার কেউ ছিলোনা, তবে ছিলো অনেক কিছুই!

"বু" র নামটা যেন কি ছিলো!?

ভুলে গেছি।

থাক আর মনে রেখেই বা লাভ কি!?

তার এখন শুধু একটাই নাম

"তারা! তারা! তারা!! তারা!!"

"বুউউউ........

তুমি না আর কখনোই পুড়ো না, তুমি জ্বলো................."

প্রতিজ্ঞা করছি এইবার তোমার আগে আমার হাতে, ওরা হবেই বিক্রিয়ক!!!!

আর আমি পাবো প্রোডাক্ট;

পাবো তোমার নিষ্পাপ ভালোবাসা, অনন্তকাল........... :(
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×