somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেমহীন নারী সুপেয় পানি

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দুই পুত্র সন্তানের পর এক কন্যা সন্তান আসিল নামসুন্দরের ঘর আলো করে। তাই আদর করে তাহার নাম রাখিল নিরুপমা। নামসুন্দর পেশায় একজন প্রাইমারী ইস্কুলের শিক্ষক। তাই নিরুপমা যেন নামসুন্দরের রাজ্যর রাজকন্যা। রূপে-গুনে নিরুপমার মতো আর একটা মেয়ে অত্র গ্রামে জুড়ি মেলা ভার। গ্রামের আলোপথ সবই আজ নিরুর চেনা। নামসুন্দর তাকে ভালোবেসে নিরু বলে ডাকে। নিরুর কাছে এ গ্রাম যেন কনো এক কবির কল্পিত প্রেম,কনো এক শিল্পির রং তুলির আলতো আঁচড়ে আঁকা শিল্প। এ গ্রামের সবাই যেন নিরুরই পরিবার। দেখতে দেখতে নিরুপমা দ্বাদশ পরিক্ষার ফল হাতে আসলো। নামসুন্দর যে আজ খুব খুসি তা বলার অপেক্ষা রাখে না কিন্তু এক অজানা আশঙ্কা নামসুন্দরকে পেয়ে বসলো। তার নিরুকে যে উচ্চ শিক্ষার জন্য এবার শহরে যেতেই হবে।
নিরুপমা শহরের এক নাম করা কলেজে ভর্তি হলো। যাবার সময় বাবা তাকে একটা মোবাইল আর সরস্বতীর মূর্তি উপহার দিল। কিন্তু নিরুপমা আজ তাতে খুশি হতে পারলো না। কারন তার ভগমানের মতো পিতা যে আজ তার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। যাবার সময় নামসুন্দর নিরুর সাথে একটা কথাও বলল না শুধু তাহার চিবুকে একটু হাত রাখিল। পিতা কন্যা দুজনেই আজ প্রথমবার পৃথিবীর সমস্ত ভাষা হারিয়ে ফেললো।
নিরুপমা প্রথম ক্লাসেই পরিচিত হলো রাত্রি,সেঁজুতি,আর শ্যামলের সাথে। তারা সকলেই শহরের তাই তাদের সাথে এডজাস্ট হবার জন্য এক নতুন যুদ্ধে নামতে হবে তাকে, না সে যুদ্ধে সহজেই নিরুপমা জয়ী হলো। কারন তার সবাই বেশ বন্ধুসুলভ। ঘরে ফিরে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে নিরুপমা তার বাবা আর স্বর্গের মতো সেই গ্রামের কথা চিন্তা করতে লাগলো। তখন অপরিচিত এক নম্বর থেকে তার ফোনে কল আসলো। নিরুপমা জানতে চাইলো কে বলছেন? কাকে চাইছেন? কিন্তু ফোনের অপাশ থেকে কনো উত্তর আসলো না। আজকাল ঐ নম্বরটা নিরুপমার বেশ পরিচিত হয়ে গেল, কারন প্রতিদিন ঐ একই নম্বর থেকে একই সময় কল আসে তবে কনো উত্তর আসে না। নিরুপমা বিরক্ত হবার সাথে সাথে বেশ অভ্যস্ত হয়ে গেল।
কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে নম্বরটা থেকে কনো কল আসে না। নিরুপমা খুশি হবার বদলে মনে হয় একটু কষ্ট পেল,তার এত দিনের অভ্যাস আর জানার কৌতূহলের যে এখানেই সমাপ্তি। শ্রাবনের কনো এক সন্ধ্যায় নিরুপমা একা একা বারান্দায় পায়চারী করছিলো। হটাৎ সেই নম্বর থেকে আবারো ফোন আসলো। নিরুপমা খুব আপ্লুত কণ্ঠে বলল হ্যালো ......ওপাশ থেকে বলে উঠলো আমি সাদিক, আমি কি আপনার সাথে কথা বলতে পারি??নিরুপমার কি, না বলবে?? কিন্তু সেও যে জানতে চাই কে এই লোকটা !! তাই সুপ্ত আর প্রবল ইচ্ছার জোরে সারা রাত কথা হলো তাদের।
এভাবে আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব হলো তাদের। তারপর নিরুপমা বলল দেখা করার কথা.........প্রথম দেখাতেই সাদিক যেন এক অন্য ভালোলাগা খুঁজে পেল। কিন্তু মনের ভিতর হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো। একই ভালোলাগা নিরুপমার মধ্য কাজ করছে কি?? সে উত্তর আর জানা হলো না। কিন্তু একি গ্রামের সেই রাজকন্যা তার রাজ্যসহ রাজাকে ভুলে গেল নাকি?? ইদানীং নিরুপমা যে ঐ একটা ফোন কলেই অভ্যস্ত হয়ে গেল,পার্থক্য আজ ঐ লোকটা তার কাছে পরিচিত থেকেও একটু বেশি। .............................................এভাবেই চলতে লাগলো তাদের স্বপ্নের মধুময় সময়। একপর্যায়ে বন্ধুত্ব থেকে প্রনয়ের সৃষ্টি হলো। তারা দুজন যেন একই আত্মার দুটি শরীর। আস্তে আস্তে তাদের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকলো। নিরুপমা তার দেহ-মন সব কিছু অনেক আগেই সাদিককে সম্প্রদান করলেও কখনো নিজেকে শূন্য মনে হয় নি। সে আর সাদিকতো আলাদা নয়।

এদিকে নামসুন্দর মেয়ের জন্য এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারের সুশিক্ষিত ছেলে ঠিক করলো। সবকথা শোনার পর নিরুর মাথায় যেন বাজ পড়লো। সে তার সম্পর্কের কথা বাবাকে বলার পর নামসুন্দর বলে উথল,এ অধর্মের কাজ তিনি করতে পারবেন না। মেয়েকে তার মৃত মায়ের নামে শপথ দিলেন। নিরুপমা বাধ্য হয়ে লক্ষ্মী কন্যার মতো বিয়ের পিড়িতে বসলো।

ঢাকঢোল পিটিয়ে খুব জমকাল অনুস্টানের মধ্যই দেব্ব্রত-নিরুপমার বিয়ে সম্পন্ন হলো। নতুন সংসার পেয়ে নিরুপমা বেশ খুশি। তার স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ীর সবাই যে তাকে ভালো বাসে। শ্রাবণের কনো এক সন্ধ্যায় হটাত মনে পরে গেল তার অতীতের কথা। সে নিজেকেই প্রশ্ন করলো সে কি তার স্বামীকে ভালোবাসার বিনিময়ে প্রতারণা দিচ্ছে না ?? সে কি মিথ্যা ভালোথাকার অভিনয় করছে না?? সেকি এক মুহূর্তের জন্য সাদিককে ভুলতে পেরেছে ??সব কিছু পাবার পরও আজ কি সে শূন্য নয়??



বি.দ্রঃ মূল গল্পটা আমার এক ছোট ভাই শরীফের।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×