somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈশ্বর ১ সৃষ্টি ১+১ অতঃপর +১+১+

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈশ্বর মহাশক্তিধর আর ঈশ্বর মহাশক্তি একই কথা কিন্তু ভিন্ন মাত্রার . বোঝানোর ক্ষেত্রে বা ঈশ্বরের পরিচয়ের ক্ষেত্রে তা ভিন্ন মাত্রা লাভ করে। আমার শক্তি আছে আমি শক্তিশালী , ঈশ্বরের ক্ষমতা আছে । এখানে শক্তি একটি জিনিস আমি আরেকটি জিনিস এখানে দুটি বিষয় বা সত্তা আছে।শক্তি আছে বলে আমি শক্তিশালী কিন্তু যদি আমার শক্তি না থাকে তাহলে আমি দুর্বল। তাই এখানে আমার চেয়ে শক্তি বেশী গুরুত্বপূর্ণ।

তাই যখন বলা হয় ঈশ্বরের ক্ষমতা আছে তখন ঈশ্বর এবং ক্ষমতা দুটি আলাদা বিষয় বা সত্তা হয়ে যায় । যেখানে ঈশ্বরের চেয়ে ক্ষমতাকে গুরুত্ব বেশী দেয়া হয় । কারণ বিষয়টি এমন দাড়ায় যে ঈশ্বরের ক্ষমতা আছে বলেই সে ঈশ্বর। কিন্তু যদি বলা হয় ঈশ্বর মহাশক্তি ঝামেলা শেষ হয়ে যায় যা মহাশক্তি তাই ঈশ্বর।

ঈশ্বর এক অদ্বিতীয় । ঈশ্বর মহাশক্তি । এর যে কোন একটি ঈশ্বরের প্রকৃতি বা পরিচয়ের জন্য যথেষ্ট। ঈশ্বরের একটি বাণীর অর্থ যেমন গভীর । তেমনি যে কোন একটি কথা ঈশ্বরকে নিয়ে অনেক গভীর। কিন্তু যুগ যুগ ধরে বলা হয়েছে ঈশ্বরের ক্ষমতা আছে ঈশ্বর ক্ষমতাশালী ঈশ্বর ক্ষমতাবান যেখানে ঈশ্বরের চেয়ে ক্ষমতা শক্তি বেশী গুরুত্ব রাখে কারণ এতে বোঝায় ক্ষমতা শক্তি আছে বলেই সে ঈশ্বর। কিন্তু মূল বিষয়টি হচ্ছে ঈশ্বর এক মহাশক্তির নাম । সুতরাং যখনই কেউ ঈশ্বরকে জানতে ধর্ম বা ধর্ম গ্রন্থের কাছে যায় সে হতাশ হয় । আর কেবল ধর্ম এবং ধর্ম গ্রন্থই ঈশ্বরের কথা বলে। তাই ঈশ্বরের পরিচয় জানতে আদিকাল থেকেই মানুষকে শরনাপন্ন হতে হয়েছে ভাবনার । যার ভাবনা বলেছে সত্য সে বলে ঈশ্বর সত্য। যার ভাবনা বলে নেই , সে বলে ঈশ্বর নেই । ভাবনার আজব খেয়াল । কিছু বিষয় ঈশ্বরের বা মহাশক্তির বা আদি এক এর সত্যতা ঘোষণা করে। এমনই ভাবনার মহান এক দার্শনিক এরিস্টটল । যিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন কিন্তু ধর্মীয় ধারণা থেকে স্বতন্ত্র বলা হয়।

এরিস্টটল তার METAPHYSICS গ্রন্থে ঈশ্বর তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেন । জগতের উৎপত্তি প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে ঈশ্বরের ধারনায় উপনীত হন। তার মতে জগতের সব কিছু কার্যকারণ শৃঙ্খলে আবদ্ধ। তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি প্রক্রিয়ার পেছনে ৪ প্রকার কারণ অনুমোদন করেন। তবে একটি ঘটনা ঘটলে তার পেছনে অন্য একটি ঘটনা থাকে । এই ভাবে জগতের যে কোন ঘটনার পিছনে কারণ খুঁজতে খুঁজতে আমরা শেষ পর্যন্ত একটি আদি কারণে পৌঁছাই । তার মতে কার্যকারণের শৃঙ্খল অবিরাম হতে পারেনা । তাহলে অনাবস্থা দোষ দেখা দিবে। তাই তিনি একটি আদি কারনের অনুমোদন করেন সেখানে সব কারণ এসে থেমে যাবে। অর্থাৎ সেই আদি কারণ থেকেই পর্যায়ক্রমে সব কারণ ও কার্য শৃঙ্খলিত। তিনি এই আদি কারণকেই ঈশ্বর বলে অভিহিত করেছেন ।

অন্য একটি দৃষ্টিকোণ থেকেও তিনি ঈশ্বর তত্ত্ব ব্যক্ত করেছেন। তা হল জগৎ গতিশীল।সৃষ্টি বা পরিবর্তন সম্ভব হয় গতির ফলে। একটি গতির কারণ তার পূর্ববর্তী গতি এইভাবে গতির পূর্ববর্তী কারণ খুঁজতে গেলে আমরা একটি সময়ে একটি আদি গতিতে উপনীত হই । এই আদি গতিকে তিনি বলেছেন , “আদি চালক” হিসেবে, তিনি নিজে গতিশীল নয় কিন্তু গতির কারণ। তাই এরিস্টটল একে নিশ্চল চালক বলে নামকরণ করেছেন।তার মতে এই নিশ্চল চালক হলেন ঈশ্বর।

তাই একদিক থেকে আদি কারণ এবং অন্যদিক থেকে আদি চালক বলা যায় ।

এরিস্টটলের ঈশ্বর তত্ত্বকে আমার কিছু ভাবনার ছাঁচে ফেলে যদি এভাবে দেখি

আদি কারণ – তিনি আদি কারনের কথা উল্লেখ করেছেন । এখানে তার যুক্তি একটি ঘটনার জন্য তার পূর্বের ঘটনা দায়ী এভাবে তিনি বলেন একটি জায়গায় বা একটি ঘটনায় বা কারণে যেয়ে পৌঁছাই । যাকে ‘আদি কারণ’ নামকরণ করেছেন।এই আদি কারণকে যদি ‘১’ বলা হয় তাহলে এ ব্যাখ্যা করা আরও যুক্তিসঙ্গত হয় । কারণ ‘১’ এর পূর্বে কি আছে তা যেমন আজো অনাবিষ্কৃত তেমনি ১ এর পর কি তাও অজানা ।তাহলে ১ এ এসেই সকল ঘটনা থেমে যায়। যদি বলি ১ এর আগে ‘০’ আমি বলব তা ভুল কারণ মানুষ যা জানেনা তাকে শূন্য বলে ‘কিছু নেই’ এই পরিস্থিতি কখনই বিরাজমান ছিলনা । কিছু নেই থেকে কিছু সৃষ্টি বা কোন কিছুর কারণ বা কোন ঘটনার কারণ হতে পারেনা।

সব কিছুর আদিতে সংখ্যা । সংখ্যার মূল ১ (এক ) । ১ ( এক ) এর পূর্বে কি ? ( ০ ) শূন্য । এখানে আমার দ্বিমত আছে ।

এক এর পূর্বে কি আছে জানেনা বলেই মানুষ বলে শূন্য ( ০) অর্থাৎ কিছু নেই । কিন্তু আমি বিশ্বাস করি কিছু নেই থেকে কিছু শুরু হতে পারেনা । যা নেই তার শুরু বা শেষও নেই ।তাহলে আদি কারণ বা ১ ই হচ্ছে ঈশ্বর।


আদি চালক- এরিস্টটল আদি চালক বা আদি গতির কথা বলেছেন । তিনি এভাবে উদাহরণ দিয়েছেন – একটি বিলিয়ার্ড বলের গতির কারণ অন্য একটি বিলিয়ার্ড বল । এইভাবে আদি গতি খুঁজতে গেলে সেই বলটিকে অবশ্যই নিশ্চল হতে হবে। তিনি এখানে গতি অর্থাৎ শক্তির কথা উল্লেখ করেছেন । ১ এর পূর্বে কি আছে তা যেমন মানুষ জানেনা আবার এক (১) এর পর কি আছে তা মানুষ জানেনা । মানুষ যা জানে তা সবই হল , ১ এর মিলিত রূপ ।

২ = ১ + ১ , ৩ = ১ + ১ + ১ ঠিক এভাবে অসীম সংখ্যায় গেলেও তা ঐ ( ১ ) এক এরই যোগ ফল ।

এখানেই গতির সৃষ্টি ১ এর সাথে আরেকটি ১ এর যোগ হলে তা হয় ২ আর এই ২ কে যদি হল একটি কারণ । কারণ এখানে ২ টি ১ যোগ হওয়ার ঘটনার ফলেই ২ সৃষ্টি হয়েছে যার আদি কারণ হচ্ছে ১, কারণ তার মতে কার্যকারণের শৃঙ্খল অবিরাম হতে পারেনা । তাহলে অনাবস্থা দোষ দেখা দিবে। তাই তিনি একটি আদি কারনের অনুমোদন করেন সেখানে সব কারণ এসে থেমে যাবে। তাহলে ১+১+১+১+ এভাবে চলতে থাকলে আদি কারণে গিয়ে সব কারণ থেমে যাবে তাহলে সেই আদি কারণ হবে ১ ।

যোগের ফলে তৈরি হয়েছে গতি বা একটি ঘটনা বা সৃষ্টি । যার পূর্বে বা কারণ বা চালক হচ্ছে ১ , আর এই ১ ই হচ্ছে ঈশ্বর।

এরিস্টটলের মতে প্রতিটি অস্তিত্তের পেছনে কারণ বর্তমান । এই কারণকে তিনি ৪ ভাগে ভাগ করেছেন

উপাদান কারণ (MATERIAL CAUSE) রূপগত কারণ (FORMAL CAUSE) নিমিত্ত কারণ (EFFICIENT CAUSE) পরিণত কারণ (FAINAL CAUSE)

পরবর্তীতে তিনি এই ৪ প্রকার কে ২ প্রকার কারণে নিয়ে আসেন। তা হল –রূপগত ও উপাদানগত কারণ

তার মতে আকার ও উপাদানের মিলিত অবস্থাই কোন কিছুর অস্তিত্তের সুচনা করে। পৃথকভাবে তারা কখনই অস্তিত্বশীল নয়। তবে সৃষ্টির প্রথমে অনাদিকাল ধরে আকার ও উপাদান বাস্তব ছিল। এই অবস্থায় আকার ছিল আকারের আকার হিসেবে। এই আকারের আকার কোন এক অজ্ঞাত কারণে আদি উপাদান অর্থাৎ জড়ের সংস্পর্শে আসে। তখনি গতি পরিবর্তন এবং নতুনের সৃষ্টি সম্ভব হয়। সৃষ্টি প্রক্রিয়ার সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে উপাদানহীন আকার অর্থাৎ আকারের আকার । আর সর্ব নিম্ন স্তরে রয়েছে আকারহীন উপদান অর্থাৎ নিরেট জড়।

তার মতে এর কোনটিরই অস্তিত্ব নেই তবে বাস্তব । এই অস্তিত্বহীন বাস্তব উপাদানহীন আকার অর্থাৎ আকারের আকার (form of form) হল ঈশ্বর ।


আকারের আকার – একে তিনি বলেছেন অস্তিত্বহীন বাস্তব উপাদানহীন আকার অর্থাৎ আকারের আকার হচ্ছে ঈশ্বর । আমরা জানি শক্তির কোন আকার থাকেনা শক্তি আকারহীন উপাদানহীন। কিন্তু শক্তি উৎপাদনে বা সৃষ্টিতে পদার্থের প্রয়োজন।

তার মতে , এই আকারের আকার কোন এক অজ্ঞাত কারণে আদি উপাদান অর্থাৎ জড়ের সংস্পর্শে আসে। এখানেই হল শক্তি উৎপাদন বা সৃষ্টির আদি বা মূল কথা। অর্থাৎ যদি বলি শক্তি কোন এক বিশেষ বা অজ্ঞাত কারণে জড়ের বা পদার্থের সংস্পর্শে আসে তৈরি হয় আকার তাহলে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে সহজ হয়।পৃথিবীতে যত শক্তি ( গতি , বল , তাপ , চাপ ইত্যাদি) রয়েছে কোনটি পদার্থ ছাড়া সৃষ্টি বা উৎপাদন সম্ভব নয়। কিন্তু আপনি যদি কল্পনা করেন পদার্থ ছাড়া বা কোন কারণ ছাড়া শক্তি অর্থাৎ গতি , বল , চাপ , তাপ , আলো এদের মতই একটি শক্তি যার কোন পদার্থের প্রয়োজন নেই তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন এরিস্টটল একেই বলেছেন আকারের আকার । বা আকার তৈরির কারণ বা আকারহীন উপাদান । অর্থাৎ শক্তিই হচ্ছে ঈশ্বর ।

অস্তিত্বহীন বাস্তব উপাদানহীন আকার- শক্তির অস্তিত্ব কেবল অনুভব করা যায় কিন্তু পদার্থের ন্যায় বাস্তব নয়। পৃথিবীতে একমাত্র দৃশ্যমান শক্তি হচ্ছে আগুন যার নির্দিষ্ট কোন আকৃতি নেই। সকল শক্তি যদি আগুনের ন্যায় দেখা যেত একই বিষয় হত যার কোন নির্দিষ্ট আকৃতি থাকতো না। তাই অস্তিত্বহীন উপাদানহীন আকারকে যদি শক্তি বলা হয় তাহলে তা বেশ যুক্তিসঙ্গত হয়। কারণ অস্তিত্বহীন বা বাস্তব উপাদানহীন আকার একমাত্র হতে পারে শক্তি । সেই শক্তি যার কোন পদার্থের প্রয়োজন হয়না। এইজন্যই বলা হয় ঈশ্বর কারও মুখাপেক্ষী নন । বা ঈশ্বর নামক মহাশক্তির কোন পদার্থের প্রয়োজন হয়না তাই সে নিরাকার।

তার মতে , সৃষ্টি প্রক্রিয়ার সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে উপাদানহীন আকার অর্থাৎ আকারের আকার । আর সর্ব নিম্ন স্তরে রয়েছে আকারহীন উপদান অর্থাৎ নিরেট জড়।

সৃষ্টির সর্বোচ্চ স্তরে উপাদানহীন আকার বা শক্তি । সর্ব নিম্ন স্তরে রয়েছে আকারহীন উপাদান বা বস্তু যাকে তিনি বলেছেন নিরেট জড়। এই শক্তি এবং বস্তুর মিলিত হয়েই হয় সৃষ্টি ।



এরিস্টটলের মতে প্রতিটি অস্তিত্তের পেছনে কারণ বর্তমান । এই কারণকে তিনি ৪ ভাগে ভাগ করেছেন পরবর্তীতে ২ টি কারণে নিয়ে আসেন । তার দুটি কারণকে যদি এভাবে ব্যখ্যা করি

উপাদান কারণ (MATERIAL CAUSE)- উপাদান হচ্ছে ১ বা অস্তিত্বহীন আকার বা আদি কারণ বা আদি চালক বা শক্তি ।

রূপগত কারণ (FORMAL CAUSE)- অস্তিত্বহীন আকার এবং নিরেট জড় বা পদার্থের মিলিত রূপ হচ্ছে সৃষ্টি বা আকার বা অস্তিত্ব বা ঘটনা।

আদি জড়, সৃষ্টিকর্তা এবং দক্ষ কারিগর - প্লেটো- এরিস্টটল প্রমুখ দার্শনিকগণ জগতের অনাদিত্তে বিশ্বাস করতেন। তাদের মতে জগতের মূল উপাদান আদি জড় ঈশ্বরের সাথেই চিরন্তনভাবে বিদ্যমান ছিল। ঈশ্বর এই আদি জড়ের উপর আকার প্রদান করেন। এতে করে ঈশ্বর আর ঈশ্বর থাকেনা হয়ে ওঠে দক্ষ কারিগর বা স্থপতি। কেননা সৃষ্টির মূল নিয়ামক আদি জড় ঈশ্বর সৃষ্টি করেন নি । ঈশ্বর কেবল আদি জড়ের আকার পরিবর্তন করেছেন বা আকার প্রদান করেছেন ।

আমার যে দাবী ঈশ্বর থেকেই সকল কিছুর সৃষ্টি তা এখানে আবার প্রমানিত হয় । আদি জড় ঈশ্বর সৃষ্টি করেননি ঠিক কিন্তু আদি জড় ঈশ্বরের সাথেই বিরাজমান ছিল কারণ আদি জড় ঈশ্বরের বা শক্তিরই একটি অংশ । শক্তির একটি অংশ পরিবর্তিত হয়ে বা এরিস্টটল প্লেটোর মতে ঈশ্বর আদি জড়ের আকার পরিবর্তন করেন।

এখন ঈশ্বর শক্তির এই ক্ষমতাকে (আদি জড়ের আকার পরিবর্তন বা আদি জড়ের উপর আকার প্রদান যেভাবেই বলি) বা এই শক্তিকে তারা বলছেন ঈশ্বরের কারিগরি দক্ষতা আমি বলছি ঈশ্বরের সৃষ্টি । কোন কিছুর পরিবর্তন করে নতুন কিছু তৈরি করা কারগরি দক্ষতা । আবার যে বিষয়ের কোন অস্তিত্ব নেই তা তৈরি করা সৃষ্টি । এখানে ঈশ্বর শক্তি দুটোই করেছেন শক্তিকে আদি জড়ের রুপান্তর করে নতুন জড়ের সৃষ্টি করেছেন যে জড়ের পূর্বে কোন অস্তিত্ব ছিলনা যাকে বলা যায় সৃষ্টি । আদি জড়ের আকার প্রদান হচ্ছে কারিগরি দক্ষতা। এখন যে যেভাবে বিষয়টি দেখে কারিগরি দক্ষতা বা সৃষ্টি যাই বলি তা কিন্তু ঈশ্বর শক্তিরই শক্তির প্রকাশ।

প্লেটো এরিস্টটলের আদি জড়ের ব্যাখ্যার সাথে আমার দ্বিমত রয়েছে । একই সাথে তারা বলছেন ঈশ্বর এক আবার বলছেন আদি জড় ঈশ্বরের সাথেই বিরাজমান তাহলে এখানে দুটি সত্তার উপস্থিতি চলে আসে। কারণ তাদের মতে ঈশ্বর আদি জড়ের উপর আকার প্রদান করেন । তাহলে যদি এরিস্টটলের আদি কারনের সূত্রে যাই তাহলে কি দাড়ায় আদি জড় একটি ঘটনা যার আদি কারণ বা আদি ঘটনা ঈশ্বর শক্তি । ফলে তাদের পরবর্তী দাবি ঈশ্বর আদি জড় সৃষ্টি করেনি তাহলে আদি জড়ের কারণ বা ঘটনা কি ? উত্তর আসে আদি কারণ বা আদি ঘটনা ঈশ্বর। তাহলে ঈশ্বর শক্তি আদি জড়ের সৃষ্টি কর্তা। সব কিছুর পূর্বে যদি ১ বা ঈশ্বর থাকেন তাহলে সব কিছুর সৃষ্টি ঈশ্বর শক্তি থেকেই সেই হিসেবে আদি জড়ের সৃষ্টি ঈশ্বর শক্তি থেকেই। সেই যুক্তি অনুযায়ী সব কিছুই ঈশ্বর শক্তির অংশ।

যদিও এরিস্টটলের ঈশ্বর তত্ত্বকে বলা হয় ঈশ্বরের ধারণা ধর্মীয় ঈশ্বরের ধারনার চেয়ে ভিন্ন কিন্তু এ ক্ষেত্রে তার তত্ত্বের সমর্থন পাওয়া যায় ইসলাম ধর্ম মতে। কারণ ইসলাম ধর্ম মতেও ঈশ্বর এক , নিরাকার এবং অমুখাপেক্ষী ।

সৃষ্টি তত্ত্ব এবং সৃষ্টি পরিচালন প্রক্রিয়াঃ

এরিস্টটলের মতে, এই আকারের আকার কোন এক অজ্ঞাত কারণে আদি উপাদান অর্থাৎ জড়ের সংস্পর্শে আসে। তখনি গতি পরিবর্তন এবং নতুনের সৃষ্টি সম্ভব হয়।

এই একটি কথা দ্বারা সৃষ্টি তত্ত্ব এবং পৃথিবী বা আমাদের জ্ঞানের সীমায় পৃথিবী এবং পৃথিবীর বাইরে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পরিচালন তত্ত্ব ব্যখ্যা করা সম্ভব । যা খুবই সাধারণ আমার মতে এরিস্টটলের “এক অজ্ঞাত কারণ” হচ্ছে গণিত বা অঙ্ক। আর অঙ্কের অনেক প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি হচ্ছে যোগ । আর এই যোগই হচ্ছে সৃষ্টির শুরু এবং সৃষ্টি পরিচালন প্রক্রিয়া। তার মতে আদি উপাদান জড়ের সংস্পর্শে আসে অর্থাৎ আদি উপাদান জড়ের সাথে যোগ হয় বা যুক্ত হয়ে নতুনের সৃষ্টি হয়। যোগ হওয়াই হচ্ছে গণিত । যা খুব সহজ এবং আমরা যা জানি , ১ + ১ = ২ , ১ + ১ + ১ = ৩ এভাবে অসীম সংখ্যাতে গেলেও যা আসবে তা ঐ ১ আর যোগ ফল কিন্তু কখনই ১ এর বাইরে কিছু নয়।

আমার মতে সৃষ্টি এবং সৃষ্টি পরিচালন প্রক্রিয়া চারটি বিষয় দ্বারা চালিত সংখ্যা , গণিত, আকর্ষণ গতি সৃষ্টি তত্ত্ব পোস্টে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। এই চারটি বিষয়ই সর্বত্র বিরাজমান । আবার ধর্ম মতে ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান।

রুপান্তরঃ

পৃথিবীতে শুধু শক্তি রুপান্তরিত হয় এই ধারণা ভুল । পৃথিবীর সব কিছুই রুপান্তরিত হয় ।কারণ আমার মতে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আমাদের জ্ঞানের সীমায় যা কিছু আছে বা নাই সকল পদার্থ সকল কিছুই শক্তি যা নানা প্রক্রিয়ায় রুপান্তরিত হয়ে পদার্থে রূপ নিয়েছে । এখানে কোন কিছুরই বিলীন বা শেষ নেই যা আছে তা হল রুপান্তর। এক রুপ থেকে পদার্থের অন্য রূপ। আর আছে যোগ কিন্তু প্রকৃতির কোথাও বা সৃষ্টির পূর্বে কখনই বিয়োগ নেই বা ছিলনা।পরেও বিয়োগ থাকবেনা । কারণ বিয়োগ হলেই নতুনের সৃষ্টি সম্ভব নয়। আমার মতে সকল পদার্থই পরিবর্তিত হয়ে এক পর্যায়ে হয়ে যায় শক্তি ফলে তা হয় অদৃশ্য। কারণ আগুন ছাড়া আর কোন শক্তিই দৃশ্যমান নয়। তবে আমরা শক্তির সকল রূপ সম্পর্কে এখনো জানিনা।

ধ্বংসঃ

এটি মূলত রুপান্তরের আরেকটি রূপ। কেয়ামত বা ধ্বংস বা Judgment day নিয়ে আমাদের যে বিশ্বাস তা এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। সৃষ্টি পরিচালন প্রক্রিয়ার একটি হচ্ছে আকর্ষণ । যদি কখন এই আকর্ষণ না থাকে যেমন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি যদি কোন কারণে বিকল হয়ে যায় তাহলে কি হবে ? পৃথিবীর যা কিছু আছে সব কিছু মহাশূন্যের দিকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চলে যাবে । ইসলামে কেয়ামত সম্পর্কে বলা আছে , সেদিন পাহাড় পর্বত তুলোর ন্যায় উড়তে থাকবে । পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বিকল হলে ঠিক এই বিষয়টি হবে । তাহলে সৃষ্টি পরিচালনের অন্যতম একটি বিষয় আকর্ষণ । প্রতিটি বস্তুরই নিজস্ব আকর্ষণ শক্তি আছে। তাই তারা পরস্পর মিলিত হয়ে নতুন সৃষ্টির উদ্ভব হয়।

এরিস্টটল প্লেটো ঈশ্বরকে পূর্ব বা আদি ঘটনাতেই রেখে বিশ্লেষণ করেছেন অর্থাৎ তাদের মতে ঈশ্বর বা আদি কারণ বা ১ আর সাথে নিরেট জড়ের মিলিত হওয়ার ফলে তৈরি হল সৃষ্টি । যা ঈশ্বর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে হচ্ছে নতুন এক সত্তা । কিন্তু এখানে আমার চিন্তায় এই তত্ত্বকে বাঁধা দিচ্ছে আকর্ষণ । তাই নতুন সৃষ্টিকে আমি ঈশ্বরের বাইরে নিতে পারছিনা। আমি ঈশ্বরকে দেখছি আরও বিশাল করে । যার মাঝেই হচ্ছে নানা সৃষ্টি এবং সৃষ্টির নানা চলমান প্রক্রিয়া।


আমার মতে এই পুরো প্রক্রিয়া বা সকল কিছু মিলিয়েই ঈশ্বর । ঈশ্বর তার নিজের মাঝেই খেলছে তার আপন খেলা। আমি ঈশ্বরকে এভাবে দেখি যা একটি মহাশক্তি যাকে বলা যায় ঈশ্বর শক্তি । যে শক্তির মাঝে সকল সৃষ্টি চলমান । অর্থাৎ আরও পরিষ্কার করে যদি বলি ঈশ্বর হচ্ছে ১ এবং তার সৃষ্টি হচ্ছে ১+১ এবং সৃষ্টি পরিচালন প্রক্রিয়া হচ্ছে + ১ + ১ + এই পুরো প্রক্রিয়াই চলমান ঈশ্বর নামক শক্তির মাঝেই। আমার ভাবনায় ঈশ্বর শক্তির ধারণা –





জগত সংসার বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জানা অজানা সকল কিছুই পরিচালিত হচ্ছে শক্তি দ্বারা সেই শক্তির মাঝেই । শক্তির নাম হচ্ছে ঈশ্বর ।

NOT THE POWER OF GOD BUT THE GOD IS POWER
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×