পাঁচ ছেলে মেয়ের কেউ থাকেনা কাছে। সারাদিন মিসেস কামালের খুব একা একা কাটে। বুয়ার কাজ পছন্দ নয় বলে নিজের কাজ গুলো সব নিজ হাতেই সারেন। তবে এখন বয়স হয়েছে। আগের মত আর শক্তি পান না শরীরে। প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। কামাল সাহেব চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর ছোট একটা ব্যাবসা করেন।মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েন। সারাদিন এভাবেই কেটে যায়।
মিসেস কামালের দিন যেন কাটে না।ছোট একটা বাড়ী। চারটা রুম ভাড়া দেন।নিজে থাকেন পাচঁটা রুমে। তখন বড় সংসার ছিল, তাই মাঝে মাঝে পাঁচ রুমেও হত না।আর এখন!!!!
ভাড়াটিয়ার ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে খেলাধুলা করেন মাঝে মাঝে। তবুও তার ভাল লাগে না। মাঝে মাঝে ভাবেন আহঃ নিজের নাতি নাতনী যদি পাশে থাকতো।
বড় ছেলেটা পাশেই ভাড়া থাকেন।সারাদিন ব্যাস্ত থাকেন, দিনে একবার এসে অবশ্য বাবা মায়ের সাথে দেখা করে যান।ছোট মেয়ে আর মেয়ের জামাই থাকেন ক্ষানিকটা দুরে। বাসে যেতে দশ মিনিট থেকে পনের মিনিট লাগে। ছোট মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছে বেশি দিন হয়নি। মেয়েটা চলে যাবার পর ইদানিং আরো বেশি একা লাগে। ছোট ছেলেটা থাকে বড় মেয়ের বাসায়। যদিও সবার একই শহর বাস,তবুও যেন যোযন যোযন দূর।দু চার মাসেও কারো সাথে কারও দেখা মেলে না।আর বড় ছেলেটা কাছে থেকেও অনেক দূরে।ছেলে বাসার বাইরে থাকে বলে বড্ড অভিমান কামাল সাহেবের।এত বছরেও তাই কখনও ছেলের বাসায় যাওয়া হয়নি। এখন শুধু দুই বুড়ো বুড়ির সংসার।
মেয়ের জামাই গুলও খোঁজ নেয়ার প্রয়জন বোধ করে না। করবেই বা কেন! আজকালের অন্যআন্য বাবা মায়ের মত কিছুইতো করেননি তারা।তাই বড় জামাই কিছু না বললেও মেঝ আর ছোট জামাইতো সুযোগ পেলেই দুকথা শুনিয়ে দেয়।মেয়ের সুখের জন্য মুখ বুজে সহ্য করা ছাড় কিইবা করার আছে তাদের।আজকাল ছোট মেয়েটার কথা খুব ভাবেন। পছন্দ করে বিয়ে করলেও সংসারে সুখ নেই খুব একটা।মেয়ে মেয়ের জামাই দুজনই খুব জেদি। তাই সারাক্ষন ছোট মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তা হয়।
মাঝে মাঝে মা হয় সেই সংসারে আবার ফিরে যাই। সারাদিন কোলাহল মুখর ঘর।ব্যাস্ত জীবন। সকাল বেলা কামাল সাহেবের অফিস,ছেলে মেয়ের স্কুল। সব সামলে উঠতেই দুপুর। কে দুপুরে কি খাবে ভেবেই অস্থির। তারপর বিকেল সন্ধা।কিভাবে যে সময় চলে যেত, টেরই পাওয়া যেত না।কি অমোঘ বন্ধনে বাধা ছিল সবাই। সেই বন্ধনের জোর যে এত সীমীত, তা কখনোই বুঝতে পারেন নি কামাল সাহেব আর তার স্ত্রী।শরীরের শক্তির সাথে যে ভালবাসার শক্তিও কমে যায়,একথা ইদানিং হাড়ে হাড়ে বোঝেন দুই বুড়ো বুড়ি।তারা বেশ ভালভাবেই বোঝে যে এই বুড়িয়ে যাওয়া ভালবাসা দিয়ে মানুষের করূনা পাওয়া সম্ভব,ভালবাসা না।তাইতো সারাদিন বুড়িয়ে যাওয়া অভিসপ্ত দূর্বল ভালবাসার মৃত্যু কামনা করেন।