somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তচিন্তা কি? মুক্তচিন্তা শব্দটিকে কি ভুল ভাবে ভুল লোকদের সাথে উচ্চারিত হচ্ছে?

২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই দেশের কিছু মানুষ এখনো আছর-বাতাসে বিশ্বাস করে। এখনো নিজের চোট্ট শিশুটি অসুস্থ্ হলেও অনেকেই তাবিজওয়ালার কাছে ছুটে যায়। ছোট বাচ্চাটার কপালে এঁকে দেয় একটি কালো টিপ, ভয় যদি নজর লাগে? এখনো অনেকেই খাওয়ার সময় একটু লুকিয়ে খায় কারণ কেউ দেখলে ‘দৃষ্টি’ লাগতে পারে। আর ‘দৃষ্টি’ লাগলে পেট খারাপসহ নানান সমস্যা হতে পারে। চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হলে তো কিছুই খাওয়া যাবে না। বিশেষ করে প্রসূতিদের শুধু খাওয়া না, আরো অনেক নিয়মকানুন মানতে হয়। এই আধুনিক টেকনোলজির যুগেও জ্বিনে ফোন করে সহজ সরল মানুষ গুলো থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। একজন সহজ সরল মা এখনো সন্তানকে বিদায় দিয়ে পিছন ফিরে না সন্তান চোখের আড়াল হওয়ার পর্যন্ত, পাছে ছেলের কোন অমঙ্গল হয়? এগুলো কুসংস্কার। এমন হাজারো কুসংস্কারে এখনো এদেশের মানুষ গুলো আচ্ছন্ন। মজার বিষয় হলো এই কুসংস্কার গুলো কোথা থেকে এসেছে কেউ বলতে পারে না। এই কুসংস্কার গুলো কোন ধর্ম থেকেও আসেনি। আমি যতদূর জানি কোন ধর্ম এই কুসংস্কারগুলোকে সমর্থনও করে না।

আবার ধর্মের নামেও বেশ কিছু কুসংস্কার আছে যে গুলো আদতে ধর্মই স্বীকার করে না। যেমন এই দেশের মুসলমান সমাজের মধ্যে একটা ভুল প্রচলন আছে শবেবরাতের দিন ভাল খাবার খেতে হয়, পায়েস পিঠা ইত্যাদি তৈরি করতে হয়। এমন কি ছোট কালে শুনতাম শবেবরাতের দিন যদি ছড়া পিঠা না খাই তবে আখেরাতে কেঁচো খাওয়ানো হবে। এই দেশের মানুষ এখনো পাঁচ টাকা যাকাত দিতে রাজি না কিন্তু লক্ষ টাকা দিয়ে গরু কুরবানী দিতে কোন আপত্তি নাই। কিন্তু সে জানে না যাকাত ফরজ আর লক্ষ টাকা দামের গরু কুরবানি করা ওয়াজিব। ঈদের দিনে কোরবানির মাংস কাটতে কাটতে দিন শেষ, কখন নামাজের সময় চলে যায় সে মনেও রাখে না। অথচ ইসলামে নামাজ ফরজ আর লক্ষ টাকা দামের গরু কুরবানি ওয়াজিব। এগুলোকেও অনায়াসে কুসংস্কারের তালিকায় যুক্ত করা যায়। এগুলো হয় ধর্ম সম্পর্কে না জানার কারণে অথবা ধর্মকে না মানার কারণে।

এই কুসংস্কার গুলো থেকে যারা মুক্ত তাদেরকেই তো বলা যায় মুক্তমনা, নাকি? আমি সকল প্রকার কুসংস্কার থেকে মুক্ত এবং আমি নিজেকে মুক্তমনা দাবি করি।

কিন্তু এর বাইরেও কিছু মুক্তমনাকে দেখতে পাই আজকাল ব্লগ বা ফেসবুক জগতে। তারা কখনো ঐ কুসংস্কার গুলোকে নিয়ে একটি ওয়ার্ড লিখেননি, তারা ঐ কুসংস্কার গুলো থেকে মুক্ত করার কথা কখনো ভাবেনি। আজকাল টিভিতে দেখি ঘণ্টা চুক্তিতে রুহানি তাবিজের বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। টিভি মিডিয়াগুলো কোথায় কুসংস্কারের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে ভূমিকা রাখবে তা না উল্টো তারা তাবিজের বিজ্ঞাপন দিয়ে যারা তাবিজে বিশ্বাস করে না তাদেরও মগজ ধোলাই করছে। বিভিন্ন রকমের ওষুধ, প্রসাধনী সামগ্রী, ভাগ্য গণনাকারী , আংটিতে পরার পাথর বিক্রেতা ইত্যাদিতে টিভি পর্দা ভর্তি। কিন্তু আমাদের তথাকথিত মুক্তমনারা কি কখনো এগুলো নিয়ে এক কলম কোথাও লিখেছে? এই বিজ্ঞাপনগুলো দিয়ে একটি মহল যে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তার প্রতিবাদ কোথাও করেছেন? অথচ এগুলো সমস্যা। কিন্তু তারা সমস্যা না এমন কিছু বিষয় নিয়ে তোলপাড় করে ফেলে।

আমি যদি আজ বলি দুর্গার দশটি হাত কেন? কিংবা গণেশের মাথা হাতির মতো কেন (হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা পূর্বক) তবে এই মুক্তমনারা বলবে আমি সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছি। কিন্তু উনারা কোন ধর্মকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করলে সেটা হয় মুক্তমত।

কেউ যদি বলে মেয়েদের শালীন পোশাক পরা দরকার তখন তারা তাকে মৌলবাদী সন্ত্রাসী ট্যাগ দিয়ে দেবে। কিন্তু উনি যখন হিজাব নিয়ে ব্যাঙ্গ বিদ্রূপ করেন সেটা হলো মুক্তমত। উনারা ভুলেই যান কেউ হিজাব পরবে নাকি জিন্স টিশার্ট পরবেন সেটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত স্বাধীনতার বিষয়। আমি কাউকে বোরকা পরতে যেমন বাধ্য করতে পারি না তেমনি বোরকা খুলতেও বাধ্য করতে পারি না।

এই মুক্তমনারা বুঝে না যে, কারো পোষাক সেটা জিন্স টিশার্ট হোক আর বোরকা হোক এটা দেশের জন্য, দশের জন্য কোন সমস্যা না। এমন অনেক কিছু নিয়েই তারা বির্তক সৃষ্টি করেন যেগুলো আসলেই কোন সমস্যা না। অথচ যেগুলো সমস্যা সেগুলো নিয়ে তাদের কোন বিকার নেই।

এখন কিছু মানুষ কোন একটি ধর্মকে নিয়ে অবমাননা করে কোন মন্তব্য করলেই তাকে মুক্তমনা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করা হয়। অথচ আপনি যদি সত্যিই সুশিক্ষায় শিক্ষিত হোন, অধুনিক হোন, মুক্তমনা হোন সকল ধর্মের, বর্ণের মানুষের সহাবস্থানের কথা বলতেন। মানুষকে কুসংস্কার মুক্ত করার কথা বলতেন। কিন্তু আপনি কি করছেন? হুট করে কোন একটি ধর্মকে নিয়ে একটি বাজে মন্তব্য করে অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন, মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করছেন, কথায় কথায় ধর্মকে টেনে আনছেন আর নিজেকে আধুনিক ও মুক্তমনা দাবী করছেন।

হ্যাঁ, আপনি যদি মনে করেন কোন ধর্মের কোন একটি অংশ আপনার মনঃপূত হচ্ছে না, বিজ্ঞানের সাথে যায় না তবে আপনি সেটা নিয়ে যথেষ্ট তথ্য উপাত্তসহ গবেষণামূলক সমালোচনা লিখতে পারেন। সেই লেখা দিয়ে আপনি ধর্মকে ধুয়ে দিতে পারেন। কিন্তু আপনি গণেশের পেট বড় কেন বা হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ধর্ষক বলে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারেন না। সেই অধিকার আপনাকে কেউ দেয়নি।

আমি মনে করি এই কিছু তথাকথিত মুক্তমনার কারণে মুক্তমত ও মুক্তমনা শব্দ দুটিই আজ হুমকির সম্মুখীন। মুক্তমত ও মুক্তমনা শব্দগুলো আজকাল ভুল মানুষের সাথেই বেশী উচ্চারিত হচ্ছে। মুক্তমত ও মুক্তমনাদের ডিফাইন্ড করাটাই এখন বড়চ্যালেঞ্জ।

মুক্তচিন্তা ও মুক্তমানার জয় হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:১৫
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×