somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসামাজিক ক্ষুধা ( অনুগল্প)

১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কাছরাপট্টি বেশ্যাপাড়া ! সরকারি খাস জমি। শহরের বুকে কম করে হলেও বিঘে দুই জায়গা। দিনের বেলায় সাধারণ মানুষ এই দিকটাই আসলে নাক উঁচা করে। বিবমিষা উগরে আসে। পবিত্র পোশাক অপিবত্র হয়। কিন্তু তাদের অনেকে রাতের অন্ধকারে এই দিকটায় কুঁই কুঁই করে কি যেন খুঁজতে আসে। ইমাম সাহেব নালতের বয়ান করেন, ঠাকুর মহাশয় ভৎসনা করেন- না সমাজটাকে বাঁচানো গেলনা। উচ্ছনে গেল সব। কিন্তু মেয়র সাহেব কিছুই বলেন না। তিনি শুধু দেখেন। দিন আর রাত, তার দৃষ্টি একি রকম। সে দৃষ্টিতে কাছরাপট্টির প্রতি কোন ঘৃণা নেই। আছে কেবলি ভালবাসা। কাছরাপট্টির দিকে তাকালে তার চোখ জ্বল জ্বল করে।

মোমেনা নাছোড় বান্দা। লুলা জব্বার যতই ধমকায় ততই সে বলে মন্ডলের বড় পোলা জগলু তার পেটের সন্তানের বাবা। মায়ের সাথে মন্ডল বাড়ি কাম করতে গেলে জগলু মোমেনারে তার ঘরে নিয়ে যায়, তারপর.......। কিন্তু মন্ডল পরিবারের অনুগত গ্রাম্য সালিশ সে কথা মানবে কেন? গরিবের নালিশ মানতে তারা বাধ্য নয়। "ফকিন্নির বাচ্চারা বড় লোকের সর্বনাশ করতে সব কিছুই পারে। মোমেনা একটা নষ্টা মেয়ে। ওরে গ্রাম থেইক্কা বের কইর‌্যা দেও জব্বার" বুড়ো আসির উদ্দিন রায় দেয়। এভাবে হাঁসুয়াকান্দি গ্রামের মন্ডল বাড়ির বড় ছেলে জগলু মন্ডল কে নিজের পেটের সন্তানের পিতা দাবি করে নষ্টা মেয়ের তকমা নিয়ে ঘরছাড়া হয়েছিল মোমেনা। এটা ১৫ বছর আগের কথা।
১৫ বছরে পদ্মা মেঘনার বুক চিরে বহু জল গত হয়েছে। মোমেনার গরিব মা বাপ দু'জনে পটল তুলেছে। হাঁসুয়া কান্দির মানুষ মোমেনার কথা ভুলিয়া গিয়াছে। মন্ডল পরিবার শহরের বিশাল আলিশান বাড়িতে জা্যগা করে নিয়েছে।


রাত দিপ্রহর । মেয়র জগলুল হোসেন মন্ডল তার বিশেষ কামরায় বসে ঘামছেন। মোমেনা বেঁচে আছে। বিকেলের দিকে লুলা জব্বার কানের কাছে মুখ নামিয়ে ফিস ফিস করে বলে গেল " মোমেনা এই শহরে আছে। কাছরাপট্টিতে গতর বেইচ্চা খায়। সে নিজের চোখে দেইখ্যা আসছে " রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মন্ডল অস্থিরতা। সুন্দরী রক্ষীতা আর মদের বোতল আজ রাতে তাকে টানছেনা। তার মাথায় শুধু ঘোরপাক খাচ্ছে একটা ভয় - একটা পরিকল্পনা-মহা পরিকল্পনা। এক ডিলে দুই পাখি ! শুধু ভোরের প্রতিক্ষা। রাত পোহাবার কত দেরী??


ভোর হতে না হতেই প্রবল সামাজিক জোয়ার তেড়ে আসে কাছরাপট্টির জমিনে। ভেসে যায় বেশ্যামাগি-দের খুপড়ি ঘরগুলো । জোয়ারের পানিতে ভেসে উঠে কতগুলো মৌসুমি টুপি। একটা ব্যানার ভেসে উঠে "অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি'' মেয়র সাহেব, মসজিদের ইমাম সাহেব, মন্দিরের ঠাকুর মশায়, গির্জার ফাদার সবাই আছেন জোয়ারের সন্মুখ ভাগে। আহা বেশ!বেশ!! এই না হলে জনপ্রতিনিধি!! এই না হলে সভ্য সমাজ !! ।
তারপর অপার্থিব পবিত্রতায় খাঁ খাঁ করে জেগে উঠে কাছরাপট্টির জমিন।যেন পদ্মার বুকে জেগে উঠা সোনালী চর।

আহা পবিত্র নগরী। জগলু মন্ডলের আলো জ্বলমলে রেষ্ট হাউজ। মুর্খ লোকেরা বলে কাছরাপট্টি হোটেল।তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। কারও বিবমিষা হয়না। মাওলান সাহেব- ঠাকুর মশাই আর কথা বলেন না। রাত গভীর হলে হাই হিলে হিপ দুলিয়ে সুন্দরী ললনরা আসে। টুপি- ধুতি লুকিয়ে সেদিনের অনেক সমাজ বিপ্লবীও আসে। সাংবাদিক- উকিল মোক্তার সবাই আসে। তারপর হুইস্কির চনমনে গন্ধে আদিম উল্লাসে জেগে থাকে পবিত্র নগরীর প্রতিটি নেশাতুর রাত।

কেবল অলিতে গলিতে তখনো গুমোট অন্ধকারে গুমরে কাঁদে কতগুলো ভাসমান পেটের অসামাজিক ক্ষুধা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৭
২৬টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×