somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝর্ণা হয়ে নামুক মস্তিস্কের পাললিক নিউরণ।

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খবরের কাগজ কেনা হয়না অনেকদিন। বাসে কিংবা ফুটপাথে শিশু-নারী-যুবক-মাঝবয়সী-বৃদ্ধ হকার বিক্রয় বাসনা নিয়ে আসে পাশে ঘুর ঘুর করলেও স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে তাদের কে নিরাশ করি। পকেটের টাকা দিয়ে এসব খুন-খারাবির খবর কিনে পড়ার কোন মানে আমার কাছে নেই।
কিন্তু আজ আমার একটা পত্রিকা খুব দরকার। বহুদিন পরে হৃদয়ের খুব গভীরে লুকিয়ে থাকা নিউজপ্রিন্টের চেনা গন্ধ আমাকে উতলা করে দিচ্ছে। সাইন্স ল্যাব থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত হাঁটলাম। চর্ম চক্ষু এদিক -ওদিক সমানে চালনা করেও কোথাও একটা পত্রিকার দোকান পেলাম না। ব্যাপার কি? পত্রিকাওয়ালারা আবার হরতাল করে বসেনিতো?
আমার একটা সিরিয়াস সমস্যা আছে। যখনই কোন জিনিস মন থেকে চাই বা দরকার হয় তখন সেটা কোন এক অজ্ঞাত কারণে গায়েব হয়ে যায়। অথচ অন্য সময় সেটা আমার চোখের সামনে হাজার বার পড়বে। জুতা রং করা খুব দারকার পড়ছে ব্যাস অমনি মুচির বংশ গায়েব। একবার তো কাকলী থেকে বনানী দুই চক্কর মেরেও মুচি বেটার দেখা পাইনি। অথচ অন্য সময় মামা মামা করে আমাকে চরম কুঞ্জুস প্রমাণ করতে আধা জল খেয়ে নামে এরা।
যাই হোক অবশেষে নিউ মার্কেটেটের ঠিক আগে পেয়ে গেলাম চার পায়ার উপর সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা পত্রিকার দোকান। বুড়ো করে একটা লোক বসে আছে। আমাদের বাজারের সিরাজ হকারের কথা মনে পড়ল। সিরাজ মিয়া আমাকে চিনতো। আমি কি পত্রিকা পড়ি সেটাও জানতো। তিনি আমার জন্য পত্রিকা লুকিয়ে রাখতেন। আমাদের গ্রামে তখন এই পত্রিকাটির স্টক চট জলদি শেষ হয়ে যেত।

-চাচা একটা ভোরের কাগজ দেন !

চাচা মিয়া ভোরের কাগজ বের করে দিলেন। উনার হাতে দশ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে ভিতরের পাতা থেকে পড়া শুরু করলাম। অন্তরবাদ্যি, অনুগল্প, কবিতা আর আড্ডার সচিত্র খবর। আহ ! পাঠক ফোরাম। কতদিন পর সে পুরণো গন্ধে বিমোহিত হলাম। এতক্ষন দীর্ঘ পথ হেঁটে আসার ক্লান্তি যেন আনন্দের পায়রা হয়ে ডানা মেলে দিল দুরের নিলয়।
বন্ধু সরফরাজের হাত ধরে পাঠক ফোরামের জগতে পা রেখেছিলাম। তারপর প্রাণের আয়োজনে ডুবে ছিলাম হলুদ কাকাতুয়ার গল্পে। নিজে তেমন কিছুই লিখতাম না। ছিলাম মুগ্ধ পাঠক। সরফরাজ, বোরহান, সালাম ফারুক, ভোলানাথ পোদ্দার,অরুনাভ শিমুল,রশিদা আফরোজ, মরিযাদ হারুণ, মর্জিনা মতিন কবিতা, আরিফ জেবতিক, আতিক দর্জি, ইন্দ্রনীল তাঁতী কত শত শব্দ কারিগরের নাম। দিনের পর দিন এদের বুনে রাখা আসবাবে ঘুনপোকা হয়ে বিচরণ করেছি আর খেয়েছি শব্দের শাস। হঠাৎ সময় দুষ্ট বালক হয়ে ঢিল ছুঁড়ে আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছিল বিশাল বটবৃক্ষের হৃদয় থেকে। আমরাও অনিবার্য শুন্যতায় ডুবে ছিলাম কিছুটা বেলা।

কিন্তু বটবৃক্ষ বলে কথা। পাখিরা আবার ফিরে এসেছে। হাতে হাতে রেখে পণ করেছে আবার গাইবে গান, ভাসিয়ে দিবে শব্দ ডিঙা উত্তংগ জোয়ারে। আবার জমবে মেলা....। বিদগ্ধ মাঝি রিপন ইমরান হাল ধরেছে শক্ত করে। এবার ছলাৎ ছলাৎ করে ছুটে যাবে মন পবনের আদম্য নৌকা।

তাইতো আজ থেকে আবারো কেনা শুরু করলাম ভোরের কাগজ। পড়তে শুরু করলাম পাঠক ফোরাম। ফিরে যদি আসে আমাদের সোনালী দিনগুলো, মস্তিস্কের পাললিক নিউরন যদি কলমে ঝর্ণা হয়ে নেমে ভিজিয়ে দিয়ে যায় যাপিত জীবনের শুকিয়ে যাওয়া সময়গুলো তবে মন্দ কি বলো?
পড়তে পড়তে উল্টো দিকে চলে এলাম অনেক দুর। হকার চাচার কাছে আমার যে পাঁচ টাকা পাওনা আছে সে কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। মনে পড়তেই ঠোঁটের কোনে এক চিলতে মিষ্টি হাসি এসে মিশে গেল হেমন্তের নরম রোদে।



মেলা মেলা দিন পর হৃদয়ের বন্ধ দুয়ারে এলেমেলো আলোর প্রক্ষেপণ। লিখলাম প্রিন্ট মিডিয়ায়। আজকের ভোরের কাগজে আমার হিজিবিজি লিখা। নষ্টালজিক। চোখ বন্ধ করে ফিরে যাওয়া চৌদ্দ পনের বছর আগে......।
ভাবছি নিয়মিত লিখবো। দেখা যাক কি হয় ....


সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:২২
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×