ইসলামী শরীয়ত,আইন ও ধর্মীয় আচার আচরণের উতস হিসেবে আল-কুরআনের পর মহানবী (সা.) এর হাদিসের মর্যাদা । যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও মতানৈক্য দূর করার ক্ষেত্রে অন্য কারো বক্তব্যের চেয়ে মহানবী (সা.) বক্তব্য বা পথ-ই যথার্থ ও সঠিক । যারা মাযহাবকে অন্ধ অনুসরণ করে এবং মাযহাবের বক্তব্যকে আসমানী অহীর মতো মনে করে, তাদের জন্য এ আলোচনা । সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ী এবং পরবর্তী নেক লোকেরাও যে কোন মতামতের ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) এর মতকে সবার উপরে স্হান দিয়েছেন । তারা সবাই সুন্নত আঁকড়ে ধরার বিষয়ে একমত এবং সুন্নত বিরোধী বক্তব্য পরিহার করতে বলে গেছেন ।
মহান রাব্বুল আলামিন বলেন,
"তোমরা তোমাদের প্রভূর কাছ থেকে অবতীর্ণ কিতাবের অনুসরণ করো । আল্লাহ ছাড়া আর কোন অলীর অনুসরণ করোনা । তবে তোমরা খুব কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো । (সূরা আল-আরাফ: ৩)
কেউ যদি ইমামদের কথার দোহাই দিয়ে হাদীসের বিরোধীতা করে, সে কিছুতেই সঠিক পথে নেই । বরং এই গোড়ামীর কারণে সে ইমামদের অবাধই হয় এবং তাদের বিরোধিতা করে । আল্লাহ তা'আলা বলেন:
"তোমার প্রভূর কসম । তারা সেই পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবেনা, যতোক্ষণ না তোমাকে (মুহাম্মদ সা.) তাদের বিবাদের বিচারক না বানায়, তোমার ফয়সালার ব্যাপারে অকুন্ঠ হয় এবং প্রশান্ত চিত্তে তোমার রায় মেনে নেয় । (সূরা নিসা: ৬৫)
এবার আসুন দেখি চার ইমাম হাদীস অনুসরণের বিষয়ে কি বলে গেছেন ।
১. ইমাম আবু হানিফা (র.):
উনার সাথিরা উনার বিভিন্ন বাণী ও বক্তব্য বর্ণনা করেছেন । তবে সেগুলোর মূল সুর একটাই । সেটা হলো : হাদীস আকড়ে ধরা ওয়াজিব এবং ইমামদের যেসব মত হাদীসের খেলাফ সেগুলোর অনুসরণ পরিত্যাগ । যেমন ইমাম হানিফা (র.) বলে গেছেন:
"হাদীস সহীহ হলে সেটাই আমার মাযহাব ।"
"আমার কোন কথা যদি কুরআন ও রসূল এর বাণীর বিপরীহ হয়,তবে আমার মত প্রত্যাখান করো ।
ইবনে আবেদীন ইবনে হুমামের "শারহুল হিদায়া" গ্রন্হ থেকে উল্লেখ করেছেন:
" মাযহাবের বিপক্ষে বিশুদ্ধ হাদীস পাওয়া গেলে তার উপরই আমাল করতে হবে । কারণ সেটাই আবু হানিফার মাযহাব । এর ফলে সে হানাফি মাযহাবের অনুসারী হওয়া থেকে বাদ পড়বেনা ।"
২. মালিক বিন আনাস র.
ইমাম মালিক বিন আনাস র. বলেছেন:
" আমি মানুষ, ভুল-শুদ্ধ দুটোই করি । আমার রায় দেখো । যা কিছু কুরআন ও সুন্নাহ মুতাবিক পাও তা গ্রহণ করো আর যা বিপরীত পাও তা পরিত্যাগ করো ।
"রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পর এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার কথা ও কাজ সমালোচনার উর্ধ্বে । কেবল রাসূলুল্লাহ (সা.)-ই সমালোচনার উর্ধ্বে ।"
৩. ইমাম শাফেয়ী (র.)
এ বিষয়ে ইমাম শাফেয়ী র. থেকে অনেকগুলো উত্তম কথা বর্ণিত হয়েছে এবং তার অনুসারীরা তা সর্বাধিক সুন্দরভাবে আমল করেছেন । তিনি বলেছেন,
" তোমাদের থেকে যেনো রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাহ ছুটে না যায় । আমি যা কিছুই বলে থাকি না কেন তা যদি রাসূল্লাহ (সা.) এর হাদিসের পরিপন্হি হয়, তাহলে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কথাই আমার কথা ।
"সহীহ হাদীস পাওয়া গেলে সেটাই আমার মাযহাব ।"
"আমি যা বলেছি তার বিপরীত যদি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কোন হাদীস কারো নিকট বর্তমান থাকে , তাহলে আমি জীবিত ও মৃত উভয় অবস্হাতেই ঐ হাদীসের নিকট ফিরে আসবো । "
৪. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল র.
ইমামদের মধ্যে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ছিলেন সর্বাধিক হাদীস সংগ্রহকারী ও আমলকারী । তিনি আনুসঙ্গিক মাসআলা ও রায়ের উপর ভিত্তি করে গ্রন্হ রচনা করা অপছন্দ করতেন । তিনি বলেছেন :
'তুমি আমার কিংবা ইমাম মালিক , শাফেয়ী ও আওযায়ী বা সুফিয়ান সওরীর তাকলীদ (অন্ধ আনুগত্য ) করবেনা । বরং তারা যে উতস থেকে নির্দেশিকা গ্রহণ করেছেন তুমিও সেই উতস থেকেই গ্রহণ করো । '
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে: 'তুমি তোমার দ্বীনের বিষয়ে তাদের কারো অন্ধ আনুগত্য করোনা । রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম থেকে যা বর্ণিত হয়েছে তাই গ্রহণ করো । তারপর তাবেয়ীদের কাছ থেকে গ্রহণ করো । তবে তাবেয়ীদের থেকে গ্রহণ করার ব্যাপারে ব্যক্তির স্বাধীনতা রয়েছে ।'
"যে ব্যাক্তি রাসূলূল্লাহ (সা.) এর হাদীস কে পরিত্যাগ করে , সে ধ্বংসের মূখে দাড়িয়ে আছে ।
এই হলো হাদীস অনুসরণের নির্দেশ এবং নিজেদের অন্ধ আনুগত্য থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে ইমাম গণের বক্তব্য । তাদের বক্তব্যগুলো এতোই স্পষ্ট ও পরিস্কার যে, এর জন্য কোন ব্যাখ্যা -বিশ্লেষণের দরকার হয় না কিংবা এতে কোন বিতর্কেরও অবকাশ নেই । তাদের কথার ভিত্তিতে বলা যায় যে, হাদীস অনুসরণের কারণে হাদীস ইমামের মাযহাবের বিপরীত হলেও কেউ মাযহাব থেকে বিচ্যুত হয় না । বরং সে নিজ ইমামের মাযহাবেরই অনুসারী থাকে ।
মহানবী (সা.) এর মর্যাদা অন্য যে কোন ব্যাক্তির মর্যাদার চাইতে উপরে । যে কেউ ভূল করতে পারে । কিন্ত মহানবী (সা. ) সকল ভূলের উর্ধ্বে । কারণ উনার কাছে ওহী নাযিল হতো । এ কারণেই সাহাবায়ে কিরামসহ পরবর্তী উত্তরসূরীরা সহীহ হাদীসের বিরোধী কোন কিছূ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান ।
সূত্র: রসূলুল্লাহ (সা.) এর নামায । মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী। অনুবাদ : আব্দুস শহীদ নাসিম । সরণী প্রকাশনী ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:০৫