somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সেলিনা জাহান প্রিয়া
আমি সেলিনা জাহান প্রিয়া , জন্ম পুরান ঢাকা, নাজিরা বাজার , নানা বাড়িতে ।বাবার বাড়ি মুন্সী গঞ্জ , বড় হয়েছি ঢাকা ।স্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ ।ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে , কবিতা , গল্প , উপন্যাস পড়তে অজানাকে জানতে । ধর্ম বিশ্বাস করি কিন্তু ধর্ম অন্ধ না ।

গল্প @ একটি বই ও প্রেমের চিঠি ।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হিমেল একটা বেসরকারি বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়ে । ময়মনসিংহ শহরে ভাটি কাঁসার এলাকায় তার বাড়ি । বাবার একমাত্র পুত্র । খুব আদরের । ছাত্র হিসাবে খুব ভাল ।
কিন্তু তার মাতৃ ভাষা সে সহজে বদলাতে পারে নাই । বিশেষ করে সে কথা বললে বুঝা যায় তার বাড়ি ময়মনসিংহে । বন্ধুরা তাঁকে খুব পছন্দ করে তার সরলতার জন্য । মাঝে মাঝে সম বয়সী বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে আসে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে । বাংলায় পড়ে রেনু । খুবেই চমৎকার একা মেয়ে বাড়ি জামাল পুর ।
বিশ্ব বিদ্যাল্যের হলে থাকে । হিমেলর সাথে অন্য সবার মত স্বাভাবিক পরিচয় ।
রেনু একদিন হিমেল কে ফোন করে । হিমেল কিছুটা অবাক হয় । কারন রেনু তাঁকে
ফোন করার কথা না। হিমেল হ্যালো বলতেই রেনু বলে তুমি হিমেল । আমি রেনু বলছি । আজ আমাদের একটা কবিতার আসর হবে । তুমি চলে আসবে । আর মনে করে পাঙ্গাবি পড়ে আসবে । হিমেল কিছুটা খুশি হয় । কিন্তু মাঞ্জাবি কোথায় পাবে । কারন সে তা পড়ে না। যাই হউক রেনুর মত মেয়ে বলেছে । রেনুর চোখের ভাষা একদম অন্য রকম । সেই পুরাতন যুগের মেয়েদের মত তার চোখে র একটা আর্ট আছে । হিমেল কি রঙের পাঞ্জাবী কিনবে তাই নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছে । তবে হিমেল কিন্তু রেনুর প্রেমে পড়ে নাই । সে বন্ধুদের প্রেম দেখে হতাস । বন্ধুরা প্রেম করে
সকালে বিকালে ভাগ করে । আর মেয়েরা প্রেম করে প্রাইভেট টিচারের মত ঘণ্টা দেখে । আসলেই যুগ মানুষকে কতটা বেহায়া বানায় আজ কালের তরুণ তরুণীদের দেখলে
বুঝা যায় । হিমেল এবার ফোন করে রেনু কে বলল- রেনু কোন পছন্দ আছে মানে কি
রং এর কিবন । রেনু হাসতে হাসতে বলে হিমেল একটু বদলাও । তুমি যে কি না। একটা পাঞ্জাবী কিনার জন্য আমাকে ফোন করেছ রং বলে দিতে তা কিন্তু ঠিক আছে আবার কিন্তু কোন দিন বল না যে গার্ল ফ্রেন্ড পছন্দ করে দিতে । শুন হিমেল একটা
ফিরোজা কালার কিনবে আর আসার সময় সাহাবাগ থেকে ১১ টা গোলাপ কিনবে । টাকা লাগলে বল আমি বিকাশ করব ।
হিমেল মনে মনে বলে মেয়েটা একটু মাথা নষ্ট আছে । আচ্ছা যাই হউক । দেখি ওদের কবিতা উৎসব ।
কবিরা সব তাদের কবিতা পড়ছে । রেনু দেখছে হিমেলের কোন খবর নাই । ফোন করছে রিং হচ্ছে কিন্তু হিমেল রিসিভ করছে না। রেনু মনে মনে বলে সব শয়তানের মধ্য একটা ফেরেশতা ছিল । গ্রিন রোড থেকে নাকি এত সময় লাগে । সবাই গোল করে ঘাসের মধ্যে বসে আছে । মিথিলা তুই আমার দুঃখ হবি কবিতা
খুব সুন্দর করে আবৃতি করছে । হিমেল এসেই হাতে তালি দিল । রেনু বাসার জায়গা করে দিল । হিমেল তাদের সাথে অল্প সময়ে ই খুব ভাব হয়ে যায় । বিশেষ করে মিথিলা । শমসের । নাগরি । আর পথিক সুজনের সাথে । শুদ্ধ করে কথা শেখার কাজ নেয় মিথিলা । অল্প দিনেই একটু একটু কবি আর শুদ্ধ করে কথা বলা শিখছে হিমেল । চলা বলা আর পোশাকেও আসছে একটা পরিবর্তন । পথিক সুজন তো রীতিমত অবাক হিমেল এত সুন্দর করে কথা বলছে যে তাঁকে আর বুঝা যায় না যে সে মিঃ ময়মনসিংহের ।
এখন মিথিলা সাথে তার খুব ভাব । আজিজ মার্কেট আর ধানমণ্ডি তাদের প্রায় দেখা যায় । রেনু একদিন জানতে চায় হিমেলের কাছে মিথিলার সাথে তার ভাবের কারন কি ?
--- হিমেল বলে সে তোমার মত বন্ধু
--- আর কিছু না ?
--- হা আর কিছু । জানতে চাও ।
--- হা ।
--- আমার সকাল দুপুর বিকেল হিমেল হাওয়া । না বলা কথা । ঐ নীল আকাশ
--- রেনু হিমেলের চোখে দিকে চেয়ে কিছু না বলে হলে চলে যায় ।
হিমেল ওর চলে যাওয়া দেখে । হিমেল কাউকে ভালবাসতে চায় না। কিন্তু রেনুকে সে খুব পছন্দ করে । রেনু এভাবে তাঁকে বলবে চিন্তা করে নাই । রেনু অন্য দশটা মেয়ের মত না। কিন্তু কেন আজ এমন প্রস্ন করলো ।
মিথিলা কে কিছুই বলে না। মিথিলা লালমাটিয়া মহিলা কলেজে পড়ে । বিকেলে রাপা প্লাজার সামনে দাড়িয়ে রিক্সার অপেক্ষা করছে । রেনু কে দেখে ডাক দেয় । রেনু একটা মিষ্টি হাসি দেয় ।
-- কেমন আছিস মিথিলা
-- ভাল রে রেনু । আজ কাল আসিস না কেন । তুই অ নাই আর হিমেল অ নাই ।
একটা খবর জানিস কি
-- কি খবর মিথিলা ।
--- আজকাল হিমেল আমার ফোন ধরে না ।
---- রেনু বলে কেন ফোন ধরবে না। মনে হয় কোন কাজে ব্যস্থ ।
--- হিমেল এর বি বি এ মনে শেষ রেনু ।
--- আমি জানি না ।
--- কি বলিস রেনু । জানিস তকে খুব মিস করে । চল উপরে যাই । কফি খাওয়া যাবে
--- মিথিলা আমি চা খাব । একটু সামনে রিজভি তে চা খেতে খুব মজা ।
-- চল যাওয়া যাক । তা আজ কাল শাড়ি পড়িস ।
-- আর বলিস না আমার কাজিন গিফট করল । ইটালি থাকে । আমাকে খুব
পছন্দ করে ।
-- ভাল রেনু । আমার এক কাজিন অ্যামেরিকায় থাকে । বেটা অনেক বড় বড় কথা
বলে । এস এস সি পাস । এমন ভাব ধরে মনে হবে । সব জান্তা শমসের ।
-- কি মিথলা চা কেমন ।
-- চমৎকার । শুনলাম পথিক নাকি বই বের করছে ।
-- হা । বইটির মাঝে নাকি আমাদের সুখ দুঃখ লুকিয়ে ।
--মিথিলা আমি এখন আসি ।
-- আচ্ছা যা । কিন্তু হিমেলের সাথে দিখা হলে বলিস । মিথিলার দাম কিন্তু কম না।আষাঢ় মাস অনেক বৃষ্টি । মিথিলা বারান্দায় দাড়িয়ে গান শুনছে । অনেক দিন যাবত একটা চাপা দুঃখ তার মধ্য । মায়া লাগে হিমেলের জন্য । কেন হিমেল তাঁকে
বুঝতে চাইল না। ভালবাসি কথাটা হিমেল কে বলতে ও পারলাম না।
রেনু ভুল বুঝল খুব গোপনে । তাই সে মিথিলার সাথে আর যোগাযোগ করে না।
পথিক সুজন সবার সাথে কম বেশি কথা বলে । কিন্তু সব চেয়ে অবাক হয় কেন জানি
হিমেলর সাথে কোন যোগাযোগ নেই ।
হিমেল ভালই আছে । এখন সে খুব বেশ আছে । সবার সাথেই মিশে । কিন্তু মিথিলা আর রেনুর বন্ধু মহলে না। উত্তরা একটা ভার্সিটিতে এম বি এ করছে ।
চাকুরি করার কোন ইচ্ছা নেই । ব্যবসা করবে । মাঝে মাঝে সময় পেলে ময়মনসিংহ
শহরে চলে আসে । উত্তরা থেকে মাত্র দু ঘণ্টা লাগে ।
খুব সুন্দর তার কথা বলার ধরন । কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের নদীর পারে বসে একা একা
একটি কবিতা আবৃতি করছে । হ্মপুত্র নদী আর দুরের ভাসমান চর । নদী পারাপার বসে দেখছে । খুব দূর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর ব্রিজ দিয়ে ট্রেন যাচ্ছে । হিমেল তার ফোন নাম্বারটা পরিবর্তন করেছে । কিন্তু নাম্বার গুলো সবার সেভ করা আছে । ফোনটা বাজতে লাগলো । পথিক সুজন ফোন করেছে ।
হ্যালো হিমেল তোমার জন্য একটা বই পাঠালাম । পড়ে দেখ । তোমার নাম্বার পেলাম
রেনুর কাছ থেকে । সে অনেক কষ্ট করে উত্তরা থেকে তোমার নাম্বার যোগার করেছে । ভাল মন্দ কথা শেষ করে বলল - তোমার মোবাইল নাম্বার দেয়া আছে সুন্দর বন কুরিয়ারে । মনে করে নিয়ে নিও ।
তিন দিন পরে বই টা কুরিয়ার থেকে নেয় । বই টা বাসায় এনে রেখে দেয় সেলফে ।
বাবার ব্যবসা আর একটা মাছের খামার নিয়ে সময় ভালই কাটে হিমেলের । মাঝে মাঝে হিমেলের বাবা আর হিমেল মিলে রাজনীতি নিয়ে বেশ জমে । হিমেলের বাবার
সাথে একটা বিষয় নিয়ে হিমেলের খুব বিরোধ চলছে । বাবার খুব ইচ্ছা হিমেল তার বোনের মেয়ে কে বিয়ে করুক । মেয়েটা ডাক্তারি পড়ছে । অনেক বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে । নাম সেফা । সেফা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল এ পড়ে । সেফালি কে ছোট করে
সেফা ডাকে । হিমেল তার ফুফু কে একদম সহ্য করে না। কারন তার ফুফুর জন্য তার মা তাঁকে ছোট বেলায় রেখে চলে যায় । হিমেল জানে না তার মা কোথায় আছে ।
আসলেই মন থেকে সে তার মায়ের কাছে যেতে চায় না। কারন তার মা তাঁকে নিয়ে যায় নাই । বড় হবার পড় জেনেছে মায়ের বিয়ে হয়েছে । কিন্তুবিদেশ থাকে । আরব দেশে স্বামীর সাথে । একদিন গিয়েছিল মামা রা কেউ আর গ্রামে থাকে না। গ্রামের মানুষ জানে না। কে কোথায় । হিমেলের বাবা আর ফুফু জানে কিন্তু বাবার কাছে
কোন দিন মায়ের ঠিকানা চাইতে পারে নাই । ফুফু তাঁকে ঠিকানা দেয় না। ফুফুর কাছে জানতে পেরেছে মায়ের বিয়ে হয়ে গেছে । হিমেল তার মায়ের কথা বেশি মনে নেই । মায়ের কোন ছবি ও তার কাছে নেই ।
শরতের আকাশ । ব্রহ্মপুত্র নদীর পলি মাটিতে কাশ ফুলে ছেয়ে গেছে । হিমেলের বাবা
বই পড়তে খুব পছন্দ করে । বই কেনা বই পড়া তার খুব ভাল লাগে । সেফা বাসায়
এসেছে । সাথে সেফার মা । দুই ভাই বোন আলাপে ব্যস্ত ।
হিমেল বসে টি ভি দেখছে । তাদের সাথে কবিতা আসরের একটি মেয়ে অভিনয় করছে । বাস্তবে মেয়েটা তেমন সুন্দর না হলেও অভিনয় দারুন । কবিতা আর কথা বলার ধরন ছিল অন্য রকম । সেফা ঘরে এসে বলল-
--- বা তুমি নাটক দেখ ।
--- এ দেখি না শুনিও ।
-- যাই হউক তুমি হলে একটা নিরামিষ মানুষ । তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না।
-- হবে জানিস । তবে তোর মাকে বলতে পারিস না ।
-- মা কে বলে কি হবে । তোমার বাবার যে ই টাকা ।
--- তোমার মা সেফা এত টাকা টাকা করে । জিবনে টাকায় কি সব।
--- জানি না । আমাদের একটা ফয়সালায় আসা দরকার ।
--- আমি সেফা তোমাকে পছন্দ করি না। তোমার মা । আমার ফুফুর মেয়ে তুমি
এর বাহিরে কিছুই না । এই যে নাটক দেখছ । এই মেয়েটা একটা কথা বলেছিল
আপন থেকে পড় ভাল । তোমার মা জানে আমার মা কোথায় । তোমার মাকে
বললে বলে আরব দেশে থাকে । তোমার মা একটা মিথ্যা বাদী ।
--- আমি কি তোমার এই উপকার করতে পারি ।
--- আগে কর ।
--- অনেক দিন আগে একটা মহিলা আমাদের বাসায় এসেছিল । অনেক সুন্দর ।
আম্মুকে একটা ফোন নাম্বার দিয়েছিল । বাসায় খুজে দেখি পাই কিনা । ঐ মহিলা
আমার হিমেল আমার হিমেল বলছিল ।
--- তাই !
-- হ্যা যদি পাই তাহলে দিব ।
হিমেল কে ডেকে তার বাবা বলল - আমার সিদান্ত আমি বদলাব না। হিমেল কিছু না বলে চলে আসে তার এক বন্ধুর বাসায় । দুলাল হিমেল কে বলে । জিবনে একটা প্রেম করলি না। ঢাকা ছেরে চলে আসলি । আবার তুই তোর বাবা কে না করতে পারছিস না। জিবনে কি কিছুই মুখ খুলে বলতে পারবি না।
হিমেল একটু হেসে বলে তোর মত হলে পারতাম । বাবা তো আমাকে সব কিছু চাইবার আগেই দিয়ে দিত । আর কেন জানি বাবা আমাকে খুব বিশ্বাস করে।
আর তুই বলছিস মুখ খুলে বলার জন্য । আমার তো রাগ দেখাবার কেউ নাই ।
দুলাল যার মা নেই তার কিছুই নেই । মা থাকলে আজ বলতে পারতাম । বাবা কে কি করে বলি ।
--- হিমেল তুই কি কাউকে পছন্দ করিস ।
--- শুন যাকে পছন্দ করতাম । সে কিছু না শুনেই অন্য একজন জরিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করে । তাই আর তাঁকে ভাল লাগার কথা বলি নাই ।।
--- কাজটা কি ভাল করেছিস । মানুষ মাত্র ভুল হতে পারে । তোমার উচিৎ ছিল
বিষয় টা পরিষ্কার করা । একমাত্র মেয়েরা ছেলেদের চাইতে আগে ম্যাচিউরিটি আসে
মেয়েদের । আর তুই তো মেয়েদের কাজ থেকে ১৪ মাইল দূর । এক সময়
আমরা তকে হাফ লেডিস বলতাম । টা মেয়েটা কোথাকার ।
--- জামাল পুর ।
--- তাহলে তো কাছে ই । চল কাল যাই ।
--- আমি চিনি না । সুধু জানি মেলান্দ ।। আর কিছু না।
--- মোবাইল নাম্বার ।
--- আছে কিন্তু বন্ধ ।
--- কি করে জানিস বন্ধ ।
--- একটা সিম থেকে আগে মাঝ রাতে ফোন দিতাম । ও হ্যালো হ্যালো বলে । একসময়
বলত । তুমি কি হিমেল । আমি কোন কথা না বলে ফোন বন্ধ করে রাখতাম ।
একদিন দেখি ফোন বাজে না। পড়ে অনেক নাম্বার থেকে ফোন দেই । কিন্তু
বন্ধ ।
--- আর কোন উপায় ।
--- থাক । আর কোন উপায় নাই । আর আমি বাবার মনে কষ্ট দিতে চাই না। কারণ বাবা আমার দিকে তাকিয়ে আর কখনও বিয়ে করে নাই। দুলাল বল্ল-আসলেই তুই অনেক মহৎ বাবার দিকে চেয়ে ভাল লাগার ভাল মানুষটা কে আর খুজলি না। তবে কেন জানি মনে হয় হিমেল তুই এক সময় খুব সুখী হবি। হিমেলের ফোনটা বাজছে তাকিয়ে দেখে সেফার ফোন তাই হিমেল ফোনটা কেটে দেয়। সেফার মোবাইল থেকে হিমেলের মোবাইলে একটা ম্যসেজ আসে । হিমেল ম্যাসেজ টা পরে দেখে একটা নাম্বার আর কিছু লেখা নেই। হিমেল সেফা কে ফোন সে আর রিসিভ করে না। সেফার পাঠানো নাম্বারে হিমেল ফোন করতেই একজন ভদ্র মহিলা রিসিভ করে বলে -
-- হ্যালো কে বলছেন কাকে চান।
--- কণ্ঠ শুনে হিমেলের শরীরের লোম কুপ গুলো কাটা দিয়ে উঠে ।
-- ঐ প্রান্ত থেকে আবার হ্যালো ।
-- হিমেল বলে হ্যালো । এই নাম্বার কি রত্না নামে কেউ আছে ।
-- হ্যা বলছি । কে আপনি ।
--- হিমেলের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । এই প্রথম সে তার মায়ের কণ্ঠ শুনছে । কান্না ভরা কণ্ঠে বলল- আমি হিমেল ময়মনসিংহ থেকে । হিমেল নামে কাউকে চিনেন ।
-- ফোন টা যেন নিরব হয়ে যায় । বলে তুমি কে ।
--- আমি হিমেল ।
--- আমার ছেলে হিমেল । সত্যি তুমি বাবা হিমেল । আমি তোমার মা রত্না । ফোনে
মা আর ছেলে মিলে নিরবে কাদতে থাকে । হিমেল জেনে যায় । তার ফুফু তাঁকে মিথ্যা
বলেছে । রাতেই মায়ের সাথে দেখা করার জন্য হিমেল বাসে উঠে ঢাকার । তার মা তার মামাদের সাথে সাভার রাজাসন থাকে ।
হিমেল রাতে বাসায় না আসায় হিমেলের বাবা খুব চিন্তায় পড়ে যায় । হিমেল তো কোন দিন না বলে কোথাও যায়না । খুব চিন্তায় পড়ে যায় ।
হিমেল আজ সত্যি তার মাকে খুজে খুব খুশি । হিমেলের মা এই সাভারে একটা স্কুলে চাকুরি করে । হিমেল জানতে পারে সব কিছুর মুলে তার ফুফু । হিমেল ফোন বন্ধ করে
রাখে । হিমেলের বাবা সব জায়গায় ছেলে কে খুজে । গত ৭ দিন কোথাও তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। হিমেল মাঝে মাঝে রাতের বেলায় কিছু লিখত । ঠিক ডাইরি বলা চলে না। তাই তার বাবা বুক সেলফে সেই ডাইরি খুজতে লাগলো । এক সময় চোখ
গেল একটা বুক সেলফে একটা প্যাকেট । প্যাকেট খুলে দেখে বই । বই উলটাতে একটা
চিঠি পড়ে । খুব পাতলা কাগজে লিখা তবে অনেক কয়টা পাতা ।
চিঠিতে লিখা - প্রিয় হিমেল । অভিমানি ছেলে । আমার ভুলের জন্য ক্ষমা কর । আসলে পথিক সুজনের নামে আমিই বইটা পাঠালাম । মিথিলা সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নাই যখন জানলাম তখন তুমি আমার কাছ থেকে দূরে । অনেক কষ্ট করে
তোমার নাম্বার পেলাম । আমি তোমার উতরের অপেক্ষা করছি । একবার তো বলতে
পারতে যে তুমি আমাকে পছন্দ কর । ভাল বাস । আর তুমি এত কম কথা বলতে
যা আমার খুব ভাল লাগত । আমাকে ফোন কর । এটা আমার নাম্বার । হিমেল আমি জানিনা কেন তুমি এত চুপ চাপ । আসলে আমার জিবনে দেখা সব চেয় আমার ভাল লাগা ছেলে তুমি । দেখ তুমি তোমার ব্যাপারে কিছুই বল নেই । আমি তাই তোমার জন্য অপেক্ষা করব । জানি না এ অপেক্ষার শেষ কোথায় । তবে কেন জানি মনে হয়
তোমার বুকে একটা পাথর চাপা কষ্ট আছে । তোমার সেই কষ্ট আমি বুঝার আগেই আমি তোমাকে ভুল বুঝলাম ।
---
হিমেল কে কোথাও না পেয়ে হিমেলের বাবা ভেবে নেয় । তাহলে আমার ছেলে তার আমার উপর অভিমান করেছে । হিমেলের বাবা কাচির ঝুলি দুলালের সাথে দেখা করে। কিন্তু দুলাল হিমেল কোথায় আছে বলে না। সেফা তার মাকে বলে দেয় যে সে হিমেলের কথা । শেষ পর্যন্ত হিমেলের বাবা বিষয় টা বুঝতে পারে । মসজিদের ইমাম হিমেলের বাবা কে বলে ছেলে যদি মায়ের কাছে যেয়ে থাকে তবে ভালই করেছে । আপনার এখন বয়স হয়েছে । ছেলের দিকে তাকিয়ে । আগামি জীবন সুন্দর করুন। হিমেল এ যুগের ছেলে তার পরও তার মাঝে মানসিক শক্তি অনেক বেশি । আপনার
মুখের উপর কোন কথা বলে না। একটা ছেলে এম বি এ করা । কি সুন্দর সে তার বাবার আদেশ মেনে চলে ।
হিমেল নিয়ে সাভার বাজারে অন্ধ মার্কেটের সামনে দাড়িয়ে রিক্সার অপেক্ষা করছে ।
রিক্সা না পেয়ে ম্যান সড়কে আসতেই হিমেলের বাবা একটা মাইক্রো থেকে নামে । হিমেলের মাস দূর থেকে স্বামীর পুত্র হারা মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠে । হিমেল কে বলে তোমার
বাবা মনে হয় তোমাকে খুজতে আসছে । যাও ডাক দাও । হিমেল তার বাবা কে ডাক দিতেই হিমেল কে দেখে । কাছে আসতেই অবাক হয়ে তার স্ত্রীর দিকে দেখছে ছেলের হাত ধরে দাড়িয়ে । কেউ কিছু বলছে না। হিমেল বলে
---আব্বু তুমি কি আমাকে খুজতে এখানে এসেছ ।
--- না । তোমাকে না। বাবা পকেট থেকে চিঠিটা বের করে দেয় ।
--- হিমেল চিঠি নিয়ে বলে পড়ে পড়ছি । বল তুমি কাকে নিতে আসছ ।
--- আমি তোমার মা কে নিতে আসছি ।
--- তাহলে আমাকে না।
--- তুমি তো এখন তোমার মায়ের ছেলে । তাই তোমার মাকে নিলে ছেলেটা ফ্রি পাব
--- আম্মু যদি না যায় ।
--- তাহলে চিঠি টা পড় । মেয়েটার সাথে আমার কথা হয়েছে । সে তোমার জন্য
অনেক অপেক্ষা করছে । আগামি সপ্তাহে ওর বিয়ে । আমি তোমার মাকে ছারা
ঐ পরিবার ঐ মেয়ে কে আনতে পারব না। যার বাবার বউ থাকে না । তার
ছেলের কাছে ভাল মানুষের মেয়ে দেয় না। রত্না ছেলের কাছ থেকে নিয়ে চিঠিটা পড়ে । হিমেল আর চিঠি পড়তে পারে না। হিমেল জানে না। কার চিঠি ।
রত্না বলে বাবা হাতে তো সময় নেই । কবে ঐ মেয়ের কাবিন ।
--- হিমেলের বাবা বলে । আগামি কালকে তারা তারিখ ফেলবে । আগামি সপ্তাহে যে কোন দিন বিয়ে । হিমেল বলল- আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তোমার কার বিয়ে
নিয়ে । কথা বলছ । মা তোমার চোখের পানি মুছে ফেল । আব্বু কিন্ত কান্না দেখলে খুব রাগ করে ।
রত্না বলে স্বামীর দিকে চেয়ে বলে । তোমার মত করবে ছেলের জীবন না কি গাড়িতে উঠবে । হিমেল বলে মামাদের না বলে আমারা কার বিয়ে কোথায় যাচ্ছি ।
হিমেলের মা বলে হিমেলের বাবা কে ও ছেলে কিছুই জানে না। হিমেলের বাবা বলে
মায়ের ছেলে তো একদম তোমার মত কিছুই বলবে না। প্রতিবাদ করবে না। নীরবে
সরে যাবে । ঠিক তোমার মত ।
-- আমার ছেলে আমার মত হয়েছে । এটাই আমার সফলতা । এত কাল রেখেও
ছেলে কে তোমার মত বানাতে পাড়লে না। এটা আমি মা হিসাবে আনন্দিত ।
হিমেল বলল আচ্ছা মা আমরা কোথায় যাচ্ছি ।
-- গেলেই বুঝবে । রত্না বলল তাও তো নাম্বার টা । রত্না নাম্বার টা নিয়ে ফোন
করল - হ্যালো
-- আমি হিমেলের মা । তুমি কে ।
--- আমি রেনু ।
--- ও ভাল আছ মা। তোমার মাকে একটু দাও । আমরা রাস্তায় । তোমার মাকে বল
বল । আমরা আসছি । সাথে আমার ছেলে আর ছেলের বাবা । রেনু ফোন টা দেয়
রেনুর মা কে ।
-- আপা সালাম নিবেন । আমি হিমেলের মা । আপনার মেয়ে তো বলেছে ।
--- হ্যা ।আপা । কিন্তু
--- আপা কোন কিন্তু নাই । আমার একমাত্র ছেলে । আপাদের মেয়ের রানির মত
থাকবে । শুধু শ্বশুর একটু রাগী । ভাল চা বানাতে পারলেই হবে । বাকি কথা
এসেই বলছি ।
হিমেল বলে মা, তুমি কি ফুফুর সাথে কথা বললে
--- আমি রত্না তোমার ফুফুর ঐ নাক বুচা মেয়ে কে আমার ছেলের বউ করব না।
ডাক্তার হউক আর যাই হউক । তোমার ফুফু একটা লোভী মেয়ে । তোমার বাবা
হয়ত দেখ ঐ মেয়ের পড়ার সব খরচ দিচ্ছে ।
--- হিমেলের বাবা বলল - দেখ তোমার ছেলে তুমি যা ভাল মনে কর ।
হিমেল বলল তবে যাচ্ছি কোথায় । হিমেলের বাবা বলে এখন রাত না চোখ আছে
রাস্তার সাইন বোর্ড দেখ ।
হিমেল রাস্তার সাইন বোর্ড দেখতে দেখতে জামাল পুর । তার পড় মেলান্দ ।
একজন কে জিজ্ঞাসা করল । বেপারী বাড়ি কোনটা ।
একটা বড় পুকুরে সামনে এসে গাড়ি থামল । বাড়ির লোক জন তাদের কে নিয়ে
বসতে দিল । হিমেল কিছু বুঝে উঠার আগে একটা ঘুমটা দিয়ে মেয়ে তাদের বসার ঘরে মেয়ের ভাবি নিয়ে আসলো । হিমেল সামনে একটা চেয়ারে বসল । হিমেলের মা মাথার ঘুমটা সরালো । বা অপূর্ব আমার ছেলের পছন । হিমেল মায়ের জন্য মুখ দেখতে পারছে না । হিমেলের বাবা বলে রত্না একটা সরে দাড়ও । হিমেল চেয়ে দেখে
তার প্রথম ভাল লাগার সেই রেনু । হিমেলের চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে থাকে । রেনুও কাদতে থাকে । রত্না হিমেল কে বলে কি মেয়ে পছন্দ হয়েছে ।
--- মা কি করে খুজে পেলে ।
--- ছেলের হাতে মা চিঠি টা দেয় ।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:০৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×