somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাগদা তো-ভ রাশিয়া-৪

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে হেসে বলল ‘নাঃ সত্যি কথা বললে কিছু বলব না । ..তোমার বাসায় কফি আছে?’
আচমকা তার এই সহজ স্বাভাবিক ব্যাবহারে আমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম! বেশ উৎফুল্ল হয়ে বললাম ‘হ্যাঁ আছে। তোমাকে বানিয়ে খাওয়াব?(মনে মনে ভাবছিলাম-এই সুযোগে যদি হাতকড়াটা খুলে দেয়।)
কিন্তু সে বেশ আন্তরিকতার সাথে আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলল,‘না দেখিয়ে দাও-আমি নিজেই বানিয়ে নিতে পারব।'
স্বভাবই আমি খানিকটা আশাহত হলাম! অগত্যা আমি তাকে সাথে করে রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে কফির কৌটা দেখিয়ে দিলাম।
ধোঁয়া ওঠা কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে সে আমাকে জিজ্ঞেস করল, সিগারেট আছে কিনা?
আমি আমার ডান ট্রাউজারের পকেট দেখিয়ে বললাম, বের করে নিতে । কি ভেবে যেন সে আমার পকেটে হাত না দিয়ে নিজের কোর্তা হাতরেই অতি নিন্ম মানের রুশ সিগারেট বের করে ঠোটে গুজে আগুন ধরাল!
কফি খাওয়া শেষ হলে আমাকে নিয়ে বসাল আবার সেই ছোট্ট রুমটাতে যেখানে আমার বন্ধু বসে আছে। এ রুমটাতে এখনো তল্লাশি চালায় নি। আমাকে সোফায় বসতে বলে দুজন মিলে তখন শুরু করল রুম তল্লাশি। আমার বন্ধুর সাথে চোখাচোখি হতেই সে ইশারায় জিজ্ঞেস করল ‘ব্যাপারটা কি?’
তার ভাবখানা এমন যে তারা আমাদের ভাষা বুঝে ফেলবে তবে সেও যে ভীষণ ভয় পেয়েছে এব্যাপারে সন্দেহ নেই!
প্রতিউত্তরে আমিও নিঃশব্দে ঘাড় নাচিয়ে জানালাম ‘কিছুই বুঝতে পারছিনা।
আগের মতই তন্ন তন্ন করে রুম তল্লাশি অবশেষে খুঁজে পাওয়া আমাদের টেলিফোন বিল আর বাড়ি ভাড়ার জন্য রাখা ডলার ও রুবলগুলি এনে আমাদের সামনে টেবিলের উপর রাখল।
এবার তথাকথিত পুলিশ অফিসার তার অধস্তনকে অর্ডার করল ওঘর থেকে বাকি টাকা পয়সাগুলো নিয়ে আসতে।
সে দ্রুত দু'পা এগুতেই তাকে থামিয়ে অফিসার নিজেই গেল। নিশ্চিত এবার সে অন্য কোন মতলব আঁটছে।
সন্দেহ অমূলক নয়;একটু পরেই ফিরে এসে আমাদের চমকে দিয়ে বলল
‘আরে ও ঘরের কার্পেটের ভাজে দেখি এক তোড়া ডলার-ওগুলো কি তোমাদের?
আমি প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেলেও পরক্ষণেই সামলে নিয়ে মুচকি হাসলাম। বন্ধু আমার দিকে তাকিয়ে আছে বিস্ফোরিত নেত্রে- সে চোখে বিস্ময় ও আতংক!
মনে মনে হয়তো সে ভাবছে ‘বাহরে পার্টনার মাসে দু'য়েকশ ডলার বেশী খরচ হয়ে গেল হাপিত্যেশ কর আর আমাকে লুকিয়ে কার্পেটের খাঁজে ‘একতোড়া ডলার লুকিয়ে রেখেছ!’
আমি তার থেকে চোখ ঘুড়িয়ে পুলিশ অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘আমার মনে হয় তুমি মিথ্যে কথা বলছ। ঠিক আছে যদি তুমি পেয়েও থাক তবে সেগুলোর উপরে আমাদের কোন দাবি নেই। তুমি নির্দিধায় নিয়ে নিতে পার।’
পুলিশ অফিসার হেসে আমার কাছে এসে বলল‘ভেরী স্মার্ট।’
আমি ততক্ষনে প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে নিয়েছি অনেকটা। মনে মনে ভাবছি তখন কি করে এদের মন গলানো যায়। মনে হচ্ছে এরা সত্যিকারেই পুলিশ-সুযোগ বুঝে ডাকাতি করছে।‘ভীষন আন্তরিকতার সাথে বললাম, গান শুনবে ভারতীয় হিন্দি। ভাল লাগবে ।’
সে নিরস কন্ঠে বলল ‘শোনাও।’
আমি হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় ক্যাসেটের বোতাম চেপে গান বাজালাম । সে মিনিট পাঁচেক ভীষণ ধৈর্য ধরে আমার সঙ্গীতের অত্যাচার সহ্য করল!' ক্যাসেটের ভ্যলিউম কমাতে বলে জিজ্ঞেস করল, তোমাদের কাছে চওড়া আঠালো টেপ আছে ? সঙ্গে সঙ্গে আমার বন্ধু হয়ে ঘাড় নাড়াল ‘হ্যা আছে। তোমার লাগবে ?’
-'কোথায় রেখেছ ?’
আমি বললাম,
‘প্যাসেজের ধারে রাখা ওয়্যার ড্রবের উপরে।’
স্বভাবতই আমাদের তখন বোধগম্যই হচ্ছিল না হঠাৎ করে ওদের স্কচ টেপের দরকার পরল কেন ?
অফিসার নিজেই টেপটা এনে সেপাইকে বলল, এটা দিয়ে আমাদের হাত ভাল করে মুড়ে হ্যান্ডকাপ খুলে নিতে। এবার আমাদের সত্যিকার অর্থেই আতঙ্কিত হবার পালা! এতক্ষন ভেবেছিলাম ওদের উদ্দেশ্য কিছুটা অসৎ হলেও যা নেবার আমাদের কাছ থেকে চেয়ে চিন্তে নিয়ে যাবে। এখন মনে হয় ঘটনা ঘটবে অন্য রকম!
আঠালো টেপ দিয়ে হাত বাধার পরে আচমকা দুজনে চেপে ধরে আমাদের মুখ বেধে ফেলল। প্রতিরোধের সুযোগ, ইচ্ছে বা ক্ষমতা কোনটাই আমাদের ছিলনা-ভাগ্যের হাতে নিজেকে ছেড়ে দেয়া ছাড়া।
হাত মুখ বাধা শেষে ফের সোফায় বসতে বলে সেই অফিসার আবার ছোটখাটো একটা বক্তৃতা দিল-
এবার বলার ধরন ও সারমর্ম কিছুটা ভিন্ন হলেও ধারনা করতে পেরেছিলাম এমন কিছু একটাই ঘটতে যাচ্ছে!
‘তোমাদের মুখ বেধেছি যাতে তোমরা কোন প্রতিবাদ করার সুযোগ না পাও।’ আঃ কি ভদ্রতা!'
-এখন থেকে আমি যা বলব তাই করবে। কোন রকম টু ফা করলে ..’ নিঃশ্বংস হেসে ব্যাটনটা আমার মুখের খুব কাছে এনে আবার চাপ দিল মুহুর্তে তার মাথায় একটা সাদা বিদ্যুৎ চমকে উঠে আমাদের আতংক বাড়িয়ে দিল।
‘এখানে তোমাদের যা টাকা পয়সা আছে তার থেকে কিছু অংশ আমরা নিয়ে যাব। আর তোমাদের গায়ের সোনা দানা গুলো। ’
গয়না গাটি টাকা পয়সার চেয়ে জীবনের মুল্য অনেক বেশী। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। আর আমার বন্ধু কি যেন বলতে চাইল কিন্তু আতঙ্কিত চোখে ‘বো বো ছাড়া অন্য কোন শব্দ বেরুলনা।’
পরে শুনেছিলাম ও বলেছিল,- পাসপোর্টটা রেখে যেও ।’
পুলিশ অফিসার রুপী ডাকাতের কথা বলার ফাঁকে আমি দু'হাত বাধা অবস্থায় অতি কস্টে বাম হাতের অনামিকা থেকে আমার প্রেমিকার দেয়া চরমতম মুল্যবান আংটিটা খুলে ডান হাতের দু'আঙ্গুলের ভাজে আনতেই- সে আমার নড়াচড়া দেখে কিছু একটা বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাড়াতে বলল। আমি মুহুর্তকাল বিলম্ব না করে সেটা সোফার ফাকে সেধিয়ে দিয়ে এক সেকেন্ডর মধ্যে একদম নিরেট ভাল মানুষটির মত উঠে দাড়ালাম!
এবার সে আমার কাছে এসে বেশ আলতো হাতে গলার থেকে চেইনটা খুলে কাধ ধরে উল্টো দিকে ঘুড়িয়ে দিয়ে ব্রেসলেটটা খুলল। হাতে নিয়ে তার মনে হয় সন্দেহ হল আদৌ এটা সোনা কিনা। আমার চোখের সামনে এনে দুলিয়ে জিজ্ঞেস করল ‘সোনার’? আমার ভীষন কস্ট হচ্ছিল ওটা দেখে!
বছর পাঁচেক আগে দেশে ফেরার পথে ওটা কিনেছিলাম শারজাহ এয়াপোর্ট ডিউটি ফ্রি সপ(নিস্কর দোকান) থেকে। তিন রঙ্গের সোনা দিয়ে তৈরী ছিল সেটা- সাদা লাল ও সোনালী।
ডিজাইনটা আমার ভীষন প্রিয় ছিল। কত কিছুর সাক্ষী ওটা কত ছেলে মেয়ে বন্ধুর হাতে ঘুরেছে তার ইয়ত্তা নেই। অনেকেই ডেটিং করতে গিয়ে ফ্যাশন করতে গিয়ে ওটাআমার থেকে দু'চারদিনের জন্য ধার নিয়েছে। দু'তিনবার হারিয়ে ফেলেও অলৌকিকভাবে পেয়ে গেছি!
একবার স্কুটারে করে রাত এগারটার দিকে এক বন্ধুর বাসায় যাচ্ছিলাম। তার বাসার সামনে স্কুটার থেকে নামতেই বা কব্জির দিকে নজর যেতেই লক্ষ করলাম ব্রেসলেটটা নেই।
স্কুটারের ভিতরে তন্ন তন্ন করে খুজে না পেয়ে স্কুটার চালককে বেশী টাকার লোভ দেখিয়ে রাজী করালাম ফিরতি পথে যেতে হয়তো রাস্তায় কোথাও পড়ে আছে। বন্ধুরা সবাই হেসে গড়িয়ে পড়ে ‘এতরাতে তুই এই অন্ধকার রাস্তায় কিভাবে খুজে বের করবি তোর ওই ছোট্ট ব্রেসলেট।’
আমিও ধন্ধে পড়েছিলাম- তবুও এত প্রিয় একটা জিনিস একটু চেস্টা করে দেখতে আপত্তি কি? উল্টোদিকে সারাপথ অনেক খুজে সেটা না পেয়ে যখন বিষন্ন মনে ফিরে আসছি ঠিক তখুনি স্কুটারের হেডলাইটের আলোয় কিযেন রাস্তার চকমক করে উঠল। তাড়াতাড়ি স্কুটার থামিয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখি আমার সেই প্রিয় ব্রেসলেট।
আরেকবার গোসল করতে করতে সুমুদ্র সৈকতে হারিয়ে উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে অগভীর পানি হাতরে পেয়েছি।
সেই ব্রেসলেটটা আজ আমার চোখের সামনে থেকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাচ্ছে। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছি-অনুরোধ বা প্রতিরোধ করার উপায় নেই।
আমি মাথা নেড়ে তাকে বোঝাতে চেস্টা করলাম যে ওটা সোনা না বাবা ফিরিয়ে দিয়ে যা । সে হেসে বলল সোনা না হোক কিন্তু জিনিসটা সুন্দর ।
সে আমাকে খালি করে এবার বন্ধুর দিকে হাত বাড়াল । বন্ধু আমার শান্ত সুবোধ বালকের মত হাত গলা বাড়িয়ে দিল।
আমাদের দু'জনকে আবার বসতে বলে এবার ওরা একটু বাইরে গেল শলা-পরামর্শ করার জন্য বোধ হয়?
আমারা দু'জনে দুজনের দিকে বোবা দৃস্টিতে চেয়ে রইলাম সেই ক্ষনটুকুতে-আর কি-ইবা করার আছে?
৪র্থ পর্ব শেষ
আগের পর্বের জন্য; Click This Link
প্রথম পর্বের জন্য; Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২৩ সকাল ১০:৩১
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×