সব কিছু ঠিক ছিল; রাজাকারের ফাঁসি এবং জামাত শিবির নিষিদ্ধ এটুকু পর্যন্ত ঠিক ছিল। এরপরে শাহবাগে ঘাপটি মেরে থাকা বাম এবং নাস্তিকের মুখোশে থাকা ইসলাম বিদ্বেষীরা শাহবাগের আন্দোলনটাকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য '' ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি'' নিষিদ্ধের দাবী তুলল। এই'' ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি'' নিষিদ্ধের দাবী কোনঠাসা জামাত-শিবিরকে পূনরায় মাঠে আসার সুযোগ করে দিল। কারণ শাহবাগের গনদাবীর কারণে সাধারণ জনতার কাছে জামাত শিবির ''অচ্ছুত'' হয়ে গেল রাতা তারি। তারা কোন উপায়ে রাজপথে আসতে পারছিল না। '' ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের শাহবাগী আহবান তাদের রাজপথে আসার টিকেট দিয়ে দিল। দেশে কওমী আকীদা, সুন্নী আকীদার এবং সকল ইসলামিক রাজনৈতিক দল জামাতকে আদর্শগত কারণে ঘৃণা করে। শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে একারনে দেশের ইসলামিক দলগুলো উচ্চবাচ্চ করে নি। যখনই শাহবাগ থেকে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা আসল, তখন ইসলামী দলগুলো ব্যাপারটিকে তাদের অস্থিত্বে সংকট হিসেবে নিল। এরই মাঝে থাবা বাবা খুন হল। শাহবাগে থাবা বাবা কে ''শহীদ'' উপাধি দেয়া হল। থাবা বাবা নাস্তিকতার আড়ালে নোংরা ভাষায় ইসলামকে আক্রমণ করে নিজের ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগ এবং ফেসবুকে পোস্ট দিত। ধীরে ধীরে থাবা বাবার ইসলাম বিদ্বেষী চরিত্র বেরিয়ে পড়ে। সরকারী মহল এবং শাহবাগীদের ক্রমাগত থাবা বাবার পক্ষে সাফাই গাওয়া হিতে বিপরীত হল। জামাতী পত্রিকা এবং ডান ঘেঁষা পত্রিকা গুলো থাবা বাবার ব্লগের লেখা পত্রিকায় প্রকাশ করে দিল। সারা দেশে এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। আমরা ব্লগে-ফেসবুকে নিজেদের ভিতর যতই বিতর্ক করিনা কেন সাধারন মানুষ এখনো সংবাদপত্রের নিউজকেই বিশ্বাস করে। পত্রিকা মারফত একে একে আসিফ মহিউদ্দিন, অমি রহমান পিয়াল, সবাক সহ আরো বেশ কয়েকজন বিতর্কিত ব্লগারদের ভেতরের খবর অনলাইন দুনিয়া থেকে বাস্তবে পত্রিকায় ছড়িয়ে পড়ল। সাধারণ মানুষের কাছে এই ধারনা বদ্ধমূল হল শাহবাগের আন্দোলন কারীরা নাস্তিক, তারা জামাত-শিবির নিষিদ্ধের , রাজাকারদের ফাঁসির দাবীর সুযোগটাকে ইসলাম বিরোধী নাস্তিকতা প্রচারের জন্য ব্যবহার করছে।
এরই মাঝে শাহবাগ মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হল একুশে ফেব্রুয়ারীর আগে দেশের সকল মাদ্রাসায় বাধ্যতামূলক শহীদ মিনার তৈরি করতে হবে। এটা কারো অজানা নয় কোন কওমী মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না। সরকারী অনেক মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত গাওয়া হলেও কওমী এবং সরকারী কোন মাদ্রাসাতেই ধর্মীয় আদর্শ গত কারণে শহীদ মিনার তৈরি করা হয় না। কেন তৈরি করা হবে না, পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি আসবে। সহজ সিম্পল ব্যাপার হল মাদ্রাসা হল ইসলাম ধর্ম শিক্ষার জায়গা। সেখানে যতটুকু সম্ভব ইসলামী আকীদা গুলো পালনের চেষ্টা করা হয়। এখন হজুরদের কেউ মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত গাইতে কিংবা মাদ্রাসায় শহীদ মিনার বানিয়ে ফুল দিতে বললে তারা রাজী হবে না এবং হওয়া সম্ভব না ধর্মীয় কারণে। থাবা বাবা, আসিফ মহিউদ্দিন, সবাকদের বিভিন্ন সময় ফেসবুকে, বিভিন্ন ব্লগে দেয়া ইসলাম বিদ্বেষী পোস্ট গুলো পত্রিকায় ছাপা হওয়ায় জামাত শিবির কে ঘৃণা করে এধরণের ইসলামিক দল গুলো এবং সাধারণ ধর্ম প্রাণ মুসলমানরা শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে সন্দেহ পোষণ শুরু করে। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে অবমাননা করে বিদেশে কিছু করা হলে এদেশের ইসলাম পন্থি দল গুলো প্রতিবাদ কর্মসূচি দেয়। যেমন একই কারণে ইউটিউব নিষিদ্ধ হয়েছিল। এখন থাবা বাবা এবং ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগারদের লেখাগুলো পড়ে ইসলামী দল গুলো শাহবাগের সবাইকে নাস্তিক মনে করে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে , ব্লগে ইসলাম বিদ্বেষী লেখার বিরুদ্ধে একযোগে প্রতিবাদ কর্মসূচি দেয়। জামাত-শিবির সাধারণ মুসলমানদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচিকে নিজেদের কাজে লাগায়। এটা অস্বীকার করার জো নেই; যখন উদ্দেশ্য আপাত একই হয় তখন ভিন্ন মতের , ভিন্ন আদর্শের সবাই এক কাতারে চলে আসে। এখানেও জামাত বিহীন অন্যান্য ইসলামিক দলগুলোর নাস্তিকতা বিরোধী প্রতিবাদ মিছিলে জামাত-শিবির ছদ্মবেশে ঢুকে ত্রাস চালায়। এবং জামাত শিবির সফল হয়।
এখন ভাবার বিষয় হল, জামাত - শিবিরকে ছদ্মবেশে তান্ডব চালানোর সুযোগটা কে করে দিল। নিশ্চয় ডাঃ ইমরানের নেতৃত্বে যারা শাহবাগে গনজাগরন মঞ্চে ছিলেন তারা। তাদের উচিত হয়নি ধর্মের মত স্পর্শকাতর বিষয়কে জামাত - শিবির নিষিদ্ধ, রাজাকারের ফাঁসির দাবীর সাথে মিশিয়ে খিঁচুরী বানানোর। থাবা বাবার লাশ নিয়ে কিংবা থাবা বাবাকে নিয়ে অনেক বেশি বাড়াবাড়ি করাটাও শুভ ফল বয়ে আনে নি। দেখা গেছে এই এক নাস্তিক-আস্তিক ইস্যুতেই ব্লগারদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল শুরু হল। আন্দোলন তার গতি হারিয়ে মূল ইস্যু থেকে সরে গিয়ে শুরু হল নাস্তিক-আস্তিক কাঁদা ছোড়া ছুড়ি, আত্মস্বীকৃত ইসলাম বিদ্বেষীদের হঠাৎ বক ধার্মিক হওয়ার হাস্যকর প্রচেষ্টা ইতাদি। আমরা যতই উদারমনা হই না কেন আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় কারণে আমরা অবচেতন মনে ধর্মকে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে লালন করি। এখন আন্দোলনের যে অবস্থা, তাতে অনেক সতর্কভাবে অগ্রসর হতে হবে। জামাত-শিবির এরই মাঝে ভোল পালটে অন্য ইসলামিক দল গুলোর ভিতর আত্মগোপন করে আছে। ওরা দেশের সাধারণ ইসলাম গবেষক, মসজিদের ইমাম, নামকরা মাদ্রাসার মুফতিদের পর্যন্ত প্রভাবিত করা শুরু করেছে। যার প্রমাণ হাটাজারী মাদ্রাসার মুফতি শফি। অথচ হাটাজারীর আকীদা পুরোপুরি জামাত বিরোধী। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে নাস্তিক বিরোধী প্রতিবাদে সবাই একই মঞ্চে। সাধারণ জনগণকে বুঝাতে হবে ব্লগার মানেই ''নাস্তিক'' নয়। আর যারা আন্দোলনে মাঠ পর্যায়ে আছেন, তাদের উচিত হবে শাহবাগের এবং দেশের অন্যান্য স্থানের গনজাগরণ মঞ্চে যারা নাস্তিক-আস্তিক ক্যাচাল, ধর্মীয় বিষয়ে নিজস্ব বিতর্কিত মতামত প্রকাশে অতি উতসাহী তদের চিহ্নিত করে প্রতিহত করা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




