somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প (সাইকোলজিকল):: চেক

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইফতি সাহেব গাড়ীর ইস্টিশনে দাড়িয়ে আছেন। অনেক মানুষের ভীড়। ঈদের ছুটি কাটিয়ে যে যার কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছে। ইফতি সাহেব,বারবার তার সাদা পাঞ্জাবীর বুকপকেটে হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখছেন জিনিসটা আছে কিনা। এটাই যে তার জীবনের শেষ সম্বল। কোনভাবেই তা হারানো যাবে না। ইফতি সাহেব মূলত একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। পাঁচ ছেলেমেয়ে তার।এরমাঝে দুই মেয়ে আর তিন ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। কোনরূপ যৌতুক ছাড়াই বলা চলে। তবে ছোট মেয়ে একটু কালচে বলে, তিনি নিজেই জামাইর বিদেশ যাওয়ার সময়ে, জমিবিক্রি করে সব খরচ যোগান দিয়েছিলেন। তবুও যাতে মেয়ের সংসার টা টিকে। এই কাক ফাটা রোদের মধ্যে ইফতি সাহেব দাড়িয়ে আছেন। আর ভাবছেন, সারাজীবন যে জিনিসটা তাকে কেউ জোর করে দিতে পারেনি আজ তিনি নিজেই সেই জিনিসটা দেবার জন্য অপেক্ষায় আছেন। আর ভাবছেন,তার মতই কি সবাই এমন নিজেদের শেষ সম্বল নিয়ে তার কাছে ছুটে আসতো। ইফতি সাহেব ছোট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।কিছুক্ষণ পর,একটা গাড়ি এসে থামলো।ইফতি সাহেব সামনে- পিছনে তাকিয়ে কাকে যেন খোঁজছেন।তারপর, একহাত বুকপকেটে দিয়ে ভীড় ঢেলে সামনে এগুনোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন।হঠাৎ তার কাঁধে একটা হাতের স্পর্শ অনুভব হতেই তিনি ভয়ে দ্রুত ঘুরে দাড়ান। কিন্তু ঘুরে দাড়ানোর পড় সামনের লোকটিকে দেখে , তার মনে ভয়ের পরিবর্তন ঘটলো। মনে হলো, এতক্ষন যে বোঝা তার মাথায় ছিল তা যেন অনেকাংশেই নেমে গেছে। লোকটি সালাম দিয়ে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিতে দিতে বললো " কেমন আছেন?? শরীরের অবস্থা কেমন এখন? " ইফতি সাহেব হ্যান্ডশেক করে বললেন " আলাহামদুলিল্লাহ্, ভালো " একটু থেমে আবার বললেন "শরীরের অবস্থা আর কি বলবো বয়স হলে যা হয় আর কি? " "চলুন তাড়াতাড়ি বাসে উঠুন। আমাকে আবার অফিস হয়ে বাসায় যেতে হবে " লোকটি বললো "আপনি বাসে যাবেন?? প্রশ্নটা করেই ফেললেন ইফতি সাহেব। "কি করবো বলুন, এধরনের কাজের জন্য লোকাল বাসই এখন নিরাপদ। অফিসের সব জায়গায় সিসি ক্যামরা লাগানো " একটু থেমে আবার বললেন " আর নিজস্ব গাড়িতে এসব করতেও ভয় লাগে। আজকাল ড্রাইভারদেরকেও বিশ্বাস করা যায় না। " দুইজনই গাড়িতে উঠেন কিন্তু কোন সিট খালি নেই। ফলে দু'জন কেই দাড়িয়ে থাকতে হলো। ইফতি সাহেব কিছুটা বিব্রতবোধ করেন। আর ভাবেন তার কাজের জন্যই সাঈদ সাহেবকে হয়তো এভাবে দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু এখন তার কিছুই করারও নেই। "যা বলেছি তা কি নিয়ে এসেছে?" জানতে চাইলো সাঈদ সাহেব। " জ্বী বরাবরই এনেছি " একটু থেমে ইফতি সাহেব আবার বললো " চাকরি টা হবে তো? এটাই আমার শেষ সম্বল। " বলতে গিয়ে যেন গলাটা ধরে এলো। " আশা করি হবে, বড় সাহেবর সাথে আমার কথা হয়েছে। উনি আশ্বাস দিয়েছে। " একটু থেমে আবার বললেন " বুঝেনি তো দেশের যা অবস্থা, চাকুরী তো একপ্রকার সোনার হরিণ। আর সরকারী চাকুরীর কথা কিবা বলবো।বড় সাহেব বলেছে তাই আমি ওটার জন্য বলেছি। আমার ক্ষমতা থাকলে আমি এমনিতেই ওকে ব্যবস্থা করে দিতাম শত হলেও সে আমার এলাকার।" দুইজনই চুপ করে দাড়িয়ে আছেন।এমন সময়ে তার বিবেক যেন ব্যঙ্গ করে জানতে চাইলো “কে বড় সাহেব?তুই বড় সাহেব জানতে পারলে টাকা কম দিতে পারে এই ভয়েই তো কাল্পনিক বড় সাহেবরে আশ্রয় নিলি” একটা বিদ্রুপপূর্ণ হাসি হেসে আবার বলল “ভার্সসিটি তে পড়ার সময়ে খুব তো বড়াই করে বলতে, মরে গেল্ও র্দূনীতি করবে না।” সাইদ সাহেবের মাথাটা যেন হঠাৎ ভারি হয়ে গেছে।তিনি হাত দিয়ে মাথা টিপার চেষ্ঠা করেন। ”স্যার কিছু লাগবে ?” ইফতি সাহেব বলে উঠেন. “পানি হবে ।?“ তিনি তার হাত ব্যাগ হতে ছোট পানির বোতল বের করে এগিয়ে দেন সাইদ সাহেবের দিকে । তিনি কয়েক চুমুক পানিপান করেন । কিছুক্ষন পর হেলফার আসে টাকা তোলার জন্য। ইফতি সাহেব ভাড়া দেয় যদিও সাঈদ সাহেব দেয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু পারেননি। হঠাৎ হেলফার ড্রাইভারকে বাস থামতে ইঙ্গিত করে। বাস থামলে কিছু যাত্রী নামে। হেলফারের এধরনের আচরণে সবাই তাকে ধমক, গালিগালাজ দিতে থাকে। কিন্তু হেলফারের কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া না দেখে সবাই আস্তে আস্তে আবার থেমে যায়। কিছু যাত্রী নেমে যাওয়ায় কিছু সিটখালি হয়। ইফতি সাহেব জানালার পাশে আর সাঈদ সাহেব তার ঠিক পাশেই বসলেন। " দেশে নিয়ম কানুন বলতে কিছুই নাই " সিটে বসতে বসতে বললেন সাঈদ সাহেব। "যে যেভাবে পারে নিজের আখের ঘুচাতে ব্যস্ত, এদেশেটা আর বদলালোনা "কিছুটা আক্ষেপ করেই বললেন সাঈদ সাহেব। হঠাৎ সাঈদ সাহেব চুপ হয়ে গেল তার এমন কথা শুনে তার বিবেক যেন অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো এবংতাকে বলতে লাগলো " হেলপার তো অশিক্ষিত, কিন্তু তুমি তো শিক্ষিত। তুমি কি পেরেছো বদলাতে, সাঈদ সাহেব? তিনি হচকচিয়ে চোখ খোলে চারদিকে তাকান। "চলে এসেছি " বলতে বলতে ইফতি সাহেব বুকপকেট হতে একটা চেক সাঈদ সাহেবের হাতে গুজে দিতে দিতে বললেন "একটু আন্তরিক ভাবে দেখবেন " সাঈদ সাহেব মাথা নাড়লেন। তারপর বাস থেকে নেমে তার গাড়ীর দিকে যেতে যেতে ভাবতে লাগলেন এ কাজটা করা তার আদৌ ঠিক হচ্ছে কি? এমন সময়ে তার অন্তঃ সও্বা তাকে যেন বলতে লাগলো " সাঈদ সাহেব এগুলো ভেবো না। তোমাকে অনেক বড় হতে হবে। এগুলো ভাবলে কিভাবে হবে? আর তুমি তো একটা ফ্যামিলির উপকারের বিনিময় এই কয়টা টাকা নিচ্ছো তা আর কিবা অপরাধ। চারদিকে তাকিয়ে দেখো, কত বড় বড় অপরাধী তোমার চারপাশে, তাদের তুলনায় তুমি তো অতি ক্ষুদ্র " সাঈদ সাহেব আর ভাবতে পারলেন না। তিনি সামনে তার জন্য অপেক্ষা করা অফিসের গাড়িতে উঠে বসলেন। সাঈদ সাহেব আগেই ড্রাইভারকে এখানে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। " আজ আমি অফিসে যাবো না।গতকাল যে ডেভেলপার্সের অফিসে গিয়েছিলাম তুমি গাড়িটা ঐখানে নিয়ে চলো " বললেন সাঈদ সাহেব। "যাক শেষ পর্যন্ত একটা বাড়ির ব্যবস্থা হলো " মনে মনে বললেন সাঈদ সাহেব। তারপর ছোট একটা হাই তুলে পকেট হতে চেকটা বের করে দেখলেন যত টাকা বলেছেন তত ঠিকভাবে আছে কিনা। ভদ্রতার খাতিরে ঐসময়ে খুলে দেখতে পারেননি। না সব ঠিকভাবেই আছে। চেকটা বুকপকেটে রাখতে রাখতে সাঈদ সাহেব সিটের মধ্যে মাথাটা এলিয়ে দিলেন।
--------------------------০-------------------------------
আমার অন্যগল্পসমূহ::
ব্যঙ্গ-রঙ্গ:: ছোটগল্প:: একচোখা মন্ত্রীর গল্প
ছোটগল্প (সাইকোলজিকল):: আইসক্রীম
গল্প(সাইকোলজিকল) :: টেলিভিশন(১ম পর্ব)
গল্প(সাইকোলজিকল) :: টেলিভিশন(শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫২
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৭১

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬



মানুষ দুনিয়াতে ন্যাংটা আসে।
ধীরে ধীরে বড় হয়। যোগ্যতা দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জন করে। তারপর ইনকাম শুরু করে। সমাজের বহু মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টাকা ইনকাম করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যারা সাহাবা নন তাঁরা রাসূলের (সা.) অনুসরনের জন্য সাহাবার (রা.) অনুসরন না করে আমিরের অনুসরন করলে সঠিক পথে থাকবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:১৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা (ইতায়াত) আনুগত্য কর আল্লাহর, আর (ইতায়াত) আনুগত্য কর রাসুলের, আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হকারের পেটে লাথি দাও, নিরাপদে হাঁটার স্বাধীনতা ফেরাও

লিখেছেন মিশু মিলন, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪১




ঢাকার ফুটপাত আমি থেকে কোনো কিছু কিনি না। এটা আমার এক ধরনের প্রতিবাদ। কারণ, এই হকাররা আমার স্বস্তিতে ও নিরাপদে হাঁটার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। আমি হাঁটতে পছন্দ... ...বাকিটুকু পড়ুন

হত্যাকাণ্ড বন্ধে কেন ম্যাজিক জানা জরুরি ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৪


জাতি হিসাবে আমরা বড়োই অভাগা। ইতিহাসের মঞ্চে রাজা বদল হয়, কিন্তু চিত্রনাট্য বদল হয় না। এক রাজা যায়, আরেক রাজা আসে; কিন্তু পর্দার পেছনের কলকাঠি নাড়া সেই একই হাত।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লন্ডনের ত্রয়োদশ বইমেলা এবং সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ শেষ পর্ব

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ২:৪৯



সেপ্টেম্বর চৌদ্দ তারিখ লন্ডনে অনুষ্ঠিত হবে বই মেলা ও সংস্কৃতি উৎসব। অনুষ্ঠিত হবে লন্ডনের ব্রিক লেন অবস্থিত রিপ্লেইনে অবস্থিত ব্র্যান্ডি সেন্টারে।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিন শুরু হবে বেলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×