somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প(নৈতিকতা):::উকিল

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

--- স্যার, বাকী টাকাগুলো।
---- রাখ।
--- স্যার, আম্মা আপনাকে বাসায় যাওয়ার জন্য বলছে।
--- সময় কই?? বিফ্রকেসটা খুলতে খুলতে বলেন,ইফতি খন্দকার। বিশিষ্ট আইনজীবী।
--- না, যেতেই হবে। আপনার যেদিন সময় হবে সেইদিন। বলল, সাঈদ।
--- ওকে, ফ্রি হলে তোকে কল দিবো।
--- স্যার একটা কথা বলতাম। ইফতি সাহেব মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়।
--- ফাঁসি হবে তো?
--- এখনও বলা যাচ্ছে না। আইনের কত ফাকপোকর। তবে আশি পার্সেন্ট ফাঁসির পক্ষে আর বাকীটা ভাগ্য।
--- আপনি তো সবই জানেন। ওর ফাঁসি হওয়াটা কত জরুরি আমাদের জন্য।
ইফতি সাহেব মাথা নাড়ে। সাঈদ সাহেব চলে যায়। তিনি ভীষণ চিন্তিত। এমন কেসের সম্মুখীন আগে কখনো হননি। কত অপরাধী কে নির্দোষী হিসেবে প্রমাণ করেছি কিন্তু আজ? একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে ফাসি! ভাবতে সারা শরীর হিম হয়ে আসে। না এমন টা হতে দেয়া যাবে না। যেভাবেই হোক এটা রুখতে হবে। সকাল থেকেই বিভিন্ন আইনের ধারা, উপধারা, কেসের ফলাফল দেখছেন।ইফতি সাহেব কেসের শুরুর দিকে জানতেন না যে, তিনি যে লোকের ফাঁসির জন্য আদালতে প্রমানাদি তুলে ধরছেন ; তিনি আসলে নির্দোষী । কিন্তু যখন জানলেন তখন প্রায় তার ফাঁসি নিধারিত । আগামীকাল রায় দিবে আদালত । এখনও লোকটির ফাসি রুখতে পারে এমন কিছুই খুজে পেলেন না। নিজেকে বড়ই অপরাধী মনে হচ্ছে আজ। মাঝে মাঝে আইন পেশার প্রতি ঘৃণাই পেশাটি ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করছে।


ইফতি খন্দকার এবং শৈকত তালুকদার, একটি টেবিলের দুইপাশে দুইটি চেয়ারে মুখোমুখি বসে আছেন। শৈকত তালুকদার ব্যারিস্টার।তিনি ঐ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারপতি।আগামীকাল রায় উনিই দিবেন।দুইজনই চিন্তিত।
---দেখ,সবই শুনলাম|কিন্তু …
--স্যার কোন কিন্তু বলবেন না। আমি গতকাল সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। আমি খারাপ হতে পারি! অনেক ঘুষ খেয়েছি, বিপক্ষের উকিলের সাথে আপস করে, রায় ঘুরিয়ে দিয়েছি। তাই বলে কিন্তু একজন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে আমি জেনে শুনে ফাসিতে ঝুলাবো তা আমি কোন ভাবেই মানতে পারছি না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শৈকত সাহেব বললেন " দেখ, আমি একজন বিচারপতি।আমার কাজ হচ্ছে সাক্ষী, ডুকুমেন্ট অনুযায়ী রায় দেয়া। আর তোমরা যারা উকিল তাদের কাজ হচ্ছে আসামীর পক্ষে, বিপক্ষে মত, সাক্ষী, প্রমানাদি তুলে ধরা। এবং সবার চাওয়া থাকে অপরাধী শাস্তি পাক। " একটু থামলেন শৈকত সাহেব। টেবিলের উপর রাখা পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে এক চুমুক পানি পান করলেন। তারপর আবার বললেন " মানুষের হিংসা, বিদ্বেষ, আত্নসম্মানের অহংকার, টাকা, নারী কত সামান্য হীন স্বার্থে মানুষ আজ পশুতে পরিনত হয়ে গেছে। এই ছোট বিচারপতি জীবনে দেখলাম।" এবার ইফতি সাহেবকে লক্ষ্য করে বললেন " দেখ ইফতি কাজটি আমি করবো। তবে তোমার মক্কেল। আবার তোমার ওপর রেগে যাবে না তো ফাঁসি না হওয়াতে? " "স্যার, ঐদিক আমি দেখবো" একটা ছোট হলুদ খাম শৈকত সাহেবের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে আবার বললো " স্যার বেয়াদবি না নিলে, এটা যদি একটু রাখেন " শৈকত সাহেব একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন " না, এটা লাগবে না। ঐটা তোমার কাছেই রাখো। একজন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে মুক্তি দেয়ার মাঝে যে আনন্দ আছে সেটার কাছে এটা কিছুই না। আশা করি তুমিও তা অনুভব করেছ।" একটু থেমে আবার বললেন "একটা কথা মনে রাখবে, তোমরা যারা উকিল তারা কিন্তু ঠিকই জানো কে অপরাধী আর কে নিরাপরাধী। কারণ মানুষ দুই জায়গায় মিথ্যা খুব কমই বলে এক.ডাক্তারের কাছে আর দুই উকিলের কাছে। সব পেশাতেই অন্যায় উপায় আছে এবং সৎভাবেও বাঁচার উপায় আছে। শুধু মনের উপর প্রাধান্য না দিয়ে বিবেক কে কাজে লাগালেই হয়। বেঁচে থাকার জন্য বহু টাকার প্রয়োজন নেই।" একটা মুচকি হাসি দিতে দিতে বললেন " অনেক কথা বলে ফেললাম। ওকে কাল কোর্টে দেখা হবে।" ইফতি সাহেব সালাম দিয়ে বাহিরে বের হন।


রায় প্রকাশ হয়। ইফতি সাহেব যা চেয়েছেন তার চেয়েও বেশী হল। ইফতি সাহেবের মক্কেল তো রেগে মেগে আগুন তবু ইফতি কিছুই বলছে না। কারণ সে মনে মনে ঠিক করে রেখেছে আর আইন পেশা করবে না। আদালত ফাকা হবার পর সে শৈকত সাহেবের চেম্বারে যায়। শৈকত সাহবেকে সে অনেক অনেক ধন্যবাদ দেয়। তার পর তার মনের ইচ্ছের কথা বলে। কিছুটা অবাক হয়ে শৈকত সাহেব বললেন "দেখ ইফতি। তোমার এই সিদ্ধান্তে আমি মোটেই খুশি হতে পারি নি। কারণ তুমি আইন পেশা ছেড়ে দিলেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে। অন্যায় থেকে পালিয়ে অন্যায় দমন করা যায় না। " "আমি কি করবো স্যার? এখানে তো সবাই টাকা আয়ের পথ খুজে, মোক্কেল কে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে। যা আমিও একসময় করেছি।" বলল ইফতি সাহেব। "তুমি তা এখন থেকে করবে না। মক্কেল কে সঠিক পরামর্শ দিবে। সে নিরাপরাধ কারী হোক অথবা অপরাধ কারী হোক। আইন অনুযায়ী তার প্রাপ্য বিচার বা সাজা তাকে বুঝিয়ে দাও।" একটু থেমে আবার বললেন শৈকত সাহেব "এদেশের মানুষ আইন সম্পর্কে খুবই অজ্ঞ। কারণ অধিকাংশ আইনই সাধারণ মানুষ জানে না। ধর আজ থেকে মানুষকে সচেতন করাই তোমার কাজ এবং একজন আইনজীবী হিসেবে তা তুমি অনেক ভালো ভাবে পালন করতে পারবে।" ইফতি সাহেব যেন তার স্কুল জীবনে ফিরে গেলেন। খুব মনোযোগ সহকারে তিনি তা শুনছেন। তার বিবেক যেন নতুন করে জেগে উঠছে। শৈকত সাহেব কি অদ্ভুব লোক। কি সুন্দর করে তাকে বুঝাচ্ছেন।
এখন তার মনে হচ্ছে বিশাল বড় একটা বোঝা তার মন হতে নেমে গেছে। মনের কোথায় যেন একটা প্রশান্তির বাতাস বয়ে যাচ্ছে। চেম্বার হতে বের হয়ে, একটা রিক্সা ডেকে তাতে উঠে পড়ে। রিক্সা যতই সামনে যাচ্ছে তার কাছে মনে হচ্ছে সে যেন নতুন এক জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পেছনে সব ভুল আর ভ্রান্তি ফেলে।
--------------------------০-------------------------------
আমার অন্যগল্পসমূহ::
ব্যঙ্গ-রঙ্গ:: ছোটগল্প:: একচোখা মন্ত্রীর গল্প
ছোটগল্প (সাইকোলজিকল):: আইসক্রীম
গল্প(সাইকোলজিকল) :: টেলিভিশন(১ম পর্ব)
গল্প(সাইকোলজিকল) :: টেলিভিশন(শেষ পর্ব)
ছোটগল্প (সাইকোলজিকল):: চেক
ছোটগল্প:: ফাইজা ও একটি গল্প
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:২৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×