somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ(Inception): স্বপ্ন যেখানে বাস্তবতাকে নিয়ন্ত্রন করে

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটা জিনিস অাগে ক্লিয়ার হওয়া দরকার। এই ছবির মূলভিত্তি হল স্বপ্ন শেয়ারিং এবং স্বপ্ন তৈরি করা। অর্থাৎ অন্যের অবচেতন মনে ঢুকে স্বপ্ন অবজার্ভেশন করা এবং নিজেদের উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য স্বপ্নের পরিবেশ তৈরি করা। এই কাজে তারা উপস্থিতবুদ্ধি সম্পূর্ণ একজন অর্কিটেকের সহয়তা নেয়।
এখন কথা হচ্ছে কিভাবে তারা একই সাথে তিন চার জন একই স্বপ্নে প্রবেশ করে? মূলত এই স্বপ্নে প্রবেশে তারা ছোট একটা প্রক্রিয়া অবলম্বন করে যেটা হল পুরা সাইন্সফিকশন অর্থাৎ এটার বাস্তব কোন লজিক নেই। বাস্তবধর্মী মেডিটেশন কিংবা হিপনোটাইজ প্রক্রিয়ায় যেভাবে মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এখানে সেইরূপ কোন সাইট্রিফিক কোন মেথড ব্যবহার করা হয় না বরং একটা ছোট ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে কাজটি করা হয়। তাই মুভির আসল সাধ অনুভব করতে হলে আপনাকে এটা মেনে নিতে হবে অতিরিক্ত বাস্তববাদী হলে মুভি না দেখাই ভালো। আর ছবিটা সাবটাইটেল ছাড়া না দেখাই ভালো ।
মুভিটা শুরু হয় সমুদ্র সৈকতে অচেতন অবস্থায়একজনকে(কোব=ডিক্যাপিও)পাওয়ার মাধ্যমে। কোবকে নেয়া হয় মিঃসাইতো এর সামনে। এরপর শুরু হয় কোব ও সাইতোর মুখোমুখি হবার পূর্ববতী ঘটনা।

কোব মুলত একজন এক্সট্রাক্টর। এক্সট্রাকর হল সেই যে অন্যের স্বপ্নে প্রবেশ করার ক্ষমতা রাখে সাথে সাথে সে স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রণও করতে পারে। প্রয়োজনে সে অন্যের হাত থেকে স্বপ্নর মাধ্যমে যাতে কেউ তার আইডিয়াকে চুরি করতে না পারে সেই ব্যবস্থাও করতে পারে। অপরদিকে মিঃসাইতো একজন ক্ষমতাধর ব্যবসায়ী। কোবাল ইঞ্জিনিয়ারিং নামক এক কোম্পানি কোব ও তার সহযোগীদের কে ভাড়া করে স্বপ্নের মাধ্যমে মিঃসাইতোর এক গোপন নথির তথ্য উদ্ধার করতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়।মিঃসাইতোর নিকট স্বপ্নের মাধ্যমে অন্যের গোপন নথি সম্পর্কে জানার এই প্রক্রিয়া মৌলিক আইডিয়া এবং বেশ কার্যকরী মনে হয় ফলে সে কোব ও তার সহযোগী মিঃঅার্থার( জোসেফ) কে তার হয়ে একটি কাজ করার অনুরোধ করে তবে সেটা তথ্য জানা নয় বরং তার ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীর মনে এমন এক ধারনা ঢুকিয়ে দেয়া যাতে সে নিজ থেকেই নিজের ব্যবসাকে ধ্বংস করে দেয়। এই অাইডিয়া ঢুকিয়ে দেয়াকেই inception বলে। মজার বিষয় হচ্ছে কোব ও অার্থার আগে কখন এমন কাজ করে নি। এবং তারা জানে এই কাজটি করতে হলে স্বপ্নের তৃতীয় লেয়ারে যেতে হয় যেটা শুধু কষ্টসাধ্য নহে বরং জীবনের জন্যও হুমকি। সেইজন্য তারা প্রথমে রাজি হয়নি কিন্তু যখন মিঃসাইতো কাজটির বিনিময়ে কোবকে তার সন্তানদের কাছে অর্থাৎ বাড়িতে ফিরতে সাহায্য করবে বলে তখন কোব রাজি হয়। কারণ কোব তার স্ত্রী ম্যালের হত্যা মামলার আসামী। সেইকারনে সে অনেকবছর ধরে দেশে ফিরতে পারছে না।এইটুকুই কাহিনী। এখন ডিক্যাপিও (কোব) কি কাজটি ঠিকভাবে করতে পারছে কিনা না আদো সম্ভব না? সে কি তার বাচ্ছাদের কাছে যেতে পারছে এটা জানতে হলে আপনাকে মুভিটা দেখতে হবে। এই ছবির সবচেয়ে সুন্দর দিক হলে এখানে আমরা সচারচর স্বপ্নের মধ্যে যে দৃশ্য গুলো দেখি পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান চেষ্টা করছে ঠিক সেইরূপ দৃশ্য তুলে ধরতে। এখানেই পরিচালক অনেকাংশ সার্থক।

কিন্তু জটলাগে স্বপ্নের লেভেলগুলো বুজতে।
১ম লেভেল হচ্ছে সচারচর ঘুমালে যে স্বপ্ন দেখি। ২য় লেভেল হল আপনি যদি স্বপ্নের ভেতর আবার স্বপ্ন দেখেন। ৩য় লেভেল হল ২য় স্বপ্নের ভেতর যদি আবার স্বপ্ন দেখেন। । এখন আপনার স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়া মানে এই না আপনি বাস্তবে ফিরে আসলেন বরং আপনি স্বপ্নের ২য় লেভেলে আছেন। আবার স্বপ্ন ভাঙ্গলে আপনি আসবেন ১মলেভেলে। এরপর যদি স্বপ্ন ভাগে তবেই আপনি বাস্তবে ফিরে আসবেন। এই সিকুয়েন্স মেনটেইন করেই মুভির কার্যক্রম চলে। আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে এই সিকুয়েন্স টা ধরা। তাহলেই মুভির কাহিণী বুঝা সহজ হবে।
আরেকটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে সেটা হল "সময়"। স্বপ্নে সময়ের গতি বাস্তব জগতের চেয়ে বেশি। ফলে বাস্তব জগতের ৫ মিনিট স্বপ্নে সেটা মনে হবে ১ঘন্টার মতো। শুধু তাই নয় স্বপ্নের লেভেল যত বাড়বে এই গতি তত বৃদ্ধি পাবে। তাই ছবি দেখার মুহুর্তে এই সময়ের গতি বেগের দিকেও ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে। এই গতিবেগের মূল রহস্য হল, আমাদের অবচেতন মনের চেতন মনের চেয়ে দ্রুত কাজ করার ক্ষমতা।


আরেকটা বিষয় ছবিটাতে ব্যবহার করা হয় সেটা হল টোটেম। যার মাধ্যমে তারা বুঝতে পারে সে কি স্বপ্নে নাকি বাস্তবে আছে। যেমন ডিক্যাপিওর টোটেম হল "লাটিম"। লাটিম ঘুরতেই থাকলে স্বপ্নে আর লাটিম ঘুরতে ঘুরতে বন্ধ হয়ে গেলে বুঝবে বাস্তবে আছে সে।

মুভিটির মাধ্যমে ক্রিস্টোফার সাহেব মুলত আমাদের চিন্তার ও গবেষণার জন্য নতুন একটি ক্ষেত্রের সন্ধান দিয়েছেন। কোনভাবে যদি সত্যি সত্যি স্বপ্ন শেয়ারিং ও স্বপ্ন তৈরি ব্যপারটা নিয়ন্ত্রন করা যায়। অর্থাৎ অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে সত্যিই একটা শিল্প বিপ্লবের মতো একটা বিপ্লব ঘটে যাবে। ব্যপারটা বুঝার আগে আপনাকে আগে বুঝতে হবে অবচেতন মন কি? এবং অবচেতন মনের ক্ষমতা?
ধরুন আপনার সামনে একপ্লেট সুস্বাদু খাবার রাখা আছে। কিংবা আপনি টয়লেট বসে হাগু করছেন? কখনও কি এমন হয়েছে, আপনি মনের ভূলে বামহাত দিয়ে খাবার খাচ্ছে কিংবা ডানহাত দিয়ে হাগু পরিষ্কার করছেন? আপনার এই দীর্ঘ জীবনে এমনটা কখনও হয়নি এবং কাজগুলোও আপনি চিন্তা ভাবনা করেও করেননি বরং আপনার চেতন মনের অলক্ষ্যেই হয়ে গেছে বা হচ্ছে ।আপনি ভালো করে খেয়াল দেখবেন হঠাৎ করে উড়ে আসা কোন ঢিল প্রতিরোধে আপনার শরীর অটোমেটিক সঠিকভাবে মুভ করছে আপনার বিনা ইন্সট্রাকশনে। এই কর্মকান্ড আপনার চেতন মনের নিয়ন্ত্রনে নহে। এইগুলো ঘটে অবচেতন মনে। শুধু তাই নহে এইকাজগুলো অবচেতন মনের গভীরের এমনভাবে প্রথিত আছে যা আপনার পক্ষে কখনও তা থেকে সরে আসা সম্ভব না।
আর আমরা জানি স্বপ্নে আমাদের অবচেতন মন উম্মুক্ত হয় আর চেতন মন অনেকটা বন্ধ থাকে। তাই পরিচালক ক্রিস্টোফার চেষ্টা করেছে স্বপ্নের মাধ্যমে অবচেতন মনের কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রন করার। এবং তার মাধ্যমে অবচেতন মনের গভীরে কিছু অাইডিয়া প্রথিত করা যাতে সেটা বাস্তব জীবনেও ঢিল প্রতিরোধের মতো কোন কাজে লাগে।
কি ভাবছেন? অন্যের মাথায় এইভাবে আইডিয়া ঢুকানো কি আদো সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব। এই যে আমি যেভাবে আপনাদের চেতন মনে অাইডিয়া ঢুকিয়ে দিয়েছি এই বলে যে এই ছবিটা সাবটাইটেল ছাড়া দেখবেন না। আপনার চেতন মন অলরেডি ঠিক করেই নিয়েছে যে, inception ছবিটা সাবটাইটেল ছাড়া দেখা যাবে না? ঠিক একই ভাবে অবচেতন মনেও অাইডিয়া প্রথিত করা যাবে।
ডিক্যাপিও, ট্রম হার্ডি, ক্যান, আর্কিটেক চরিত্রে ইলেন পেইজ, জোসেফ গর্ডন সবাই ভালো অভিনয় করে। আমি মনে করি সবচেয়ে বড় অভিনেতা হল পরিচালকর ও লেখক ক্রিস্টোফার নোয়ান। এমন একটা থিম নিয়ে ছবি করার ভাবনা এবং সেটা সার্থক ভাবে উপস্থাপন করা চাট্টিখানি কথা না।
আমার রেটিংঃ৮/১০
(রি-পোষ্ট )
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১৩
১১টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×