লাল সবুজের নিশান খানি বাতাস পেয়ে উড়ছিলো
আর
রঙধনুকের ছোঁয়া পেয়ে আকাশখানি দুলছিলো।
তখন
স্বপ্নগুলো কেমন করে মেঘের পরে ঝুলছিলো
আর
রক্তে কেনা স্বাধীনতা উষ্ণ বুকে বাজছিলো।
আমরা তখন বিজয়ী বেশে, প্রাণটি খুলে হাসছিলাম
স্বাধীন হবার আনন্দে ভাই স্বর্গসুখে ভাসছিলাম।
আমরা তখন ভাই হারানোয় বোন হারানোয় গর্বিত
যুদ্ধ জয়ী বাহুর ভয়ে দুষ্টগুলো শংকিত।
তখন
দু'চোখ ভরা স্বপ্নে মোদের চক্ষুগুলো জ্বলছিলো
আর
শস্যে ফলে ফুল ফসলে মিষ্টি ধ্বনি বাজছিলো।
তখন
কই দুশমন? নেই দুশমন, সব ভুলে ভাই একাকার
বাংলা আমার, বাংলা তোমার , গড়ব এবার চমৎকার।
সব সয়েছি, খুব সয়েছি; হাজার রকম অত্যাচার
পাঠান-মোগল-ইঙ্গ-পাকি; সব বেনিয়ার এক বিচার।
এখন থেকে এই যে সবুজ ছোট্ট কোমল দেশটাকে
মনের মতো গড়ব ও ভাই, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে।
সুখে হাসি, দুঃখে হাসি, মোদের তখন হাসার দিন
এই সুযোগে স্বপ্নগুলো , রইলো না আর সব রঙিন।
কি যে হলো, কখন হলো হঠাৎ দেখি খাদ্য নাই
অনাহারীর পাঁজর জুড়ে মন্বন্তরের ভীষন ঘাঁই।
তখন
আমরা হঠাৎ ভীষনরকম অনাহারে মরছিলাম
আর
ওনারা কেউ ফুলছিলো যে, চোখ মেলে তা দেখছিলাম।
তখন
সদ্য কেনা স্বাধীনতা; জ্বলছিলো আর নিভছিলো
লোডশেডিংয়ের ফিকির যেন, ভীষন রকম ধুঁকছিলো।
কিন্তু আরো বাকী ছিলো, সেই খেলাও হলো
স্বপ্ন দিয়ে বঙ্গবন্ধু, মৃত্যূ মেডেল পেলো।
আমরা তখন বোবা-কানা অন্ধমতন বাঁচছিলাম
বুক পাঁজরে স্বপ্ন আশার কবর গুলো খুঁড়ছিলাম।
তখন
কেউ বলিনা, কেউ দেখিনা, দেখা শোনাই পাপ
লাল সবুজের স্বপ্ন জুড়ে উঠছে ফুঁসে সাপ।
তখন কাব্যকথা ছন্দ
আর ফিসফিসানো বন্ধ।
তখন মুখটি খোলা গোনাহ্
আর বন্ধ জানা-শোনা।
তখন
কাঁদছিলো কি স্বাধীনতা; কে রাখে তার খোঁজ
হঠাৎ এমন গদি পেলে, লাগাও স্বাদের ভোজ।
লুটেও খান, পুটেও খান, আমরা চুনোপুঁটি
ওনাদের ঐ ভীষন ভোজে, বাঁচছি গুটিশুটি।
ওনারা তখন চর্বিতেলে নধর দেহে গর্জালেন
আর
দেশটা ওদের বাবার তালুক, এই ভেবে খুব বর্ষালেন।
আবার হঠাৎ পাল্টে গেলো, লাগল ভীষন গোল
মিলিটারীর ক্যাপ মাথাতে, গনতন্ত্রের ভোল।
তখন
সানগ্লাসে'রি শীতল ছায়ায় আমরা সবাই নাচছিলাম
আর
একটা কিছু মস্ত হবে; এই আশায় বুক বাঁধছিলাম।
তখন
ভাঙা স্যুটকেস স্যান্ডোগেঞ্জীর প্রশংসাতে বুঁদ ছিলাম
আর
খালটি কেটে কুমির আনার উৎসাহে খুব হাসছিলাম।
আমরা তখন হাসছিলাম
আকাশ পাতাল সব কাঁপিয়ে
ভীষন জোরে কাশছিলাম।
আহা আছি; বেশ আছি; রাম রাজ্যে রোজ
কাঁদছিলো কি স্বাধীনতা? কে রাখে তার খোঁজ।
কিন্তু বিধির সইলো'না
রাম-রাজ্য রইলো'না।
গুপ্ত হত্যা চললো আবার, স্বাধীনতা কম্প
সদ্যশেখা খুন-খারাবীর নির্লজ্জ লম্ফ।
এলেন তিনি , স্যুটেড-বুটেড, ফার্স্ট-লেডি সংগে
এমন ধরন, চলন-বলন , আর দেখিনি বংগে।
তখন
লাগ-ভেলকি-লাগের খেলায় আমরা আবার অন্ধ
ঝিমিয়ে গেছি বেশ খানিকটা, এটাতে নাই সন্দ।
তিনি কাব্য লিখেন, মিষ্টি হাসেন, স্যুট ভিজিয়ে রোজ
বন্যা জলে- গানের সুরে দিচ্ছেন বেজায় পোঁজ।
তাহার মতো সুদর্শনের মুকুটে নাই "না"
গনতন্ত্রের ব্যালট-বাক্সে আমরা সবাই "হ্যাঁ"।
হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ ( দয়া করে অট্ট হাসি হাসুন)
কিন্তু দেখি ফিসফিসানি বাড়ছে দেখি সব ঘরে
একটা ভীষন অস্বস্তি হায়, এক নায়কের রুপ ধরে।
তখন
তিনিই আদি তিনিই অন্ত, ভাবখানা তাই বলছিলো
আর
পুড়ে যাওয়া দেশটা আবার, পোড়ার ভয়ে কাঁপছিলো।
হঠাৎ মোদের কি যে হলো; ফিসফিসানি ছেড়ে
উচ্চ কন্ঠে আওয়াজ হলো; গোলমালটা বেড়ে।
স্বৈরাচার, গনতন্ত্র - এমন ধারার বুলি
বন্দুকই তো গদিতন্ত্র - যদি থাকে গুলি।
গুলিই দিলেন, বুক বরাবর; পাখি শিকার মতো
কঁকিয়ে উঠলো স্বাধীনতা, কাঁদলো অবিরত।
অমন যে ঐ হিটলার বা মুসোলিনীর ধার
তলিয়ে গেলো তারাও কবে; ইনিতে কোন ছার।
তখন
আবার যেন স্বাধীন হলাম, এমন সুখে ভাসছিলাম
যেন
ফুলের মালা গলায় দিয়ে মামার বাড়ি যাচ্ছিলাম।
মামাবাড়ির গনতন্ত্রের একটা দারুন গাছে
বাঁদর হয়ে আমরা সবাই মাতবো ভীষন নাচে।
তখন গনতন্ত্রের কুমারী রূপে আমরা প্রেমে কাঁপছিলাম
আর
সত্যনিষ্ঠ যুধিষ্ঠির'কে খুঁজে বেশ বার করছিলাম।
আহা! কাঁপি থরথর নির্বাচনের মোহময়ী ধাঁধায়
কাকে ফেলে কাকে বাছি; এমনি বিকট বাধায়।
ইনি দারুন মোটাতাজা; ইনির কোর্তা সাদা
ইনি কেমন কৃষ্ণ কৃষ্ণ ; খুঁজছেন যেন রাধা।
তখন
বুকপকেটে লুকিয়ে রেখে ক্ষমতাবান ভোট
গনতন্ত্রের রূপ ঢেকেছে ধারাবাহিক চোট।
তারপর এলেন - উনারা এলেন সর্বজয়ী বেশে
হাসছিলো কি স্বাধীনতা; ব্যঙ-দুঃখের রেশে?
ইনারা বলেন- মানিনা ভাই, কারচুপি সূক্ষ
জলের মতন ক্লিয়ার হলো - গদিতন্ত্রই মূখ্য।
অনেক বছর উপোস ছিলেন, থাকলে এমন উপোস
কে না বলেন চার-ভাঙিয়ে খাবে না গাপুস-গুপুস?
ইনারা খান মনের সুখে, আমরা তখন ক্যাবলা
সব ক্ষমতার মূল জনগন, মেরে গেছি ভ্যাবলা।
না-না-না-না তা হবে না, একি গনতন্ত্র
গদী ছাড়েন, সরে দাঁড়ান - এলো নতুন মন্ত্র।
তখন
আমরা আবার বুক পাতলাম, স্বর চড়ালাম উচ্চে
আর
ঢিল পাড়লাম গনতন্ত্রের কুক্ষিগত গুচ্ছে।
আবার চলল্ গরু খোঁজা যুধিষ্ঠিরের ভাইকে
অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচনের দক্ষ নিপুন ধাইকে।
পুরনো সব ভুলে চুকে আমরা সবাই প্রজা
পকেট পুরে ঘুরে বেড়াই পাঁচ বছরের রাজা।
কেউবা দেখি তসবী টিপেন,কেউবা লিপষ্টিকে
ঠোঁট রাঙিয়ে দিবেন বুঝি গনতন্ত্রের টিকে।
উনারাতো অনেক হলেন , এবার ইনারা এলে
গনতন্ত্রের যাদুর প্রদীপ দিবেন বুঝি জ্বেলে।
তা জ্বাললেন , ভীষন ভাবেই , সজোরে তা জ্বলছিলো
পুড়ে না যায় , সেই আগুনে - এমন ধারার ভয় ছিলো।
তখন
আমরা আবার ছাগল মায়ের তিন নম্বর ছানা
লাফাই ঝাঁপাই তিড়িং বিড়িং অষ্টপ্রহর কানা।
হ্যানো ত্যানো প্রতিশ্রুতি স্বপ্ন দেখার কান্ডে
পুরনো সেই মাছি যেন মধু-তন্ত্রের ভান্ডে।
শুনেছি ভাই বেলতলাতে একবার'ই যায় ন্যাড়া
আমরা কি ভাই এতই সহজ, আচ্ছা রকম ত্যাড়া।
তথাস্ত্ত; তাই, এবার খোঁজো যুধিষ্ঠিরের ছেলে
পাঁচটি বছর আচ্ছা রকম এনাদের খাওয়া হলে।
একা খাওয়ার মুরোদ কিন্ত্ত্ উনাদের আর নাই
জোট বাঁধ, শরীক আনো, তোড়জোড়টি তাই।
গোল, চৌকো, লম্বা মতন হাজার রকম টুপি
ধর্ম কিন্তু পালিয়ে গেলো কখন চুপিচুপি।
তখন
এদের যেন কেমন কেমন চেনা চেনা লাগছিলো
আর
স্বাধীনতা গুমরে উঠে বুক ফাটানো কাঁদছিলো।
কাদঁছিলো সব ভায়ের আত্মা, বোনের আত্মা যোদ্ধারা
কান্না শোনে মোরা জাগিনা, যদিও জাগুক মুর্দারা।
এবং এলেন, আসতেই হবে , চার পেয়ে এক আজব জীব
চার রকমের ভোজের চোটে কঁকিয়ে উঠলেন স্বয়ং শিব।
বাঃ বাঃ বাঃ লুটোপুটি হরির ধনে লাগছে লুট
হরিটা কে? কে জিজ্ঞাসে? ভাগ্, বেয়াদব, শালা , ফুট্ ।
মিউজিক্যাল চেয়ারেতে এই বরাবর খেলা
এমনি করে গড়ায় আরো সৃষ্টি সুখের বেলা।
সৃষ্টি সুখের উল্লাসেতে সোনার বাংলা দেশ গড়ি
রাজকুমারের পদধ্বনি বাজছে শুনি বেশ করি।
ততোদিনে কান মলেছি; নাক মাটিতে খৎ দিতে
ভুল কি হলো? ভুল করেছি? ৭১'রে যুদ্ধ জিতে??
তখন
গোলক ধাঁধায় আটকে গিয়ে নাভিশ্বাসে ধুঁকছিলাম
আর
এ মানিনি, ও মানিনা , এমন আওয়াজ তুলছিলাম।
তখন
বোম-তলোয়ার-লাঠি-সোঠায় জয়ের ডাকে একাকার
স্বাধীন বাংলায় স্বাধীন মতো নৃত্য-গীতে চমৎকার।
ইনারা নাচেন, উনারা নাচেন হাতে তে শমসের
লংকায় তো রাবনই যাবেন , এমন কি আর দোষের।
তখন
স্বপ্নে দেখা সোনার বাংলা আছড়ে খেয়ে পড়ে
শত টুকরো স্বাধীনতায় ; কাঁদছে অগোচরে।
আমরা শক্তি আমরা বলের জানাই ছিলো ফল
বাতাসেতে নড়ল যেন ধর্ম নামের কল।
কি হতো আর; কে জানে তা; হতো এমন কি আর
দেশ বাঁচাতে এলেন যেন খিলজী বক্তিয়ার।
ভীষন রোষে রুদ্র ফুঁসে পট্ পটা পট্ পট্
এরে ধরো তারে মারো ভীষন ঘনঘট।
একে একে শুনি যখন অবিশ্বাসী মনে
সব হুজুরের তেজারতি সাদা-কালো ধনে।
ওহে অবোধ পড় সুবোধ নামতা দুলে দুলে
স্বাধীনতার সার কথাটি শিকের পরে তুলে।
এক্ এক্কে এক্
একে একে দিচ্ছি শিক্ষা,যত্ন করে শেখ।
দুই এক্কে দুই
তোমরা থাকো সোনালী ব্যাংকে, সুইস ব্যাংকে মুই।
তিন এক্কে তিন
ঘুসে শুষে টেন্ডার নিয়ে নাচরে ধিন তা ধিন।
চার এক্কে চার
নিজের ভেবে সব খাওরে দেশটা মোর বাবার।
পাঁচ এক্কে পাঁচ
চ্যানেল খুলে বড় গলাতে মিষ্টি কথার টাচ্ ।
ছয় এক্কে ছয়
জনগন কে কাঁচ-কলাটি দেখাবে নিশ্চয়।
সাত এক্কে সাত
কাট মার যা ইচ্ছে ভাই, করলে উৎপাত।
আট এক্কে আট
তুমি আমি , আমি তুমি , বেঁধেছি আটসাট।
নয় এক্কে নয়
ঘাটে মাঠে নিজের লোকে ভরাবে নিশ্চয়।
দশ এক্কে দশ গুনে মনে মনে বলি
খাওয়া দাওয়া যাই করো ; ঢেঁকুর নাহি তুলে।
কিন্তু ঢেঁকুর তুলতে হলো; দিস্তা দিস্তা লেখায়
টাকা মাটি মাটি টাকা; একথাটি শেখায়।
তা শিখেছি, বেশ শিখেছি; মুগ্ধ মোদের দু'কান
শুধু
বাতাস পেয়েও আর ওড়েনা লাল সবুজের নিশান।
আর ডাকেনা বুকের খাঁচায় স্বাধীনতার পাখি
কখন যেন ছিঁড়ে গেছে সুখ স্বপ্নের রাখি।
তবুও হাসি, আমরা হাসি , এই ভাই হা হা
তালিয়া বাজাই তাদের পিছেই, মুগ্ধ গলায় বাহা।
ভাবনা কি ভাই, ভাবনা তো নাই, বলো হরি-বোল
আবার হবে তৃপ্ত খাওয়া; স্বাধীনতার ঝোল।
ভাবছো বুঝি - হতাশাবাদী, বাঁকা চোখে দৃষ্টি দেই
আশার কথায় বুক বাঁধিনা, স্বপ্নে আমার আস্থা নেই।
কিন্তু আমি অশ্রু দেখি; আকাশ বাতাস চ্ছলচ্ছল
কাঁদছে মানুষ ; স্বাধীনতা, কাঁদছে ব-দ্বীপ অবিরল।
আবার হবে? বলছো তুমি? বাংলা মায়ের টানে
শুণ্য গোলা ভরবে বুঝি স্বাধীনতার গানে।
মিলবে আবার জীবন-জীবন, পদ্মা মেঘনার দেশে
সব হৃদয়ে সব হাসিতে, সুখ স্বপনের রেশে।
আমরা আশায় আশায় থাকি
মোদের আশার পরান পাখি
দোলে বাংলাদেশের গানে
যাবে স্বপ্ন পথের পানে
যেথায় তাকিয়ে তেপান্তর
দুঃখী ঘরে বাংলা মায়ের লাল সবুজ অন্তর।।
(ছড়াটির ইতিহাসের ব্যাপ্তিকাল ১৯৭১-২১.০৪.২০০৮)
বিঃদ্রঃ ১. ছড়াটির লেখার কাল ২১.০৪.২০০৮, ফলে ইতিহাস এসে সেখানেই থেমে গেছে। তবে মনে হয় নতুন করে আর লিখতে হবেনা। পরবর্তী ইতিহাসের জন্য শুধু পুনঃপঠন করে নিলেই চলবে কিংবা চলতে থাকবে...
২. শতাব্দীর লম্বাতম ছড়াটি পাঠের জন্য আপনাকে অভিনন্দন।
৩. ছবি গুলো সবই ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত, কপিরাইট ভংগের জন্য দুঃখিত।
৪. সবিনয় অনুরোধ, কারো কাছে এরচেয়ে ভালো মানে উপযুক্ত ছবি বা কার্টুন থাকলে শেয়ার করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
৫. ছড়াটি আপনার বাচ্চা-কাচ্চাদের বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরবর্তী ইতিহাস জানানোর জন্য ব্যবহার করতে লেখকের অনুমতির প্রয়োজন নেই।
৬. পোষ্টটি স্টিকি করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি। (দয়া করে আমাকে হ্যাঁ ভোটে, এরশাদীয় কায়দায়, জয়যুক্ত করুন)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ ভোর ৪:৪৫