somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামহোয়ারইনকেই কেন সচল দেখতে চাই?

৩০ শে জুন, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সচলায়তন নিয়ে আমার সেদিনের মন্তব্য পড়ে যে কেউ বুঝবেন এক ধরনের কষ্ট পেয়েছি। সচলায়তন চালু হওয়ার কষ্ট কেউ ভেবে থাকলে সে ভুল করছে। বাংলা সাইট নেটে যত হয় ততই ভালো, বৈচিত্র্যতা বৃদ্ধির জন্যই ভালো। তাই সমস্যা সেখানে নয়... আস্তে আস্তে এরকম অনেক কিছু যেন আঙ্গুল তুলে বলছে, সামহোয়ার বড় অচল, দূষিত বাতাস থেকে সুস্থেরা সুস্থ্য শরীর নিয়ে ভাগছে। বাঁচতে চাইলে পালাও, নইলে পঁচে মরো।

হলোই না, কিন্তু এই ম্যাসেজেও আমার এত খারাপ লেগেছে কেন সেটা সচলায়তনের লেখকেরা বুঝবেন না। আমি ছোট মানুষ। যতটা ছোট হলে মানুষ কথা বলতে পারে না, তার চেয়ে বড়। কিন্তু যতটা বড় হলে কথা সব সময় অর্থপূর্ণ হয়, তার চেয়ে ছোট। তাই, খুব এলে বেলে মানুষ আমি। যে কাউকে কী বোর্ড দিয়ে বসিয়ে দিল এরকম লেখা লিখতে পারবে। লেখক হওয়ার জন্য যা দরকার, তার কিছুই আমার নেই।

একজন 'ব্লগার' হয়ে উঠেছিলাম গত এক বছরে। 'ব্লগার' হওয়ার জন্য বেশি কিছু লাগে না, সময় মত নিজের 'অভিমত' প্রকাশ করতে হয়। ওসবকে লেখা বললে লেখকেরা আত্মহত্যা করবে। তবু, এক ধরণের ভালো লাগা ছুঁয়ে থাকত ওসবকে লেখা ভেবে, কেউ পড়ে মন্তব্য করলে। কারও প্রিয় ব্লগারের লিস্টে নিজের নাম দেখলে। কারণ ওই, আসলে তো লেখক হয়ে উঠি নি। "পনের বছর বয়সে দেশত্যাগী আমি"র সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য হয় বছরে একজন হুমায়ূন পড়ুয়া পাবলিক খুঁজে পেলে। সেই মানুষকে সাহিত্যের বড় ধরণের সমঝদার ভেবে আনন্দে দিশেহারা হতে হয়।

চিঠির বাইরে কখনও দুই লাইন লিখি নি। ব্লগেই প্রথম লিখলাম। বাংলা কীবোর্ডের সাথে সখ্যতা এখানেই। যেহেতু আমার ভিতরের যেই সত্ত্বাটার অনেক কিছু বলার আছে, (হয়তো না বুঝেই), সেই সত্ত্বার আবিষ্কারক বা জন্মদাতা সামহোয়ার ইন, তাই সা.ই. এর গুরুত্ব আমার কাছে অনেক অন্য রকম। জন্মভূমি কিংবা মাতৃভাষার সাথে কেমন একটা আপন গন্ধ জড়ানো থাকে, ওরকম। ইমোশনাল এটাচমেন্টটা খুব বেশি রকমের বেশি।

যারা সচলায়তনে গিয়েছেন, তাদের জন্য ব্যপারটা মোটেও ওমন না। সা.ই তে আসার বহু আগেই তারা জানতেন তারা লেখেন ভালো, বহু আগে থেকেই তারা 'ভালো লিখতে' জানেন। এখানে লিখে হয়তো অনলাইনে একটু নিয়মিত হলেন। কিন্তু জেবতিক আরিফ, হিমু/মুখফোড়, কনফুসিয়াস, মাসকওয়াথ আহসান, অমিত আহমেদ, মুহম্মদ জোবায়ের, শুভ এবং অন্যান্যেরা--সব সময়ই লিখে এসেছেন, নিজেস্ব বই আছে, পত্র পত্রিকায় লিখেছেন সব সময়। সামহোয়ারের পাশাপাশিও লিখতেন হাজারদুয়ারী, বীক্ষণ বা গুড়ুচণ্ডালিতে। 'সাহিত্যিক' হয়ে উঠেছেন অনেক আগেই।

পার্থক্যটা আসলে এখানেই। খুব সংগত কারণেই আমার বুকের যেই বিশাল জায়গা জুড়ে সামহোয়ার ইন আছে, 'সৃজনশীল', 'উদারমনা' লেখকগণের সেটা থাকার কারণ নেই। তাই আমার যেই ভীষণ কষ্ট হয় সামহোয়ার ইনকে টুকরো টুকরো হতে দেখলে সেটা তাঁরা বুঝবেন না। 'বেতনভোগী কর্মচারী' ট্যাগ বসিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন চোখের জল আর বুকের রক্তক্ষরণ দেখে।

আমি এমনিতেই সাঁতার পারি না, তারপরো ভাসছি সা.ই.তে, খড়কুটোর উপর অসীম ভরসা নিয়ে।

আমার খুব ভাবতে ইচ্ছা করে, সামহোয়ার ইন আলো দিবে, বাতাস দিবে, আমার মত 'অসৃজনশীল', 'অনুদার' মনের স্রেফ ব্লগারদের আরেকটু বড় হয়ে ওঠার সুযোগ দিবে। আমার ব্যপারে কেউ কেয়ার করে না, তাই আমাকে পুরাপুরি গণনার বাইরে রাখতে চাইলেও আপত্তি নেই। তবে খুব 'সম্ভবনাময়' অনেককেই প্রথমবারের মত আবিষ্কার করেছে সা.ই.। জন্ম দিয়ে যদি ধারণ করতে না পেরে নিজ হাতে বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে মেরে ফেলে সা.ই... তাহলে বুকের ভিতরে অনেক কষ্ট হবে না?

আমার ছোট বোন মীরার প্রতিটা লেখা আমি ভীষণ মুগ্ধতা নিয়ে পড়ি। মেয়েটা দশ বছর বয়সে বাংলাদেশ থেকে এসেছে। ওর বয়সে আসা প্রচুর ছেলে মেয়েদের বাংলা বলা ভুলে যেতে দেখেছি, পড়া তো দূরে থাক। আমার ছোট্ট বোনটা এমনি যা বাংলা পড়তো, আগ্রহ অনেক গুণে বেড়েছে কেবল সা.ই.র গুণে। রবি ঠাকুর, শরৎ শেষে এখন সমরেশে। মাত্র ষোল বছর বয়সে ওর শব্দ বুননের যেই যোগ্যতা দেখি আমি, আমি জানি যদি একটু সুযোগ পায়, যত্ন পায়, তাহলে এই বুননের ক্ষমতা বেড়েই চলবে। আমি খুব তৃপ্তি নিয়ে পড়ব ওর লেখা, আর দশ বছর পরেই।

ও এখনও 'সাহিত্যিক' হয়ে ওঠে নি, 'সৃজনশীল', 'উদারমনা' এই সব সীলও পড়ে নি গায়ে--থ্যাঙ্কফুলী, এখনও অনেক ছোট আছে ওসব 'বড়মানুষী' কাজ কারবারের জন্য। ওর মত মানুষদের জন্য হলেও সামহোয়ার ইনের বিশুদ্ধ বাতাস নিয়ে থাকাটা খুব দরকার।

তাই সুস্থতা আর সচলতা চাই, সামহোয়ারইনেরই।

লেখার ইচ্ছা কমতে কমতে এখন গোঁড়ালী অব্দি নেমেছে। এভাবে আরও চললে, শুকনো পায়ে হেঁটে চলে যাব একদিন। নি:শব্দে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৩৫
৪০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×