somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ্যানোনিমাস য়ুজার, কুৎসিত মনন এবং একটি মামলা

২৫ শে জুলাই, ২০০৭ দুপুর ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় দেড় মাস আগে খবরের কাগজে একটা খবরে চোখ আটকে গিয়েছিল। ইন্টারনেটের একটা ফোরামে নারী অবমাননার ব্যাপারে মামলা নিয়ে। তখন পড়ে বেশ ভালো লেগেছিল, ব্লগস্পটে একটা ব্লগ লিখেছিলাম। এখন ব্লগে আলোচনার বিষয় বস্তু দেখে মনে হচ্ছে, দেয়া যায় এখানে।


----------------------------------------------

জুন ১৮, ২০০৭

কালকে একটা খবর পড়ে আমি হাসতে হাসতে শেষ। কখনও খবরের কাগজ কাটাকুটি করে রেখে দেয়ার অভ্যাস নেই, কিন্তু কালকে ট্রেইনে বসেই পেপার থেকে ছিঁড়ে খবরটা আলাদা করে ব্যাগে ভরে রেখেছি। জমিয়ে রাখব খবরটা, নিয়মিত পত্রিকা চেক করব মামলার অগ্রগতি দেখার জন্য।

খবর হচ্ছে, ইন্টারনেটে একটা ফোরাম নিয়ে। সেখানে আমেরিকান ল' স্টুডেন্টদের আনাগোনা বেশ ভালোই। তো সেখানে, সাধারন ফোরামে যেসব নোংরামি হয় ওসব হতো। গালাগালি, ব্যক্তিগত আক্রমন। এই নোংরামির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে দুই নারী! আমেরিকার য়েইল ল' স্কুলের দুই জন ছাত্রী মামলা ঠুকে দিয়েছে যারা নোংরামি করছিল তাদের বিরুদ্ধে!

যেই থ্রেড নিয়ে মামলা করেছে সেটায় এমন কিছু বক্তব্য ছিল-- 'স্টুপিড বিচ টু এন্টার য়েইল ল'। সেখানে কয়েকজন সদস্য বেশ কিছু কুৎসিত কথা বলেছে, বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে দিয়েছে, যেগুলো ওই ছাত্রীগণ 'হেরাসিং রিমার্কস' বলেছেন। 'দে টু অলসো স্যুড এ ফরমার ম্যানেজার অফ দ্যা সাইট বিকজ হি রিফিউজড টু রিমুভ ডিসপারেইজিঙ ম্যাসেজেস'--তারা ফোরামের একজন প্রাক্তন ম্যানেজারের বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন, কারণ তিনি আক্রমনাত্মক কথাগুলো সরিয়ে ফেলতে অস্বীকৃতি জানান। খবরে লেখা আছে, 'এনাদার উইমেন এনডিউয়ারড সিমিলার এটাকস', আরেকজনও একই ধরণের আক্রমন সহ্য করে গিয়েছেন। পড়ে মনে হলো, এই রকম হ্যারাসমেন্টের স্বীকার মেয়েরাই বেশি হয়। তবে সবচেয়ে খুশির খবর হলো, নতুন সম্ভবনা দেখা গিয়েছে, এই মামলার আসামী, যারা 'এনোনিমাস য়ুজার' ছিল, তাদের পর্দার আড়াল থেকে বের করে আনবে আদালত!

আমি খবর পড়ছিলাম আর বলছিলাম. ইয়েস, ইয়েস! গো গার্লস! খুব বেশি দিন হয় নি পাবলিক ফোরাম ব্যবহার শুরু করেছি। এর মধ্যে এমন সব কথা বার্তা শুনেছি যা সারা জীবনে শুনি নি, আশা করি কখনও শুনতে হবে না। শুধু তাই কি, কত জনে বানিয়ে বানিয়ে গুজব শুরু করে দিয়েছে! এই গুজবগুলো এমন, যেগুলোর প্রভাব শুধু ভার্চুয়াল জীবনে সীমাবদ্ধ থাকে না, ব্যক্তিজীবনেও চলে আসে। ও আসলে ছেলে, ও আসলে ৪০ বছরের এক বুড়ো লোক, ও আসলে একা লিখে না, একই একাউন্ট থেকে আরও অনেকে লিখে। ও হ্যান, ও ত্যান। এসব গুজব চালু করে মোটামোটি ব্যক্তি আক্রমনটা হালাল করে নেওয়া আর কি। এসব কেন করে মানুষ? আয়না দেখে না মানুষগুলো? রাতে ঘুমাতে পারে তো?

সবচেয়ে আঘাত পেয়েছিলাম একজনের আচরনের কথা শুনে। সেইজন নাকি আমার অবর্তমানে, ব্লগের বাইরের আড্ডায় বলেছে আমাকে ফোন করেছেন, ফোন ধরেছে এক ছেলে। এভাবেই তিনি নিজের সততা আর আমার ছেলে হওয়া দুইটা বিপরীতে রেখে প্রমান করে দিলেন আমি ছেলে! জনপ্রিয় মানুষ, তাঁর সততা নিয়ে সন্দেহ করার প্রশ্নই আসে না! অন্যদিকে আমি... যার কথা বার্তা পাবলিক এমনিই পছন্দ করে না। দ্যা চয়েস ইজ ইজি! অথচ তাঁকে আমি কখনও নাম্বারই দেই নি আর আমার ফোন আজ অব্দি আমি ছাড়া অন্য কেউ ধরে নি। কেন একজন শুধু শুধু নিজের অর্ধেক বয়সী একটা মেয়েকে নিয়ে এভাবে মিথ্যা কথা বলবে? (আক্ষরিক অর্থেই তিনি আমার মায়ের বয়সী)। আরও কত কুটনামী! দুভার্গ্যক্রমে, আমার কানে চলে এসেছে বেশ কিছু, ব্লগের বাইরে বলা হলেও। নিতান্তই দুভার্গ্য! আমার দুর্ভাগ্য। মানুষের পবিত্রতায় বিশ্বাস করতে চাই, সেই বিশ্বাসে চিড় ধরে তাই। যে বলেছে তার জন্য দুর্ভাগ্য। আমার চোখে অনেক ছোট হয়ে গেল তাই।

আমি শুধু আমার কথা বললাম। নেট ব্যবহারকারী মেয়েদের সবারই কোন না কোন সময় এমন ব্যপারের স্বাদ পেতে হয়েছে হয়তো। যারা পায় নি, তারা একটা গুনের জন্যই পেয়েছে--চোখ বন্ধ, কান বন্ধ, মুখ বন্ধ, নখ নেই, দাঁত নেই, বিষ নেই। সে যাক গে, নেটে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করুক, তাও মানা যায়, কিন্তু ব্যক্তি আক্রমন কেন? তার চেয়েও বড় কথা, একজনের অবর্তমানে অসত্য কথা বলে কুটনামী কেন???

আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, বাঙালী ছেলেরা অনেক কুটনামী করতে পারে, মেয়েদেরকেও হার মানায়। কুটনামী ব্যপারটা খারাপ, মেয়েরা করলেই খারাপ লাগে। ছেলেরা করলে অতিরিক্ত রকমের বাজে লাগে। আমার সাথে আদর্শিক মত পার্থক্য আসলে একটা অজুহাত। আমেরিকার ওই ল' স্টুডেন্টদের পিছনে লেগেছে যেই ছেলেগুলো, ওদের আবার কিসের আদর্শিক মতবিরোধ? ওই একই 'টাইপের' ছেলেগুলো সুযোগ পেয়ে একই কাজে লেগেছে আমার পিছনে। এরা স্কুলে, কলেজে, ইউনিভার্সিটিতে, কর্মক্ষেত্রে, নিজের বাসায়, যেখানে সুযোগ পাবে তাদের ভিতরের জানোয়ার বের হয়ে আসবে। কুৎসিত চেহারা বের হয়ে আসবে। এই একই কুৎসিত চেহারার একটা ফর্ম হতে পারে কোন ছেলের উপরও একতাবদ্ধ হয়ে মেরুদন্ডহীন, অর্থহীন আক্রমন। সোজা ইংলিশে "বুলিং"। একজন সত্যিকারের "পুরুষ" যা কখনই করতে পারে না।

আমার খুব দু:খ হয়, ওরা কখনও শ্রদ্ধা করার মত নারীদের নিজের জীবনে পায় নি নিশ্চয়ই। নারীদের যে শ্রদ্ধা করা যায়, তা বুঝে নি কখনও। সোজা সরল কোন নারীকে মা হিসেবে পেয়েছে, এক ধমকে চুপ করিয়ে রাখা যায়। বোনের প্রতি একমাত্র দায়িত্ববোধ ভালো পাত্রস্থ করা। নারীদের শ্রদ্ধা বলতে 'মা বোনের ইজ্জত' ছাড়া আর কিছু বুঝে না। মা অথবা বোন না হলে কাউকে শ্রদ্ধা করা নিষেধ! তার মানে নিজের বউকে শ্রদ্ধার দায় থেকে মুক্তি দেয়া যায় অনায়েসে। অফিসের কলিগ মেয়েটাকে নিয়েও তাই কুৎসিত কথা বলা যায়, সে তো আর মা বোন না! কিউরিয়াস--নিজের মা বোনের ইজ্জতে হাত লাগলে তেড়ে আসবে, এদিকে নিজের হাত লুট করতে থাকবে অনেকের ইজ্জত, সেই ব্যপারে কোন অসুবিধা নেই। একজন নারীর ইজ্জত যে শরীর সর্বস্র না, সেটা বুঝবে কতদিনে কে জানে!

মানুষগুলো মানুষ হোক! আর মামলায় জিতে আসুক নারীদ্বয়.. সমস্ত শুভ কামনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০০৭ দুপুর ২:৫৩
১৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×