somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ জীবন থেকে নেয়া

০৩ রা জুন, ২০১৩ রাত ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুটা বিব্রত বোধ করছে অনি । চারপাশের খুটিনাটি জিনিসগুলা নিয়ে নাড়াচাড়া করা তার পুরানো অভ্যাস । কিন্তু এখন সেটা করা যাচ্ছেনা । ঝিম মেরে বসে থাকতে হচ্ছে । কিন্তু তার অবচেতনমনে নানা ভাবনারা সারাক্ষনই ব্যাস্ত । জেলখানার ব্যাপার টা তার কাছে একেবারেই নতুন । কাল কোর্ট খোলার সাথে সাথে তাকে আদালতে সমর্পিত করা হবে । কিন্তু এ নিয়ে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই । সে এখন ভাবছে হাজতের গেটে যে ভদ্রলোক বসেই নাক ঢাকছে সে কি জানে তাকে যে চারটি মশা ঘিরে ধরেছে , না জানলেও জানানোর দরকার নেই , কারণ অনি এখন নিজেই মশা হতে চাচ্ছে । মশা হলে ব্যাপারটা চমৎকার হতো , হাজতখানার বিশাল বিশাল ফাঁকা দিয়ে বের হয়ে যেতে পারতো ! তাকে এখন খুব দরকার অনিলার ।

মাথাটা ঝিম ঝিম করছে ! তার সাথে অনিলার পরিচয় বছর পাঁচেক আগে । ভার্সিটির বারান্দায় মেয়েটা একাই বসে ছিল , দূর থেকে বিষন্ন মিষ্টি একটা মেয়েকে দেখে অনি কাছে এলো । কিন্তু কথা বলার সাহস পায়নি , পরে বন্ধু রাসেলের জন্মদিনে পরিচয় হয় । অনিলা রাসেলের খালাতো বোন ।
পরিচয়ের পরদিন থেকে ক্যাম্পাসে হাই-হ্যালো ! ধীরে ধীরে ওদের মাঝের রসায়ন টা জমতে থাকলো । অনিলা মেয়েটার সারাক্ষণই মন খারাপ থাকে , এত মিষ্টি একটা মুখ কিন্তু কেন জানি সারা বেলা মেঘ জমে থাকে । একদিন অনিলাকে ঘুরতে যাবার কথা বলে অনি । অনিলা খুব শান্তভাবে মাথা নাড়ে । গাড়িতে অনি নানা রকম গল্প , জোকস বলে অনিলাকে উৎফুল্ল রাখার চেষ্টা করে ! সেদিন শহুরে বাতাসের বাইরে গিয়ে অনিলার মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরতে শুরু করে ।
অনিলা বাবার পছন্দ মত বিয়ে করেছিল । প্রথম কয়েক দিন ভালোই ছিল । কিছুদিন পর টের পায় স্বামী মাদকাসক্ত । সাথে শ্বাশুড়ির নানা রকম খুনসুটি কাটা গায়ে লবণের মত লাগতো । শেষে অনেকটা বাধ্য হয়ে তালাক নিয়ে আবার পড়াশুনা শুরু করে ।
তার কাছে জীবনবোধ নিতান্তই বেঁচে থাকা । অনি ধীরে ধীরে অনিলাকে বুঝাতে সক্ষম হয় চাইলে এখনো সব ঘুচিয়ে নেয়া যায় । সাথে অর্জিত হয় বিশ্বাস টাও । একসময় বিয়ে করে ওরা । ছোট্ট একটা চাকরী করে অনি , অনিলাও । দুজনের আয়ে ভালোই চলে সংসার ।
অনি স্পশটবাদী । নিজের বিবেক , নিজস্ব চিন্তা চেতনার সাথে আপোষ করতে নারাজ । ইতিহাসের আর সাহিত্যের বই পড়ে তার অবসর সময় কাটে । অনির মতে ইতিহাস মানুষকে শেকড় চেনায় , নিজের অস্তিত্ব বুঝতে শিখায় , আর ভবিষ্যতের রাস্তাটাও অনেকটাই দেখিয়ে দেয় । তাই ইতিহাস বাদ দিয়ে , ইতিহাসের ভুল না শুধরে এক পাও আগানোর উপায় নেই । যুগ যুগ ধরে মনিষীদের বলে আসা এ কথাটা অনি খুব অনুভব করে । কিন্তু অজানা কারণে জাতী হিসেবে আমরা কেন জানি শুধু ভুল আঁকড়ে ধরে থাকি , শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে গিয়ে দু কদম সামনে গিয়ে তিন কদম পেছনে যাই । অনির রাজনৈতিক দর্শন আপোষহীন । ওর এই সচেতনতার জায়গাটা অনিলার ভালো লাগে ।

সরাসরি কোন দলের সাথে অনি জড়িত নয় । অফিস থেকে বাসায় ফিরে নানা কাজে ব্যাস্ত থাকে । আর সবার মত ওর একটা ভার্চুয়াল অস্তিত্ব আছে । দিনভর নানান ঝুট ঝামেলার পর এখানে প্রশান্তি খুজে ।ফেসবুকে ব্লগে অনি লিখে তার নিজস্ব দর্শনের কথা , তার ভাবনার নানান দিক । এভাবেই একদিন সবাই সচেতন হবে , তখন পথচলা শুভ হবে । দেশের ভালো হলে , প্রতিটা নাগরিক তার সুফল ভোগ করবে। এভাবেই ভাবতে পছন্দ করে অনি । অনির কবিতা অনিলা খুব ভালোবাসে । গল্পে , কবিতায় অনি তার চিন্তার বহিপ্রকাশ ঘটাতে চায় ।

একদিন সুখবর এলো , ঘরে নতুন অতিথি আসবে । অনির চাপে অনিলা চাকরী থেকে ছুটি নেয় । সামনের দিন গুলোর স্বপ্ন সাজাতেই চোখ ঝলমল করে । এমন সময়ে ইতিহাসের এক ঘৃন্য অপরাধী বিচার সংক্রান্ত রাজনীতির কারণে পার পেয়ে যায় । ক্ষোভে ফেটে পড়ে সচেতন একটা মহল । যার অধিকাংশই তরুন , ভার্চুয়াল অস্তিত্ব নেমে আসে রাস্তায় । সাথে যোগ দেয় একই দাবী নিয়ে একটি মতাদর্শে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীরা । নানা পেশার , নানা মতের লোক সবাই একাত্ব একটা দাবী নিয়ে । দাবী একটাই ইতিহাসের কলঙ্ক মোচন হোক ।
তখনই আরেকদল বোকা যারা নিজেদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেনা , ইতিহাস দেখেও না দেখার ভান করে তারা অনিদের এই প্রচেষ্টায় বাধা দেয় প্রোগাপান্ডা ছড়িয়ে । ফলাফল আরেক টি গ্রুপের আগমন , নতুন মোড়কে । অনিরা রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝেনা । শুধু জানে অতীতের ভুল না শুধরালে সামনে আগানো যায়না ।
অনিলা অসুস্থ শরীর নিয়ে বাসায় একাই থাকে । অনির দিন রাত কাটে অফিসে আর রাজপথে । এ নিয়ে অনিলার কোন অভিযোগ নেই , সেও তাই চায় ।
বিব্রত পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার গ্রেপ্তার করে অনি সহ আরো কয়জনকে । অনিলার এখন ভীষন প্রয়োজন অনিকে । হাসপাতালে যাওয়া দরকার । অনিলা খবর দেয় তার ভাইকে । হাসপাতালে নতুন অতিথি আসে ।
অনিলা চিঠি লিখে জানিয়ে দেয় অনিকে ওরা ভালো আছে । অনি যাতে মন ছোট না করে । ওর ছেলের নাম রেখেছে সূর্য । নতুন একটি সচেতনতার প্রজন্ম দেখা দিয়েছে সূর্যের আলোর মতই । আলোক রেখাটা মিলিয়ে যাবেনা যদি অনিরা ভেঙ্গে না পড়ে । সেই আলোকরেখা ছড়িয়ে পড়বে সূর্যদের মাঝে । এবার না হোক একদিন হবেই । তাই নিজের উপর আস্থা রেখে নিশ্চিন্তে থাকতে বলেছে অনিকে । চিঠির শেষে লিখে দিয়েছে
“ আমাদের ইতিহাস কাঁদছে ! বোবাকান্না !!

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ সকাল ১১:২৪
৪৭টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×