somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজিব ধরণের কয়েকটি মানসিক রোগ !

১৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

* Synaesthesia / সাইনাসথেসিয়াঃ এক ধরনের নিউরোলজিকাল আশ্চর্য ধরনের মানসিক রোগ ! যদিও এই রোগ টিকে পুরোপুরি খারাপ বা ভয়ানক বলা যাবেনা ! এই সমস্যায় যারা ভোগে তারা আশ্চর্য রকমের ক্রিয়েটিভ হয়ে থাকেন (আর দশ জনের চেয়ে )!


Synaesthesia শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ syn থেকে যার বাংলা অর্থ একত্রে বা একসাথে ! খুবই মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ধরনের সমস্যায় ভোগা লোকজনকে আপনি সুপার হিউম্যান ও বলতে পারেন , কেননা তাদের মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন অংশ নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের উপর একসাথে কাজ করা শুরু করে দেয় ! সহজ বাংলায় এভাবেও বলা যায় তাদের মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন অংশের মাঝে এক ধরনের সংযোগ স্থাপিত হয় যার কারনে তারা সংখ্যাকে চেনেন রঙের ভিন্নতার মত করে ! আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে ভুক্তভোগী সাউন্ড এবং খাবারের স্বাধ একসাথে মিশিয়ে ফেলেন ! :D :D !

এই রোগটি হতে পারে যে কোন দুটি ভিন্ন ধরনের অনুভূতির সংমিশ্রণ ! পাঁচটি অতি সাধারণ অনুভূতির ( দৃষ্টিশক্তি , ঘ্রাণশক্তি , শ্রবণশক্তি , স্বাদ অনুভূতি এবং স্পর্শশক্তি ) যে কোন দুটির মিশ্রণে মোট ২০ রকম সমস্যায় ভুগতে পারেন ভুক্তভোগী , যার মস্তিস্ক একটার সাথে আরেকটার মিশ্রণ করে দেয় ! কি অদ্ভুত সমস্যা !

যদি ও লজিকালি অনেক রকম সমস্যার আগমন হতে পারে , তারপর ও সবচেয়ে বেশী দেখতে পাওয়া কয়েক টি Synaesthesia কম্বিনেশনের ব্যাপারে একটু আলোকপাত করছিঃ
১ । Grapheme-Color Synesthesia:


সবচেয়ে কমন সমস্যা । ভুক্তভোগী এক্ষেত্রে বর্ণমালা বা সংখ্যাকে দেখে রঙ্গীন করে , যেখানে একজন সাধারণ মানুষের কাছে সে বর্নমালা বা সংখ্যাগুলো সাদা-কালো । তারা ভিন্ন ভিন্ন বর্ণমালা বা সংখ্যাকে ভিন্ন ভিন্ন রঙে দেখে ! আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে দুজন ভিন্ন ভুক্তভোগী অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোণ বর্ণমালাকে নির্দিষ্ট কোন রঙে দেখে থাকে , পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক না কেন ! অধিকাংশ ক্ষেত্রে “A” তাদের চোখে লাল হয়ে ধরা দেয় !
২। Sound-to-Color Synesthesia:
এই ধরণের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী , শব্দের সাথে কল্পনায় বিভিন্ন রঙের ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির বস্তু দেখার মত এক ধরণের অনূভূতির স্বাদ পেয়ে থাকেন । যখনই ভুক্তভোগী শব্দ শুনতে পান তখন সে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির জিনিসপত্র তার কল্পনায় স্পষ্ট ভাবে অনূভব করে থাকেন ! ভালো দিক হচ্ছে এক্ষেত্রে তারা যে কোন ধরণের শব্দে এমনটা অনুভব করেন না , নির্দিষ্ট কিছু শব্দ শুনলে তারা এমনটা অনুভব করে থাকেন ।
** বলিউডের “তারে জামিন পার” মুভিটিতে চমৎকার ভাবে দেখানো হয়েছে এই রোগের ভুক্তভোগীকে !


** Oniomania / অনিমেনিয়াঃ


সহজ বাংলায় এই রোগ হলো তীব্র শপিং এর প্রতি আকর্ষণ ! ব্যাপার টা শুনতে যতটা সহজ বা হাস্যকর লাগছে ভুক্তভোগীর জন্য তার চেয়ে অনেক বেশী কষ্টকর ! শপিং এর আকাঙ্ক্ষা টা তখনই রোগ হিসেবে পরিগণিত হয় যখন বারবার শপিং করাটা বাধ্যতামূলক হয়ে যায় ! খুবই ইন্টারেষ্টিং ব্যাপার হচ্ছে ভুক্তভোগী শপিং চলাকালীন সময়ে তার যাবতীয় কষ্ট ভুলে থাকে এবং প্রফুল্ল থাকে ! যখনই বাড়ি ফিরে যায় তার ব্যাক্তিগত জীবনের নানা সমস্যার কথা আবার মনে হয় এবং সে তার কিছুক্ষণ আগের করা অপচয়ের জন্য অনুশোচনায় ভুগে ! কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা এই ধরণের শপিং এর জিনিসপত্র নষ্ট করে ফেলে একেবারেই যাতে পরের বার না যায় ! কিন্তু রোগের সংজ্ঞাই বলে শপিং তাকে করতেই হবে !!!!
এই রোগের কারণে ভুক্তভোগী সামাজিক ভাবে , আর্থিকভাবে , মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ! অনেকেই ড্রাগ এডিক্টেক হয়ে পড়েন ! রোগ টির সূচনা স্বাভাবিকভাবেই শপিং এর প্রতি আকর্ষণ থেকে !
অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক একটি অলাভজনক প্রতিষ্টান “ BLUE STAR FOUNDATION ” এই রোগের জন্য কাউন্সেলিং এবং সচেতনতা তৈরীর কাজ করছে !~

*** Trichotillomania / ট্রিচোটিলোমিয়াঃ


আজব ধরণের একটি মানসিক রোগ ! এই ক্ষেত্রে রোগী নিজের মাথার চুল ,মাথার চামড়ার কাছাকাছি চুল , নাকের চুল , ভ্রু এর চুল নিজ থেকেই ক্রমাগত উঠাতে থাকে ! প্রাথমিকভাবে টিন এইজ বয়স থেকেই এটি শুরু হয় ! সাধারণত তীব্র হতাশা থেকে এটির সূত্রপাত হয় এবং এক সময় এটি নিজেই একটি হতাশায় পরিণত হয় ! অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধু মাথার চুল চেড়াতে সীমাবদ্ধ না থেকে ভ্রু বা অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় অংশের চুল ও চিড়তে শুরু করে যখন রোগটি সিরিয়াস আকার ধারণ করে ! ভুক্তভোগীরা ঘোরের বাইরে এলে মাথায় হ্যাট , কৃত্তিম ভ্রু পড়ে বাইরে বের হয় ! ক্রমাগত কাউন্সেলিং বা মানসিক প্রশান্তির মাধ্যমে রোগ টি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব ।

**** Dissociative Identity Disorder :
"sybil " মুভির একটি অংশ - ইউটিউব থেকে



এই ক্ষেত্রে রোগী মাঝেই মাঝেই সব কিছু ভুলে যায় ! আরো ভয়ানক ব্যাপার হচ্ছে সে একই সাথে দুইজন মানুষের রুপ ধারন করে ! কিছুক্ষন নিজের , কিছুক্ষণ অন্য আরেকজনের ! মাঝেই মাঝেই সম্পূর্ন ভিন্ন ব্যাক্তিত্ব তার ভিতরে ভর করে ! ভুক্তভোগী সবকিছুই ভুলে গিয়ে থাকেন যেটা মোটেই স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রমের ভিতরে পড়েনা ! খুবই দুর্লভ এই রোগ টি সবচেয়ে বেশী দেখা গিয়েছে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৫ সালে , ওই সময় প্রায় ৪০,০০০ ভিন্ন ভিন্ন রোগী পাওয়া গেছে বিশ্বব্যাপি !এই নিয়ে নির্মিত ১৯৭০ সালের একটি মুভিতে দেখানো হয়েছে ভুক্তভোগীর সমস্যার নানা মাত্রা ! আমাদের দেশে হলে ভূতে ধরা রোগী হিসেবে তাকে ওঝার কাছে পাঠানো হতো সবার আগে ! দক্ষ সাইক্রেষ্টিকের নিয়মিত তত্ত্বাবধানে রোগ মুক্তি হয়ে থাকে ।

প্রাককথণঃ চেয়েছিলাম গল্প লিখতে , একটি ছেলের গল্প যে হারিয়ে থাকে স্বপ্নের ভিতরে , ঘুমের ভিতরে দেখা স্বপ্ন আর বাস্তবতার মিলে মিশে তার জীবন হয়ে উঠে ভয়ানক ! গল্পের খাতিরেই গুগুলের শরণাপন্ন হই , ডাক্তার তাকে কি বলবে জানার জন্য ! গুগল আমাকে যা দেখালো তাতে মনে হলো আমার মত দুর্বল গল্প লেখকের গল্প লিখার চেয়ে এই রোগ গুলো নিয়ে আলাদা একটা পোষ্ট দেয়াই উত্তম ! যেই সমস্যার সমাধান বা তথ্য জানতে গুগলের কাছে যাওয়া সেই রোগ টি সহ আরো কয়েক টি রোগ নিয়ে আরেক টি পোষ্ট দেয়ার ইচ্ছে রয়েছে ! "
৬৫টি মন্তব্য ৬৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×